গোপন সাক্ষী
ইয়াছিন দেওয়ান
এক
আনমনে পথ চলতে চলতে অন্তরঙ্গ বন্ধুর সাথে দেখা হয় তাফু মোল্লার।
কিরে অনুভূতি কেমন?
আরে বন্ধু সেইরকম প্রশান্তির ঘুম গেলাম গত রাত।
তারপর ডাকাতিয়ার পাড়ে গিয়ে ডিভোর্স এর ইতিবৃত্তান্ত খুলে বলে।
কথা শুনতে শুনতে রাগে বন্ধু সোহেলের কপালে ভাঁজ পড়ে।
হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তাফু মোল্লা বলে ফেলে বিয়ের কয়েকদিনের পরের কথা।
শরীরে হাত দিতেই স্ত্রী তার দাঁতে দাঁত রেখে তাফু মোল্লাকে বলে উঠে” জানেন আপনি আমাকে স্পর্শ করলে আপনাকে একটা ধর্ষক মনেহয়।
সেই থেকে আমি আর স্ত্রী কাছে যাইনি । এমন কথা শুনলে কোন আদর্শ পুরুষ কি ঐ নারীর কাছে যেতে পারে?
কথাটা শোনা মাত্রই সোহেলের যেন চোখ কপালে উঠে যায়।
বলিস কি!
হুম। শুধু কি তাই বিয়ের প্রথম রাতেই তার ঘাড়ে হাত রাখতেই সে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলো।
সেদিন ভাবছিলাম নারী কোন পুরুষের প্রথম স্পর্শ পেয়ে হয়ত এমন করেছে।
এটাই হয়ত স্বাভাবিক। তাছাড়া সে অল্প বয়সী।
আমার তো ত্রিশ ছাড়িয়েছে।
মানসিকতা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে ভেবে রসিকতা শুরু করার চেষ্টা করলাম।
হঠাৎ বলে উঠলো শোনেন,আপনাকে আমি বিয়ে করেছি বাবার কারনে এবং ডিভোর্স দেওয়ার মন মানসিকতা নিয়েই বিয়েতে রাজী হয়েছি।
এখন যত তাড়াতাড়ি আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন ততই আপনার মঙ্গল।
সেদিন আর কথা আগাইনি। ওর মাকে কয়েকদিন পর আকার ইঙ্গিতে কিছু বলেছিলাম।
ওর বাবা,বোন,বান্ধবীর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ওর কারো সাথে সম্পর্ক নেই।
হতেই পারে না। ক্লাসমিট ছেলেদের সাথে কোনদিন রসিকতা করতে কেউ দেখেনি।
এমন নম্র,ভদ্র পুরো কলেজে ছিলো না। এগুলো জানার পর আর কাউকে কোনদিন কিছু বলিনি। সবকিছু নিরবে সয়ে গেছি।
ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেখতে দেখতে প্রায় দেড় বছর কেটে গেল। ও বিন্দু মাত্র ঠিক হলো না।
আমার বয়স কম হয়নি। ভবিষ্যৎ এর আশায় অত:পর ডিভোর্সটা দিয়েই দিলাম।
সামাজিকতার কারনে এবং ওর সম্মান বাঁচাতে নিজের অসুস্থতার দোহাই দিয়েছি।
মাগরিব’র আজান পড়তেই ওদের সেদিনের মতো জীবনের বাস্তব গল্প শেষ হয়।
দুই
প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে প্রথম বিয়েটাই তাফু মোল্লা দেরিতে করছিলো।
তাফু মোল্লার বাবা-মা কেউ নেই।
বর্তমানে বিয়ের মতো জটিল কাজ আর নেই।
অথচ এটি হওয়ার কথা ছিলো সহজ, সাবলীল।
একদিন বরকে সামাজিক রক্ষা করতে গিয়ে, আত্মীয়দের আপ্যয়ন করতে গিয়ে বাকি জীবন ঋণের বোঝা টানতে হয়!
তাফুর শারীরিক সমস্যা আছে এটি রটে গেছে বহু আগেই তাই দ্বিতীয় বিয়েটা করতে কষ্ট যেমন হয়েছে প্রতিবেশি, ঘটকদের পিছনে অর্থও প্রচুর ব্যয় হয়েছে।
অথচ অর্থের অভাবেই বয়সের ভার দ্বিগুন হয়েছিলো।
দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে তাফু মোল্লা কণ্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে।
শারীরিক সমস্যার রটনা কিছুটা কমে গেছে। সংসার ভালোই চলছিলো।
চার বছর পর তাফু মোল্লা দৌতলা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলো।
ঈদ উপলক্ষে স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো।
এভাবে এক মাস, দুই মাস যায় বউ আর আসে না।
এদিকে সবাই ফের রটনা শুরু করে দিয়েছে।
তাফু মোল্লার শারীরিক সমস্যার কারনে বউ চলে গেছে।
বউকে অনেকবার আনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে তাফু মোল্লা।
শালিশ হয়েছে শুশুড় বাড়িতে। বউ অভিযোগ করেছে তাফু মোল্লার নামে।
সে নাকি হঠাৎ বাজার-সদাই করে না। তার পরকীয়া আছে।
এদিকে তাফু মোল্লা সবাইকে বলে ইনকাম আগের মতো নেই।
তাছাড়া পাওনাদাররা চাপ দিয়েছে। শক্ত প্রমান না থাকা এবং তাফু ডিভোর্স দিতে নারাজ থাকা সত্বেও বিচার যায় মেয়ে পক্ষের দিকেই।
সবাই শারীরিক সমস্যা টেনে ধরে। তাফু মোল্লাও বাধ্য হয়েই ডিভোর্স দেয়।
তার এক সপ্তাহ পরেই তাফু মোল্লা রাতে মেয়েকে নিয়ে উদাও।এভাবে মাসখানেক কেটে যায়।
কেউ কোন খবর জানে না।
এলাকার প্রভাবশালী সুদখোর জিনিসপত্র নিতে এলে একটি পুরনো টাঙ্গ এর মধ্যে একটা ডায়রীর খুঁজে প্রায়।
সেখানে তাফু মোল্লার হাতের লেখায় দেখা যায় তাফু মোল্লার প্রথম স্ত্রীর এক সাথে স্কুল পড়ুয়া প্রবাসী প্রেমিকের সাথে প্রেম কাহিনী এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে শুশুড় বাড়ির ইয়াং মেম্বার এর সাথে গোপন প্রেমের ইতিবৃত্তান্ত।
বৃষ্টির রাতে অশোভনীয় দৃশ্য।
গোপন ডায়রীর তারিখ প্রমাণ করে সেই রাতেই তাফু মোল্লা স্ত্রী ও মেম্বার বিরুদ্ধে মামলা করতে যায় এবং সেই রাতেই সে উধাও হয়।