একটি খুনের আনন্দ (পর্ব ১) – মহসীন চৌধুরী জয়

By Published On: November 16, 2023Views: 123

রাত আমার ভীষণ প্রিয়। দীর্ঘ রাত হয় স্বপ্নের মতো গভীর। রাত প্রিয় হলেও প্রতিটি রাত আমার মতো করে আঁকতে পারি না। আঁকতে পারিনি বিগত কয়েক বছর। সেই প্রিয় রাতের পাশে বসেই আজ আঁকব বাস্তব জীবনের নির্মম এক ছবি। আমার রুমের ডান পাশের রুমে শুয়ে আছে বাবা-মা। ঘুম কি ওদের চোখে এসে জড়ো হবে? দীর্ঘশ্বাস কি শুয়ে নেই ওদের পাশে? পৃথিবী নিছক একটা খেলাঘর, ওদের চেয়ে ভালো আর কে জানে। বাম পাশের রুম এখন খালিই থাকে। বড়ো দুই বোন স্বপ্না ও চম্পা থাকত রুমটার গল্প জুড়ে। স্বপ্না আপার বিয়ের পর চম্পা আপা থাকত আশা কিংবা স্বপ্নের দৃশ্যপট পরিবর্তন করে। চম্পা আপার বিয়ের পর রুমটা খালি ছিল আশা-নিরাশার গল্পবিহীন।

আমি ও আমার ছোটো ভাই চয়ন থাকতাম এ রুমেই। ছোটো ভাইটা বড়ো হওয়ার পর আপাদের খালি রুমের দখল নেয়। ছোটো ভাইটা আরও বেশি বড়ো হওয়ার পর রুমটা আবার খালি হয়ে যায়। এসব কথা মনে হলে চোখের পানি বাঁধ মানে না। প্রকৃতির প্রতিশোধ হয়তো এমনই। মানুষ কত জোরে দৌড়াবে? প্রকৃতি চাইলেই থেমে যেতে হয়। স্তব্ধ হয়ে যায় গতি। আশা জাগানিয়া পৃথিবীতে নিশ্চল পড়ে থাকে স্বপ্ন। আকাশ ছোঁয়া যায়, আকাশ ভেঙে পড়ার পর।

মা চায়না চায়না বলে চিৎকারে ডেকে আমাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলছে। অথচ আজ জানলা দিয়ে তাকিয়ে দৃশ্যের পর দৃশ্য বুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। চাঁদের আলোর পাশে যে বাতাস আকাশ ছুঁয়েছে শীতল শরীরে, সে শীতলতা থেকে স্নিগ্ধতা নিই বরং। দূরে যে নদী দেখা যাচ্ছে চোখের আলোছায়ায়, সে নদীর ঢেউয়ের গল্প নেব। আমার ভাইটা যে ডুবে গেল অন্ধকারের গভীরে, সেই খাদের কথাও বলব। জীবন যে কত রকমের নির্মমতার ভেতর দিয়ে পাড়ি দিতে পারে তা এই সত্যকথনের মধ্য দিয়েই আপনারা জানতে পারবেন।

একদিন আমার ছোটো ভাই আমার গালে ঠাস করে চড় মেরে বসল! আমার আপন ছোটো ভাই। যে ছোটো ভাইকে ছাড়া আমি বেহেশতেও যেতে চাইনি সে সময়ে। কী নিদারুণ কষ্টে আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার গতিহীন দেহে মুখ কোনো কথা বলতে পারেনি। শুধু চোখ কথা বলে যাচ্ছিল ক্ষরণ-ভাষায়। আমি জানি, সেদিন থেকেই চয়নের পতনের গল্প শুরু। পরিবার নামক পরিশুদ্ধ বন্ধনের যে ছবি আমরা পরম যত্নে পরিষ্কার করে রাখি, সেখানে পড়ল পাশবিক থাবার আচড়। বাবা-মা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল সে দৃশ্য। বাবা কি ভয় পেয়েছিল শাসন করার? ছেলে তো বড়ো হয়ে গেছে। নাকি এ সামান্য চড়ে বড়ো কোনো অন্যায় হয়নি? আমিও কি বড়ো আপা হতে পারিনি? আমি হতবাক হয়ে মরমে মরে যাচ্ছিলাম। এখনো স্মৃতির মতো বিষণ্নতা নিত্যদিন কড়া নাড়ে আমার আত্মমর্যাদার দুয়ারে। আমি ক্লান্তি অনুভব করি। ছোট ভাই হয়ে যখন বড়ো বোনের গায়ে কেউ হাত তুলে তখন মনে হয় বাতাসে আকাশ ভেঙে পড়ছে, চিড় ধরা বন্ধনে। আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম, সে জানতে চাওয়াতে রাগ করেছিলাম, কিন্তু প্রকাশ করেছিলাম সামন্যই। আমারই ছোটো ভাই হয়ে আমার বান্ধবী রূপাকে কেন প্রেমের প্রস্তাব দিল? বড়ো বোনের বান্ধবী তো বড়ো বোনের মতোই। আমি কি আসলেই বড়ো বোন হতে পারিনি? কত দিন পর্যন্ত আমি ওর বড়ো ছিলাম? ওর কান্না দেখে যখন সারা দিন মন খারাপ করে বসে থাকতাম? ছোটো ভাইটার জ্বর এলে অস্থিরতায় আমার শরীরই যেন পুড়ে যায়, এখনো। কত দিন আমি ওর বড় বোন ছিলাম? যত দিন ও হাতেপায়ে ছোট ছিল?

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop