খাদক

খাদক
গৌতম বিশ্বাস
কাল নিয়ে চারদিন।হ্যাঁ, চার চারটে দিন একটা দানাপানিও পড়েনি পেটে। কেবল জল আর হাওয়া খেয়েই কাটিয়েছে রামনাথ।এই দু’টি জিনিসই কেবল তার অফুরন্ত আছে।উঠোনের কোনায় বিশ বছর আগে পুঁতেছিল কল টা। সেই কল এখনও অকাতরে জল দিয়ে চলেছে।দেবেও আরও কতদিন।আর তেমনি আছে হাওয়া।রামনাথের বাড়িট দক্ষিণে মাঠ।দিনরাত সেই মাঠ জুড়ে কেবল হাওয়া আর হাওয়া।বছরভর হাওয়া বয় মাঠে।বইতে বইতে মাঠ পেরিয়ে ছুটে এসে আছাড় খায় রামনাথের দাওয়া,উঠোনে। দাওয়ায় বসে হাওয়া খায় রামনাথ।খিদেটা যখনই একটু বেশি লাগে তখনই হা করে হাওয়া গিলে খায়।
এ কথা অবশ্য গাঁয়ের কেউ জানতে বাকি নেই।কেউ কেউ বাড়ি বয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, ” কি গো খুড়ো,প্যাট ভরলো?”
দুই ঠোঁটের ফাঁকে খানিক ফ্যাকাসে হাসি ছড়িয়ে রামনাথ বলে,” তা ভরিছে।”
লোকটা বলে,” খাও,খাও।আরে হাওয়া খাতি তো আর ট্যাকা লাগে না।”
রামনাথ বলে,” তাই তো।”
” আচ্ছা খুড়ো – “
” উঁ?”
” হাওয়ার সোয়াদ ডা ক্যামন কও দিনি?”
” সে কি আর কইয়ে বুঝানি যায়? খাইয়ে দ্যাক।”
লোকটা রামনাথের কথায় ফ্যাক ফ্যাক করে হাসে।বলে,” না গো খুড়ো, আমি খালি তো তুমার কম পইড়ে যাবে।তার চেইয়ে তুমি একাই খাও।”
বলে আর দাঁড়ায় না সে।যে পথ দিয়ে এসেছিল সেই পথ দিয়েই চলে যায়।আর সে চলে যেতেই দাওয়ার খুঁটিতে পিঠটাকে আরও একটু বেশি হেলান দিয়ে বসে রামনাথ আকাশ দ্যাখে।আকাশের রোদ দ্যাখে।পাখি দ্যাখে।আবার চোখ নামিয়ে দক্ষিণের মাঠ দ্যাখে। মাঠের ফসল দ্যাখে।চরে বেড়ানো গোরু-ছাগল দ্যাখে।হেঁটে যাওয়া মানুষ দ্যাখে।উড়ে যাওয়া পাখি দ্যাখে। দেখতে দেখতে আবারও হাওয়া গিলে খায়।
মনটা ঈষৎ খারাপ হয়ে যায় রামনাথের।তার মনে পড়ে যায় বৌ সুরোধনীর মুখ।সেই কত বছর আগে দ্যাখা।এখন আর অত ভালো করে মনেও পড়ে না।অথচ সংসারে নিজের বলতে একদিন কেবল ওই সুরোধনীই ছিল।গাঁ গেরাম ঘুরে টুরে এসে দাওয়ায় বসলেই কল থেকে আনা ঠান্ডা জলের গেলাসটা এগিয়ে দিত সুরোধনী।ভাত বেড়ে এনে সামনে দিত।খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে এলে গায়ের সাথে গা ঘেঁষে বসে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিত।বলতো,” এ্যাতো দূরি দূরির পথে না গে মানষের খ্যাত জমিনে কাজ করলি তো হয়।”
মাথা নাড়তো রামনাথ। বলতো,” ওসপ কাজ কত্তি আমার ভালো লাগে না।”
” ক্যান? ভালো লাগে না ক্যান?” জিজ্ঞেস করতো সুরোধনী।
রামনাথ বলতো,” পরের খ্যাত জমিনে কাজ করা মানে পরের গোলামি খাটা।”
” তা তুমি কোন রাজা মহারাজা শুনি যে পরের গোলামি কত্তি পারবা না?”
” রাজা কি খালি ধন সম্পত্তি থাকলি হওয়া যায়? মন থাকলিও রাজা হওয়া যায়।আমার মন আছে তাই আমিও রাজা।”
” থায়ো তুমি তুমার ওই মনের রাজত্ব নে’। কোনদিন দ্যাকপা তুমার রাজত্বি আছে কিন্তুক রাণী নাই।”
” মানে?”
