ভেজাল বিষয়ে অল্প কথা
সবকিছুতে ভীষণ ভেজাল, প্রেম-বিরহ-সংসারেও
এমনকি এই সত্য বলা তাতেও কিছু ভেজাল আছে!
গাছে গাছে এত যে ফল, বাগান ভরা এত যে ফুল
তাতেও দেখি ভেজাল গন্ধ!
হায়রে এমন কপাল মন্দ! স্বাধীনতার সোনার ফসল এই যে সোনার বাংলা আমার
—তারও দেখি রন্ধ্রে রন্ধ্রে দেশপ্রেমের ভেজাল কাঁটা!
রক্ত পাওয়া গণতন্ত্র, তার পথেও বাধার প্রাচীর, তাতেও এখন মিশ্র ভেজাল!
ওই বেচারা গরিব মানুষ গোয়ালা তার দুধে কিছু পানি মিশায়,
তাকেও দিচ্ছো শাস্তি ভীষণ জরিমানার!
শাকসবজি, মাছে মেশায় ফরমালিন ঐ অসাধু লোক
তাকেও কিছু শাস্তি দিচ্ছো মাঝে মাঝেই।
কিন্তু ভালোবাসায় এমন বিষের ভেজাল দিচ্ছো তুমি
তুমিই সাধু বিচার তোমার হয় না আমার সোনার দেশে!
পানশালায় এক রাতে
বিয়ারের ক্যান খোলার শব্দে
ফস করে জ্বলে উঠল কিছু
যেন দেশলাইয়ের একটি কাঠি!
কেউ সিগারেট ধরাইনি যদিও!
একটা তরল আগুন-শব্দ
আমাদের কক্ষ জুড়ে ছড়ালে উত্তাপ
আমরা আমাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস
লুকিয়ে বললাম সমস্বরে— চিয়ার্স! চিয়ার্স!
জলহীন নদী-স্বভাবের আমরা আমাদের
ভালোবাসার সম্পর্কগুলোকে নদী ভেবে
স্রোতস্বিনী হতে চাই প্রতিদিন।
কী আশ্চর্য নদী কই! চারপাশে শুধু নদীর কঙ্কাল।
এই উপলব্ধি মাত্র পানপাত্র ফেলে ফিরে আসি
তারপর আর কোনদিন আমি নেশাই করিনি।
কবিতা অস্পষ্ট চিত্রকলা
কবিতা কোথায় থাকে, কবিতা কেমন?
এই প্রশ্নে নিরন্তর নিজেকেই করছি খনন।
কোনো মীমাংসায় যেতে আজও পারি নাই
কোথায় সুন্দর আর কবিতা কোথায়!
কেবলই বিস্ময় বাড়ে রক্তাক্ত অস্তিত্ব।
দিন দিন কালো চুল শুভ্র কাশবন!
বড়শিতে বিদ্ধ কোনো জীবন্ত মাছের ছটফট
টের পাই রক্তের ভিতরে। প্রশ্ন: কবিতা কোথায়?
“কবিতা সর্বত্র পাবে” মার্কিন কবির সেই উক্তি মনে পড়ে :
পুষ্পিত উদ্যানে খুঁজি, সবুজ অরণ্যে, শাড়ির আঁচলে,
এমনকি ফুটপাতে এলোমেলো ময়লার ভাগাড়ে
ভন ভন মাছি ওড়ে মাছের কানকোর বর্জ্যে, আছে সেখানেও!
প্রেম আর প্রতিবাদে যেকোনো বোধেই ছলাকলা
দোলা দেয় মর্মলোকে পরাবাস্তবের চিত্রকলা!
তোমাকে যতটা চিনি,ততোটাই রহস্য অচেনা
অনুভব করি প্রেম কত যে গভীর! শুধু শুধতে পারি না তার দেনা!
কবিতা দূরের নদী দিগন্ত রেখায় মিশে আছে
যতটা কল্লোল শুনি মনে হয় এই বুঝি কাছে!
যতই এগোতে থাকি ততোধিক দূরে সরে যায়
কবিতা অধরা নারী, অর্ধেক দেখেছি যাকে শুধু কল্পনায়।
শিরোনামহীন
বাতাস বহন করে ফুলের সৌরভ
এমনকি পচাগলা ঘ্রাণও
বাতাসকে ভালোমন্দ দেয় দেয়া ঠিক নয়
বাতাস না হলে বাঁচবে কি এই প্রাণও?
তোমাদের মিথ্যাচার দেখি আর ভাবি
হায় তোমাদেরই হাতে সমাজের চাবি!
অসহায় সত্য আজ যেন দেশান্তরি
একচ্ছত্র আধিপত্যে মিথ্যাই বাঁচার ধন্বন্তরী!
হারানো চাবির খোঁজে ক্লান্ত হয়ে শেষে
ঘরের দুয়ারে এসে ঘুমিয়ে পড়েছ?
আপন ঘরের তালা বন্ধ এই দেশে
জনগণও চাবিহীন উদ্বাস্তু এখন। লক্ষ করেছ?
বয়সের মাপে সব মাপা ঠিক নয়
কখনো কখনো খুব তরুণও প্রবীণ মনে হয়।
এমন প্রবীণও থাকে তারুণ্যের জ্বলন্ত আগুন
প্রেমেকামে সশরীর সর্বদা ফাগুন।
জগতে তোমারই জয়-জয়কার
ঘন সবুজের আবছায়া আলোছায়া
তারই ফাঁকে ফুটে আছে রাশি রাশি ফুল
দিন ও রাতের মধ্যবর্তী কী রহস্যময় মায়া!
যেন উর্বশী মর্ত্য-ধুলোয় ছড়িয়ে দিয়েছে চুল!
অপ্সরী নাকি মানবী! দ্বিধায় থমকে রয়েছে চোখ
পুষ্পের ফাঁকে আহ কী মায়াবী পুষ্পিতা সেই মুখ!
নির্জন বনভূমি শুধু জানে,জানে না তা কোনো লোক
হৃদয়ে আমার ফুটেছে এ কোন স্বর্গ হারানো শোক!
কৌতূহলের মায়া-মরিচিকা এ-যে আলোকের ধাঁধা
বুঝিনি তো আগে রহস্য- ফাঁদে দৃষ্টি পড়েছে বাঁধা!
বুঝেছি যখন, তখন সে নারী সৈকতে চোরাবালি
আছে শুধু গাঢ় অন্ধকারের মতো হতাশার কালি।
এই বিভ্রম কবি-শিল্পীর নন্দনময় চির হাহাকার
তুমি তো কবিতা, তুমিই শিল্প! জগতে তোমারই
জয় জয়কার!