তোমার নৃত্যের তালেই আমি বাঁধা মা
অভ্র বড়ুয়া
মা তোমাকে একটি শব্দে বেঁধে রাখা যে একেবারেই অসম্ভব!তুমিই আমার জীবনের প্রথম ছন্দ, প্রথম আলো, প্রথম প্রেরণা। তুমি আমার কাছে বরাবরই এক অপার বিস্ময়। হাজার কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখলেও তোমার গভীরতাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না!
শৈশবে হয়তো তোমাকে, বাবাকে কিছুটা কম সময় পেয়েছি, কারণ তোমরা দু’জনেই শিল্প-সংস্কৃতির জগতে ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু কখনো বুঝতে দাওনি তোমাদের ব্যস্ততা।যখন আমার বয়স মাত্র ২-৩ বছর, তখন মা ২-৩ টি চাকরি করতো। সবেমাত্র নতুন নৃত্যস্নাতক, স্বপ্ন ও সংগ্রামের সম্মিলিত পথচলায় একজন সংগ্রামী মানুষ তুমি তখন।
তবু, আমার প্রথম জন্মদিনে তুমি করেছিলে এক বিরাট উৎসব আলোকোজ্জ্বল বাড়ি, শত শত মানুষের ভোজন, চারিদিকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা তোমার প্রাণের মতো রঙিন এক দিন!কোনদিন তো আমাদের অভাব বুঝতে দাও নিই। নাচ আমি হয়ত তেমন বুঝি না! কিন্তু ভালোবাসি অপার ভালোবাসায়। কারণ তার উৎস তুমিই
তোমার কোলে বসে পাখোয়াজের বোল শুনে বড় হয়েছি, শিখেছি কীভাবে শিল্প মানুষকে গড়তে পারে। বাবা-মায়ের আদরে-ভালোবাসায় আমার শৈশব ছিল এক মায়ার রাজ্য।
মা তুমি সবসময় পরিবারকে আগলে রেখেছো হাসিমুখে, নিরলসভাবে, অভিমানহীনভাবে। অনুষ্ঠান শেষে ক্লান্তিতে কখনো না খেয়ে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছো। কিন্তু কষ্টটুকু আমাদের বুঝতে দাওনি কখনও।নেই কোন অভিযোগ,নেই কোন অভিমান!
মা-বাবা ও আমার আমাদের প্রতিদিনের দেখা, কথা, ভালোবাসা জমা হয় খাবার টেবিলে সেই একটুকু মুহূর্তেই হয়ে ওঠে আমাদের পরিবারের দিনশেষে।সারাদিনের গল্প,অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাসহ নানা আলোচনা।
মা, তুমি যা করেছো, যা করছো, তা ভাষায় বলা যায় না। আজ মা দিবসে একটাই কথা বলি-We are truly grateful to have you
তুমিই আমাদের আনন্দের উৎস। তোমার হাসিতে আমরা হাসি,তোমার দু:খে আমরা কাঁদি। আমরা তিনজন তুমি, বাবা আর আমি একটি অদ্ভুত সুন্দর বন্ধনের নাম।একে অপরের পরিপূরক।যে ছেলেটা এক মুহূর্ত তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারতো না, সে আজ পাঁচটা বছর কাটিয়ে দিয়েছে দার্জিলিংয়ে, এখন গুজরাটেও কাটিয়ে দিচ্ছে! কষ্ট হয়, কিন্তু তোমার শেখানো স্বপ্নের পথেই এগোচ্ছি,এগিয়ে যে যেতে হবে। মা তুমি এগিয়ে যাও তোমার স্বপ্ন নিয়ে তোমার নাচ, তোমার সাধনা, তোমার প্রার্থনা দিয়ে।
আমি আর বাবা সারাজীবন তোমার পাশে আছি তোমার শক্তি হয়ে, তোমার ছায়া হয়ে। তোমার যে সহজ, প্রাণখোলা হাসিতে সবাই আপন হয়ে যায় সেই অসংখ্য মানুষের ভালোবাসাও তো তোমার সাথেই আছে! আজকের এই দিনে একটাই আশা তুমি ভালো থেকো মা, হাসিমুখে থেকো সবসময়। কারণ তোমার হাসিই তো আমাদের পৃথিবী।
ভালোবাসি তোমাকে
তোমার অভ্র (কুট্টু)
কবিতা
তুমিই সেরার সেরা
অভ্র
আমার মা
বেলা অবেলার অখিল ভুবনে
মনে পড়ে মা ক্ষনে-ক্ষণে,
জল ভরে যায় দু’নয়নে
বেদন ভীড়ে চোখের কোণে।
ও মা, ও মা, পরদেশে
তোমার ছোঁয়া খুঁজি পাশে,
প্রভাত হয়ে সন্ধ্যা আসে
আঁধার নামে মোর মানসে।
তোমার পায়ের ছন্দ তালে
হাজার নূপুর কথ্য বলে,
মঞ্চ যখন শব্দে দোলে
ভুলে থাকি নানান ছলে।
ও মা, ও মা, এই পরদেশে
স্বপ্নে তুমি ওঠো ভেসে,
ওমন কোমল মিষ্টি হেসে
আমায় ভিড়াও মায়ার দেশে।
(লেখাটি আমার মা বাংলাদেশের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাশ করে আসা ওড়িশী নৃত্যশিল্পী, সংগঠক প্রমা অবন্তীকে নিয়ে লেখা।)
অভ্র বড়ুয়া
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র পরিচালনা বিভাগ, গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত (আইসিসিআর বৃত্তিপ্রাপ্ত)