তাহিতিয়ান আফ্রোদিতি
মাহবুবুল ইসলাম
অন্তত জলরাশি
সমুখে তোমার অনন্ত জলরাশি,
তারও ওপারে অস্তমান সূর্যের মতো
তুমি আছো স্বত্বা জুড়ে!
একিলিসের দুর্বলতা নিয়ে দিন মান অপেক্ষায় কাটে সময়ের চরকা।
আদিম কসরতের শব্দ যেন দূর থেকে ভেসে আসে কানে জলতরঙ্গের মতো!
অস্তমিত সূর্যের আলোয় লাল আকাশ মিলে যায় তোমার শাড়ির আঁচলে।
আজলা ভরে তৃষিতের মতো পান করতে উন্মুখ।
ইকারুস ডানায় উড়ে যায় মন,
তোমায় ঘিরে সোনালী ডানার চিলের মতো উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে আঁকে বৃত্ত।
ডুডলস ধাঁধায় তবু বার-বার আটকে যায় গতিপথ।
শঙ্খের শব্দের মতো এক টানা ডেকে চলে তোমার নাম ধরে এক কাঁচপোকা।
নুপুরের মতো লোনাজল পায়ে পায়ে লেগে থাকে।
ভেনাসেরও জন্ম হয়েছিলো গভীর সমুদ্রে।
তুমি কি ভেনাসের জমজ!
নাভীমূলের সুনিপুণ টোল তোমার গন্ডদেশে
শ্রাবস্তির কারুকার্যে এতোটুকু অবহেলা ছিলো না তোমার নিপুন টোলে!
তোমার নাভীমূলের আদলে নিটোল অবয়ব তুলে ধরেছেন গন্ডদেশ জুড়ে।
রক্ত জবার মতো ঠোঁট সালভাদর দালির পেইন্টিংএর মতো গলে পড়লেই; স্পষ্ট হয়ে উঠে
তোমার গন্ডদেশের নাভীমূলের সৌন্দর্য!
তুমি কি কখনো হেলেনের আয়নায় দেখেছো তোমায়!
প্যারিস কি তোমাতেই নিবেদন করেছিলো তার প্রেম – কাম!
তুমি কি পেয়েছিলে কখনো অর্ফিউসের পেগাসাস; তুমি কি আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়াও!
কুয়াশাচ্ছন্ন কোন শীতের রাতে কি এসে ছিলে আবছায়া শীতল স্পর্শ হয়ে!
তুমি কি সিসিফাসের মতো এক টানা পাথর ঠেলে চলেছো জীবন ভর!
তুমি কি দেবিদের দেবী ছিলে কখনো!
নাকি
তুমি স্বর্গের অপ্সরা মেনকা!
তাহলে কে এসে ধ্যান ভগ্ন করলো তপস্যারত মুনির!
কে তুমি শ্রাবস্তির নিটোল কারো কার্য খচিত মেয়ে; কে তুমি!
ফিরে যায় অবিনশ্বর মায়া
মুখ ফিরিয়ে চলে গেলে দেবী; পেছনে পড়ে থাকে শুধু মুনি দুর্বাসার অভিশপ্ত ভষ্ম।
অথচ আলগোছে আঁজলা ভরে নিলেই জুটে যেতো স্বর্গের সুখ!
মিথের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ আছে অনাহুত মানব ভাগ্যের পরিহাসের ইতিহাস।
কখনো দেব কখনো দেবী কি বিভৎস খেলায় মেতেছে মানবের জীবন নিয়ে!
তুমি তো সমুদ্র দেবী; তোমার লহরিতে লহরিতে মিশে আছে যেমন প্রেম তেমনি অতলের
বিভীষিকা!
তুমি চাইলেই ভাসিয়ে দিতে পারো প্রেমে; তুমি চাইলেই সপ্তসিন্ধু ডুবিয়ে দিতে পারো
চোখের পলকে।
ফিরে চলে গেলে দেবী; অবশিষ্ট থাকে না কিছুই।
শামুকের, ঝিনুকের মরা খোলসের মতোই পড়ে থাকে জীবন এখানে সেখানে।
তবুওতো একটানা দমকা হাওয়ায় মরা শঙ্খে বাজে মৃয়মান সুর।
যেন অর্ফিউস একটানা বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন ইউরিডিসকে ফিরে পাওয়ার আশায়!
দেবী বিমুখ হলে; লখিন্দর ভাসে ভেলায়! বেহুলা ভাসান দেয় মর্ত্যলোকে!
দেবী!
তুমি মুখ ফিরিয়ে চলে গেলে কি আছে আমার!
ভাসবে না ভেলা; বেহুলার পতি ভক্তি এই যুগে অলৌকিক ব্যপার।
ইকারুস ডানা ভেঙে মাঝ সাগরে ডুবেছে!
হেমলকের শেষ ফোঁটাও নিঃশেষ করে গেছে সক্রেটিস!
যদি তুমি ফিরে চলেই যাও; আমাকে হেইডিসের কাছে পৌঁছে দিও! তোমার লাল শাড়ির
আঁচলে মুড়ে!
এই একটা অনুরোধ অন্তত রেখো!