” মানে যেদিক দুই চক্ষু যায় সেদিক চল্যে যাবো আমি।থাকপো না তুমার সঙে।”
এ কথা শুনে মনটা বড়ো খারাপ হয়ে যেত রামনাথের। জগৎ সংসারে আপনজন বলতে এই একজন মানুষইতো আছে রামনাথের।যার পাশে বসে চাট্টি সুখ-দুঃখের কথা কওয়া যায়।সুখ-দুঃখে যে পাশে থাকে।হাজারো কষ্টের শেষে বাড়ি ফিরে যার মুখটা দেখলে সব কষ্ট হারিয়ে যায়।এই একজনই তো কাছের মানুষ রামনাথের। বাপ-মা তো সেই কবেই মরেছে।কাকার সংসারে ছিল।তাও দূর ছাঁই করতো সবাই।বলা যায় ঠেলা, গুঁতো, এটোকাটা খেয়ে মানুষ রামনাথ।যা যেটুকু ভালোবাসা তা এই বৌ সুরোধনীর কাছ থেকেই পাওয়া।তা সেই বৌ-ই যদি বলে চলে যাওয়ার কথা তা রামনাথ সয় কেমন করে?
বৌয়ের হাত ধরে তাই রামনাথ বলতো,” এই কথা তুমি কইও না।তুমি না থাকলি আমিও যে বাঁচপো না।”
” এতই যদি বাঁচার সখ তাহলি যাও না, মানষের খ্যাতে গে কাজ করো না।কবে কুনঠে কার গোরু মরবে তার চামড়া ছাড়ায়ে বেচ্যে ট্যাকা পাবা ওতে সোংসার চলে?”
হ্যাঁ,রামনাথ একজন মুচি।ভালো কথায় বলতোে গেলে চর্মকার।তা গাঁ-গেরামে কে আর তাকে চর্মকার বলেছে।সবাই তো রামনাথকে বলে চামার রামনাথ। তো রামনাথ খানিক বড়ো হতেই বাপ-দাদার পেশা-ই বেছে নিয়েছিল। তখন দিনকালও অবশ্য ছিল অন্যরকম। গাঁয়ের মানুষ গোরু পুষে সুখ পেত। কিবা গরীব,কিবা বড়লোক।গোরু পুষতো সবাই।যে যত বড়োলোক তার গোরুও বেশি।ওদিকে আবার অসুখ বিসুখ হত পাল্লা দিয়ে। আজ এর গোরু মরছে তো কাল ওর।আর তা মরলেই খবর পৌঁছে যেত রামনাথের কাছে।যেন বা হাওয়ায় গন্ধও পেত সে।আর খবর পেলেই ছুরি নিয়ে বেরিয়ে পড়তো রামনাথ।খুঁজে খুঁজে ঠিক পৌঁছে যেত মড়া ফেলানো জায়গায়।তারপর খুব যত্ন করে চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে আসতো বাড়িতে।চামড়া তো নয় যেন সুখ নিয়ে আসতো।
তা সেই সুখের পেশাতেই একসময় সুখ কমতে লাগলো।লক্ষ্মীপুরের ভবেন মাষ্টারের ছেলে নন্দলাল কোত্থেকে পশু ডাক্তারি পাশ করে ফিরে এলো গাঁয়ে।সাথে কত ওষুধপত্র। গোরু-ছাগলের মরাও কমতে লাগলো।দিন পাল্টাতে লাগলো রামনাথের।আগে যেখানে বেরোলেই কিছু না কিছু নিয়ে ফিরতো রামনাথ দিনের পর দিন সে-ই ফিরতে লাগলো খালি হাতে।আর তা দেখে মেজাজ গরম হতে শুরু করলো সুরোধনীর।
সেদিন ছিল শেষ চৈত্রের এক পড়ন্ত বিকেল।আকাশে মেঘ ছিল না এতটুকু।যা ছিল তা কেবল রোদ আর রোদ।দুপুরের খরতা কমিয়ে অবশ্য সেই রোদ ক্রমশ নিজেকে নরম শরম করে এনেছিল অনেকটাই।কিন্তু রামনাথের মাথার মধ্যে ছিল সেই দুপুর বেলারই খরতা।সেই ভোর সকালে বেরিয়ে রোদভাজা হতে হতে সারাটা দিন মাঠে ঘাটে ঘুরেছে রামনাথ।গোরু তো গোরু একটা বাচ্চা ছাগলের সন্ধানও করতে পারেনি কোথাও।’ শালা গোরু ছাগলের মরা কি বন্ধ হইয়ে গেল? ‘ ভাবতে ভাবতে গাল দিয়েছে ভবেন মাষ্টারের ছেলেকে।বলেছে,” আর কুনো কাজ পালি নে? শ্যাষে গোরু-ছাগলের ডাক্তার হতি হল? এ্যাতোই যদি ডাক্তার হওয়ার সখ তাহলি মানষের ডাক্তার হতি পারতি।”
রামনাথের কথা অবশ্য নন্দলালের কানে যায়নি।নন্দলাল কেন,কোনও মানুষেরই কানে যায়নি।যা গেছে তা ওই রামনাথের কানেই।রামনাথ শুনেছে।আর শুনেছে চোতমাসের রোদ, দক্ষিণের হাওয়া, উড়ে যাওয়া পাখি, মাঠের ফসল, ঘাস-আগাছা, গাছপালা।ওরা কেউ না সমর্থন দিয়েছে তার কথায়, না কিছু বলেছে।আর তাতে রাগ আরও বেশি হয়েছে রামনাথের।’ শালা বেজম্মার দল ‘ গাল দিয়েছে রামনাথ।
মাঠঘাট, বনবাদাড়ে ঘুরে ঘুরে খালি হাতে ফিরে সবেই পিঠটাকে বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসেছে দাওয়ায় আর অমনি কোত্থেকে এসে সামনে দাঁড়িয়েছিল সুরোধনী,” হল তো? খালি হাতে আসতি হল তো?”
কোনওই উত্তর না দিয়ে ঘাড় কাত করে আকাশ দেখতে শুরু করেছিলো রামনাথ।যা দেখে আরও রেগে গিয়েছিল সুরোধনী।দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলেছিল,” অহন কথা কও না ক্যান? রাজা।ক’নে গেল তুমার রাজত্বি? বৌরে দুইবেলা ঠিকমতন খাতি দিতি পারে না সে আবার রাজা।ঘরে যে চাল বাড়ন্ত। ডাল,নুন কিছু নাই।সে খেয়াল আছে? এ্যাতো কই চামারি ছাড়ো মানষের খ্যাতে কাজ করো।তা না – “
কথাটা শেষ হল না সুরোধনীর।তার আগেই একলাফে দাওয়া থেকে নেমে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রামনাথ। চুলের মুঠি ধরে বার কতক মুড়ি ঝাঁকানো ঝাঁকিয়ে পিঠে খান কতক কিল-ঘুষি মেরে কোমরের কাছটায় এক লাথি দিয়ে উঠোনের মাঝখানে তাকে ছিটকে ফেলে দিয়ে ফের বেরিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে।যাওয়ার আগে আরেকবার তাকিয়ে দেখেছিল সুরোধনীকে।সুরোধনী তখন কোমরে হাত দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করছে।
সেই দেখা-ই শেষ দেখা রামনাথের।সন্ধেয় বাড়ি ফিরে আর দেখতে পায়নি বৌকে।কোথায় যে হারিয়ে গেল সে।আর এমন হারানোই হারালো যে এতগুলো বছরেও আর খুঁজে পেল না রামনাথ।
বৌয়ের খোঁজে শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিল রামনাথ। শ্বশুর মশাই বসতে তো দেয়-ই নি উল্টে বলেছিল,” তুমি বাপু বাড়ি যাও।”
রামনাথ কিছু বলতে যাচ্ছিলো।তার আগেই গোবিন্দ ঢালি ফের বলে উঠেছিল, ” তুমার মতন মানষের সাথে মেইয়ের বে ‘ দে ‘ ভুল করিচি।যে মানুষ দুইবেলার খাবার জোগাড় কত্তি পারে না – “
খালি হাতেই শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরেছিল রামনাথ।আর যায়নি ওমুখো।সুরোধনীও আর ফিরে আসেনি সংসারে।
সেই থেকে রামনাথ একেবারেই একা।না, ঠিক একা নয়।তার ছোট্ট একখানি ঘর আছে।ঘরের সামনে উঠোন আছে।উঠোনের পাশে হিমসাগর আমের একটা গাছ আছে।একজোড়া শালিক আছে।মাথার ওপর বড়ো একখানি আকাশ আছে।আর আছে একপেট খিদে। খিদেটা মাঝেমধ্যে দাঁত-নখ বের করে পেটের মধ্যে আঁচড়াতে থাকে।ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত হয় রামনাথ। সেই আঁচড়ে কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে রামনাথ চামড়া ছাড়ানোর ছুরিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।নিশ্চিন্দিেুর, বাঘমারা, সাতাশী, লক্ষ্মীপুর, ঘুঘুডাঙা, কৈখালি, মথুরাপুর, দিঘাড়ি – কত কত গাঁয়েই না যায় সে। মাঠঘাট ঘুরে কোনওদিন কিছু পায়।পায় না বেশিরভাগ দিনই।এখন আর গোরু-ছাগল তেমন মরে না।চারপাশে কত ডাক্তার। কত ওষুধ।রামনাথের তাই কোনওদিন খাবার জোটে।কোনওদিন জোটে না। যেদিন জোটে না সেদিন কেবল জল আর হাওয়া খেয়ে কাটায়।চারপাশে এত যে পাড়া প্রতিবেশী, কেউ তারা একবাটি শুকনো মুড়ি বা নুন-পানতা এগিয়ে দিয়ে বলে না,” নেও খুড়ো,খাও।”
আজকাল বৌটার কথা তাই ঘন ঘন মনে পড়ে রামনাথের।যদি তার কথা শুনে মানুষের খেত খোলায় গিয়ে মুনিষ খাটতো তাহলে এমন দিন কি দেখতে হত রামনাথের? বৌটাও কি যেত?
ঘুঘুডাঙার খালপাড়ে বুড়ো অশ্বত্থ গাছটার নিচে বসে পেছনের কথাগুলোই ভাবছিলো রামনাথ।দিন চারেক ভোগানোর পর জ্বরটা আজই ছাড়ান দিয়েছে তাকে।এই ক’দিনে পেটে একটা দানাও পড়েনি তার।খিদেয় তার পেট জ্বলছে।এখন দুপুর। সূর্য হেলতে শুরু করেছে। বোশেখের রোদের গায়ে যৌবনের খরতা।নির্মেঘ আকাশ থেকে ছলকে নামছে রোদ। সামনের মাঠ জুড়ে সেই রোদের খলবলানি।জনমনিষ্যি, গোরু-ছাগলের চিহ্ন নেই মাঠে।আজ কতদিন হয়ে গেল না আছে একফোটা মেঘ আর না হয়েছে বৃষ্টি। খেতের ফসল, মাঠের ঘাস পুড়ে একাকার।
পুড়ছে রামনাথও।খিদের আগুনে পুড়ছে।জ্বর মুখে ক’দিন তেমন খিদে অবশ্য ছিল না। কিন্তু সে ছাড়ান দিতেই রাক্ষুসি খিদেটা ঝাঁপিয়ে পড়েছে রামনাথের ওপর।একমুঠো ভাত বা নিদেনপক্ষে একবাটি মুড়ি হলে বেশ হত।কিন্তু কোথায় তা?
একপেট খিদে নিয়ে আকাশটার দিকে তাকালো রামনাথ।না, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশ তেমন দেখা যায় না।যা দেখা যায় তা ওই সামনের মাঠটার ওপর।রোদের যা ঝাঁঝ সেদিকে তাকাতেই চোখ যেন জ্বলে গেল রামনাথের।অগত্যা চোখ নামিয়ে নিল সে।
মাথার ওপর অশ্বত্থ গাছের ছায়া।মাঠ পেরিয়ে বয়ে আসা আগুনে হাওয়া সেই ছায়ার সংস্পর্শে আসতেই গলে জল।দারুন এক শরীর জুড়োনো অনুভূতি। কিন্তু শরীর জুড়োচ্ছে কই রামনাথের? খিদের আগুন দ্বিগুন বেগে জ্বলছে।জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সে আজ খাঁক করে দেবে বুঝি রামনাথকে।এমনিতে বুড়োটে শরীর।তার ওপর দিন কতকের উপোস।গা-গতর কাঁপছে এখন তার।নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।দুই চোখের কোনে কেমন একটা আড়ষ্টতা।
বসে বসে চারপাশটা দেখছিলো রামনাথ।হঠাৎই দূরে ওই মাঠটার ওপরে আকাশের দিকে চোখ গেল তার।কতগুলো কালো বিন্দু আপন খেয়ালে ভাসছে যেন বা।আরেকটু ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো রামনাথ।আর অমনি একটা খুশির ঝিলিক ছুঁয়ে গেল দুইচোখ।এতদিনের দেখা জিনিস চিনতে একেবারেই ভুল হল না রামনাথের।শকুন।হ্যাঁ,শকুন-ই ওগুলো। তার মানে গোরু মরেছে কারও।আর গোরু মরেছে মানে রামনাথ বেঁচেছে।হ্যাঁ, বেঁচে থাকার জন্য একপ্রকার ছুটতে লাগলো রামনাথ।
খালি পা।পায়ের নিচে শুকনো খরখরে মাটি।মাথার ওপর বোশেখের আগুনে রোদ।তবু ছুটতে লাগলো রামনাথ।অন্য কেউ এসে পড়ার আগে তাকে পৌঁছোতে হবে। পৌঁছোতে হবে শকুনগুলোর আগেও।
পৌঁছেও গেল রামনাথ।যা ভেবেছিল তাই।বেশ বড়োসড়ো একটা হালের গোরু।চামড়াটা পুরোই ভালো আছে এখনও।বেচতে পারলে ক’দিনের জন্য বেঁচে থাকা নিশ্চিন্ত। হ্যাঁ,আরও কয়েকটা দিন অন্তত বেঁচে থাকবে রামনাথ।
না, দেরি করার সময় নেই রামনাথের।এক মুহূর্ত তাকালো চারপাশে।তারপর কোমরে গুঁজে রাখা ছুরিটা বের করে মরা গোরুটার ওপর হামলে পড়ে তার চামড়া ছাড়াতে শুরু করে দিল।
শকুনগুলো এতক্ষণ মাথার ওপর চক্কর দিচ্ছিলো।এবার তারা নিচে নামতে শুরু করেছে।রামনাথের থেকে অল্পই দূরত্ব তাদের।সেখান থেকে লোভাতুর চোখে তাকিয়ে আছে মড়াটার দিকে। হয়তো বা রামনাথের দিকেও।আর এগিয়ে আসছে অল্প অল্প করে।যদিও সেদিকে তাকানোর মত সময় বা ধৈর্য্য কিছুই এখন রামনাথের নেই।তার গা কাঁপছে।হাত কাঁপছে।গলাটাও শুকিয়ে কাঠ।শরীরের সমস্ত শক্তি যেন এরইমধ্যে নিংড়ে নিয়েছে কেউ।
প্রাণপণে হাত চালাতে লাগলো রামনাথ। একসময় ছাড়িয়েও গেল চামড়াটা।আর ছাড়ানো হতেই এক দমকা হাওয়া এসে ছুঁয়ে গেল রামনাথকে।হঠাৎ যেন একরাশ গরমভাতের গন্ধ পেল সে।বুক ভরে শ্বাস টানতে গেল রামনাথ।কিন্তু এ কী? শরীর যে আর নড়ে না।সবকিছু কেমন অবশ হয়ে আসছে।দুইচোখে জড়ো হচ্ছে ঘুমের ঘোর।
আকাশের দিকে তাকাতে গেল রামনাথ।পারলো না।উল্টে ঘুরে পড়ে গেল।তা দেখে মাথার ওপরের আকাশটা খলবল করে উঠলো বুঝি বা।শকুনের ডানায় ঝটাপটির আওয়াজ।কেমন একটা বুনো গন্ধ ভেসে এলো নাকে।চারপাশটা দেখার চেষ্টা করলো একবার।কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না সে। চোখদু’টো বন্ধ হয়ে গিয়েছে কখন।ভীষণ ঘুম পাচ্ছে রামনাথের।
তবু একবার তাকালো রামনাথ।শরীরে যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট ছিল সবটুকু দুইচোখে জড়ো করে সে তাকালো।আর অমনি দেখতে পেল বুড়ো শকুনটা লোভাতুর দু’টো চোখ নিয়ে রামনাথের মুখের ওপর ঝুঁকে পড়েছে।
শুরু করলে আর নতুন করে কিছু ভাববার প্রয়োজন নেই। জেগে থাকো, হাঁটো কিংবা বিড়ি খাও…
Ismat Shilpi2025-03-30T20:27:10+00:00March 30, 2025|
কুন্টার মুক্তির আনন্দ
Sumon Biplob2025-03-30T10:38:17+00:00March 30, 2025|
গঙ্গা পাড়ের বৃত্তান্ত
Priyojit Ghosh2025-03-29T12:19:22+00:00March 29, 2025|
আমি ও জ্যোতি পোদ্দার
Jyuti Podder2025-03-30T09:42:15+00:00March 29, 2025|
চন্দ্রাগিরি
Sumanta Gupta2025-03-28T21:29:59+00:00March 28, 2025|
হোয়াইট আর্কেডিয়া এবং মেথুকীর গল্প
Syed Mahmud2025-03-28T21:30:01+00:00March 28, 2025|