সে ও তার শুয়োর (পর্ব-৬) – জাহিদ সোহাগ

By Published On: September 29, 2021Views: 205

কয়েকদিন ধরে দিদারের ভাড়াটে কিলাররা তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। সে টের পায় কোথাও না কোথাও কেউ তার চোখে চোখ না রেখে অনুসরণ করছে। যেকোনো সময় একটা গুলি ঠুশ করে তার বুকে বা মাথায় লেগে যেতে পারে। গুলিবিদ্ধ হবার স্বাদ কেমন? বারুদ মাখা মৃত্যুর ঘ্রাণ হয়ত সব ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। সে অবশ্য শারীরিক যাতনা নিয়ে চিন্তিত নয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে মরলে ভালো। নইলে হাসপাতালের ঝক্কি আছে।
আবার এও ভাবে, নিজে মরার চেয়ে খুনিকে মারার চেষ্টা করাই বরং তার জন্য ভালো। দীর্ঘ জেলজীবন বা ফাঁসি কিছু একটার মধ্যে সে নিজেকে সেঁধিয়ে দিতে পারে, কিন্তু নীরার কথা ভেবে, আবার নীরাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে সে ভাবে, যা হয় হোক; ডুবন্ত তার উপর দিয়ে সময়ের জলস্রোত বয়ে যাক।
দিদারের আস্তানা সে ভালোই জানে। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে থাকে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে আর তার ফূর্তির জন্য শান্তিনগরে আছে অফিস চেহারার একটা নিজের ফ্ল্যাট। সন্ধ্যায় সাকুরা বা পিকক। রাতে রমণের ডেরা যা যা আছে। কিন্তু দিদার নিজেও কি ভাবছে না যে সেও খুন হয়ে যেতে পারে। সেও তো সতর্ক হয়ে যেতে পারে।
সে ভাবলো দিদাদের সঙ্গে ব্যাপারটা মিউচুয়াল করাই ভালো। যদি মাফটাফ চায় বা সে যদি কিছু দাবি করে তা দিয়ে মেটানো যায়।

