গঙ্গা পাড়ের বৃত্তান্ত
প্রিয়জিৎ ঘোষ
১
বুকের মধ্যে বসত করে দেশ
কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা
সেই যাওয়াটাই ছিল যাওয়ার শেষ
আর কোনওদিন হয়নি ঘরে ফেরা
উড়লো হাওয়ায় স্বাধীনতার সুখ
মানচিত্রে ওটা কিসের দাগ ?
দরজা থেকে বাড়িয়ে দিয়ে মুখ
শুনতে পেলাম, দেশ হয়েছে ভাগ
ছাড়তে হবে জন্মভুমির মাটি
এদেশ নাকি মুসলমানের বাড়ি
হিন্দু নামের যন্ত্রনাতে হাঁটি
ওঠা-পড়ায় নিঃশ্বাসও হয় ভারি
সামনে আঁকা আরেক দেশের ছবি
অপেক্ষমান অনিশ্চিতের ভয়
হিসেবতো নেই ! যা ছিল তার সবই
এখন থেকে আর আমাদের নয়
জমি-জিরেত বিলিয়ে দিয়ে চলি
সঙ্গী বলতে, ছলছলে দুই চোখ
নতুন দেশের নতুন শহরতলী !
ফুটপাতে শোয় হারিয়ে ফেলার শোক
বাবার কাঁধে তিনবছরের ভাই
মায়ের কোলে সদ্যজাত শিশু
পথের দাবী—পথেই আমার ঠাঁই
পথেই কাঁদে আঁতুরঘরের যীশু
দেশ তাহলে অলীক কোনো মায়া !
ইচ্ছে হলেই হারিয়ে ফেলা যায় ?
মানুষ চলে, চলেনা তার ছায়া,
মিছিলজুড়ে হাঁটছে মৃতপ্রায়
এমনি করেই হারিয়ে গেল দেশ
দেশের মাটি দেশের জল ও বায়ু
ঘাতক ধরেন ত্রাতার ছদ্মবেশ
খাদের ধারে হাঁফায় পরমায়ু
নতুন দেশের নতুন নতুন রীতি
‘বাঙাল’ আমার নতুন পরিচয়
গঙ্গাপাড়ের আজব পরিস্থিতি
হারিয়ে ফেলা দেশের মতো নয়
পর্ব-২
গঙ্গা পাড়ের বৃত্তান্ত
(বাঙাল চরিত)
“বাঙাল মনুষ্য নয়, উড়ো এক জন্তু
লাফ দিয়ে গাছে ওঠে, লেজ নেই কিন্তু…”
এমনই বিষাক্ত সব মুহুর্মূহু বাণ !
মুলুক পাল্টে গেছে, তার প্রতিদান
চাঁচের বেড়ার ঘরে বাঙালের বাস
ভাঙাচোরা দরজায় কড়া নাড়ে ত্রাস !
চাল নেই চুলো নেই নেই কোনো দেশ
প্রতিবেশে জেগে থাকে ঘৃণা আর দ্বেষ
রাতগুলো অভিনব…বিছানায় ভীড়
শরীর জাপটে শুয়ে আর এক শরীর
লজ্জা পেরিয়ে গেলে বাবা আর মা
কাঁথার ভিতরে মেয়ে ঘষে দুই পা…
যাযাবর জীবনেও রুটিরুজি লাগে
রিলিফে খুঁদের কুঁড়ো আমাদের ভাগে
কাজ খুঁজে শেষ হয় আরও এক দিন
রেটরিক-প্রসোডিতে আমরা স্বাধীন !
আমরা স্বাধীন আজ…স্বাধীনতা মানে
যার কোনও দেশ নেই সেও কী তা জানে ?
ভূগোলের কারসাজি লেখা ইতিহাসে
স্বাধীনতা পুড়ে যায় পথে ও প্রবাসে…