সীমাবদ্ধতা বনাম চ্যালেঞ্জ – সরদার আরিফ উদ্দিন

By Published On: January 1, 2022

 সীমাব্ধতা (limitations) এবং চ্যালেঞ্জ (Challenge) শব্দ দুটো নিয়ে আমরা অনেকে প্রায়ই গুলিয়ে ফেলি। কর্মজীবনে নানা ধরনের প্রশিক্ষন সেসনে কিংবা যখন কোন প্রকল্পের মূল্যায়ন এর কাজ করি, তখন এই প্রশ্নটি সামনে আসে এবং প্রায়শই সবাই ভুল করে। একটিকে অন্যটির সাথে গুলিয়ে ফেলে ।
 
লিমিটেসন্স এর বাংলা সহজেই বুঝতে পারি, মানে সীমাবদ্ধতা অর্থাৎ একটা সীমানা একে দেয়া থাকবে, যা কিছুই করি বা করতে চাই, তা ঐ সীমানার মধ্যে থেকেই করতে হবে। গরু কিংবা ছাগলকে যেমন একটি খুটির মাধ্যমে সীমানা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, সীমানার মধ্যে যা ইচ্ছে করতে পারে, যত ইচ্ছা ঘুরপাক খেতে পারে ।

চ্যালেঞ্জ এর কোন বাংলা প্রতিশব্দ আছে কিনা আমি জানি না। বাংলা একাডেমীর অভিধানে লেখা আছে-আপত্তি, আহ্বান, দাবি করা, আপত্তি করা, অভিযোগ, অভিযুক্ত করা, দর্প, প্রহরীর প্রশ্ন, সংপ্রশ্ন, যুদ্ধার্থে আহ্বান করা, স্পর্ধা করা, প্রতিযোগিতা, অস্বীকার করা, নজর দারী করা ইত্যাদি। আবার গুগুল সার্চ করে দেখা গেল অনেকগুলো অর্থ দেয়া আছে-শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা কওরা, দ্বন্দ্বযুদ্ধ ইত্যাদিতে আহ্বান, কাউকে থাকতে বলে পরিচয় প্রদানের জন্য প্রহরী কর্তৃক উচ্চারিত নির্দেশ। আমরা যে অর্থে চ্যালেঞ্জ শব্দ ব্যবহার করি, একাডেমীক ভাষায় তার সাথে খুব একটা মেলে না, আমরা মূলত জানতে চাই, কি কি বাঁধা (barrier) তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং কিভাবে তা উত্তরন করেছেন বা উত্তরনের কৌশলগুলো কি ছিল, যেন আমরা পরবর্তীতে সে ধরনের কোন চ্যালেঞ্জ আসলে তা মোকাবেলা করতে পারি। আলোচনার সুবিধার্থে এখানে চ্যালেঞ্জ শব্দের কোন প্রতিশব্দ না লিখে ইংরজীই রাখলাম।
 
মূলত সীমাবদ্ধতা তৈরি হয় তিনটি প্রধান কারনে, যা কোনভাবেই কোন একক ব্যক্তির পক্ষে উতরানো সম্ভব হয় না। ফলে সীমাবদ্ধতাকে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু চ্যালেঞ্জগুলো might be difficult but not impossible.  চ্যালেঞ্জগুলো্ মোকাবেলা করার জন্য তখন নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়, প্রেক্ষিত বিবেচনায় অনেক সময় একাধিক কৌশল ব্যবহার করতে হয় আবার কৌশল পরিবর্তন করারও প্রয়োজন হতে পারে। এভাবে নানা ধরনের কৌশল অবম্বন করার পরও চ্যালেঞ্জগুলো উতরানো সম্ভব হতেও পারে আবার নাও হতে পারে কিন্তু অন্তত চেস্টা করা যায়। কিন্তু সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে প্রথমেই আত্মসমর্পন করতে হয় ।

সীমাবদ্ধতার তিনটি প্রধান উৎস হলো-

  • নীতিগত বাঁধা ( policy barrier)
  • সম্পদের ঘাটতি (shortage of resources)
  • কর্তিত্তের অধিকারের ঘাটতি (lack of authority)

মনে করুন, আপনি উপকূল অঞ্চলে কোন একটি অফিসের মাধ্যমে অতি দরিদ্র্য মানুষের জন্য কাজ করছেন। প্রায় প্রতিবছরই বন্যা এবং সাইক্লোনে তাদের ক্ষয়ক্ষতি হয় সীমাহীন। তাদের জন্য উপকূলে একটি বাধ নির্মান করতে চাচ্ছেন, আপনার  Resource এবং Authority দুটোই আছে কিন্তু তারপরও করতে পারবেন না, কেননা সরকারের নীতিগত বাঁধা আছে (policy barrier)। এবার মনে করুন, কোন নীতিগত বাঁধা নেই কিন্তু আপনার বাঁধ নির্মানের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ নেই, তাহলেও সীমাবদ্ধতা থেকেই গেল। আবার মনে করুন নীতিগত বাঁধা এবং সম্পদের ঘাটতি কোনটাই নেই কিন্তু তারপরও পারবেন না, কেননা আপনার সংস্থা আপনাকে এই কাজে অর্থ ব্যয় করার অথোরিটি দেয়নি। এগুলো সবই হলো সীমাবদ্ধতা, এখানে তাৎক্ষনিকভাবে কিছুই করার নেই যতক্ষন পর্যন্ত উপরের তিনটি ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন না আসে। ফলে এগুলো সীমাবদ্ধতা হিসেবেই মেনে নিতে হয় ।
 
আবার সেই একই উদাহরনে, মনে করুন আপনার কোন সীমাবদ্ধতা নেই, কাজ শুরু করলেন কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন আপনাকে কাজে বাঁধা দিচ্ছে, স্থানীয় জনগন কাজে সহযোগীতা করছে না ইত্যাদি  নানা ধরনের বাঁধা আসছে, সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ বলছি কেননা এগুলো দূর করা might be difficult but not impossible। নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সফলতা আনা যায়।
 
শুধু অফিস কেন, আমাদের প্রত্যকের ব্যক্তি জীবনেও এরকম কিছু সীমাবদ্ধতা এবং কিছু চ্যালেঞ্জ সবসময়ই থাকে, দুটো বিষয়কে গুলিয়ে না ফেলে যদি আলাদা করতে পারি তাহলে আমাদের এফোর্ট/মনোযোগ কোথায় কখন বেশী দিতে হবে, কোন বিষয়ে এফোর্ট দেয়ার দরকার নেই, সেগুলো সহজেই সনাক্ত করতে পারি এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop