আত্মজা
তাহমিনা আলম
কাঠগোলাপের শুভ্র উচ্ছ্বাসে নিজেকে ছড়িয়ে দাও।
দীর্ঘশ্বাস,সংকট,জরাজীর্ণ ব্যথা শূন্যে উড়িয়ে দাও।
তুমি বেরিয়ে এসো বন্ধন মুক্ত বিহঙ্গের পাখায় ভর করে।
পাণিতে সন্ধ্যাবাতি আলোকবর্তিকা সম,দেখাও পথ আঁধারে ঢেকে যাওয়া গ্রহটিকে।
দেহ সৌষ্ঠবে বুনোফুলের সৌরভ,
কণ্ঠে বজ্রনিনাদ,বেজে যাক রণতূর্য, আহবের ডঙ্কাধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ুক দিকেদিকে।
ঘুঙুরে, চুড়িতে,অলংকারে,আভরণে প্রতিধ্বনিত হউক প্রতিবাদ।
অন্যায়, বৈষম্য, লাঞ্ছনার আবেষ্টনী ছত্রখান হয়ে,
শোষণ ত্রাসের মর্মমূলে বেজে উঠুক সমতা,স্বাধীনতা ও সৌহার্দ্যের ঐকতান সঙ্গীত।
মুক্তি
তাহমিনা আলম
আমার আর ভালো লাগে না
তোমাদের নগর সভ্যতার রক্তাক্ত হানাহানি,
মিথ্যে জাত্যভিমান, ভয়ানক যুদ্ধ।
শিল্প বিপ্লবের চরম উৎকর্ষ –
তোমাদের নীলাকাশ জুড়ে বোমারু বিমানের আধিপত্য।
শঙ্কিত, বিপন্ন মানবতা,
প্রেমিকার মেঘ কালো চুলে তাকিয়ে থাকা প্রেমিকের মুগ্ধ চোখে আজ দুরারোগ্য
বিষন্নতা।
প্রেমিকার লাজুক চঞ্চু জুড়ে কোথায় অপার্থিব সৌন্দর্য?
সেখানে তমসাচ্ছন্ন যুগের গহীন বিভীষিকা।
বৃষ্টিস্নাত এক বিকেলে কদম হাতে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণীটির চোখে আজ ত্রস্ত হরিণীর
ভয়ার্ত দৃষ্টি।
তোমাদের বিস্ফোরক বারুদে তটস্থ ফুল, পাখি, নদী, নারী,মহান সৃষ্টি।
না, না, আর নয় এই অনাসৃষ্টি।
এবার এই ভূখণ্ডে মৈত্রী আসুক, সাম্য আসুক, আসুক অনাবিল প্রশান্তি।
ঘনঘোর অমাবস্যা কেটে যাক দিগন্তপ্লাবিত জ্যোৎস্নায়।
ব্যাধিগ্রস্থ বৃদ্ধের অনিদ্রা টুটে যাক শ্রান্তির পরশে।
সন্তান হারা বুভুক্ষু মাতৃহৃদয়ের দুর্মর হাহাকার মিলিয়ে যাক দূর দিগন্তে।
অতঃপর এই শহরে বৃষ্টি নামুক,
যুগ যুগের রৌদ্রতপ্ত ভূমি স্নাত হউক শ্রাবণের ব্যাপক বর্ষণে।
অনুর্বর উষর-মরু ভরে উঠুক ফসলের প্রাচুর্যে।
যান্ত্রিক শহুরে নাভিশ্বাস উবে যাক নৈসর্গিক সাহচার্যে।
তারপর? তারপর ধূসর যুগের বিবর্ণ স্মৃতিকে মুছে দিতে আবির্ভূত হউক অনাগত কবি।
লিখে যাক অনবদ্য চরণ, প্রিয় পঙক্তিমালা।
তাঁর করতলে মুক্তি পাক মানবতা।
অবক্ষয়
তাহমিনা আলম
তোমরা আমাকে আর ডেকো না
এই অবেলার উদ্যানে, সৈকতে, মহতী সভায়,
তোমাদের আলো ঝলমলে সাজানো মঞ্চে।
তোমাদের রাহুগ্রস্ত সভ্যতার বিপন্ন দশায় আমি তো কবেই নির্বাসিত, অস্পৃশ্য।
কঠোর তপস্যা, মূল্যবোধ ও প্রেমের সাজানো উদ্যান, অনিন্দ্য সুন্দর উদ্ভাসন –
ভেঙে করেছো তছনছ।
তোমাদের মর্মে আর পল্লবিত হয় না ছন্দ,
হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয় না গান।
সত্য, সুন্দর ও প্রেমের স্নিগ্ধ সরোবরে নিত্য করছো অসুন্দরের চাষ।
তোমাদের হৃদয় আজ আকুল হয় না প্রেমে, জোৎস্নার প্লাবনে, নববর্ষার জলধারায়।
তোমরা আর আপ্লুত হও না বসন্তের উৎসবে, কিংশুকের প্রমত্ত উল্লাসে।
তোমাদের সর্ব অবয়ব জুড়ে কেবল নিষ্ঠুরতা, বিভৎসতা, ঘৃণা,অপ্রেম,পশুত্ব।
তোমাদের প্রদীপ্ত তারুণ্যে ভর করেছে বার্ধক্যের অবসাদ, অন্ধকারের দাসত্ব।