নবান্ন – নুসরাত সুলতানা

By Published On: December 2, 2024Views: 21

বাঙালির অনিন্দ্য আবেগ আর আনন্দের নাম নবান্ন উৎসব
প্রারম্ভিক কথা:

নতুন ধানের চিড়া কুটি
নতুন ধানের খই
নতুন ধানের ভাত রেঁধেছি
পড়শিরা সব কই গেলিরে
পড়শিরা সব কই
ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া…
এমন অনেক লোকগান আছে আমাদের নতুন ধান ওঠা নিয়ে। বাঙালি জাতির উদ্ভব অনার্য গোষ্ঠী থেকে। কোল, ভীল, সাঁওতাল, কৈবর্ত এরাই বাঙালি জাতির পূর্ব পুরুষ। যারা মূলত পেশাগত ভাবে ছিল জেলে,কামার, কুমার এবং কৃষক। তাই ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- বাঙালির সমৃদ্ধির সাথে কৃষি উৎপাদনের একটা গভীর যোগসাজশ রয়েছে। আর বাঙালি সেই কারণেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মাছে-ভাতে বাঙালি। নদীতে ছিল মাছ, আর জমিতে হত ধান। এই ছিল বাঙালির আবাহমান সুখ। তাই নতুন চাল বরাবর বাঙালির জীবনে নিয়ে এসেছে অনাবিল সুখ ও আনন্দ।

নবান্ন উৎসবের ধরন ও প্রকৃতি :
নবান্ন শস্যভিত্তিক একটি লোকউৎসব। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় প্রধান শস্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে যেকোনো ঋতুতে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে আবাহমান কাল থেকে।  অধিক শস্যপ্রাপ্তি, বৃষ্টি, সন্তান ও পশুসম্পদ কামনা এ উৎসব প্রচলনের প্রধান কারণ।

উত্তর-পশ্চিম ভারতের ওয়াজিরাবাদে নবান্ন উৎসব পালিত হয় বৈশাখ মাসে। সেখানে রবিশস্য গম ঘরে তোলার আনন্দে এ বৈশাখী নবান্ন উৎসব পালন করা হয়। দক্ষিণ ভারতেও প্রচলিত আছে এমন ধরনের নবান্ন উৎসব। বাংলাদেশের কয়েকটি উপজাতিও তাদের প্রধান ফসল ঘরে তোলার পর নবান্ন উৎসব পালন করে। সাঁওতালরা পৌষ-মাঘ মাসে শীতকালীন প্রধান ফসল ঘরে তুলে উদ্যাপন করে সোহরায় উৎসব। তারা সাতদিন সাত রাত গানবাজনা এবং মদ্যপানের মাধ্যমে এ উৎসব পালন করে। উসুই উপজাতি অন্নদাত্রী লক্ষ্মীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে মাইলুকমা উৎসব পালন করে। জুম চাষি ম্রো উপজাতি চামোইনাত উৎসবে মুরগি বলি দিয়ে নতুন ধানের ভাতে সবাইকে ভূরিভোজন করায়। ফসল তোলার পর গারো উপজাতি ফল ও ফসলের প্রাচুর্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে পালন করে পানাহার ও নৃত্যগীতবহুল ওয়ানগাল্লা উৎসব।

বাংলাদেশে নবান্ন উৎসব পালন করত প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়। হেমন্তে আমন ধান কাটার পর অগ্রহায়ণ কিংবা পৌষ মাসে গৃহস্থরা এ উৎসব পালনে মেতে উঠত। উৎসবের প্রধান অঙ্গ ছিল নতুন চালে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করা। পরে দেবতা,  অগ্নি, কাক, ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-স্বজনদের নিবেদন করে গৃহকর্তা ও তার পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করতেন। এ উপলক্ষে বাড়ির প্রাঙ্গণে  আলপনা অাঁকা হতো। পিঠা-পায়েসের আদান-প্রদান এবং আত্মীয়-স্বজনের আগমনে পল্লীর প্রতিটি গৃহের পরিবেশ হয়ে উঠত মধুময়। সর্বত্র গুঁড়ি কোটার শব্দ, শাঁখের শব্দ ইত্যাদিতে গ্রামাঞ্চল হয়ে উঠত প্রাণবন্ত। পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়িতে-বাড়িতে বসত  কীর্তন,  পালাগান ও জারিগানের আসর। অগ্রহায়ণ মাসের উত্থান একাদশীতে মুখোশধারী বিভিন্ন দল রাতভর বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচগান করত। কৃষকরা নতুন ধান বিক্রি করে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ কিনত। বর্তমানে সেসবের অনেক কিছুই লোপ পেয়েছে। বিগত নব্বুইয়ের দশকেও মুসলিমদের ঘরে ঘরেও ছোট পরিসরে পালিত হত নবান্ন উৎসব। 

আমাদের নবান্ন উৎসবের স্বরুপ ও প্রকৃতি :  হিমহিম বাতাস আর হালকা শীতের আমেজ নিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে হেমন্তের আগমন হত। একদিকে শীতের শুরু আর অন্যদিকে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। গরমে সারাদিন পুকুর থেকে উঠতে চাইতাম না আমরা ছোটদের দল কেউই। কিন্তু হেমন্তের আগমনের সাথে সাথেই আমাদের গোসলের উলটা চিত্র। কেউই গোসল করব না। পুকুরের আশেপাশেই যাব না। তো আম্মু পুকুরের চারপাশে তাড়াতে তাড়াতে একসময় নিজেই ঝুপ করে পুকুরে লাফ দেব। কিন্তু গোসল শেষে হিমেল বাতাসের সাথে এক অদ্ভুত অপার্থিব শিরশিরে সুখানুভূতি। সে এই বৈশ্বিক উষ্ণতার যুগের হেমন্তে সেই অনুভূতি  টর্চ মেরে খুঁজে হয়রান হয়েও লাভ নেই আদতে। আসলে সেই অনুভূতি এই প্রজন্মকে বোঝানো অসম্ভব। 

তো আমরা যখন পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তখনই দেখতাম বাড়ির উঠান ভরে গেছে সোনালি ধানে। দিনমজুরদের বরিশালের ভাষায় বলা হত বদলা। আব্বু আম্মুকে বলত- চাইরজন বদলা লইছি। অরা দুপুরে ভাত খাইবে। আমার স্কুল শিক্ষিকা মা ছয় সন্তানের জননী। সেই কাকভোরে যখন শিশির নি:শর্তে সমর্পিত হচ্ছে মাটির বুকে তখন তিনি মাটির চুলায় দিনমজুরদের জন্য রান্না করতেন মশুর ডাল পাতলা করে, যেকোনো দেশী মাছ যেমন তোপসে, বেলে, কই, শিং, ভাত আর পাঁচমিশালী সবজি। ধান কাটা হলে শুরু হত মলন দেয়ার প্রস্তুতি। মলন দিতে আসতেন অধিকাংশ নারী শ্রমিক। এক পালা ধান মলে এক সের ধান পেতেন। দেখতাম আসতেন ফরিদা মামী, বিউটির মা চাচী, মুকুল ফুপু। এদের সাথে কখনো কখনো আমিও ধান মলেছি পা দিয়ে। কখনো কখনো গরু আর শ্রমিক দিয়ে মাড়ানি দেয়া হত। সেদিন বাড়িতে সাধারণত গরুর মাংস, ভাত, লাবড়া সবজি রান্না হত। নতুন ধানের ম ম করা গন্ধে একটা নেশা ধরে যেত আমাদের। আব্বুর চোখেমুখে দেখা যেত অনির্বচনীয় আনন্দ। আম্মুর পান খাওয়া ঠোঁট থাকত গাঢ় লাল। এখনো মানসচোক্ষে দেখতে  পাই সেই সেইসব পবিত্র আনন্দময় দৃশ্য। আর মনে হয় ইশ! যদি এমন দিন আবার কোনোদিন আসতো!

বাড়ির উঠানে ইট দিয়ে চুলা করে একটা বড় টিনে ধান সিদ্ধ হত। সেই আগুনে আমরা আটা, গুড় ইত্যাদি মিশিয়ে পুতা পোড়া খেতাম। 
ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে যেদিন ভাঙিয়ে আনা হত সেদিন ছিল আমাদের নবান্ন। আম্মু আতালের মুরগী জবাই করত। শুরুতে দেখতাম বাড়ির সব ছেলেমেয়েদের নিমন্ত্রণ থাকতো। তারপর ধীরে ধীরে দেখতাম- প্রত্যেক ঘরের ছোট সন্তানের নিমন্ত্রণ। একসাথে ছোট ছোট পাটি বিছিয়ে আমরা মাটির মেঝেতে খেতে বসতাম। খাওয়া শেষে কখনো পায়েস থাকত। আমরা নতুন চালের ভাতের মাড় খেতাম। ছোট বেলায় বলতাম- ফেন। কখনো সর্দি কাশি লাগলে আম্মু অই মাড়ের সাথে হলুদ এবং রসুন ভাজা মিশিয়ে দিতেন। আমাদের ঠান্ডা ভালো হয়ে যেত। আমার ছোট বোনটার যখন কেবল দুই -আড়াই বছর তখন সে ভাত খেতো না। খেত অই ভাতের মাড়। আম্মু মাঝে মাঝে পরিষ্কার পাত্রে মাড় ঝারতে ভুলে গেলে সেজ চাচীর কাছে ভাতের মাড় চেয়ে বলতেন – ভাবী মোর ছোড মাইয়ারে ফেন দিয়েন। ও তো ভাত খাইবে না। আবার সেজ আম্মা নিজেই ডেকে ওকে কখনো কখনো মাড়ের সাথে ভাত দিয়ে খাইয়ে দিতেন। এইরকম ছিল আমাদের হেমন্তের নবান্ন উৎসব।

মোটামুটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মানে পৌষ মাসে শুরু হত আরও বিভিন্ন দেশী জাতের ধান কাটার মরশুম। কত রকম ধান যে হত! এই যেমন কুমরাগইড়, গঞ্চি, চাউলা মগি, পাইজাম, সাক্কোরক্ষোরা, কালিজিরা আরও বেশ কয়েক প্রজাতির নাম মনে করতে পারছি না আর এখন।
কী যে অপূর্ব সুন্দর সেইসব ধানের ঘ্রাণ আর চেহারা। কুমরাগইড় ছিল হলুদ ছোট মোটা, পাইজাম ধান লম্বা লাল, সাক্কোক্ষোরা খুব ছোট -মোটা ও হলুদ,  গঞ্চি ধান ছিল লালচে লম্বা মোটা। কালিজিরা ধান ছিল কালো।

পৌষ মাসে বাড়ি বাড়ি চলত পিঠা পায়েসের উৎসব। পরীক্ষা শেষে বড় চাচারা যখন বাড়ি আসতেন তখন দেখতাম – চালের রুটি, রস চিতই, চুই পিঠা এসব হত একেকদিন একেক ঘরে। এছাড়া ঘরে ঘরে চলত মুড়ি ভাজার আয়োজন। গঞ্চি ধানের মুড়ি এবং চালের রুটি মিষ্টি লাগত। কুমরাগইড় ধানে মুড়ি হত ধবধবে সাদা।
খেজুরের রসের সাথে আমরা খেতাম মচমচে ভাজা মুড়ি। মুড়ি যখন মাটির হাড়িতে মা-চাচীরা ঢুলাতেন, আমরা বলতাম- লাউ কদু, ফুল কদু। মানে কদু ফুলের মতো সাদা মুড়ি হবে। কিন্তু আম্মু মুড়ি ভাজতেন গঞ্চি ধানের। তাই শত লাউ কদু বললেও মুড়ি সাদা হত না। মুড়ি হত লাল। কিন্তু কী যে অপূর্ব স্বাদ ছিল সেই মুড়ির!
কালিজিরা ধান দিয়ে পোলাও রান্না হত। আবার সাক্কোরক্ষোরা দিয়েও হত। যাদের এই ধান দুটো হত না তারা আবার পাইজাম চালের পোলাও রান্না করতেন। একটু মোটা এবং লম্বাটে পাইজাম চাল। মা-চাচীরা আবার মুড়ির জন্য, পোলাওয়ের জন্য ধান অদলবদল করতেন।

ঠিক পৌষ মাঘ মাসেই দেখতাম গাঁয়ের কিষাণীদের পরনে উঠেছে লাল-নীল -সবুজ তাঁতের শাড়ি। গাঁয়ের পথে পথে মাটি হাঁড়িতে করে মিষ্টি, মোয়া, খুরমার ফেরীওয়ালা। আমরা ধান বিক্রি করে সেসব মিষ্টি, খুরমা খেতাম। আবার দেখতাম – মাটির হাঁড়ি, ঢাকনা এসবের ফেরীওয়ালা। মা- চাচীদের দেখতাম মাটির ঢাকনা কিনতে। মুড়ি ভাজার জন্য মাটির হাড়ি কিনতে। এভাবেই ধান জড়িয়েছিল -আমাদের কৃষক, তাতি আর কুমারদের জীবনের সমৃদ্ধির সাথে। কিন্তু কোথায় সেসব দেশী ধান!

বিপন্ন কৃষি ও বিলুপ্ত প্রায় নবান্ন উৎসব : বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন, ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, উপকূলে লবনাক্ততা বৃদ্ধি কৃষির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে বিস্তীর্ণ এলাকায় স্বাভাবিক চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে না। দেশের ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এটি বড় ধরণের হুমকি।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্রের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফলে অতি বৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, বন্যা, তীব্র খরা, নদীর নাব্যতা সংকট, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের কারণেও অনেক জমিতে ফসল ফলানো দুরূহ হয়ে পড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ ছাড়াও বাংলাদেশের কৃষি বিপর্যয়ের জন্য অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন, নগরায়ন এবং শিল্পায়নও অনেকটা দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মানবসৃষ্ট কারণে প্রতিদিন গড়ে ২২০ একর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে গত ২০ বছরে কৃষি জমি কমেছে ৫০ লাখ একর।

লবনাক্ত এলাকায় উৎপাদন উপযোগী যেসব ধান তা নিয়েও কৃষকরা ভুগছেন নানাবিধ সমস্যায়। পাকার পর সামান্য ঝড়েই সব ধান পড়ে যায়। তাছাড়া লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকাতে কৃষি আবাদের জন্য বড় সমস্যা অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘের। প্রভাবশালীরা জোর করে কৃষি জমিতে চিংড়ী ঘের বানাচ্ছে। সেসব ঘেরে কৃত্রিম কায়দায় লবণ পানি ঢুকাচ্ছে। এর ফলে ধীরে ধীরে আবাদি জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় মূলতঃ অসহায় হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষতির শিকার হন। এছাড়াও নষ্ট হচ্ছে কৃষি পরিবেশ। বিলুপ্ত হয়েছে বিভিন্ন মিঠা পানির দেশী মাছ, দেশী ফল।

জলবায়ুর পরিবর্তন, বাড়তি জনসংখ্যা, পুঁজিবাদী আগ্রাসন এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে কৃষিতে চলে এসেছে হাইব্রিড প্রযুক্তি। বি আর-২৩, বি আর-২৮, বিআর -৮(আশা) এরকম বহু জাতের হাইব্রিড ধান কৃষিতে বিদ্যমান রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে এগুলো আমাদের বাড়তি জনসংখ্যার চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে একথা সত্য। কিন্তু ধ্বংস হয়েছে আমাদের নিজস্ব কৃষি পরিবেশ, খাদ্যের বৈচিত্র্য এবং কৃষি ঐতিহ্য।

সাম্রাজ্যবাদীরা সবসময়ই নানা অপকৌশলে বাজার দখল করে নিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের। আর তার সর্বশেষ বর্তমান ধাপ গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন। আমাদের বিভিন্ন সঙ্কটের কথা বলে- সাম্রাজ্যবাদীরা দখল করে নিয়েছে বীজের বাজার এবং কৃষি ঐতিহ্য ও পরিবেশ। যা চরম ধ্বংসাত্মক এবং চরম হতাশাব্যাঞ্জক।

শেষ কথা:
“প্রথম ফসল গেছে ঘরে,
হেমন্তের মাঠে – মাঠে ঝরে
শুধু শিশিরের জল;
অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে
হিম হয়ে আসে”
এমন অসংখ্য কবিতা হেমন্ত, নবান্ন এবং পাকা ফসল নিয়ে লিখেছেন বাংলার কবিরা। আবাহমান কাল ধরে আমাদের শ্বাশত কৃষি ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করে যে উৎপাদন সফলতা তাকে স্বাগত জানাতে হয় বেদনা ভরা চিত্তে। একথা সর্বৈব সত্য পরিবর্তিত বিশ্বে পরিবর্তন অনিবার্য । কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে বীজের বাজার তুলে না দিয়ে ঐতিহ্য সংরক্ষণ করেও
পরিবর্তনকে স্বাগত জানানো যায় কি না তা নিয়ে গবেষণার অপ্রতুলতা রয়েছে। আজ প্রচুর হাইব্রিড ধান হয় আমাদের কিন্তু আমরা সেই গঞ্চি ধানের মুড়ি পাই না। দেশী মাছের সালুন আর মোটা চালের ভাত পাই না। আর নবান্ন হয়ে গেছে কর্পোরেট বা দেখানো আনুষ্ঠানিক সংস্কৃতি। কৃষি ঐতিহ্য যতটুকু বিদ্যমান আছে তা সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি একথা অনস্বীকার্য।


Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop