গুচ্ছ কবিতা – আতাউর রহমান

By Published On: May 12, 2021Views: 495

আতাউর রহমান

যদি আমি কথা বলতে পারতাম, তবে বলতাম তোমরা নিজেরাই নিজেদের দুঃখের কারণ হও মাঝে মাঝে।

বিধাতা তোমাকে একটি জীবন দিয়েছে, সুখে কাটিয়ে

দিনাবসানে চলে যেও।

– আতাউর রহমান

 

বেয়াদব লাশ

আকাশের তিকে চেয়ে দেখি

একটা গলাকাটা নীল পশু রক্তাক্ত

হয়ে  দিগন্তের সীমানা অবধি

সধবার লাল রং শাড়িতে ঢেকে রয়েছে ।

কিছুতেই কান্না পায়না আজকাল।

চোখের জল শুকিয়ে কালাহারি মরুভূমি

হয়েছে যেন।

জীবন যেন উটবিহীন, মরুদ্যানহীন এক মরুভূমি।

আমার সমগ্র সত্ত্বা বিলীন এখন।

আমি এক বেহায়া লাশ ঘুমাচ্ছি,

আরেকটি সকাল দেখবনা বলে।

স্বপ্ন দেখি

মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি ঘুমে, আমি গাছ হয়ে

গেছি, মিতালি পাতাচ্ছি পাশের গাছটির সাথে।

কত পাখিরা বসে আমার ডালে, ওদের সাথে সুখ

-দুঃখের কথা কই।

আমার নেই খাবার ভাবনা, বসুন্ধরার মৃত্তিকাই আবার

নিত্যকার আহারের দেয় যোগান।

আমি আছি বেশ, তবে মানুষের নানা দুঃখ- বেদনা

আমাকেও করে বেদনা ক্লিষ্ট

যদি আমি কথা বলতে পারতাম, তবে বলতাম তোমরা নিজেরাই নিজেদের দুঃখের কারণ হও মাঝে মাঝে।

বিধাতা তোমাকে একটি জীবন দিয়েছে, সুখে কাটিয়ে

দিনাবসানে চলে যেও।

ঈর্ষা, দ্বেষ ও ঘৃণার প্বার্শচর  হয়ে নিজেদের করোনা সর্বনাশ।

প্রকৃতি ও চরাচরের উপর অবিচার করে তাদের রাগিওনা,

তারাও  প্রতিশোধ নিতে জানে।

বরফ গলিয়ে ভাসিয়ে দেবে তোমাদের।

বনচ্ছায়ার  ছাতা তুলে নেবে তোমাদের মাথার উপর

থেকে ; তোমরা হবে অগ্নিদগ্ধ।

বিশ্বচরাচরের আবহাওয়া হবে ওলট-পালট।

বরফ গলবে, অগ্নি বৃষ্টি হবে, মেদিনী কাঁপবে

ঘন ঘন।

বিশ্বনিয়ন্তার বিরুদ্ধাচারণ করোনা।

বিশ্বচরাচর ও প্রকৃতির সহজাত আলিঙ্গন পাবে।

সুন্দরকে পাবে বুক ভরে, তোমাদের  পার্থিব দিনগুলি

স্নিগ্ধ আনন্দে কাটিয়ে বিদায় নিতে পারবে।

মনে রেখ, সমগ্র বিশ্বচরাচর ও নিসর্গ বিধাতার অনেক আদরের।

তাকে আদর করলে তুমিও থাকবে  আনন্দ-ভালবাসায়।

রাতের আমি

রাত গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছে।

আমাকে ঘিরে আছে নিসর্গ,

আগন্তুকের পোষাক পরেছে,

মনে হচ্ছে অচেনা কেউ।

আকাশে নেই কোন তারা,

গাছের পাতারা নড়েনা,

ভাবছি ;আমার চোখ বোধহয় গেল!

কানে পৌঁছাচ্ছেনা কোন সঙ্গীতের অনুরণন।

আমি কি কবি মিল্টনের মত অন্ধ হয়ে যাচ্ছি?

অথবা সুর স্রষ্টা বিথোভেনের মত বধির?

ভালো, খুব ভালো, আমি মিল্টনের মত অন্ধ

হয়ে লিখর অমর কাব্যকথা।

আর  বধির বিথোভেনের মত বেদনার সুর

তুলে পৃথিবীকে কাঁদাবো।

সেই কাব্য কথা আর সুর লহরী সহ্য করতে

না পেরে পালাবে সর্বনাশা মানব শত্রুর দল।

চোখ

চোখ গেলো, চোখ গেলো,

পাখির এই কাকলির মত

এমন আক্ষেপ বিরল!

প্রাণীকূলের  চোখই যে সব।

চোখ হাসে, চোখ কাঁদে,

চোখ কথা বলে।

আনন্দে করে ঝলমল।

ভেসে যায় দুঃখে।

ক্রোধে হয় লাল ।

ভালবাসায় হয় গভীর।

হতাশা, বিপন্নতা আর বিষন্নতায়

চোখ ক্লান্ত আর অসহায় হয়।

চোখেই ছায়াপাত ঘটে

মনে যা ঘটে।

হায় চোখ,হায় চোখ, হায় চোখ

মৃত্যুর আগে চোখেই পড়ে তার

ছায়াপাত।

দৃষ্টিহীনের চোখও  বাদ যায়না,

চোখের কোটর নড়েচড়ে উঠে মনে

খেলে যাওয়া নানা কথার দ্যোতনায়।

হায় ! চোখ, তুমি কিছুই দাওনা লুকাতে।

এলোমেলো

আজি ঝড়ের রাতে আমার মন ছুটেছে রবীন্দ্রনাথের

সৃষ্টির পথ খোঁজার বাসনায়।

নজরুলের বিদ্রোহী রণকান্তের পথ খুঁজে পাচ্ছিনা

 আমি।

তাহলে বিশ্ব কি ভাবে হবে শান্ত?

জীবনানন্দের বিপন্ন বিস্ময় নিয়ে উটের গ্রীবার

অন্ধকারকে খঁজে বেড়াচ্ছি আমি।

হায়! শামসুর রাহমানের রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে

 গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার তো দেখিনা

এখন!

শোনার জন্যে কান পেতে রই সৈয়দ হকের —শত্রুর

সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস।

কবি নির্মলেন্দুর সাহসী  উক্তি আর কেন শুনিনা,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।

আমি খঁজে বেড়াচ্ছি সেইসব অমৃত কথনের।

জানিনা কি লেখা আছে ভাগ্যে আমার!

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop