কুন্টার মুক্তির আনন্দ
মূল- অ্যালেক্স হ্যালি
অনুবাদ: সুমন বিপ্লব
দুজন সাদা মানুষ অনেক কাপড় নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। বন্দীদের বাঁধন খুলে দেওয়া হল। তারপর দেখিয়ে দেওয়া হল কিভাবে কাপড় পরতে হবে। একটি কাপড় দিয়ে নিচের অংশও অন্য কাপড় দিয়ে উপরের অংশ ঢাকল। কুন্টার শরিরের ঘা সেরে গেছে। কাপড় বাড়ছিল। সেই সাথে লোক বাড়ছিল। তারা দুঃখ ওরা হৃদয়ে বসেছিল। তারা জানে না তাদের ভাগ্যে কি আছে।
সাদা মানুষ এসে তিনজন বন্দিকে নিয়ে গেল। বাইরের আওয়াজ বদলে গেল। কুন্টা অবাক হয়ে শুনল।
স্বাস্থ্য ভাল কাজও ভাল করতে পারবে।
একজন সাদা মানুষ বলল,
: ৩৫০ ডলার।
: ৪০০ ডলার।
কুন্টার প্রথম সাদা মানুষের কন্ঠ শুনতে পেল।
: ৬ ! কে ৬ বলবেন ? তাকিয়ে দেখুন। কি বলবান লোক !
এসব কথা শুনে কুন্টার গা শিয়রে উঠল। ঘাম ঝরতে থাকে তার নিঃশ্বাস বন্দ হয়ে আসছিল। ৪ জন সাদা মানুষ ঘরে ঢুকতেই তার শরীর অসাড় হয়ে গেল। তার শরীরে হাত দেওয়া মাত্র রাগে চিৎকার দিয়ে উঠল।
সাদা মানুষ তাকে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারার সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে গেল। জ্ঞান ফিরলেই আর একজন কালো মানুষের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে বাইরে দাঁড় করিয়ে দিল।
চারিদিকে সাদা মানুষ। তারা মজা দেখছে। একজন বলল
: সদ্য গাছ থেকে পেড়ে আনা।
: বাদরের মত বুদ্ধি।
: সব শিখি নেওয়া যাবে।
একজন সাদা মানুষ কুন্টাকে দেখিয়ে বলল। তারপর তাকে জোর করে উঁচু স্থানে দাঁড় করিয়ে দিল।
একেবারে সরেস। ইচ্ছে মত গড়ে নেওয়া যাবে।
সাদা মানুষগুলি কুন্টার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে পরীক্ষা করছে। করুণ চোখে তাকানো ছাড়া কোন উপায় নেই।
: ৩০০ ডলার।
: ৩৫০ ডলার।
: ৫০০ ডলার।
: ৬০০ ডলার।
সাদা মানুষটা চিৎকার দিয়ে উঠল,
: বাজারের সেরা। তরুণ যুবক। কেউ কি ৭৫০ বলবেন ?
: ৭৫০ ডলার।
: ৮০০ ডলার।
: ৮৫০ ডলার।
দাম আর উঠল না। সাদা মানুষটা তাকে কিনে একজন কালো মানুষের হাতে শিকল দিল। কুন্টাকে টানতে টানতে একটি ৪ চাকার বাক্সের সামনে নিয়ে এলো। তাকে বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে শিকল বেঁধে রাখলো। সাদা মানুষ ও কালো মানুষটা গাড়ির উপরে উঠল। একটা পশু চলতে থাকল। এমনি বাক্সটি গড়িয়ে চলতে থাকলো। কুন্টা পরীক্ষা করল শক্ত শিকল দিয়ে বাঁধা হয়েছে ছেড়া সম্ভব নয়। একবার সাদা মানুষটার দিকে তাকালো। চোখ-চখি হতেই সে ভয় পেল। গাড়ি চলতে থাকল সে বাক্সের ভিতর থেকে নানা ফসলের ক্ষেত দেখতে পেল। সাদা ও কালো মানুষ রুটি আর মাংশ খাচ্ছিল। কুন্টার খুব ক্ষিধে পাচ্ছিল। কালো মানুষটা এক টুকরা দিতে চাইল। সে মুখ ফিরিয়ে নিল।
সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। পাশ দিয়ে আরেকটি গাড়ি থেকে দেখল। সে আরো দেখলো গাড়ির মধ্যে ছেড়া কাপড় পরা সাত জন কালো মানুষ। তারা সবাই দুঃখ ভরা হৃদয়ে বসে আছে। গাড়িটি এক সময় অন্ধকারে ছোট রাস্তায় প্রবেশ করল। দূরে একটি সাদা ঘর দেখতে পেল। মনে মনে এখানে হয়তো তাকে হত্যা করে খাওয়া হবে ?
