শরীর নয় ছায়া আবছায়া হয়ে আসে
নিজের প্রতিচ্ছবি জলে দেখে নিজের প্রেমেই মুগ্ধ হয়ে-
সে জলে ডুবেই নার্সিসাস বিসর্জন দিয়েছিলো নিজেকে!
সেই থেকে ইকো দিশেহারা হয়ে জনরণ্যে দিক বিদিক –
প্রতি উত্তর দিয়ে দিয়ে খুঁজে ফেরে নার্সিসাসকে!
নিজের ছায়া নিজে বয়ে বেড়াই আমরা সকলে!
আমাদের সকলের ছায়ার মতো স্বীয় কৃতকর্মের বোঝাও বয়ে বেড়াই সর্বদা!
বাঁকে, ঝাকায় করে দ্বারে দ্বারে কুঁজো হয়ে ফিরি জনে জনে;
কেউ লাঘবের তরে এগিয়ে আসেনা!
আসেনি কোন দিন!
বস্তুত সকলেরই কৃতকর্মের ঝুলি বড্ড বেশি ভারি।
সিসিফাসের মতো নিজেকেই আমৃত্যু ঠেলে চলতে হয় নিজের অর্জিত পাথর!
কেউ থাকে না, কেউ থাকেনি কখনো কারো পাশে!
বিপদ কালীন ক্রশবিদ্ধ যীশুর পাশেও থাকেনি ঈশ্বর!
শুধু ছায়াকে অবলম্বন করে স্বীয় স্বত্বাকে টিকিয়ে রাখা!
এই সব…
এই সব শব দেহে নিয়ে ধীরে ধীরে – বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হওয়া ছাড়া –
আমাদের ভবিতব্য আর কিছু নেই!
অদিপাস তবু বেঁচে থাকে নির্মম জীবনের হাত ছানির তরে;
ভবিতব্য উপেক্ষা করতে পারে না!
পারেনি কেউ কোন কালে!
চোখ বাঁধা কলুর বলদ ঘুরছে কেবল পণ্ডশ্রমে
কিছু কথা বাকি থেকে যায়,
কিছু কথা চাপা পড়ে যায়,
কিছু কথা গলায় আটকে যায়,
সমান্য ইগো গ্রাস করে নেয় সে সব কথা গুলো!
কিছু জল জোয়ারের তোড়ে এসে আটকে যায় খানাখন্দে!
কিছু জল অশ্রু হয়ে ঝরে যায়, মিশে যায় বৃষ্টির দাপটে!
কিছু জল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় ঠিকানা হীন!
জীবনের ভাগে নোনাজলেরই আধিক্য সর্বদা!
শরীরতো শ্মশানেও মিশে যায়-
মনের মিল না হলে হীরে-জহরতের লোলুপতাও অমুলক!
নদীর জলে যে সুর বাজে –
নদীর কুলে বাঁক না পেলে কি তার ছিটেফোঁটাও ধারণ করে?
কথার ছলে
নদীর জলে
ফেলে আসা যুগল ছায়া জীবনের আর কোন বাঁকে কি মেলে?
গাছের ছালে ক্ষত করে লেখা,
স্কুলের দেয়ালে আমের আঁটি দিয়ে লেখা,
পাতলা পাথরের স্লেটের গায়ে সাদা চক খড়ি দিয়ে লেখা –
নাম গুলো কি আর কখনো লেখা যায়!
সময়ের স্রোতে ভেসে গেছি আমরা,
জীবনের জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে আমাদের সেইসব আবেগ!
নুহের প্লাবনের মতোই আমরা ফেলে এসেছি আমাদের –
যাবতীয় কাম, ক্রোধ, ভালোবাসা, ভালোলাগা!
এখন শুধুই চড়াই –
এখন শুধুই ছুটে চলা মরীচিকার পেছনে!
বস্তুত যে ছুটে চলার কোন মানেই নেই!
বস্তত যা এক কথায় পন্ডশ্রম!
অজেয় ইলোরা, ফোটেনি ক্যামেলিয়া
ইচ্ছে ছিল অজন্তা – ইলোরা থেকে তুলে এনে সাজাবো তোমাকে!
তুমি
হ্যাঁ তুমি
তুমি হবে মনের মতো করে গড়া কোন শিল্পীর পাথর খোদাই করা নারী মূর্তির
মতো;
আমি তাতে একটু আধটু সংযোজিত করবো!
এই যেমন ধরো বাম গালে একটা টোল থাকবে,
হাসলে ডানদিকের একটা গজদন্ত দেখা যাবে এইটুকুই!
অজন্তায় – ইলোরায় পাওয়া তোমাতে আর সবতো ঠিকঠাক আছেই!
চমৎকার দৈহিক গড়ন,
দৃষ্টি নন্দন চাহনি,
অমৃত যৌবন সব সব সবই নিপুন ভাবে রয়েছে!
ভাবতে ভাবতে একসময় ইলোরা চেখের পলকে মিলিয়ে গেলো!
অজন্তা গুটিয়ে নিলো নিজেকে!
আমার আর হয়ে উঠলো না –
মনের মতো গড়ে নেয়া, সাজিয়ে নেয়া!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই দামী দুর্লভ ক্যামেলিয়া আর ফুটলো না আমার আঙিনায়!
