সমাজ সংস্কার
আকিব শিকদার
তুষার বউ নিয়ে মা বাবার সাথে থাকতে রাজি নয়। বউ সারা¶ণ ঘ্যানর ঘ্যানর করে। একা থাকতে চায়। তারা নতুন একটা বাসা ভাড়া নেবে ভাবছে। তারপর দেখে শুনে দুই রুমের একটা ফ্ল্যাটে উঠে গেল। ফ্ল্যাটে উঠার পর শুরু হল একাকীত্ব।
তুষার অফিসে চলে গেলে তনিমার একা একা সময় কাটে না। এক এক করে পুরাতন বন্ধুদের খবর দিতে থাকলো তনিমা। বন্ধুদের কেউ কেউ বেশি সময় দিতে গিয়ে শুরু করল বেশি বেশি মেশামিশি। শুরু হলো পরকিয়া। দেহ বিনিময়। একটা সময় দেখা গেল তুষারের বউ তুষারকেই সহ্য করতে পারছে না।
ফরিদের মেয়েটা পাশের গলির ছেলেটার সাথে পালিয়েছে। স্কুলে গিয়েছিল প্রতিদিনের মতো, সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেনি। ফরিদের মুখে চুনকালি। প্রতিবেশীরা কতবার বলেছে, “মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও”। ফরিদ রাজি হয়নি। মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে ভালো ঘরে রিয়ে দেবে।
এদিকে রশিদের ছেলেটাও কিছুদিন ধরে পতিতালয়ে যায়। মদ খায়, গাজা টানে। রাস্তায় মেয়ে দেখে নিজেই নিজের গোপনাঙ্গ টিপে টিপে মজা পায়। ধর্ষণ করার মতলব আটে। বেকারত্বের কারণে বিয়ে করতে পারছে না বলে এইসব।
ফরিদ তো পারতো রশিদের সাথে কথা বলে তাদের ছেলে আর মেয়েকে এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখতে। মেয়ে থাকতো বাপের ঘরেই। আঠারো বছর পোষতে পেরেছে, আর দু-চারটা বছর কি নিজের ঘরে পুষতে পারতো না! মেয়েটা বিবাহিত স্বামীর সাথেই মেটাতো দেহের জ্বালা। স্বামীকে নিয়েই স্বপ্ন দেখত, অন্য গলির ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যেত না। রশিদও তো পারতো এনগেজমেন্ট রিং পরিয়ে রাখা ছেলের বউকে নিজের মেয়ে মনেকরে কিছু খরচ পাতি দিতে। ¶তি তো হতো না। মুখে চুনকালির দাগ তো লাগতো না। সমাজতো নষ্ট হতো না। মেনে নিলে সব করা যায়।
আলমাস তার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে। মাসে মাসে খরচ পাঠিয়ে দেবে, সমস্যা হবে না। বাসায় থাকলে সমস্যাই হতো। তাদের ছেলেটার পড়াশোনায় ডিস্টার্ব হতো। দাদীর সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে ছেলেটা পড়াশোনা করতে চাইতো না। এ প্লাস কেমনে পাবে!
এখন আলমাস চাকরিতে চলে যায়, তার বউটাও যায় অফিসে। ছেলেটা তখন একা একা ঘরে বসে বই পড়ে, টিভি দেখে, ফেসবুক ইউটিউব চালায়। বেশি একাকীত্ব লাগলে জানালা দিয়ে দূরের আকাশ দেখে। আলমাস জানে না, দাদীর কাছ থেকে ছেলেটা সামাজিক আচার-আচরণ শিখছিল, জীবনধর্মী শি¶াগুলোও গ্রহণ করছিল, যা কোনো বইয়ে লেখা নেই। আলমাস জানে না, বৃদ্ধ হয়ে গেলে গাছ ফুল-ফল দিতে পারে না, তবে ছায়া দেয়।