গাড়ি এসে থামতে কুন্টা আরো কালো মানুষ দেখতে পেল। একজন নামতেই হাত মিলিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করল। কুন্টা দেখলো আরো কিছু কালো মানুষ এসে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। চালক কুন্টাকে নামতে বলল। তারা তাকে জোর করে নামালো। তারপর তাকে বেধে রাখলো।
সে একটা পশুর মত রাগে, দুখে হতাশায় পড়ে থাকলো। এ সময় খেতে দিল। পেটে ক্ষিধে কিন্তু সে খাবার গ্রহণ করল না। সেই কালো মানুষ গুলি হাসতে হাসতে চলে গেল। সে অপেক্ষা করতে থাকলো কখন সবাই ঘুমাবে।
সে পালাবে কিন্তু কিভাবে শিকল ভাংতে গেলেতো শব্দ হবে। একবার কয়েকজন এসে শিকল পরীক্ষা করে গেল। কুকুর এসে তার খাবার কেয়ে গেল।
সকাল হল। কালো লোকগুলি এসে তাকে আবার গাড়িতে উঠালো। গাড়ি বড় রাস্তা দিয়ে চলতে থাকল। মনে মনে তার খুব রাগ হচ্ছে। ওদের খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। গাড়ি একসময় বনের মধ্যে এলো। সাদা মানুষেরা বন পুড়িয়ে দিচ্ছে।
গাড়ি এক সময় থামল। কাঠের তৈরী একটি কুঠির। সামনে একখন্ড জমি। কুন্টা আরো কয়েকজন সাদা পুরুষ, মহিলা ও শিশু-কিশোর দেখতে পেল। মনে মনে ভাবল এটা সাদা মানুষের পরিবার। সে আন্দাজ করল এখানে আরো কালো মানুষের অন্ধকার কুঠির আছে।
কুন্টা দুই দিন উপোস। শরীর খুব দুর্বল লাগছিল। গাড়ি চলছে তখন রাত। একটি আলো ঝুলিয়ে দিল। খুব শীত। কুন্টার দিকে একজন একটি চাদর ছুড়ে দিল কিন্তু সে তা গ্রহণ করল না। তার মনে একটাই ভাবনা পালাতে হবে।
গাড়িটা বড় রাস্তা থেকে ছোট রাস্তায় ঢুকল। তারপর ভুতুরে সাদা একটি বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো। সাদা মানুষটা বাড়ির ভিরে গেল। কালো মানুষটা কুন্টার শিকল খুলে নিয়ে যেতে চাইল। সে হ্যাচকা টান দিয়ে শিকল ছাড়িয়ে নিল। তারপর কালো লোকটির গলা টিপে ধরল। কালো লোকটিও আμমণ করল। কুন্টার গায়ে হাতির মত শক্তি এলো। আরো জরে লোকটির গলা চেপে ধরল। এক সময় গলা দিয়ে গর গর শব্দ বের হয়ে এলো। আর নড়াতে পারলো না। কুন্টা দ্রুত সরে পড়লো। মুহুর্তে তার সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে গেল। মনটা ভরে গেল মুক্তির আনন্দে।