ইংরাজি ম্যাডাম – নাসরিন জে রানি | পর্ব ১

By Published On: September 2, 2022
নাসরিন জে রানি 
গল্পকার, ছোট ও বড় গল্প লেখেন। ১৯৮৩-১৯৯৯ মফস্বলে থেকেছেন, ২০০০-২০১০ বিবিধ শহরে বেড়িয়েছেন, ২০১১- বর্তমানে বিশ্বের আনাচে কানাচে ঘুরছেন; বই পড়ছেন, নিজস্ব আঙ্গিকে চরিত্র-নির্ভর, মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস লেখার জন্য খুব ধীরে তৈরি হচ্ছেন।

ইংরাজি ম্যাডাম
নাসরিন জে রানি
পর্ব ১

চিনাবাদাম ভাজা খাইতে আমার মজা লাগে। সকালবেলা স্কুলগেটের উল্টাদিকে কাইয়ুম কাগু একটা ছোট খাচিতে কইরা বাদাম আর বুট বেচে। সেখান থিকা দশ টাকা দিয়া এক ঠোংগা বাদাম কিনলে সারাদিনের তেংরাতুংরা খিদাটা আর আমারে বেশি জ্বালাইতে পারে না। কবে জানি এক পেপারে পড়ছিলাম, বাদাম খাইলে শইল্লে অনেক শক্তি পাওয়া যায় আর পেটও ভরা থাকে অনেকক্ষন। কথাডা মিছা না।

প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় স্কুলের প্রথম কেলাসটা শুরু হয় নাম ডাকাডাকি পর্ব দিয়া। আমি প্রায়দিনই দেরি কইরা ফালাইতাম। গত সাময়িক পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ আহনের পর থিকা আম্মা ফজরের আজানের লগে লগে চিল্লাইয়া আমারে বিছানা থিকা তুইল্লা দেয়, ডাকাডাকি করে আর মসজিদে যাইয়া জামাতের লগে নামায পড়তে কয়। এই শীতের সকালে এই বেডিরে কেম্নে বুঝাই আমি, ঠান্ডা পানি দিয়া ওজু করতে কিরাম কষ্ট লাগে আমার।

রাইতে ঘুমাইতে যাওনের সময় একবার মুততে গেলে কত কম কম পানি দিয়া ধোয়াধুয়ির কামডা সাইড়া ফালানি যায়, এইডা আমারে শিখাইছে কামরুলে।

স্কুলের পিছে এই চিপা জায়গাডায় আইছি মুতার কতা কইয়াই ক্যাপ্টেন শফিকুলরে।শফিকুল একটা শয়তান পোলা, ওয় এমনে এমনে কাউরে বাইরে যাইতে দেয় না। পোংটা আছে ম্যালা। প্রতিদিন স্কুল থিকা কেলাসরুমে আমগোরে টিফিন দিলে, মাঝে মাঝে আমার ভাগের টিফিনডা ওরে খাইতে দেই।

শফিকুলের পেটে ম্যালা খিদা। দুইডা পরাটার ভিতরে সামাইন্য একদলা সুজির হালুয়া দিয়া ভাজ কইরা, এক একজন ছাত্ররে নাস্তা দেয় স্কুলের কমিটি। শফিকুল তিন কামড়েই ওই নাস্তা ওর বিশাল আক্ক-করা মুখের মইদ্দ্যে হাওয়া কইরা দেয়। গতকাইলের টিফিনডাও ওই খাইছে।

আমগো গেরামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বানিয়াকান্দা গেরামে। গেরাম থিকা ম্যালা আত্মীয়রা, হাসপাতালের ডাক্তার দেখানোর লেগা ঢাকা আসে, আমগো বাড়িতে ওঠে। আমার বাপ ছোটোখাটো একটা ব্যবসা করে। পয়সা কম। সন্দ্যায় একটা টেইলার্সে বসে। কাটিং মাস্টারি করে। বাপের, টাউনে, তিনজন পার্টনারের লগে, থান কাপড়ের ব্যবসা আছে।সিজনে ভালো বেচা-বিক্রি হয়। আমরা তিন ভাই আর দুই বইন। আমি আর ছোড্ড দুইডা ভাই স্কুলে পড়ি। বইনেগোরে মাদ্রাসায় দিসে। ছোটবেলা থিকাই পর্দা করে ওরা।

আইজকা বাসায় ম্যালা আত্মীয় আছে, দুইদিন আগে আইছে হেরা। হেগোর মইদ্যে একজনের পেট কাটতে অইবো। পেটে টিউমার অইছে। আমার এক মামা, টাউনের এক হাসপাতালে কনটাক্টরি করে। হেয় হাসপাতালে যে সব রোগীরা ডাক্তার দেখাইতে আসে আউটডোরে, হেগোর মাইদ্দে যাগোর অপারেশন আর টেস্ট-টুস্ট করা লাগে, হাসপাতালের অন্য ডিপারমেন্টের লোকেগো লগে কেম্নে জানি খাতির কইরা কম পয়সায় এইগুলা করাইয়া দেয়। হেইল্লেইগাই আগবর মামারে আত্মীয়রা ভালা গোনে।

আইজগা আমার ঘুম থিকা উঠতে দেরি হইয়া গেছে। ফজর নামায পড়তে যাইতারি নাই। এখন আম্মার সামনে পরলে কাঁচা গিল্লা খাইয়া-লাইবো।

তাই কোনমতে স্কুল ড্রেস আর ব্যাগটা কান্দে লইয়া বাসা থিকা বাইরে আইছি। স্কুলে আইয়া দেখি,সবায় তিন লম্বর পিরড চলতাছে।আরো একটা পিরড গেলে স্কুলের বুয়ায় টিফিনের সসম্যানডা লইয়া কেলাসে আইবো। আইজগার টিফিনও সফিকুল খাইবো এমনই সেটিং করা আছে।

 আর কয়দিন বাদেই ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হইবো। বই লইয়া পড়তে বইতে একটুকও ভালা লাগে না আমার। সারাদিন খালি শয়তানি করতে ইচ্ছা করে। তয় স্কুলে বইয়া থাকতে ভালা লাগে।

স্কুলের কেলাস বিল্ডিংয়ের পিছনের এই চিপা জায়গাডা, শফিকুলরে পেশাপ করার ছুতা দিয়া এইখানে আমরা আসি। এইখানে চুপ কইরা বইয়া থাকতে ভালাই লাগে।

বিল্ডিংয়ের ওয়ালে ডেলান দিয়া ঘুমাইয়া যাই মাঝে মাঝে। এই জায়গাডায় সব সময় ঠান্ডা একটা বাতাস থাকে। এইখানে এই ছ্যামায় বইলে শইলডা জুড়াইয়া যায়। কাইল রাইতে বাসায় কারেন্ট আছিলো না। আমি পাকাতে একটা আধোয়া চাইদ্দর দিয়া বিছানা পাইত্তা শুইছি। মশার জ্বালায় ঘুমাইতে পারি নাই। যে বুড়ার পেট কাটবো হের আবার কয়েলের ধুয়া সহ্য হয় না। এত মশা যে কই থিকা আহে। আর আছে তেইল্লাচুইরা, নখ আর চামড়া খায় ওরা।

Share:
5 1 vote
Rating
Subscribe
Notify of
guest

1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop