হোয়াইট আর্কেডিয়া এবং মেথুকীর গল্প

By Published On: March 28, 2025Views: 21

হোয়াইট আর্কেডিয়া এবং মেথুকীর গল্প
সৈয়দ মাহমুদ

মালদ্বীপ ছেড়ে আসা শ্রীলংকান এয়ারক্রাফ্ট সকাল ১১ টা ২০ মিনিটে কলম্বো এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলেও ভিসা ফি প্রদান, অন-এরাইভ্যাল ভিসা নিয়ে ইমিগ্রেশন শেষ করা এবং লোকাল কারেন্সি নিয়ে শ্রীলংকান SIM কিনে নেটে যুক্ত হতে দুপুর সাড়ে ১২টা হয়ে গেল। দিনটি ছিল শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩। সদ্য ফেলে আসা ভারত মহাসাগরের দিগন্তব্যাপি নীল ঢেউয়ের দোলা আর মালদ্বীপের স্নিগ্ধ প্রকৃতির মুগ্ধতার রেশ কাটতে না কাটতে আমাকে টানছে নির্জন এক ছোট্ট পাহাড়ী ভিলা ”হোয়াইট আর্কেডিয়া” । আগোডা ডট কম এর বুকিং ভাউচার থেকে পাওয়া ফোন নম্বরে কিছুতেই হোয়াইট আর্কেডিয়াতে রিচ করা গেল না। ওদেরকে জানানোর বিষয় ছিলো আমার পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে, তাই বুকিংটা যেন ক্যানসেল হয়ে না যায়।

কলম্বো থেকে এলা শহরের দূরত্ব ২৭২ কিলো মিটার হলেও পাহাড়ী পথ বলে যানবাহন ভেদে সময় লাগে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা। সপ্তাহে দু’দিন- শনি ও বৃহস্পতি “Ella Odyssey”- নামের ট্যুরিষ্টদের কাছে অতি জনপ্রিয় ট্রেনটি ভোর ৫.৫৫ তে কলম্বো ফোর্ট ষ্টেশন থেকে ছেড়ে Kandy হয়ে Badulla যায়। আমার গন্তব্য Badulla জেলার পাহাড়, ঝর্ণা, চা বাগান আর মনোরম প্রকৃতির ছোট্ট মায়াবী শহর এলা। যাত্রা শুরুর আগে দোটানায় ছিলাম নুয়ারা এলিয়া (Nuwara Eliya) যাবো নাকি এলা (Ella)! অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এলাতেই যাবো, ফিরতি পথে যদি ট্রেনের টিকেট পাই তবে নুয়ারা এলিয়া কিছুটা হলেও ট্রেন পথে দেখা যাবে। যাহোক কলম্বো এয়ারপোর্টের ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে ভাবছিলাম এলাতে কিভাবে যাবো। স্বপ্নের ট্রেন “Ella Odyssey” ভোর বেলাতেই চলে গেছে। দুপুরে ৩টায় একটা ট্রেন আছে, প্রতিদিন চলাচল করে। টিকেট আগেই বিক্রি হয় বলে উপস্থিত সময় টিকেট পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই তাই হয়ত বাসেই যেতে হবে।

হঠাৎ সেল ফোনের ইমেইল নোটিফিকেশনের শব্দে সচকিত হই, মেইল খুলে দেখি হোয়াইট আর্কেডিয়া কটেজ থেকে লিখেছে, আমি আসছি কিনা, সাথে যোগাযোগের জন্য একটা ফোন নম্বর দিয়েছে। এতক্ষণে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কটেজের নম্বরে ফোন করলাম। অপর প্রান্তে মেয়ে কন্ঠ, নাম কি বললো বুঝতে পারলাম না। বুকিং রেফারেন্স নম্বর দিয়ে জানালাম আমি এখন কলম্বো এয়ারপোর্টে, এলাতে কিভাবে যাবো তাই ভাবছি। এই কথাগুলো তাকে বোঝানো বেশ কষ্টকর হলো, মনে হলো ইংরেজিতে খুবই দূর্বল, ধীরে ধীরে একটা একটা করে শব্দ বোঝাতে হচ্ছে, এ ছাড়া আর উপায় কি, আমি তো সিংহলী জানিনা। তার কাছ থেকে যতটুকু জানলাম তার মর্মার্থ হলো, ভাল বাস পাওয়া যেতে পারে, তবে সব সময় চলাচল করে না, সাধারণ বাস ৪০ মিনিটের ব্যবধানে ছাড়ে, বাসগুলো Badulla যাবে, আমি যেন Badulla না গিয়ে কি যেন একটা জংশনের নাম বললো, সেখানে নেমে পড়ি। ফোনে কথা বলার পর বেশ ভরসা পেলাম, যোগাযোগ করার মতো একজন তো পাওয়া গেল।