সে ফোন না করে একদিন দিদারের শান্তিনিকেতনের ফ্ল্যাটে যায়। তাকে দেখে দিদার চমকে ওঠে। সে তাকে আস্বস্ত করে নিজের শার্ট দুহাতে উপরের দিকে তুলে দেখায় তার কাছে রিভলবার নেই।
ফ্ল্যাটে রোগাপটকা একটি মেয়ে সোফায় হেলান দিয়ে টিভি দেখছিল। সে কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে চ্যানেল বদলাচ্ছিল। দিদার একবার মেয়েটার দিকে তাকায় আরেকবার তার দিকে তাকিয়ে বলে, তোর ভাবি।
সে ‘ভাবি স্লামালিকুম’ বলে উত্তরের আশা না করেই দিদারের চোখে চোখ রাখে।
তুই আমারে মারতে লোক পাঠাইছোস?
হ। পাঠাইছি। তরে এহনও মারে নাই?
গুলি করছিল, লাগে নাই।
র্ধু মিছা কথা কইছ না। গুলি করলে আমি জানতাম না?
তা মারামারির মধ্যেই থাকবি, না মিমাংসায় আবি?
মিমাংসা আবার কিয়ের? দিদার তার মাথা নিচু করে চুল সরিয়ে দেখায় কাটা দাগ–এর আবার মিমাংসা কী? তুই কি দিয়া এইয়ার শোধ দিবি?
তুই ক, তুই কি চাস?
তোরে আর তোর গাল-ফেরেন্ডরে এক বিছনায় শোয়াইয়া চুদুম, রাজি তুই, ক?
সে হেসে বলে, প্রস্তাবটা মন্দ না। তবে তুই দুজনকে সামলাতে পারবি না।
হেইডা আমি বুঝুম। আমার ধোন দিয়া আমি চুদুম, কারো ধোন ধার করুম না।
সে বুঝতে চেষ্টা করে দিদারের মনোভাব কী? এরকম নির্বিঘ্নে যে কথা সে চালিয়ে যাচ্ছে, একটুও উত্তেজিত না হয়ে, হয়ত সে ফানও করতে পারে; বা সে ডিটারমাইন্ড। যেকোনো কিছুর বিনিময় সে তার আঘাতের শোধ তুলবে। সে হেসে বলে, আচ্ছা রাজি তোর প্রস্তাবে। তুই দুইজনরেই লাগাইস।
সে রোগাপটকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে, ভাবি চা খাওয়াইবেন না? বিয়ার দাওয়াত তো খাওয়ান নাই।
মেয়েটা কিছু বলতে গেলে দিদার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, তুই যা অহনে। হিজড়াগো আমি চা খাওয়াই না।
সে নিজের ডান হাতের মুঠি শক্ত করে পাকিয়ে নিজের সমস্ত ক্রোধ ঢেলে মনে মনে মেপে দেখে একটি ঘুষি ওর নাকের উপর মারলে দ্বিতীয়টি মারার দরকার হবে কিনা।
শত্রু শত্রু খেলার জন্য শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তার খেলার এখন সময় নেই। সে সব ঝামেলা গুটিয়ে নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে চায়। আবার শত্রুকে বাঁচিয়ে রেখে নিজেকে এটকা আশঙ্কার মধ্যে রাখতেও তার মন সায় দিচ্ছে না।
সে বলে, দিদার কিছু টাকা দে, আমার হাত একদম খালি।
দিদার নিজের কোমরে হাত দিয়ে লুঙ্গির খোঁট থেকে দশ টাকা ওর মুখের উপর ছুড়ে মারে– নে, দশ ট্যাকা তোরে ভিক্ষা দিলাম।
ঘুষি মারার পরিকল্পনাটি সে বাস্তবায়ন করে ফেলে হঠাৎ। তবে একটি ঘুষিতে সে নিজেকে থামাতে পারে না। রোগাপটকা মেয়েটিকেও এবং দিদারকেও– দিদার যা করতে চেয়েছিল তার ও তার বান্ধবীর সঙ্গে প্রতিশোধ স্বরূপ তা করে সে বাইরে যায়। অবশ্য এমন নয় যে নীরার সঙ্গে দিদার সেক্স করলে সে মর্মাহত হবে, সে সেক্স বিষয়টাকে যার যার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও বলপ্রয়োগের উপরই ছেড়ে দিয়েছে। মতিঝিলের বাসায় সন্ধান দিদারই তাকে এনে দিয়েছিল, সে বাসায় তার যাতায়াত থাকা খুবই সম্ভব; যদিও সে স্বীকার করেনি কখনও, না করার খুব যে কারণ আছে তাও নয়। এসব ব্যাপারে মিথ্যে বলা বা লুকোছাপার মধ্যে ওর উত্তেজন বজায় থাকে। এমনও হয়েছে সাকুরা থেকে টলতে টলতে তাকে নামতে দেখে, বা কমন প্যাসেজে তার সঙ্গে দেখা হওয়া সত্ত্বেও সে আগ বাড়িয়ে বলবে, ‘মাল খাই নাই। কামাইল্যা আইছিলো কিনা দেকতে আইছি।’
হয়ত রাস্তায় উঠেই হর হর করে বমি করে দিল।
‘দোস্ত, আমারে এট্টু বাসায় দিয়া আয় তো।’
তারা দুজন রিকশায় উঠে চানখার পুলে নেমে তেহারি খেয়ে কিছুটা সুস্থতা এলে, ‘ল বাসায় ফিরা কি করুম, শান্তিনগর যাই, ল।’
দিদার মদ খেতে খেতে নেশা চরমে উঠলে কান্নাকাটি আর সামনে যাকে পাবে তার পা ধরে মাফ চাওয়া, এমনকি কেউ তার হাতের মধ্যে পা না রাখলে সে চেয়ার টেবিলের পায়া ধরে হাউমাউ করে কাঁদে।
কী এক অজ্ঞাত দুঃখ, অভিমানে সেই ছিল তার পরম বন্ধু।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop