কেমন ছিলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদাসুন্দরী দেবী

By Published On: July 16, 2021

কেমন ছিলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদাসুন্দরী দেবী

সারদাসুন্দরী দেবী
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর স্ত্রী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর মা।
তাঁর অপর নাম: শাকম্ভরী।
তাঁর জন্ম তারিখ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। তাঁর পিতা রামনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন যশোর জেলার দক্ষিণডিহি’র অধিবাসী।

১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর পুত্রবধূ জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর ‘স্মৃতিকথা’ থেকে জানা যায়, এই সময় সারদাসুন্দরীর বয়স ছিল ছয়। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী তাঁর ‘স্মৃতিকথা’-য় লিখেছেন–

মহর্ষি বাড়ির গৃহলক্ষ্মী সারদাসুন্দরী দেবী। যশোরের অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে। মেয়ের কাকা কলকাতা থেকে শুনে গেলেন কত্তা অর্থাত্ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য সুন্দরী মেয়ে খোঁজা হচ্ছে। ব্যস ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে।
ঠাকুরদের চিরদিনের রীতি ছিল প্রথমে দাসী পুতুল নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবে, পছন্দ হলে সুযোগসুবিধে মতো যাবে বাড়ির মেয়েরা।
সারদা দেবীর কাকার বোধহয় ভয় ছিল পাত্র হাতছাড়া হয়ে যাবে। তিনি বাড়িতে ঢুকেই দেখলেন ভাইঝি দাওয়ায় বসে রান্নাবাটি খেলছে। টেনে তুলে কোনওরকমে একটা পরিষ্কার কাপড় পড়িয়ে তত্ক্ষণাত্ নিয়ে চললেন কলকাতায়। সারদা দেবীর মা তখন নদীতে স্নান করতে গেছিলেন। মাত্র ছ’বছর বয়স তখন সারদা দেবীর। কেঁদেকেটে বললেন, মা আসুক তবে যাব। কাকা কোনও কিছু না শুনে নিয়ে এলেন। মায়ের সঙ্গে মেয়ের শেষ দেখাটাও হল না। পরে সারদা দেবী শুনেছিলেন মা ফিরে এসে মেয়ের শোকে উঠোনের গাছতলায় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই মারা গেছেন।

সারদা দেবীর জীবন মহর্ষির ধর্মচিন্তার ফলে নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল। কত্তা ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করার পরে গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দনকে বাড়ি থেকে বিদেয় করতে চাইলেন। বেধে গেল পারিবারিক গোলযোগ। এতদিনের অধিষ্ঠিত দেবতাকে উঠিয়ে নিয়ে দেবেন্দ্র ভ্রাতা গিরীন্দ্র আলাদা হয়ে গেলেন। আগে যেটা ছিল দ্বারকানাথের সন্ততিদের একান্নবর্তী বসতবাড়ি, সেখানেই দেওয়াল উঠল। ৫ নং আর ৬ নং বাড়ি আলাদা হয়ে গেল। বাগান ভাগ হল, পুকুরের ঘাট আলাদা হল।
সত্যিই লক্ষ্মীজনার্দনের চলে যাওয়ার দুঃখ ভুলতে পারেননি সারদাসুন্দরী। গোপনে ওবাড়িতে গৃহদেবতার পূজা পাঠাতেন আবার স্বামীর ব্রহ্ম উপাসনাতেও যোগ দিতেন। ব্রহ্ম উপাসনার বেদিতে বসে কত্তার ধর্মকথা শুনতে শুনতে হয়তো বা তিনি নিজের ইষ্টমন্ত্রই জপ করতেন। আকবরের হারেমে বসে যোধাবাই যেমন শিবপুজো করতেন। ঘরের মধ্যে বাস করে চিরকালের সংস্কার থেকে মুক্ত হওয়া তো সহজসাধ্য নয়। মহর্ষি দূর্গাপূজার সময় দেশভ্রমনে বেরিয়ে যেতেন। সারা শহর যখন উত্সবে মেতে উঠত, সারদা দেবী একলাটি ঘরের মধ্যে বসে থাকতেন। আত্মীয়-স্বজনরা চেষ্টা করেও তাঁকে উত্সবে নিয়ে যেতে পারত না।
একবারই মাত্র তিনি তাঁর দুঃখের কথা মহর্ষিকে বলেছিলেন। মহর্ষি সেবার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন স্থির করলেন। বিশেষ ধরনের একটি নৌকা ভাড়া করা হল। সারদা দেবী দ্বিজেন্দ্র, সত্যেন্দ্র ও হেমেন্দ্র তিন পুত্রকে নিয়ে নৌকায় চড়ে বসলেন। সে-নৌকাযাত্রা নানা বিপদের মধ্যে শেষ হল।

