আদ্যনাথ ঘোষের এক গুচ্ছ কবিতা

By Published On: July 13, 2025Views: 28
Image

ছায়ার পিছে

কে যায় কোন বহুদূরে! অদৃশ্য সময়ের পিছু।
কেন তবে লিখে যাও যতোসব ভোরের আলোর
…………..গচ্ছিত হিসেবের ঋণ।
কিছু শ্রম আরও কিছু রঙের প্রলেপ নিয়ে
চলো তবে এঁকে যাই সমুখের নিজস্ব আকাশ।
কি হয় দেখে আসি তোমারই মতোন
………………………………….প্রিয় মতবাদে?
তবু কেন পিছু নাও!
চুমু খেয়ে ফিরে দেখা ভস্মের কালোকালি রঙে!
ভোরের জারুলের ফুল মরে গেলে
কিভাবে বাঁচবে বলো আহত ভোরের খসে পড়া রঙে?
হিসেবের পাতায় কতগুলো বৃত্তের ছাপ আঁকা হলে
অদৃশ্য মানুষ ভেসে যায় ছায়ায় ভিতর।
তাহলে তুমিই বলো!
অজানা পৃথিবীর খোঁজে টানিয়ে কি রাখে নাই
তোমারই কামারশালার শ্রম আর রঙের কাল মহাকাল!


অহম

চারপাশ ভাঙচুর।
তবু তুমি চোখের প্রস্বরে মেখেছ আদিম সোহাগ!
সবুজের মোহ ছেড়ে গাছের উত্থান হলে
নিঃস্বতা হারিয়ে কাঁদে জীবন ধ্রুপদ।
…………….নিজেই নিজের মধ্যে অবশেষে লীনÑ
চলে আসে হেমলকের ডাক।
পোড়ো মন ভেসে ওঠে হুইসেল বাজিয়ে
চিরচেনা হাওয়াদের পথে।
অথচ জীবনটাই লিখে রাখে স্বপনের নিজস্ব আকাশ।
তার কোনো ডানা নেই। তার কোনো পথ নেই।
তবু কেন অহমের চাষ!


ভেঙে গেছে

মরে গেছে শেষ শুকতারা!
তবু তুমি সবুজের বুকের ভেতর রেখে গেছো
……………………….. কালোর প্রলেপ।
তারুণ্যের রঙ ছেড়ে ফসলের উত্থান হলে,
ফসল কি হারিয়ে খোঁজে সবুজের ঘ্রাণ!
সময়ের বিভ্রান্ত ছেড়ে কে বলো এগিয়েছে ঘরে!
কেন আজ নেমে আসে ভুলেরই ছায়া!
ভুলো মন জেগে ওঠে পথেরই কিনার
বয়ে চলা মুখোশের পথে।
অথচ দিনশেষে লিখে রাখে আশ্বাসের
ফ্রেমেবাঁধা যতোসব মুখ ও মুখোশ!
তার কোনো অন্ত নেই। তার কোনো আদিও নেই।
অন্ত আর আদির খেলায় তবু কেন সবুজের বিশ্বাস!


মায়ের ওম থেকে জেগে

মাঠভরা ক্ষেত
দুচোখে ভোরের আলোর ঝলকানো দিন
নারীর বুকের অট্টালিকার মতোন
ফাগুনও নাদুস নুদুস খেলা করে
………………………….কুমারী ফুলের সাথে
ভিটেমাটির নাড়ির ভেতর।

গান করে নতুন দিন
গান করে উদোম বাতাস
আগামী দিনের মিছিলের সাথে
…………….রোদ্রালি চোখের ভেতর।

ঢেউ ওঠে- বুকের ভেতরে,
………………………….সেই ঢেউ,
সেই নতুন দিনের ঢেউ
আলোর তোরণে ভেসে,
মায়ের ওম থেকে জেগে
…………….স্রোতসিনী নদীর মতো
ভেসে ওঠে নিরালায়-
ধানক্ষেতে, ভোরের দুচোখে।

ভরে ওঠে-
সব কিছু নিয়ে,
সেই দিন, সেই মাঠ, সেই ফসল
আর সেইসব রোদের তোরণ
………………………..সাথে নিয়ে
ভরে ওঠে লোকালয়
…………..উত্তোলিত হাত
ভরে ওঠে বুক
ভরে ওঠে তৃষ্ণার্ত ভিটেমাটির মায়াবী উঠোন।


প্রণয় ও বিরহলতা

প্রণয়ের শস্যক্ষেত খুঁজে নিতে হলে
বিরহলতাও কাছে এসে দাঁড়ায়
ফুল ও ফসলের চাষাবাদ ফেলে।

কে কাকে জন্ম দেয়,
…………..কে কাকে দাহিত করে?
এইসব পথ খুঁজে নিতে
মানুষও মনের কোটরের ভেতর
…………..আজীবন তালাশ করে
ভোর ও সন্ধ্যার প্রণয়ের
……………ভাটা ও জোয়ার।

প্রেমের শস্যক্ষেতে যদি জ্বলে ওঠে
পতন ও হাহাকার-
পাশ ফিরে পোড়াদহের ভেতর দিয়ে
ফিরে ফিরে হেঁটে গেলে
…………….ফেরাবে কি তারে
সন্ধ্যার পোড়ামন দেখে।

জন্মালে মৃত্যু হয়- সবকিছু ছেড়ে,
পূর্ণতাও অপূর্ণ রয়,
……………..চোখের বাতিল খাতায়।

এইসব পথ ছেড়ে
যদি দেখা হয়, না দেখার মতো
স্বরূপ আর অরূপের অন্ধকারে
তাই যদি হয়, কেন যে হাওয়ার জোয়ার ওঠে
কে কাকে নালিশ করে
…………….হাহাকার ফেলে।

আসা আর যাওয়ার মাঝেই
হিসাব ঝোলানো থাকে
ভোর থেকে সন্ধ্যার ঢালে
………………..শুধুই ঢেউয়ের দোলায়।

0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments