অমর হোক মানুষের দিবস অমর হোক মহান মে

By Published On: May 1, 2025Views: 26

অমর হোক মানুষের দিবস অমর হোক মহান মে
মকসুদ মনি

১ মে, মহান মে দিবস। সেই আদি কাল থেকে আজকের এই কৃত্রিম বুদ্ধি বিকাশের যুগেও এই বিশ্বকে ঘাম-তাপ-শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানব জাতির যে শ্রেণি, সেই শ্রমিক শ্রেণির জন্য আজ গৌরবময় এক বিজয়ের দিন। ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের অনুপ্রেরনার দিন। 

ন্যায্য মজুরী আর বিরামহীন পরিশ্রমের শ্রম দাসত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল আজ থেকে কয়েকশত বছর আগে সেই ১৮৮৬ সালর ১মে আমেরিকার শিকাগো শহরে, শ্রমজীবী মানুষ– শ্রমিক জনতা। সেই সময়কার মিল কলকারখানায় শ্রমিকদের কাজ করতে হত দৈনিক ১০- ১২ ঘন্টা হতে ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত। কিন্তু সেই কাজের বিনিময়ে জুটতোনা জীবন চালানোর মত প্রয়োজনীয় মজুরী।  এই অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং তার বদলে মজুরী না পাওয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা অসন্তোষ জানাতে থাকে, প্রতিবাদ করতে থাকে। ন্যায্য মজুরি এবং দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রম সময় নির্ধারনের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। সেই প্রচন্ড এবং সংগঠিত শ্রমিকদের প্রতিবাদ আন্দোলনকে দমন করার জন্য তখনকার শাসক গোষ্ঠি শিল্প মালিকদের পক্ষ অবলম্বন করে। শ্রমিক সমাবেস প্রতিহত করার জন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী শ্রমিক সমাবেস ঘিরে রাখে। এইরকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ভিতরে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ে মারার অভিযোগ অযুহাতে মিল মালিকদের পক্ষের তাবেদার পুলিশ  বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর  গুলি চালিয়ে শ্রমিকদের আনাদোলনকে দমন করার অপচেষ্টা চালায়। রাজপথ সেদিন রক্তে ভেসে যায় শ্রমিকের রক্তে। ন্যায্যতার পক্ষে লড়াইয়ের অঙ্গিকারে রক্ত দিয়ে সমতার এক মহান সনদ রচনা করে সেদিনের শ্রমিক সমাজ। 

শ্রমিক হত্যার সেই ১৮৮৬ সালের ১ মে, বিশ্ব মানবতার এক মহান দিন। শ্রমিকের গৌরবময় লড়াই আর বিজয়ের স্মারক দিবস। কেননা এই দিন হতেই শ্রমিক শ্রেণির ৮ ঘন্টা শ্রম সময়ের দাবীটি বাস্তবায়নের ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর দেশে দেশে গড়ে উঠা শ্রমিক শ্রেণির পক্ষের সংগঠন এবং মানবিক সংস্থাসমুহ শ্রমিকদের এই দাবীর প্রতি সমর্থন করতে থাকে। ১মে শ্রমিকদের সেই আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দান এবং তা শ্রদ্ধার সাথে পালন করতে থাকে বিশ্বের প্রায় সকল জাতির মানুষ। এভাবেই  ১ মে আমাদের কাছে আজ বিশ্ব শ্রমিক দিবস-মহান মে  হিসাবে পালনীয়। 

মহান মে- গৌরব আর বিজয়ের যে অমরত্বের ইতিহাস, সেই ইতিহাস রচনার প্রথম দিন হতে আজকের এই সময় অবধি গৌরব আর পবিত্রতার পাশাপাশি নিপিড়ীত শ্রমজীবী শ্রমিক শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে প্রতারক দালাল আর শোষক শ্রেণির এক জঘন্য আঁতাতের ইতিহাসও বহন করে চলেছে। সেই ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সেদিন যখন উত্তাল শ্রমিক জনতা সাহস আর বিরত্বের প্রকাশ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, শ্রমিকদের সেই বিরত্বপুর্ণ প্রতিরোধ নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশকে গুলি বর্ষনের অযুহাত এনে দিয়েছিল কিছু দলছুট দালাল। যুগের পর যুগ ধরে চলছে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।  এখনো শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য মজুরি, বকেয়া বেতন, ছুটির অধিকারের দাবীতে আন্দোলন করে। মিল মালিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই তাঁদের পাওনাটা আদায় করতে হয়। সেই পাওনাটা আদায় করার জন্য রাজপথে লড়তে হয়। জীবন দিতে হয়। এখনো শ্রমিকের সেই ন্যায্য আন্দোলনের সাথে থাকা প্রতারক নেতারা শ্রমিকদের আন্দোলনকে পুজি করে মিলমালিকদের সাথে গোপন আঁতাত করে। সেই আঁতাতের সুযোগে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি মেরে দেয়। এখনো সেই ন্যায্য মুজুরির দাবীতে ক্রন্দনরত শ্রমিকের বুকে রাষ্ট্রীয় পুলিশ গুলি চালিয়ে রাজপথ ভিজিয়ে দেয় শ্রমিকের চোখের জল আর বুকের রক্তে! 

১ মে-মহান মে,  বিজয় আর লড়াইয়ের অঙ্গিকার দিবস। এই দিবস স্বার্থক সমৃদ্ধির দিবস সেদিনই হবে, যেদিন এই দেশের শ্রমিক-কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ তাদের নিজেদের ভিতর থেকে নিজেরাই নিজেদের নেতা নির্বাচন করতে শিখবে, সেই নেতৃত্বের ভিতরে আবার বেড়ে উঠা প্রতারকদের চিহ্নিত করার শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং সেই শিক্ষার নিয়মিত চর্চায় থাকবে তবেই শ্রমিক শ্রেণি তার এই প্রেরণার দিনকে প্রকৃত বিজয়ের মহান দিন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। 

১ মে,  মহান মে এদেশের ব্যাপক শ্রেণির মানুষের এক মহান বিজয়ের দিবস হিসাবে সত্যি সত্যি প্রতিষ্ঠা পাক। সেই প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চালু হোক। সেই বন্দোবস্তো চালুর সংগ্রাম জারি থাকুক। 

মহান মে অমর হোক।

মকসুদ মনি
সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি
জাতীয় গণতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশন
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments