নীরা আর অ্যাবরশনের পথে যায়নি, বা সে একেকটি ঝামেলায় জড়িয়ে পরায়, খানিকটা দিদারের উৎপাতও মিলিয়ে একটি বেঢপ পেটের মধ্যে একটি শিশু হুটোপুটি খাচ্ছে।
তার মুখের উপর সবসময় লেগে থাকে মাতৃত্বের আলোছায়া।
স্ফিত স্তন নিয়ে সে তার উপার্যনের সবগুলো দরোজায় কড়া নেড়ে নেড়ে একটাও খুলতে পারেনি। উপরন্তু তিন মাসের বাসা ভাড়া বাকি পরে আছে। বাসায় না হলেও চলে এমন ফার্নিচার, তারমধ্যে একটি চেয়ার, পুরনো কম্পিউটার, বেতের সোফা এবং তার প্রায় দুই যুগ ধরে ধীরে ধীরে কেনা বইপত্র আলমারি-সহ বেচে দেয়।
নীরা বইগুলো বাঁচাবার চেষ্টা করলেও সে ভেবেছে তার জীবনে বইয়ের খুব একটা দরকার নেই। নতুন করে সে পড়তে তো চায়ই না, উপরন্তু পড়েফেলা বই বছরে পর বছর বয়ে বেরানোর মতো শক্তপোক্ত গাধার পিঠ তার নেই।
কিছু বই অন্তত রাখতে পারতে, এই এইটা– অরুণ সোমের চার খণ্ডের ওয়ার এন্ড পিস দেখিয়ে– এটা নিশ্চয়ই পড়োনি?
না, পড়িনি। চেষ্টা করেছিলাম। এখন মনে আর আশা নেই।
অন্তত এই সেট– সেলফের বইয়ে আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে– এটা, এটাও তো কাজে লাগবে। তোমার নিজের বইও, একটা করে কপিও অন্তত রাখো।
‘তুমি বোধহয় প্যাচাল পারছো। বইয়ের প্রয়োজন বহু আগেই আমার কাছে শেষ হয়ে গেছে।’ নীরার চোখের দিকে তাকিয়ে ‘আর এসব বইয়ে বহু রাতে মাস্টারবেশন করে ভিজিয়ে দিয়েছি। এসব তুমি ছুঁয়ো না।’
কেন বইয়েও উত্তেজন ছিল তোমার?
হু, বই তোমার স্তনের মতো, বা আমার এখনকার স্তনের মতো উত্তেজক ছিলো। এখন নেই, ছেড়ে দিচ্ছি।
ছোট্ট ঘরটা একটা ফাঁকা উঠানোর মতো নিকানো মনে হয় তার কাছে। সকালবেলা রেমা মাসী যেন গোবরগোলা পানি দিয়ে সারা উঠান লেপে দিয়েছে। কাঁচা উঠান শুকিয়ে আসতে না আসতেই দশটা এগারোটার রোদে মা ধানের বস্তার মুখ খুলে দিয়েছে। ধানগুলো আপনাআপনিই সারা উঠানে সোনার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল।
এই দৃশ্যটুকু তার কল্পনাও হতে পারে।
তার মা ধান স্পর্শ করেছে কিনা সন্দেহ, সারা জীবন কেটেছে নারিন্দায়, নোনাধরা দেয়ালের সঙ্গে সখ্য রেখে। হয়ত বইটইয়ে পড়া কোনো গল্প তার নিজের হয়ে গেছে। অন্যের মাকে নিজের মা করে নিয়েছে।
নোনাধরা দেয়ালের সঙ্গে টিকে থাকা তার মা, যার রক্তমাংস সে, তিনি এখনও হয়ত বেঁচে থাকবেন; যেহেতু সে এখনও তার মৃত্যুর সংবাদ পায়নি; বা হয়ত সংবাদ তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।