জীবন মানে গতি। সংস্কৃতি সেই গতিকে পরিশীলিত করে। জীবনকে নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টে বিচিত্রভাবে দেখতে সাহায্য করে। যে জীবন পুরোনোর ভিতে দাঁড়িয়ে নতুন সুন্দরকে স্বাগত জানায়, জীবনে সুন্দর ও সংস্কৃতির নতুন নতুন মাত্রা যোগ করে, সেই শিল্পিত জীবন আমাদের কাম্য। জীবনের মাঝে চাই নান্দনিক ছোঁয়া। যে সংস্কৃতির ছোঁয়া পেলে জীবন হয়ে ওঠে ছান্দিক, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে চলায় বলায় প্রকাশ পায় শিল্প। সেই সংস্কৃতির আনন্দযোগে মিলিত হতেই আমাদের যত প্রচেষ্টা।
শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিচর্চা শুধু নয়, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি আমাদের জীবনচর্যায় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। শিল্প সংস্কৃতির চর্চা তখনই সার্থক যখন তার প্রভাব আমাদের যাপিত জীবনেও প্রতিফলিত হয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই ‘নান্দিক’ এর দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হোক, এটি একান্তভাবে আকাক্সক্ষা করি।
‘নান্দিক’ পাঠকের রুচিকে ছুঁতে পারলে আমাদের সার্থকতা। ‘ভাষা ও সংস্কৃতির আনন্দযোগ’ আদর্শ ধারণ করে পথ চলে নান্দিক। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির পত্রিকা হিসেবে নান্দিক বরাবরই স্বতন্ত্র একটি স্থান চিহ্নিত করতে চায়। ইতোমধ্যে নান্দিকের যে সংখ্যাগুলো প্রকাশ হয়েছে, তাতে আশা করি আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পেরেছি। ‘নান্দিক’ ঐতিহ্যকে লালন করতে চায়, একই সঙ্গে ভবিষ্যতকে কাছে থেকে দেখতে চায়। দেখাতে চায়।
বিষয় বৈচিত্রের ধারাবাহিকতায় শিশু-কিশোর তরুণদের জন্যে বরাবরের মতো এ সংখ্যাতেও থাকছে ছোটদের জন্যে আলাদা পাতা ‘কৈশোর’। সাহিত্য সংস্কৃতি তথা জীবনচর্যায় সামাজিকভাবে একটি আলোকিত উঠোন। সেই লক্ষ্যে ‘নান্দিক পাঠাগার’ আলাদাভাবে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে আসছে। পাঠচক্র, পাঠ্য বইয়ের বাইরের বই পড়াতে আগ্রহ সৃষ্টি এবং শিক্ষা প্রতাষ্নগুলোতে পাঠচক্র করা।
আমরা জানি, সৃজনশীল চিন্তা, অধ্যবসায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন, মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধকরণ, শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অবক্ষয় রোধকল্পে পাঠাগার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আজকের কিশোর-তরুণই আগামীর চালিকাশক্তি। আজকের তরুণরাই গড়ে তুলতে পারে সুস্থ ও সুন্দর সমাজ। আর তা অবশ্যই সংস্কৃতির মাধ্যমে। তাই ‘ভাষা ও সংস্কৃতির আনন্দযোগ’ এই চেতনাকে সামনে রেখে দেশপ্রেমের প্রতি অমলিন শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসা ধারণ করে গড়ে উঠেছে ‘নান্দিক পাঠাগার’।
আরবান শিশু সহ মফস্বলের পিছিয়ে পড়া কিশোর-তরুণদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করা এ পাঠাগারের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং আদর্শিক জীবনবোধ সঞ্চার করে সচেতনতা গড়ে তোলা নান্দিক পাঠাগারের মূল উদ্দেশ্য।
নান্দিক পাঠাগার সাহিত্য চর্চা ও সংস্কৃতিচর্চার একটি সংস্থা, জ্ঞানের আশ্রম ও অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। শিশু কিশোর তরুণ যুবক এমনকি প্রবীণ নর-নারী নির্বিশেষে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যাতে সৃজনশীল সাহিত্যচর্চার সাথে যুক্ত থাকতে পারে এই লক্ষ্যে ‘নান্দিক পাঠাগার’ কাজ করবে। শিশুদের আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ পাঠাগার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আরো কিছু বাড়তি ভূমিকা পাঠাগারের রয়েছে। যেমন—
১. কিশোর-তরুণদের সচেতন, দেশপ্রেমিক ও বোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। পাশাপাশি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজের সকল ধরনের মানুষকে সাংস্কৃতিক বোধে উজ্জীবিত করা।
২. এই পাঠাগারে বই পড়া ও সাহিত্য সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষের সামাজিক অশিক্ষা, কুসংস্কার দূরীকরণ হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, সবার মাঝে পাঠ্যাভাস গড়ে তোলা এবং এই লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকবে।
৩. প্রযুক্তিগত সামাজিক অবক্ষয় রোধে পাঠাগারের লক্ষ্যে প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার ও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে উপযুক্ত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে।
৪. জনগণের মধ্যে পাঠসেবা প্রদানের মাধ্যমে মানবিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পরিশীলিত জীবন গঠনে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
৫. আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা প্রদান এবং এলাকাবাসীর জন্য বই পড়ার মাধ্যমে অবসর বিনোদনের সুষ্ঠ ব্যবস্থা করা হবে।
৬. জনগণের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
৭. এই পাঠাগার নিজস্ব উদ্যোগ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকা তথা দেশের সন্ত্রাস, অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কারের বিপরীতে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এবছর সাতে পা দিলো নান্দিক। দৈনন্দিন জীবনের হাজারো বাধা, অমসৃণ পথ পাড়ি দিয়ে এই চলমানতা অব্যহত থাকুক এইই চাওয়া। বিষয় বৈচিত্র, লেখা সংগ্রহ, ব্যয় নির্বাহসহ খুঁটিনাটি নানাদিক সামলে একটি পত্রিকা প্রকাশ সহজসাধ্য ব্যাপার নয়, এ তো মিথ্যা নয়। সবথেকে ভালো লাগার কথা নান্দিক চলছে। লেখক পাঠকের চমৎকার এক বোঝাপড়ায় রচিত নান্দিকের পথ চলা থামবে না, এটি বিশ্বাস হয়।
পাঠকের গ্রহণযোগ্য ভালোবাসায় নিজস্ব রুচিবোধ আর শ্রমচিহ্ন সার্থক হলে নান্দিক এগিয়ে যেতে পারবে, এটি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি।
ইসমত শিল্পী
সম্পাদক, নান্দিক
সভাপতি, নান্দিক পাঠাগার