নিচতলায় সে একটি পার্লার খুলেছে। দুই ইউনিট জুড়ে। বাড়িওয়ালা প্রথমে প্রস্তাব শুনে আপত্তি করেছিল।
মিঞা বেশ্যাপাড়া বানাইবেননি?
বানাইলাম। অসুবিধা কী? আপনের গাও-গতর টিপ্যা দিলো। ক্যান ইচ্ছা করে না?
পুলিশ ফুলিশের ঝামেলা পোহাইবো ক্যাডা?
আপনের ভায়রা কমিশনার হইছে কি বাল ফালাইতে?
ভায়রার ধোন দিয়া আমি চলিনি?
চলেন না, হ্যারেও এর মইধ্যে হান্দাইবেন। বুড়া বয়সে কচি খাইবেন, খাওয়াইবেন।
আর আমার বউ পোলাপান?
হ্যারা কি সারাদিন বইয়া থাকবো? হ্যারাও এইখানের সার্ভিস নিল। হ্যারা নিল উপরেরটা আপনি নিলেন ভিতরেরটা।
না, না, এই ঝামেলায় আমি নাই। আপনি অন্যখানে ভাড়া লন।
বাড়িওয়ালা এমন বেঁকে বসবে সে তা ভাবেনি। সে যেমন পার্লার বসাতে চায় তেমন একটি পার্লারে তাকে নিয়ে যায়। সামনের দিক দিয়ে মেয়েদের গেট, পেছনে পুরুষদের। পার্লারে ঢুকে বাড়িওয়ালা ইতস্ত করছিল। সে তাকে বলে:
চাচা, দেখেন তো এখানে মাগীবাজী আছেনি?
বাড়িওয়ালা ঝা চকচকে জেন্টস পার্লারের আয়না, আসবাবপত্র ও কর্মীদের উইনিফর্ম দেখে বলে, এইখানে ওইসব হয়?
সে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, আপনি বলেন তো, ভাই আমি খ্যাচাইতে আইছি, কইতে পারেন কিনা?
ভাবসাব দেইখা তো মনে হয়, এগো কিলিন কাম।
বাইরে দিয়া ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট আছে।
বাড়িওয়ালা ম্যাসাজ বা মৈথুন ইত্যাদি উপভোগ করে ওয়েটিংরুমে এসে বসে।
তাকে সে ফিসফিস করে বলে, চলেন, বাইরই।
এত তাড়ার কী আছে। চা-কফি খাইবেন না?
আকাম কইরা কেউ আকামের মইধ্যে থাহেনি, লন বাইরে যাই।
বাইরে সন্ধ্যা লেগে এসেছে। ঠান্ডা হাওয়া। তারা আট নাম্বার ব্রিজে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে ঠিক করে ফেলে এমন একটা পার্লার করতে পারলে ভালো। তবে বেশি মানুষকে জানানো যাবে না। একটু সিক্রেট রাখতে হবে।
তার পার্লারটি সাধারণ বিউটি-জেন্টস পার্লারের মতো নারী-পুরুষের চুলকাটা থেকে সব রকমের সার্ভিস দেয়। সংকেত না জানলে কেউ এর গুপ্ত রসের সন্ধান পাবে না।
পার্লারের গুপ্ত রসের মৌমাছি বাড়িওয়ালার থ্রুতেই আসছে। নীরা শুরুতে মেয়েদের কাউন্টারে বসেছে, কিন্তু তার স্বাস্থ্যগত জটিলতা বাড়ায় সে আর নিচে নামে না। নীরা পার্লোরের সবটা বুঝতে না পারলেও কিছুটা সন্দেহ নিয়েই বলে–
তোমার কি অন্য ফাঁদ আছে?
দুনিয়া শিকার শিকারীর কারখানা। ফাঁদ তো পাতা থাকবেই। এই ফাঁদে শিকারও আটকা পরতে পারে, শিকারিও।
নীরার যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। তাকে ঘাটানোর ইচ্ছা তার নেই। কিন্তু আসন্ন দিনগুলো এবং সন্তান প্রসবের পরের দিনগুলোর কথা ভেবে নীরা তার সঙ্গে আরো বেশি আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকতে চায়। সন্তানের সামাজিক পিতৃত্ব, অভিভাবকত্ব নিয়ে তার ভাবনার অন্ত নেই।
সে কি তাকে শুধু আশ্রয় দিয়েছে?
কোনোদিন যদি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় তার ভবিতব্য তো অতীতের উপরই গিয়ে দাঁড়াবে। বিয়ের মধ্যে দিয়ে তাদের বন্ধনকে বাধ্যবাধকতার দিকে নিয়ে যাওয়া যেত, কিন্তু সেখানেও যদি সে বেঁকে বসে, বা কাজী অফিসে নিজের স্তন উন্মুক্ত করে তখন পুরো ব্যাপারটাই হাস্যকর হয়ে যাবে।
নীরা তার কাছে কথা চায়, ‘তুমি কি আমাকে ছেড়ে যাবে?’ নিজের স্ফিত পেটের উপর হাত বুলিয়ে, যা তার দৃষ্টিও এড়ায় না, ‘এরই বা কী হবে?’
সে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে তার স্তন ক্রমশ বড় হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করছিল, ‘এসব নিয়ে ভাবার কি আছে? সময়ই সব ঠিক করে দেবে?’
কিন্তু তবুও?
আমি ঠিক জানি না, ভবিষ্যতে কী আছে। বর্তমান নিয়েই আমাদের ভাবা উচিত। আর তুমি যদি…
আমি যদি?
তুমি যদি ভাবো অন্য কারো সঙ্গে আমি জড়িয়ে পড়তে পারি, তখন… আমি আসলে সত্যিই জানি না। আপাতত যা করছি, তাই করতে চাই।
নীরা তার কাছে এসে বসতে উদ্যত হতে সে নিজেই দাঁড়িয়ে তাকে চেয়ার বসায়, তার চোখের নিচে কালো শ্যাওলার দাম এসে থেমেছে, তার হাত ধরে বলে, তুমি আমাকে ভালোবাসো, এই সহজ কথাটা হোক তা মিথ্যা তা আমার শুনতে ও বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে।
তোমার মধ্যে নির্ভরতার বোধ জন্ম নিয়েছে সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে। এমন সবারই হয়। আমার মনে হয় না তোমার এসব নিয়ে ভাবার দরকার আছে। আমি শুধু তোমাকে একটি শব্দই বলতে পারবো, সম্ভবত– সম্ভবত আমি তোমাকে ভালোবাসি, সম্ভবত আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না, সম্ভবত আমি এই সন্তানের দায়িত্ব নেবো। এই সম্ভাবতার উপর তোমার দাঁড়াতে হবে।