আমার বুকের ভেতর পাহাড়ী পথের ট্রেনের শব্দ ঝিকঝিক করছে, ভাবলাম দেখাই যাক না দুপুর ৩টার ট্রেনের একটা টিকেট পাওয়া যায় কি না। এয়ারপোর্ট থেকে পথে নামলাম উবারে করে, কলম্বো ফোর্ট ষ্টেশন ২৩ কিঃমিঃ দূরে। বেলা আড়াইটায় টিকেট কাউন্টারে পৌঁছলাম, টিকেট নেই, রাত ৮টার ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাসের স্ট্যান্ডিং টিকেট পাওয়া যাবে। মনটা দমে গেল, রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে আবার সারারাত দাঁড়িয়ে যাবো! লাঞ্চ সেরে ছুটলাম বাস টর্মিনালে, সেখানেও হতাশাজনক সংবাদ- ৪ ঘন্টায় পৌঁছে দেয় এমন লাক্সারী বাস আছে তবে সেটি কখন আসবে, কখন আবার সেই বাসের যাত্রী পূর্ণ হবে, কখন ছাড়বে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, কারণ সেই রুটে বাস মাত্র ২টি, যাত্রী না পেলে ছাড়বেই না। একমাত্র উপায় সাধারণ বাস, সময় লাগবে ৭ ঘন্টা। দেখলাম যাত্রীঠাসা সেই বাসের একটি ছেড়ে দিয়েছে, আর একটি সময় হওয়ার অপেক্ষায় যাছে, যদিও সেটিও যাত্রী পূর্ণ হয়ে আছে। অগত্যা টিকেট কেটে শেষ সীটে গিয়ে বসলাম, পাশাপাশি ছয় জনের আসন। বাস ছাড়ার সময় বিকেল ৪ টা। সেদিন কলম্বোতে তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রী। বাস ছাড়বার আগেই আমি ঘেমে নেয়ে একশা, বাসে কোনো ফ্যান নেই। আমার বা পাশে বসা এক ভদ্রলোক, তার পর একটি ছোট জানালা, সেই জানালা গলিয়ে বাতাস ভেতরে আসে কি না বুঝবার অবকাশ নেই। ডানের জানালা আরও দূরে। বাসের চেহারা আটপৌরে। ভাবলাম বাস ছেড়ে দিলে হয়ত হাওয়া পাওয়া যাবে। সীটে বসা যাত্রীর পরও মাঝের প্যাসেজ ভর্তি করে যাত্রী নেয়া হলো, ঠিক সময়েই বাস ছেড়ে দিলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু কাংখিত হাওয়া আর মিললো না। আমি ঘামছি, কিছুক্ষণ পর পর বাস থামছে, নূতন যাত্রী উঠছে। পা ফেলার জায়গা নেই, কিন্তু প্রতিটা স্টপেজেই বাস কন্ডাক্টর কাউকে হতাশ করছে না। সেই তপ্ত এবং ঘর্মাক্ত অবস্থার মধ্যে আমি অনুধাবন করতে সমর্থ হলাম শ্রীলংকানদের সহমর্মিতা।

পরদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই দূর থেকে হয়ত মানুষেরা সপ্তাহান্তে ঘরে ফিরছে। কষ্ট করে একে অপরকে দাঁড়াবার জায়গা করে দিচ্ছে, দরজায় ঝুলে থাকা মানুষের ব্যাগটি নিয়ে নিজের কোলে রাখছে। ব্যাগ হারিয়ে যাওয়ার দুঃশ্চিন্তা ওদেরেকে বিচলিত করছে না।

অনেক দূরে গিয়ে নামার সময় হলে ব্যাগের সন্ধান করছে, দূর থেকে অন্যজন তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমার পায়ের কাছে নিজের ব্যাগটার অস্তিত্ব ভুলেই গিয়েছিলাম, সেটির উপর চেপে আছে আরও দুজনার ব্যাগ, আমার পায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুজন, দুপাশে সহযাত্রী, দুদিক থেকেই চাপে আছি, পা সামনে একটু ছড়িয়ে দেব তার উপায় রইল না।

আমাদের দেশের বাসযাত্রীর কথা মনে হলো, এভাবে মানুষ উঠাতে থাকলে তার কী প্রতিক্রিয়া হয়, কন্ডাক্টরদের প্রতি কেমন গালি বর্ষিত হয়। একজনের লাগেজের উপর অন্যজন রাখলে সেটি কী ধরণের আবহ তৈরি করে! অথচ এসব এখানে একদম স্বাভাবিক মনে হলো। সবাই একসাথে গায়ে গা লাগিয়ে বাড়ী ফিরছে বা আপন গন্তব্যে ছুঁটছে। সে নারী হোক আর পুরুষ হোক, সামান্যতম অস্বস্তি কাজ করছে না। আমি ঘেমে যাওয়া ক্লান্ত শরীরে চুপচাপ বসে নিজেকে ওদের মতো করে নিলাম। ওরা সবাই তো আমার মতই মানুষ, শুধু ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন। ওরা যা পারছে, তা আমি কেন পারবোনা! কিন্তু ৭ ঘন্টা সময় কি সহসা কাটবে!

রাত ৮টায় যাত্রা বিরতিতে এক কাপ চা ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হলো না। ঘর্মাক্ত শরীরে কিছু খেতে ইচ্ছে হলো না, তাছাড়া খাবার সব অচেনা-পিঠা জাতীয় খাবার দেখলাম। আবার যখন যাত্রা শুরু হলো তার পর থেকে পথে পথে লোকজন নেমে যেতে শুরু করলো, বেশ স্বস্তি অনুভব করতে লাগলাম। এর পর শীতল হাওয়ার অনুভূতি। ধীরে ধীরে শীত বাড়ছে, বাসটি চড়াই-উৎড়াই অতিক্রম করছে বিধায় মনে হলো পাহাড়ী পথে চলছি। কিন্তু রাতের বেলা জানালা গলিয়ে গাছপালা ছাড়া আর কিছু দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ক্রমেই শীতের তীব্রতা বাড়ছে, লোকজন ব্যাগ থেকে তুলনামূলক গরম কাপড় বের করে গায়ে চড়িয়ে নিচ্ছে। বাসের চেহারা দেখতে আটপৌরে হলেও সেটি যে খুব শক্তিশালী তা এখন বুঝতে পাচ্ছি- পাহাড়ী পথে কিভাবে ঢালু থেকে উপরে উঠে যাছে। উপরে ওঠার পর অনেক নীচুতে প্রদীপের মত ছোট ছোট আলো দেখা যাচ্ছে, সেগুলো লোকালায়। উপর থেকে দেখতে মনে হচ্ছে নীচে গভীর খাদে জ্বলছে প্রদীপ।

সহযাত্রীর কাছে জেনে নিলাম আমাকে নামতে হবে কুম্বলওয়েলা (Kumbalwela) জংশন, এলা রোডে। নতুবা বাস বদুল্লা চলে গেলে আবার এলাতে আসতে বেশ কষ্ট হবে, সময়ও লাগবে। সহযাত্রীটি বাস কন্ডাক্টরকে ডেকে আমাকে সঠিক জায়গায় যাতে নামিয়ে দেয়া হয় তা নিশ্চিত করে পথে নেমে গেলেন এবং আমাকে ফোন নম্বর দিতে ভুললেন না। বললেন যদি কোনে সমস্যায় হয়, তাহলে যেন ওনাকে ফোন করি। একজন বিদেশীর প্রতি ওনার আন্তরিকতা দেখে আমি ভীষণ মুগ্ধ হলাম। এই সহযাত্রী যাত্রা বিরতির সময় আমাকে চায়ের বিল দিতে দেননি।

রাত সাড়ে এগারটায় বাস কন্ডাক্টর বেশ খাতির করে আমাকে কুম্বলওয়েলা জংশন, এলা রোডে নামিয়ে দিয়ে গেল। যদিও বাসে বসে বেশ শীত করছিল, তথাপি বাস থেকে নেমেই মনে হলো শীতের রাজ্যে প্রবেশ করলাম। সেলফোনে দেখলাম ১৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা, অথচ কলম্বোতে ৩১। ভেবেছিলাম নেমেই কিছু একটা খেয়ে নেব, পেটের ভেতর তখন অজস্র ক্ষুধার্ত ইঁদুর লাফালাফি করছে। কিন্তু যেখানে নামলাম সেটি নির্জন এক মহাসড়ক মাত্র। হয়ত অদূরে কোথাও রেলওয়ে স্টেশন। কোনো দোকানপাট বা যানবাহন চোখে পড়ছে না, মেইনরোড থেকে দুদিকে দুটি রাস্তা নেমে গেছে, অদূরে কিছু ঘর-বাড়ী আর রোড লাইট সম্বল। নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছিল, কোথায় এলাম, কিভাবে এলায় যাবো ভাবছিলাম! কয়েক মিনিট পর দেখলাম এজন পথচারী শীতের কাপড় মুড়ি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলাম কিভাবে এলাতে যাবো? ভাগ্য সহায় বলে হয়ত ইংরেজি বুঝলেন, ইশারায় দেখালেন একটু দূরে গাছের ছায়ায় একটা টুকটুক (থ্রি-হুইলার অটো রিক্সা) দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা পার হয়ে কাছে গিয়ে দেখলাম ড্রাইভার কম্বল মুড়ি দিয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ডেকে তুলে বললাম আমার গন্তব্য, কিন্তু সে ঠিকানাটা বুঝতে পারলো না। অগত্যা হোয়াইট আর্কেডিয়াতে ফোন করে টুকটুক ড্রাইভারকে ধরিয়ে দিলাম। এবার সে বুঝতে পেরে যেতে রাজি হলো।

টুকটুক চলছে আলো-আঁধারী ভেদ করে আঁকাবাঁকা পথ ধরে, কিছুটা যাবার পর শুরু হলো সরু পাহাড়ী পথ, চড়াই-উৎরাই আর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। কখনো ভীষণ নির্জনতা- গাঢ় অন্ধকার, কখনোবা ছোট ছোট কটেজের স্বল্প আলো পেরিয়ে চলছে আমার টুকটুক। একবার মনের মধ্যে কিছুটা ভয় উঁকি দিয়ে গেল-এমন অচেনা জায়গায় এত রাতে একা যাচ্ছি, কোনো বিপদে পড়ছি নাতে! আবার মনে সাহস আনলাম, মনে হলো কিছুটা এডভেঞ্চার না থাকলে কি আর ভ্রমণে মজা পাওয়া যায়! অবশেষে অনেক গুলো ছোট বড় টিলা অতিক্রম করে আমার টুকটুক একটা কটেজের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। বারান্দায় আলো জ্বললেও আলো হাতে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কটেজের গেটে। আমি জানতে চাইলাম-এটাই হোয়াইট আর্কেডিয়া কিনা, যেহেতু কোনো নেমপ্লেট চোখে পড়ছে না। সম্মতি জানিয়ে ভেতরে আসতে বললো সেই মেয়ে, জানালো আমার জন্য অপেক্ষা করছে সে।

সুন্দর একটা গোছানো রুম, লাগোয়া বাথ এবং বারান্দা, শুধু এই। তবুও আমার কাছে মনে হলো এমন একটা নির্জন এলাকায়ই তো আমি থাকতে চেয়েছি পাহাড়ের উপর, বাহুল্যের কি দরকার! রাত তখন সাড়ে বারোটা, আমি ভীষণ ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত, সেই সকাল ৭টায় মালদ্বীপের মাফুশি আইল্যান্ড থেকে বোটে রওয়ানা দিয়েছি, তার পর মালে থেকে প্লেনে কলম্বো এবং বাসে দীর্ঘ যাত্রা, ক্লান্ত হবারই কথা। আমার কটেজের মালকীন মেথুকী একটা বাচ্চা মেয়ে, ওর স্বামী অজিথ দূরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে, হয়ত ইংরেজি কথা বলার অভ্যাস নেই, তাই কিছুটা ভীত সে। মেথুকীকে বলতে চাইলাম আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত, যদি কিছু খাবার থাকে যেন আমাকে দেয়া হয়, যদিও ওরা শুধু অ্যাকোমোডেশন প্রভাইড করার কথা। ও আমার কথা ঠিক বুঝলো না, একছুটে গিয়ে সেলফোনটা নিয়ে এলো, ভয়েস টু টেক্সট অ্যাপস অন করে আমাকে বলতে বললো। আমি ওর স্মার্টনেস দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। আমি ইংরেজিতে বলে গেলাম, যদি তোমাদের কাছে কিছু খাবার থাকে তাহলে আমাকে দাও, না থাকলে সমস্যা নেই, এ নিয়ে লজ্জিত হয়ো না। আর এতরাতে তোমাদেরকে বিরক্ত করার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। এবার সে আমার ভয়েস থেকে টেক্সট সহজেই পড়তে পারলো এবং চঞ্চলা হরিণীর মতো ছুটে চলে গেল, যেন এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না।

গরম জলে শাওয়ার নিয়ে নরম বিছানায় শরীর ছেড়ে দিয়েছি, এমন সময় দরজায় নক, মেথুকী এসেছে হাতে খাবারের ট্রে। বারান্দার টেবিলে রেখে আমাকে খেতে বললো। কাছে গিয়ে দেখি চারটে বড় সাইজের পাটিসাপটা, বৃহৎ সাইজের পেঁপের ফালি ২টা আর চায়ের সরঞ্জাম। কিছুক্ষণ আগে স্নানের সময় একটা শব্দ পাচ্ছিলাম, ঠিক যেমন আমাদের দেশ গ্রামে আগে ঢেঁকির শব্দ হতো। মেথুকী তাহলে এই এত রাতে আমার জন্য নারকেল পিঠার আয়োজন করছিল। ওদের বাড়ী আমার কটেজ থেকে কয়েক গজ দূরে সামান্য উঁচু টিলায়, তাই শব্দ পাচ্ছিলাম। এতটুকুন একটা মেয়ে সংসার পেতেছে, আবার ছোট একটা কটেজ বানিয়ে বিজনেস করছে, আমার মত ক্লায়েন্টকে এত রাতে এক্সট্রা সার্ভিস দিচ্ছে। আমার কেমন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করলো, মনে হলো বহুদিন পর দূরদেশে বিয়ে দেয়া ছোট্ট বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছি, আর বোনটি ভাইয়ের সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

রাতের খাবার সেরে বারান্দায় বসেছি চা নিয়ে, চারদিকে প্রচন্ড শব্দ করে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে, তার সাথে কিছু কুনো ব্যাঙ থেকে থেকে আওয়াজ দিচ্ছে আর কোনো এক ধরণের রাতের পাখির কলরবে মুখরিত হয়েছে চরাচর। কি পাখি হতে পারে, অনুমান করা গেল না। আমার সামনে সরু রাস্তার অপর প্রান্তে একটা ছোট টালির ঘর, তার পর ঢালু জায়গার ওপারে উঁচু টিলা আর গাছের সারি। নির্জন রাতের মায়ায় পড়ে গেলাম। বারান্দার আলো নিভিয়ে এই নির্জনতা উপভোগ করতে বেশ ভাল লাগলো। আমার ট্যুর গাইড কাম টুকটুক চালক পুব্বাকে মেসেজ দিয়ে রেখেছি সকাল সাড়ে সাতটায় আসতে। ওর সাথে আমার সারা দিনের ট্যুর প্ল্যান হয়ে আছে পরদিনের। বাকীটা রাত একটু না ঘুমালে চলবে কেন!

সকালবেলা স্নান সেরে রেডি হতে না হতেই মেথুকী নাশতা নিয়ে হাজির, যদিও ওদের ওখানে খাবার কথা ছিল না। ছোট বোনের মমতা মাখা আপ্যায়ন কি হেলা করা যায়! এবার আরো অবাক হলাম ওদের একটা বেবীও আছে দেখে, লজ্জায় সে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো। পুব্বা যথা সময়ে হাজির, ওর সাথে ইন্টারনেটে যোগাযোগ, বেশ চমৎকার ইংরেজি বলিয়ে ছেলে, আমি ওকে পছন্দ করে ফেললাম। পুব্বা Visual & Performing Arts এ ভার্সিটি গ্রাজুয়েট, পাশাপাশি এলাতে ভিনদেশী কেউ বেড়াতে এলে সে সাইট সিয়িংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে, ওর নিজের টুকটুক সার্ভিস আছে। পুরো নাম Pabudu Gimhana Sandaruwan, বাবা-মা পুব্বা (Pubba) ডাকে। এলাতে আসার আগে থেকেই আমি ওকে WhatsApp এ পুব্বা বলে সম্বোধন করার সম্মতি নিয়েছি।

কথা ছিল সকাল বেলার Nine Arch Bridge এর নিচ দিয়ে ছুটে আসা নীল রং ট্রেনটার প্রথম বেরিয়ে আসা এবং যাওয়া দেখবো, যেন মিস না হয়, তার পর অন্য সব। এলাতে এটাই বিদেশীদের অন্যতম আকর্ষণ। যথারীতি সকাল বেলাই সব ইউরোপিয়ান পর্যটকের মেলা বসেছে সেখানে, খুব কম সংখ্যক এশিয়ান দেখা মিলছে। ঠিক নয়টা বিশ মিনিটে কাংখিত নীলট্রেন সিটি দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে এলো, ট্রেনটা ক্যান্ডি থেকে পর্যটক বোঝাই হয়ে এলা সিটি ক্রস করে বদুল্লা যায় । মুহুর্তেই সবার ভিডিও করা, ছবি তোলার ধুম লেগে গেল, আমিও আর কম যাই কেন। পুব্বা আমার ভিডিও ধারণ করে দিলো। এরপর ছুটলাম Porowagala View Point, বেশ উঁচুতে, সেখান থেকে পুরো এলা শহরকে দেখা যায়। চারিদিকে হালকা কুয়াশা ঢাকা গাঢ় সবুজ আর সবুজ, সকালের আলোয় বেশ মনমুগ্ধকর দৃশ্য। ইতোমধ্যে কুয়াশার আবরণ অন্তর্হিত হয়ে ঈষৎ সোনালী রোদ হাসতে শুরু করেছে। নীচে অনেক টালির বাড়ী ঘর, বাগান, শব্জী ক্ষেত আর তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে আঁকা বাঁকা রেল লাইন।

এত উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছি যে সেখান থেকে ট্রেন দেখে মনে হচ্ছে একটা একটা করে সাপ চলে যাচ্ছে। উঁচু থেকে চার দিকের দৃশ্য আমাকে এতটাই আচ্ছন্ন করেছিল যে, ছবি তোলার জন্য চেস্ট ক্রস ব্যাগটা বড় পাথরের উপর রেখে কখন যে দূরে চলে গেছি- খেয়াল নেই।

ব্যাগে আমার পাসপোর্ট-টিকেট-ডলার-শ্রীলংকান রুপি। প্রায় এক ঘন্টা পর মনে হলো ব্যাগের কথা, আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবার যোগাড়, দৌঁড়ে গিয়ে দেখি ব্যাগ মহোদয় যথাস্থানে রয়েছেন। পুব্বা একটু দূরে গিয়ে বসে ছিলো, ওকে জানালাম আমার কান্ড, ও বললো, কেউ এখানে অন্যের ব্যাগে হাত দেবে না। বেশ অবাক হলাম নিজের দেশের সাথে তুলনা করে। আমার মনে হয় শুধু রাজধানী কলম্বোতে নির্দিষ্ট পেশার কিছু মানুষ ছাড়া অন্য কোথাও অপরের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না এ দেশের মানুষ।
পরের গন্তব্য ছিলো Kinellan Tea Factory, এর পর Dowa rock temple এবং Rawana Water Fall। কথিত আছে Dowa rock temple খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রাজা Walagamba নির্মাণ করেছিলেন। দু হাজার বছরেরও বেশী পুরোনো এই স্থানটি গভীর প্রশান্তিতে সময় কাটানোর এক মোক্ষম জায়গা। পাহাড়ের গায়ে ৩৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এক বুদ্ধ মূর্তি দৃশ্যমান। আরও আছে অতি প্রাচীন বটবৃক্ষ, যার বয়স অনুমান করা সম্ভব নয়। দেখবার মত অরও কিছু জায়গা ছিল কিন্তু সে সব কিছুটা দূরে বলে Rawana Water Fall দেখেই পুব্বা কে বললাম এখানেই ভ্রমণ সমাপ্ত করতে। কারণ আমার শরীর আর চলছিলো না। গত দিনের বাস জার্নিটা বেশ ক্লান্ত করে ফেলেছিলো। দুপুরে পুব্বার সাথে রেস্টুরেন্টে খেয়েছি, ওদের স্থানীয় খাবার কত্তু রুটি, বেশ ভালই লেগেছে। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ফিরে এলাম হোয়াইট আর্কেডিয়াতে। মাঝে একবার রেল স্টেশনে গেলাম পরদিন সকালের ক্যান্ডিগামী ট্রেনের টিকেটের জন্য। টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে যায়, তাই পেলাম না। পুব্বা আশার বাণী শোনালো, ”স্যার চিন্তা করবেন না, ট্রেন ছাড়ার কিছু আগে আপনাকে নিয়ে আসবো, সে সময় অনেকের ফেরত দেয়া টিকেট পাওয়া যায়। না হলে আমি আপনাকে বদুল্লায় নিয়ে গিয়ে বাসে তুলে দিয়ে আসবো।”
আমার ফেরার শব্দ পেয়ে মেথুকী বাসা থেকে বেরিয়ে এলো,” স্যার কফি খাবেন?” বললাম, না, পারলে চা খাওয়াও। শ্রীলংকা এসে চা না খেয়ে কফি কেন খাবো! রুমে গিয়ে দেখি সকাল বেলা তাড়াহুড়ো করে বেরুতে গিয়ে কাপড়-চোপড়, ব্যাগের জিনিষ পত্র যা এলোমেলো করে রেখে গিয়েছিলাম, তা সব গুছিয়ে টেবিলের এক পাশে রেখে বেশ পরিপাটি করে বিছানা গুছিয়ে রেখেছে মেথুকী। স্নানের পর বারান্দায় এসে দেখি চা রেডী। মেথুকী জানতে চাইল, রাতে বাইরে খাবো কি না। পুব্বাকে বলেছিলাম ফোন করলে চলে এসো রাতে একটু শহরটা ঘুরবো, রেস্টুরেন্টে খাবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর না বের হই। মেথুকীকে তাই বললাম, রাতে খাওয়াতে পারবে? ও সম্মতি জানালো, জানতে চাইল কি খেতে চাই। আমি বললাম, তোমার যা ইচ্ছে। সে বললো, চিকেন চলবে? আমি বললাম, নিশ্চয়ই। এই যে টুকরো-টাকরা কথা গুলো মেথুকী ইংরেজিতে ভালই চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ গতরাতে সে আমার কথা বোঝার জন্য ডিভাইস ব্যবহার করলো কেন? ক্লান্ত আমার কথা কি ওর কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল না, নাকি ও প্রথম আমার কথা শুনছিল বলে একটু নার্ভাস ছিল, জানিনা। মেথুকীর সাথে ওদের সংসার, সামাজিক অবস্থা, চারপাশের পরিবেশ এসব নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু ওকে ইংরেজিতে বলতে হবে বলে মনে হলো ওকে শুধু বিব্রতই করা হবে, আমি সিংহলীজ ভাষা জানলে ভাল হতো।

চায়ের কাপে চুমুক দিতেই মনের মাঝে একটা প্রশ্ন উকিঁ দিয়ে গেল, এই কটেজের নাম” হোয়াইট আর্কেডিয়া” কেন হলো। সেল ফোনে গুগল সার্চ করে মনে ধরার মত ব্যখ্যা পেলাম -” Arcadia is known for beautiful neighborhoods, warm character, and a “community of homes” atmosphere. The City places great emphasis on preserving “green space” and its commitment to the environment is evidenced by the large population of healthy trees around town”. এই পরিবেশের সাথে এত চমৎকারভাবে ব্যখ্যাটা মিলে যাবে ভাবিনি। আমার অবাক হবার পালা” আর্কেডিয়া” নামকরণের পেছনে মেথুকীদের ভাবনাটা কি ছিল। স্বল্প শিক্ষিত তরুন-তরুনী এত চমৎকার অর্থবহ একটা নাম বাছাই করলো কি করে!
টিনের চালে বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দে চমকে উঠি, কংক্রিটের বিল্ডিংয়ে টিনের চাল আসবে কোথা থেকে! উপরে তাকিয়ে দেখি চমৎকার ফল সিলিং, তাই টিনের চাল বোঝা যায়নি। কী চমৎকার আইডিয়া, আমার তো নষ্টালজিয়ায় পেয়ে বসলো। আমাকে আর পায় কে! প্রাণভরে বৃষ্টির ছন্দ উপভোগ করতে লেগেছি, সেলফোনে বাজিয়ে দিলাম রবীন্দ্র সঙ্গীতঃ

বাসনা যখন বিপুল ধুলায়
অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায়
ওহে পবিত্র, ওহে অনিদ্র
রুদ্র আলোকে এসো
জীবন যখন শুকায়ে যায়
করুণাধারায় এসো।

এই গানটাই কেন প্রথম শুনতে ইচ্ছে হলো, জানিনা। সন্ধায় বেরুনোর কথা মন থেকে তাড়িয়ে দিলাম। পুব্বাকে টেক্সট করে জানিয়ে দিলাম সকাল বেলা এসে ষ্টেশনে নিয়ে যেতে। শহরে গেলে হয়ত আরও অনেক কিছু দেখা হতো, জমজমাট রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, ইরোপিয়ানদের আড্ডা, রাতের খাবার- মন আমার সে সবের কিছুই চাইছে না। এখন সে প্রচন্ড বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রণহীন এবং বোহেমিয়ান হয়ে উঠেছে।

এই যে আমি বসে আছি, কেন বসে আছি জানিনা। কিছুই করবো না, কোথাও যাবো না। ভাবছি, কি ভাবছি জানিনা। কতদিন পর এমন নির্জন একটা পাহাড়ে একাকী বসে আছি, কোথাও কেউ নেই। বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দে মুখর হয়েছে ধরণী। গাছ-পালা জলে ভিজে ভিজে কেমন সতেজ হয়ে দুলছে এদিক থেকে সেদিক।