জলপাই পাতার মুকুট
লাল রাঙা জলপাই পাতার মতো আলগোছে অজন্তেই –
টুপটাপ খসে পড়ে মানুষ মানুষের জীবন থেকে।
যেমন খসে পড়েই মিলিয়ে যায় কোন দ্রুতগতির নক্ষত্র।
হামাগুড়ি দেয়ারো আগে থেকে কুঁজো হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে চলা অব্দি –
কতো মানুষইতো জড়িয়েছে জীবনে।
কেউ দৃষ্টিতে, কেউ স্পর্শে, কেউ শরীরে, কেউ মনে, কেউবা চলতি পথে!
আজ তারা সব কোথায়? নেই কেউ নেই!
যে যার গন্তব্য ঠিক রেখে এগিয়ে গেছে!
ঘাস লতা পেঁচিয়ে আংটি বানিয়ে যাকে পরিয়েছিলে একদিন অনামিকায়;
আজ তার অনামিকায় হীরের অংটি চমকায়!
জলপাই পাতায় বানানো মুকুট পরিয়ে যাকে একদিন রোমান সম্রাজ্ঞী ভেবেছিলে; তার
মাথার উপর সমস্ত সংসারের ভার!
আলগোছে আলগা হয়ে যায় আমাদের চলতি পথের বন্ধন!
আলগোছে আমরা সরে সরে যাই একে অন্যের থেকে!
অবলীলায় আমরা নিজেকে গুটিয়ে নেই শামুকের মতো!
লাল রঙা জলপাই পাতার মতো আলগোছে খসে পড়ি সবার অজান্তে,
নিরবে নিভৃতে মিশে যাই মাটির বুকে!
তস্কর নই তবু হরণ করি কতো কি
ইচ্ছে হলেই তস্করের মতো সিঁধ কেটে ঢুকে যাওয়া যায় না তোমার মনের ভিতর!
হাত বাড়লেই যেমন উড়ে যায় রঙিন প্রজাপতি;
তেমনি তুমিও হাওয়ায় মিলিয়ে যাও!
জিউসের মতো রূপ বদলে তোমার প্রিয় কোন রং হয়ে –
যেতে পারি না তোমার নাগালে!
এইসব অপূর্ণতা সর্বক্ষন ধাবিত করে পাতালের হেইডিসের দিকে!
ঈডেনের সাপের লকলকে জিহ্বা আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়।
পথে প্রান্তরে সম্মুখীন হই সারবেরাসের!
সমুখে অনিশ্চয়তা,
পেছনে ধাবমান যমদূত,
বর্তমান ঝুলে আছে নাকের ডগায়!
জন্মের প্রয়োজনে,
জীবনের প্রয়োজনে,
বেঁচে থাকার প্রয়োজনে –
শরীরে ধারণ করতে হয় নানা রঙা শরীর!
নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেকেই দাঁড় করিয়ে দিতে হয় আসামির কাঠগড়ায়!
এমন তো হতেই পারতো –
জাগতিক কোন কিছুই আমার দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হবে না কখনো!
হতেই তো পারতো!
পারতো না কি?!
ইরেজার হাতে তুমি, পেন্সিলে আঁকা প্রতিকৃতি আমার
সুনিপুণ তোমার হাতে রয়েছে চৌকষ ইরেজার।
চাইলেই তুমি নিপুন হাতের কোমল ঘর্ষনে মুছে দিতেই পারো –
এখানে ওখানে লিখে রাখা, লেগে থাকা আমার সকল স্মৃতি!
পাকস্থলী যেমন কোন অখাদ্য ভুলে গ্রহণ করে ফেললে উগড়ে দেয়;
তেমনি ভাবে কি ভুল মানুষ, ভুল সময়, ভুল স্মৃতি উগড়ে দিতে পারে মন?
পাশ ফিরে থাকা যায় শরীর বৃত্তে,
মনকি পাশ ফিরে থাকে!
বিস্মৃতির কোষে কোষে ঘুরে ফিরে বার বার প্রতিবারই স্মৃতির আনাগোনা।
মেঘের আড়াল হলেই সূর্য অস্তিত্ব হীন হয়ে যায় না!
মথের অক্লান্ত পথের জার্নি শেষ হলেই ডানা মেলে নানা রঙের প্রজাপতি জীবন!
জীবন সুন্দর!
স্বপ্ন সুন্দর!
বেঁচে থাকা সুন্দর!
একবার মরে জেনেছি বেঁচে থাকা আরো বেশি সুন্দর!
শরীরে লেখা যে শারীরক- কবিতা-গল্প তার নিজস্বতা,
স্বকীয়তা আছে; থাকবে চিরকাল!
মানুষের শরীর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যাভাস,
মানুষের মন পৃথিবী সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতার খাতা!
মানুষ হয়ে অযথা মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি করি!
কি হয় যদি আরো একটু লেগে লেগে থাকি, কাছাকাছি থাকি!
ইরেজার হাতে থাকলেই মুছে ফেলতে নেই সব কিছু!
ফুলের বোটায় আঙুল দিয়ে মুচড়ে ফেলাতো যায়-ই;
একটু অবলম্বন হলে ক্ষতি কি!