সেঁজুতির মায়ায় কবি
মুরাদ কিবরিয়া
প্রথম পরিচয়ের দিনই এই মেয়েটাকে প্রথম হাঁটতে নিয়ে যাই কাওরান বাজারে মুরগীর মার্কেটের সামনে, ভীড় ঠেলে কোনোরকমে ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে সে মুখে ওড়না চেপে বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে, আপনি এই রাস্তা ধরলেন কেন? এত দুর্গন্ধ !!
আমি তখন কবিতার ঘোরের মধ্যে থাকি, চারপাশে চোখ বুলিয়ে হেসে উঠি, সে জিজ্ঞাসা করে, হাসির কী হলো?
আমি বলি, এই কাওরানবাজারে আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে এই নোংরা দুনিয়ায় একটা সুন্দর ফুল ফুটে আছে। এই দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না।
কনফিউজড হয়ে সে তাকিয়ে থাকে, বলে, আপনার মাথায় সমস্যা আছে।
সেই থেকে শুরু।
তাকে হাঁটতে নিয়ে যাই বনানীতে লেকের ধার ঘেঁষে, শাহবাগে বইয়ের দোকানে। ফুলার রোডে। ইউনিভার্সিটিতে। গুলশান ১ থেকে গুলশান ২ এর ফুটপাত ধরে। কোনো কোনোদিন নিয়ে যাই পুরান ঢাকায়, চিপা রাস্তা দিয়ে হেঁটে বিরানির দোকানে উঠে সে ওঠে বলে বাপরে বাপ, এত ঘিঞ্জি!
একদিন লেকের পাড়ে বসে সে জিজ্ঞাসা করে, আপনি না কবিতা লেখেন?
মাথা নাড়ি, হ্যাঁ লিখিতো।
লেকের টলটলে পানির ভেতর গাছের পাতারা নড়ে, সেদিকে তাকিয়ে সে বলে, আমার জন্য একটা কবিতা লিখতে পারেন?
আমি নার্ভাস হয়ে হাসি, মুখে সাহস দেখাই, পারব না কেন? আলবৎ পারি।
সে হাসে, আচ্ছা দেখা যাবে।
তারও কিছুদিন পর একদিন রাতে সে ফোন দেয়, কী করেন?
আমি কাব্য করে বলি, চাঁদ উঠছে দেখতে বাইর হইছি।
জানতে চায়, আপনারও কি জ্যোৎস্না বাতিক আছে নাকি?
আমি বলি, না। আমার পছন্দ অন্ধকার রাত। আর আকাশ ভর্তি তারা।
সে কিছুক্ষণ চুপ থাকে, বলে, কবিতা তো লিখলেন না।
সেদিন মাঝরাত পেরিয়ে গেলে আমি শাহবাগের ফুটপাতে বসে আমার মোবাইল ফোনে কবিতা লিখতে বসি।
এত কবিতা লিখেছি এই জীবনে তবু এত কেন নার্ভাস লাগে!
কাঁপা কাঁপা হাতে লিখে ফেলি ৪ লাইন সেই নারীর জন্য যার সবকিছু আমার ভালো লাগে-
‘সাঁতার জানি না তবু এলোমেলো ঝাঁপ
আর কত নিজেকে ডোবাবো?
তারার আকাশ মেলে আসুক না সে
কিছুক্ষণ শান্তিতে ঘুমাবো।’
কবিতা পাঠিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি, আধো স্বপ্নে আর আধো জাগরণে ভাবি, তারার আকাশ মেলে সে কি কোনোদিন আসবে?
পরদিন সকালেই আমাকে দাওয়াত দেয় গুলশানে তার প্রিয় কফিশপে, জিজ্ঞাসা করে, কবিতাটার মানে কী?
আমি কিছু বলি না, হাসি।
সে ফের জিজ্ঞাসা করে, হাসির কী হলো?
আমি কোনো জবাব দেই না দেখে সে বলে ওঠে, আপনার মাথায় সমস্যা আছে।
সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতেই কিনা কে জানে, আজ থেকে ৮ বছর আগে এই দিনে সে লক্ষ তারার আকাশ হয়ে আমার জীবনে হাজির হয় । সেই হিসাবে আজকে আমাদের ম্যারেজ ডে।
কিন্তু মাথার সমস্যা আর আমার আর সারে নাই।
সেও আর এখন অত সুইট নাই, বরঞ্চ ধমক দিয়ে কথা বলে, তোমার মাথার সমস্যা তো সারে নাই, উল্টা তোমাকে বিয়ে করে আমার নিজের মাথায়ই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আমি হাসি, বলি, তবু তোমাকে তো আমি ভালোবাসি।
সে বিশ্বাস করে না, সন্দেহ নিয়ে তাকায়।
সে জানে না কিন্তু আমি তো জানি। আমার ওপরে এক আকাশ, তার ওপরে আরেক আকাশ। রুপালি তারা-খচিত আকাশের পরে আকাশ। সেদিকে তাকিয়ে আমি চিৎকার করে বলে ফেলি, সেঁজুতিকে ভালোবাসি।
সেই চিৎকার আসমান থেকে আসমানে অনন্তকালের জন্য ছড়িয়ে পড়ে।
হ্যাপি এনিভার্সারি সেঁজুতি। খোদা তোমাকে অনেক অনেক ভালো রাখুক।
সেঁজুতির ফেসবুক নাই, চাইলে আপনারাও তাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন, আমি পৌঁছে দেব।