দূরে পাহাড়ের উঁচু টিলার বুকে সূর্যর নিভু নিভু রক্তিম আভা। আমার চারপাশে আঁধার নামতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর হোয়াইট আর্কেডিয়ার সমুখের সরু পথ বেয়ে আমি হাঁটতে শুরু করি, সদ্য সমাপ্ত বৃষ্টির পর মৃদু ঠান্ডা হাওয়া আমার চলার গতি মন্থর করতে পারে না বরং তা আরো বাড়িয়ে দেয়। মনে হলো আমি হেঁটে চলেছি শতাব্দী প্রাচীন কোনো অরণ্যের মাঝ দিয়ে একাকী। যেখানে যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল নেই, চিৎকার নেই, হিংসা-দ্বেষ-বিভেদ নেই, একে অপরকে আক্রমণ নেই, কুটিল রাজনীতি নেই। আছে শুধু স্নিগ্ধ সবুজ সতেজ প্রকৃতি-অন্তহীন প্রাণশক্তির উৎস। পেছনে কটেজের বারান্দায় পড়ে রইল আমার সেলফোন, রুমের দরজা খোলা, আমি সেসব গ্রাহ্যই করিনা। আমার ভেতরে এক শিরশিরে শিহরণ জেগে ওঠে- আমি তো এখন সিংহল সমুদ্রবেষ্টিত ভূখন্ডের পথে পথে ঘুরছি নিশিথের অন্ধকারে, মালয় সাগর কতদূরে…!

পরদিন সকাল ৬টায় পুব্বা আসে আমাকে নিতে। সেই সাত সকালে মেথুকী চা-বিস্কিট এনে সাধছে। আগের রাতে বলেছি সকাল বেলা কিছু করতে হবে না, আমি পথে নাশতা করে নেব। ওদের সব বিল চুকিয়ে দেয়ার সময় মেথুকীর স্বামী অজিথ কাছাকাছি এসেছিল। বিদায়বেলা তাকে আর দেখছি না। মেথুকী বিদায় জানিয়ে বললো, please come again sir. আমি বলি please call me brother. মেথুকী মনে হলো কিছুটা আপ্লুত, আমারও কি চোখ ভিজে আসছে দূর প্রবাসী ছোট বোনকে ছেড়ে যাচ্ছি বলে। মনে হলো আর কি কখনো আসবো এখানে! যদি এলাতে কখনো আসা হয় নিশ্চয়ই মেথুকীর সাথে দেখা হবে। স্টেশনে গিয়ে সত্যিই ক্যান্ডির টিকেট পেলাম তবে তা দ্বিতীয় শ্রেনির। পুব্বাকে বললাম হয়ত আবার দেখা হবে। ওদের রেলের দ্বিতীয় শ্রেনি বেশ চমৎকার। প্রশস্ত সব আসন, দাঁড়ানো লোক নেই, বলতে গেলে সবাই প্রায় ট্যুরিস্ট-ইউরোপিয়ান। পুব্বার কাছে শুনেছি কোনো এক ইউরোপিয়ান দম্পতি ২০১৭ সালে এলাতে প্রথম বেড়াতে এসে মুগ্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই ইউরোপিয়ানদের পদচারণায় মুখর হয়ে যায় এলা, শহরটা হয়ে উঠে পর্যটন শহর। ট্রেন ছেড়ে দেবার পর মনে হলো সত্যিই ”ক্যান্ডি থেকে এলা” হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে সুন্দর ট্রেন ভ্রমণের একটি। সবুজ চা বাগান, জলপ্রপাত আর টানেলের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। দেখতে দেখতে Nanu Oya, Nuwara Eliya এর মত বিখ্যাত সব চা সমৃদ্ধ জায়গা অতিক্রম করছে। পর্যটকদের উচ্ছ্বাস, বাচ্চাদের গান-করতালিতে মুখর হয়ে উঠলো রেলের কামরা গুলো। সবার হাতে হাতে সেলফোন, তুলছে ছবি, ভিডিও করছে, কেউবা ভিডিও কলে দেশের আপন জনকে দেখাচ্ছে সুন্দর প্রকৃতি। আমার হাতেও সেল ফোন উঠে আসে। ছবি নেবার জন্য জানালা বরাবর তাক করতেই সেল ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে মেথুকীর আবছা ম্লান মুখ, বলছে সে ”Please come again brother”. আমি বলি, হয়তবা- কোনো একদিন, হয়তবা না, তুমি ভাল থেকো মেথুকী। আমার আর ছবি তোলা হয় না,জানালার বাইরে ঘোর লাগা ঘন সবুজের মাঝে ডুবে যাই।

0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments