কলম
স্বপনকুমার রায়
নীল কালির এই কলম থেকে
শব্দ যখন বেরোয় না আর
তাকিয়ে দেখি মনের মধ্যে
শূন্য ভুবন, শূন্য ভাঁড়ার।
ঠুকতে ঠুকতে ভোঁতা কলম
কামড়ে যতই দাগ করি না,
আকাশ নদী কেউ আসে না
লাল-পরি না, নীল-পরি না!
কেউ আসে না, গাছ ও পাখি
ফোটে না আর প্রিয় ফুলও,
খুঁজতে থাকি এ ডাল সে ডাল
হৃদয় ছোঁয়া শব্দগুলো!
আজ সে কোথায় হারিয়ে গেছে
লেখায় না এই কলমটাকে,
খুশি-মজা-দুঃখ-হাসি —
যা ইচ্ছা হয় আঁকুক তাকে!
তবুও যেন বিমুখ কলম
ভাবনাগুলো চায় না লিখি।
কলম, আমি অধীন তোমার
শেখাও এখন লিখব কি কি!
রোদের গুঁড়ো
স্বপনকুমার রায়
ফুল বলেছে
রঙের মেলায় করছি খেলা সকাল থেকে
আজকে বলো
সে রং নিয়ে গা-য় মাখিয়ে নাচবে কে কে?
মেঘ বলেছে
ছুটছি দূরে অচীনপুরের খবর রাখি
তোমরা কি কেউ
আমার সাথে আজকে রাতে ছুটবে নাকি?
গান গেয়ে সে
বলছে পাখি স্বপ্ন আঁকি গাছের ডালে
তারপরে সেই
স্বপ্নগুলো ওড়ায় ধুলো সাত সকালে!
এইতো সেদিন
আমায় ডেকে বলল হেঁকে একটা বুড়ো
যাও নিয়ে যাও
আমার কাছে ঝোলায় আছে রোদের গুঁড়ো!
রামধনু রং
ইচ্ছে আরো পেতেও পারো তাদের দেখা
সেই খুশিতে
এখন আমি আর কি থামি ভাসছি একা!
বৃষ্টিমুখর গান
স্বপনকুমার রায়
আমি বৃষ্টির ছড়া লিখি
শুনি শব্দেরা ভাসে কি কি,
টুপটুপ ঝমঝম
ঝরে ঝিরঝির হরদম,
এইসব কত শব্দকে আমি
বৃষ্টির কাছে শিখি।
আমি বৃষ্টির ছড়া লিখি
আমি বৃষ্টির ছড়া লিখি…..
আমি বৃষ্টির ছবি আঁকি
তাকে ফাগুনেও মনে রাখি,
মেঘ বলে দাঁড়া আসি
আমি তোকে বড় ভালোবাসি,
সারাদিন ধরে বৃষ্টিকে তাই
আমার শরীরে মাখি।
আমি বৃষ্টির ছবি আঁকি
আমি বৃষ্টির ছবি আঁকি…..
আমি বৃষ্টিতে করি চান
গাই বৃষ্টিমুখর গান,
মেঘেদের কত নাচ
দেখে কত খুশি হয় গাছ,
ঝমঝম ঝরা বৃষ্টিতে ওই
ধুয়ে যায় অভিমান।
আমি বৃষ্টিতে করি চান
আমি বৃষ্টিতে করি চান…..
আমাকে দিও না ফাঁকি
স্বপনকুমার রায়
তাকে যত ডাকি কাছে আয়
পাখি তত ডানা ঝাপটায়।
বলি তোকে আমি ধরব না
শুধু আয় কাছে পাখি সোনা!
আমি যত বলি কর নাচ
দেখি তত মাথা নাড়ে গাছ।
কত অপরূপ রঙে আঁকা
ফুলে মিষ্টি গন্ধ মাখা,
তাকে নিয়ে যে স্বপ্ন বোনা
তবু ফুল বলে ঝরব না!
সাদা মেঘগুলো যায় ভেসে
তার ঠিকানা নিরুদ্দেশে!
রাতে ঝিকমিক হাসে তারা
চাঁদ ছুটে ছুটে দিশেহারা,
মেঘ দেয় না তবুও ধরা
আজ চাঁদের কী মনমরা!
আমি করব এখন কি যে
তাই ভেবে হই সারা নিজে
বলি আমাকে দিও না ফাঁকি,
আমি তোমাদের ছবি আঁকি।
আমিও তৈরি থাকি
স্বপনকুমার রায়
বাতাসের গন্ধ নিয়ে আকাশের রং লাগিয়ে
যেন কেউ ডাকছে কাছে,
দেখি বেশ পাখির ডাকে ওরা রোজ স্বপ্ন মাখে
ডালিম আর টগর গাছে!
তারাদের ঝিকমিকানো তুমি কি সঠিক জানো
মেঘেদের কোথায় বাড়ি?
সাগরে কুড়াই নুড়ি আকাশে ওড়াই ঘুড়ি
আমি নই খুব আনাড়ি।
যদি যাই সবুজ বনে, বলে দিই সঙ্গোপনে
বাঘেদের সঙ্গে খেলা,
জানো না বাঘ হাতি সব, আসে যেই বন্য-পরব
সকলে আমার চ্যালা!
আমি তাই আকাশ খাতায় আঁকি তার নীলচে পাতায়
দেখা এই চিত্রগুলো,
মাঠে নেই ঝুট-ঝামেলা দেখি সব বিকেলবেলা
খেলে রোজ উড়িয়ে ধুলো।
আমিও তৈরি থাকি ভেবেছ হারবো নাকি
নেমে যাই খেলার মাঠে —
ওরা সব বন্ধু আমার ফুরসত নেইতো থামার
খেলাতেই সময় কাটে।