আয়না-পুকুর
জ্যোতি পোদ্দার
ক
জলে কোনো ভাঁজ নেই—এক্কেবারে আয়নার মতো আয়না-পুকুর।
মেঘও উড়তে উড়তে পেঁজা তুলোর সজ্জা পরিপাটি আছে কিনা
দেখবার ছলে স্থীর হয়ে আছে আয়না-পুকুরের উপর।
ছিপ নিয়ে বসে আছি।
ইচ্ছে হয় ভেঙে দেই জলতরঙ্গ।
এমন উদাসীন পুকুর আমি অনেক দিন দেখিনি।
ইচ্ছে হয় জলে নামি—ডুব সাঁতারে তছনছ করি জলের বিছানা।
খ
হঠাৎ বেখাপ্পা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ভেঙে দিলো সব।
ছোট ছোট বৃত্তঢেউ ভেঙে ভেঙে পুকুরের পাড়
ছুৃঁয়ে ছুঁয়ে আবার গলিয়ে পড়ছে জলের ভেতর।
বৃষ্টি আর বাতাসের হল্কায় কাঁপছি আমি
আমার ছিপ আর ছোট ছোট ঢেউবৃত্ত।
আর একটা বগা ফকফকা সাদা পাখনা মেলে
জলের শরীরে হেঁটে হেঁটে খুঁজছে পুঁটি মাছ।
আহা! রূপালি রঙের পুঁটি মাছ।
ডোবা তেলে মুচমুচে ভাজা গোলচোখের পুঁটিমাছ।
জলের শরীরে বৃষ্টির নাচনে শত শত হাজার
হাজার ফুটে উঠছে গোলাকার জলফুল।
ইচ্ছে হয় জলফুল আঁজলা ভরে তুলি।
ইচ্ছে হয় গাঁথি জলফুলের মালা।
আমি একাকী ধীবর ছাওয়াল পুকুরে পুকুরে ছিপ
ফেলে তাকিয়ে থাকি ফাতনার দিকে;
কার লাগি গাঁথব জলফুলের মালা
কে রাঁধিবে
রূপালি রঙের ছোট ছোট পুঁটি মাছের ঝোল?
গ
এবার বর্ষা দেরি করে এলেও পুকুরের কোল ঘেঁষে
গড়ে উঠেছে হেচি শাক পুদিনা পাতা
আর গোল গোল কয়েনের মতো থানকুনি
পাতার কলোনি—এক্কেবারে সবুজের সমারোহ।
যখন রোদের ছটা চারদিকে উপচে পড়ে
এই সবুজের এমব্রয়ডারি করা আয়না-পুকুর
দেখতে কী যে ভালো লাগে কী যে ভালো লাগে!
তুমি নেই বলে এই চরাচর এই কম্পিত সবুজ
অব্যক্তই রয়ে গেলো গোটানো শামুকের মতো।
ধীবর আমি কেবলই গোপন সৌন্দর্যে ডুবে
পুকুরে ছাপিয়ে পড়া ব্যাঙের ঝপাং ঝপাং
শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি আয়না-পুকুর ঘাটে।