সারদা দেবী লেখাপড়া শেখার কোনও সুযোগ পাননি। কিন্তু তিনি নিরক্ষর ছিলেন না। চাণক্যের শ্লোক বইটি তাঁর বিশেষ প্রিয় ছিল এবং সর্বদাই সেটি তাঁর হাতে থাকত। মহর্ষিই হয়তো তাঁকে এই বইটি সম্বন্ধে উত্সাহিত করে থাকবেন। এ-ছাড়া ছেলেদের ডেকে সারদা দেবী প্রায়ই রামায়ণ মহাভারত শুনতেন।
সারদা দেবী পনেরোটি সন্তানের জননী ছিলেন ১৮৪০ থেকে পরবর্তী তেইশ বছরে নয় ছেলে ও ছয় মেয়ের জন্ম দিয়েছেন সারদা, তাঁদের মধ্যে বেঁচে ছিলেন মাত্র দশজন। দ্বিজেন্দ্রর জন্মের দু’বছর পরে সত্যেন এল, তার দু’বছর পরে হেমেন, একবছর দশমাসের মাথায় বীরেন, আরও দু’বছর পরে কন্যা সৌদামিনী, তারপর জ্যোতিরিন্দ্র। দ্বিতীয় কন্যা সুকুমারী মাত্র চোদ্দো বছর বয়সেই মারা যায়। তারপরের ছেলে পুণ্যেন্দ্র জলে ডুবে মারা গেল মাত্র ছ’বছরে। এরপর তিনটি কন্যা শরত্কুমারী, স্বর্ণকুমারী ও বর্ণকুমারী। সোমেন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের পরেও জন্মেছিল বুধেন্দ্র, কিন্তু সেও শৈশবে মারা যায়। এতগুলি ছেলেমেয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল দাসী ও চাকরদের হাতে। সেকালের ধনীঘরের নিয়ম ছিল জন্ম থেকেই শিশুরা ধাইয়ের স্তন্যদুগ্ধে লালিত হত। প্রত্যেক শিশুর জন্য একটি স্তন্যদাত্রী ধাই ও পালিকা দাসী নিযুক্ত হত, জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে শিশুদের বিশেষ সম্পর্ক থাকত না। সারদা দেবীর ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সন্তানেরা ভৃত্যদের কাছে অথবা একান্নবর্তী পরিবারে অন্যের কাছে মানুষ হয়েছিল।

ঠাকুরদের চিরদিনের রীতি ছিল প্রথমে দাসী পুতুল নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবে, পছন্দ হলে সুযোগসুবিধে মতো যাবে বাড়ির মেয়েরা।
সারদা দেবীর কাকার বোধহয় ভয় ছিল পাত্র হাতছাড়া হয়ে যাবে। তিনি বাড়িতে ঢুকেই দেখলেন ভাইঝি দাওয়ায় বসে রান্নাবাটি খেলছে। টেনে তুলে কোনওরকমে একটা পরিষ্কার কাপড় পড়িয়ে তত্ক্ষণাত্ নিয়ে চললেন কলকাতায়।

সারদা দেবী বেড়াতে গিয়েছিলেন পেনেটির বাগানে, সেখানেই হাতের ওপর ভেঙে পড়ল লোহার সিন্দুকের ভারী ডালা। তড়িঘড়ি তাঁকে বাড়ি আনা হল। হাতে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে সয্যাশায়ী হলেন গৃহলক্ষ্মী। প্রথমে আর্নিকা ও মলম দিয়ে সারানোর চেষ্টা ব্যর্থ হল। তারপর বাড়ির ডাক্তার ডা. নীলমাধব হালদার এবং মেডিকেল কলেজের সার্জারির অধ্যাপক ডা. প্যাট্রিজ তাঁকে চিকিত্সা করালেও সারাতে পারলেন না। পরপর অনেক ডাক্তার এলেন গেলেন। ভেতরে লোহার টুকরো ঢুকে গিয়েছে। একবার অস্ত্রোপচার করে লোহা বার করার পরেও ব্যথা কমল না। ঠিক এসময়েই দেবেন ঠাকুর বাড়িতে অনুপস্থিত। রবিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বেড়াতে গেছেন ডালহৌসি পাহাড়ে। দু’মাসের মধ্যেও সারদা দেবীর রোগ না সারায় তাঁকে টেলিগ্রাম করা হয়েছে। সংবাদ পেয়ে চিঠিতে, টেলিগ্রামে পরামর্শ দিতে লাগলেন উদ্বিগ্ন মহর্ষি।

শেষে মেডিকেল কলেজের পাঁচজন বিশিষ্ট সাহেব ডাক্তারের বোর্ড বসল সারদা দেবীর রোগ সারাতে। তাঁদের প্রত্যেকের ভিজিট বত্রিশ টাকা। তাঁদের পরামর্শ অনুসারে ক্ষতস্থানের মাংস কেটে বাদ দিয়ে ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। এরকম চিকিত্সার কথা আগে বিশেষ শোনা যায়নি। সাহেবদের মাথা থেকেই এ-সব উদ্ভট চিকিত্সা বেরিয়েছে। কিন্তু কথা হল কার দেহ থেকে মাংস কেটে সারদার অঙ্গে লাগানো হবে, একমাত্র পরিবারের রক্তসম্পর্কের কেউ যদি এগিয়ে আসেন তবেই সারদা রাজি হবেন নয়তো বিনা চিকিত্সায় থাকবেন তাও ভাল।

বাবামশায় বাড়ি নেই। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে এলেন সেজো ছেলে হেমেন। সন্তানের অঙ্গ থেকে নতুন মাংসমজ্জা লাগল গর্ভধারিণীর দেহে। তবুও ব্যথা কমে না। সারদা অধীর হয়ে ওঠেন। অসুখও সারে না, কত্তামশায়ও ফেরেন না। তাঁকে একবার দেখতে বড্ড সাধ হচ্ছে। কী জানি আবার দেখা হবে কি না? তাঁর অনুরোধে বাবামশায়কে ফিরে আসার জন্য চিঠি পাঠান হেমেন। মহর্ষি তখন রবিকে নিয়ে ডালহৌসি পাহাড় থেকে সমতলে নেমেছেন, তাঁর ইচ্ছা এবার অমৃতসরে কিছুদিন বসবাস করে আস্তে আস্তে কলকাতার দিকে পা বাড়াবেন। শীতের শুরুতে ব্যথা বাড়লে হাওয়া বদলের জন্য গঙ্গায় বোট ভাড়া করে মাকে সেখানেই রাখলেন হেমেন্দ্রনাথ। বাড়ির বন্ধ চার দেওয়ালে চিরদিন বাস করে এখন এই নৌকোয় যেন মুক্তির আনন্দ পেলেন সারদাসুন্দরী। এই নৌকোটি যেন তাঁর একান্ত নিজের। এখানে তিনি আর ব্রহ্মোপসনা করেন না, নৌকোঘরের এক কোণে লক্ষ্মীজনার্দনের নাম করে দুটি ঘট স্থাপন করেন। মানদা দাসী রোজ টাটকা ফুল বেল পাতা এনে দিতেন, তিনি স্নান করে গঙ্গাজলসহ ওই নৈবেদ্য ঘটে নিবেদন করতেন রোজ।

একদিন হেমেন এসে খবর দিলেন, মা, বাবামশায় ফিরে আসছেন শিগগিরই, টেলিগ্রাম করেছেন।
স্বস্তির শ্বাস ফেলে হাত মাথায় ঠেকান সারদা। গৃহদেবতা তাঁর কথা শুনেছেন, কত্তার সঙ্গে দেখা না হলে যে তাঁর মরেও শান্তি নেই।
বাড়ির ডাক্তার দ্বারিকানাথ গুপ্ত রোজ বোটে এসে তাঁকে পরীক্ষা করেন। মেয়ে-বউমারা রোজ দেখা করতে আসেন, কেউ কেউ সঙ্গে থেকেও যান। সবাইকে দেখে আনন্দ পান সারদা দেবী। মাসখানেকের মধ্যেই দেবেন ঠাকুর জোড়াসাঁকো ফিরে এলেন। পথে কিছুদিন অবশ্য রবিকে নিয়ে শান্তিনিকেতনে কাটিয়ে এসেছেন তিনি। যাওয়া-আসার পথে এভাবেই তিনি প্রকৃতি উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে জমিদারি পরিদর্শন করে নিতেন।
মহর্ষি ফিরে এলে সারদা দেবী বোট থেকে ঘরে ফিরলেন। এতদিন পরে স্বামীকে দেখে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এবার না ফিরলে আপনার দেখা পেতাম না। আর বোধহয় বাঁচব না আমি।

দেবেন ঠাকুর সান্ত্বনা দিলেন, কে বলেছে বাঁচবে না? তোমার এখনও পঞ্চাশ হয়নি গিন্নি, এখন কোথায় যাবে? আমি নিজে দাঁড়িয়ে চিকিত্সা করাব, দেখি অসুখ সারে কি না!
সত্যি যেন প্রাণে নতুন জোয়ার এল সারদার। আগের তুলনায় তিনি এখন অনেক সুস্থ। ব্যথা অছে কিন্তু তাঁর সহ্য করার শক্তি যেন অনেক বেড়েছে। মাঝে মাঝে সকালের রান্নার জোগাড়ের সময় বা বিকালের চুল বাঁধার আসরেও বসতে শুরু করলেন।
সারদার শরীর কিছুটা ভাল থাকায় দেবেন ঠাকুরও নিশ্চিন্ত হয়ে পৌষের এক সন্ধ্যায় সদলবলে ব্রাহ্মসমাজে এলেন। উপাসনার সময় স্ত্রীর আরোগ্য কামনা করলেন।
কিছুদিনের মধ্যেই উচাটন কাটাতে শিলাইদহে জমিদারি দেখতে গেলেন তিনি। সারদাও ঘরবন্দি না থেকে গঙ্গাবক্ষের মনোরম বাতাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু স্বামীর অনুপস্থিতিতে আবার তাঁর শরীর খারাপ হতে শুরু করল। এবার শুরু হল তুকতাক। এক হাতুরে আচার্যিনীর পরামর্শে তেঁতুলপোড়া বেটে ক্ষতের চারপাশে লাগানোয় ক্ষত বিষাক্ত হয়ে পেকে উঠল। এবার বোধহয় আর বাঁচবেন না। সারদা ভাবলেন, শেষ ক’টাদিন বাড়িতে কাটানোই ভাল।
রবির আবদারে বাড়িতে কয়েকদিন বালকদের ঘরের একপাশে বিছানা করে থাকছিলেন সারদা। অসুখ বেড়ে যেতে তেতলার ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। ক্রমশ বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারালেন।

খবর পেয়ে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন দেবেন্দ্রনাথ। সারদাকে কি আর ধরে রাখা যাবে না সতিই?
বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেছে। সবাই ভাবছেন কর্তামশায় শিলাইদহ থেকে ফিরে এসে দেখতে পাবেন তো কর্তামাকে?
সারদা কিন্তু নাড়ি ছেড়ে যায় যায় অবস্থাতেও বললেন, তোরা ভাবিস না, কত্তার পায়ের ধুলো না নিয়ে আমি মরব না।
ঠিক তাই হল। দেবেন ঠাকুর ফিরে এলেন জোড়াসাঁকোয়। সোজা চলে এলেন স্ত্রীর তেতলার ঘরে। সারদা অতি কষ্টে হাত বাড়িয়ে কর্তার পা ছুঁয়ে বললেন, আমি তবে চললাম। আর জন্মে আবার দেখা হবে। ঘরভরা ছেলেমেয়ে বউ নাতিনাতনি, দাসদাসীর সামনে স্বামীর আশীর্বাদ নিয়ে চোখ বুজলেন সারদাসুন্দরী।
চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ছাদে চলে গেলেন দেবেন্দ্রনাথ।
শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময় আবার নেমে এলেন। চিরসঙ্গিনীর দেহে নিজের হাতে ফুল চন্দন ছিটিয়ে স্বগতোক্তি করেন, ‘ছয় বত্সরের সময় এনেছিলেম, আজ বিদায় দিলেম।’
৪৯ বছর বয়সে সারদা দেবীর মৃত্যু হয়॥

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop