আর কতটা
কতটা পথ পের হলে, বন্ধু হওয়া যায়?
সরোবরময় শরীরে বৃষ্টি গান লিখলে
ডুব-সময় শেষ হয়ে আসে বাঁচার বিশ্বাসে,
ঠিক তখনই প্রতিশ্রুতির কলরব ওঠে
শ্বাস-প্রশ্বাসের উৎসবময় মদিরায়।
পাশের বৃক্ষছায়াটিতেই পরজন্মের পিপাসা,
শীতলতার আটপৌরে জলজীবনের কথা
না-শেষ-হওয়া রাস্তা খোঁজে ঘুমের ভেতর।
অন্ধকার গলিও হেঁটে যায় আলো পথে,
আঁখি-শীতল রনপা দৌড় দেয় কোনো এক
বর্ধিষ্ণু শহরের বাঁধন আলগা কারাগারে।
কতটা পথ হাঁটলে, পিছু ডাক আসে না?
মৃত্যুনীল শব্দের কাছে
যে পথে তোমার আসা-যাওয়া
ঠোঁট আর চিবুকের সাথে কথা বলা,
সে-পথেরই ধুলো মাটিতে শুয়ে থাকে
শিমুল ফুলের মতো আমার পরমায়ু।
ঝিরিঝিরি চাওয়া আর থৈ থৈ জীবনে
বেণী খোলা রাতের আজ তোলপাড় ঘুম।
ভেলা বেঁধে মেঘ যখন চুপিচুপি নিরেট
প্রতিশ্রুতির কথা বলে, আমি তখন
সেতু খুলে রাখি, শেষ বিকেল আর আমার
মুখোমুখি দূরত্বের মাপ হব না বলে।
যেখানে শহরের সমস্ত আলোর ঘুমঘর
ঠিক তারই গা ঘেঁষে ধীরে ধীরে হেঁটে যায়
তোমাকে আর না খোঁজার শপথ,
আমলকী বনে তখনও ফুলের হাহাকার।
তুমুল বৃষ্টি নেমে এলে আমি কান্না ধুই
উপহার দিই আমার নিঃশ্বাসের শব্দ,
দ্রুত ব্যাকুলতার মিছিল ছুটে আসলে
তুমি নির্দ্বিধায় পান করো নীল মৃত্যু।
ডাকব কী নাম ধরে!
ডাকব কী নাম ধরে!
কালো সাদা মেঘ ছেয়ে সবখানে, দিন হারায় শরৎ ফুলের মেলায়।
রোদ বৃষ্টির ভেতর ঘুমিয়ে আছে
বাকল পরা জীবন,
ওখানেই ধ্যানে মগ্ন দেব লোকের
সবটুকু আরাধনা।
ধীরে ধীরে শরীরময় জেগে ওঠে
অসংখ্য নদী,
বালি আর অভ্র মেখে ভেসে যায়
অমৃতের কলশ।
হার স্বীকার করিনি কখনো, বারবার
প্রেমের অনুবাদ করতে করতে
সব চোখকেই পদ্ম দেখি।
ঘুম আসে না নতুন পোশাকের গন্ধে,
কেউ কি বলেছিল? ভোরের সূর্যে
তোমাকে দেখি।
ঝড়ের সাথে ক্ষীণ মেঘ ভেসে আসলে
বসন্তের প্রদীপ জ্বালি,
পথে হেঁটে দেখেছি আমারই সহজাত
সেই সহযাত্রিটি।
এখন পাখিরা ঠোঁটের কলরব খুলে রেখেছে,
শিশিরের কাছে আকুল নিবেদন
চলো, ঈশ্বরীর দেশ খুঁজি।
উল্টো থিসিস
উল্টানো ভাঁড়ের মতো উল্টে আছে জীবন।
ফুটন্ত তাপ নিয়ে চায়ের স্বাদ শুষেছি যতটা,
তার চেয়ে পোড়া-জীবনে অনেক বেশি
শরীরের ফোস্কা গুণেছি ধোঁয়া হতে হতে।
শাঁখা আর সিঁদুরের পবিত্র বন্ধন যখন
লোহার শেকল অথবা কাঁটা তারের বেড়া
হয়ে ওঠে তখন ভীষ্মের মতো তীরের ফলায়
নিজের জীবন জিইয়ে অপেক্ষা করি সুখের।
যদি নারীর বিদ্যা বুদ্ধি চেতনার হত্যাতেই
পুরুষ সমাজ শান্তির পায়রা ওড়াতে চায়,
তবে স্কুলের ভারী ব্যাগ আর বই-খাতা কলমের
ঠিকানায় কেন কিছু দিনের কেয়ার অফ!
বৈরাগীর সুর
ঝড়ের মুখোমুখি বসলে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে,
কোনো এক দেবালয়ের পুজোর উচ্চারণ
দ্রুত দৌড়ায় নির্জনতার নিবিড় সন্ধানে।
একটি তারেতেই সুরের মূর্ছনা গাঁথা থাক,
বৈরাগীর সুরে ভাসুক নদী ও নৌকার গান।
যে রঙে তুলি কথা বলে না ক্যানভাস ছুঁয়ে,
সে রঙেই ডুবে থাকে চাঁদের সমস্ত বেলা।
কাছাকাছি মরু নেই, হৃদয়ের ছাউনিতেই
মরুদ্যান রচনা করি কবিতার পঙক্তি ঢেলে।
আজ দিনটা বড়োই মেঘলা, বরফ-চুড়া থেকে
রোদ নেমে এলে কবরী সাজাব করবীতে।