পুনরায় বিবাহ করা বা পুনর্বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সাধারণত প্রথম বৈবাহিক সম্পর্কের সমাপ্তি হলে, বিবাহবিচ্ছেদ হলে বা প্রথম সঙ্গীর মৃত্যু এর কারণে। এবং কিছু সামাজিক, ধর্মীয়, আইনি, দেশীয় প্রেক্ষাপটের উপর দ্বিতীয় বিবাহ নির্ভর করে নির্ভর করে। আবার নিজের ইচ্ছের কারণেও পুনরায় বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পুনরায় বিবাহ করার প্রধান কিছু কারণ ও প্রেক্ষাপট সমূহ:
- বিবাহ বিচ্ছেদ বা বিধবা হওয়া: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যুর পর অথবা আইনসম্মত বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে প্রথম দাম্পত্য সম্পর্কের ইতি ঘটলে দ্বিতীয় বিবাহ করা হয়।
- সঙ্গীর প্রয়োজন হলে: অনেক সময় দেখা যায়, জীবনসঙ্গীর মৃত্যুর পর একাকীত্ব অনুভব হয়। এই একাকীত্ব দূর করতে বা সন্তানদের দেখাশোনার জন্য পুরুষ বা নারী দ্বিতীয় বিবাহ করেন।
- মানসিক অশান্তি ও সংসার জীবনে অশান্তি: স্বামী ও স্ত্রীর ভেতর যদি অশান্তি সৃষ্ট থাকে যেমন স্বামী কতৃত স্ত্রীর উপর নির্যাতন বা স্ত্রী কতৃত স্বামী র উপর নির্যাতন সেক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর পুনরায় বিবাহ করা বা পুনর্বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
- ব্যক্তিগত কারণ ও মানসিক পরিপক্কতা: প্রথম বিবাহের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং নিজের চাহিদা সম্পর্কে আরও বাস্তবসম্মত ধারণা তৈরি হলে অনেকে দ্বিতীয়বার বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন, যা পরবর্তী সম্পর্ককে সফল করতে সাহায্য করতে পারে।
- পরকীয়া: বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় যদি স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। সেক্ষেত্রে যদি এ ঘটনার পারস্পরিক সমাধান না হয় তাহলে স্বামী বা স্ত্রী প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে পুনরায় বিবাহ করা বা পুনর্বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে আইনগত ও ধর্মীয় পুনরায় বিবাহ করা বা পুনর্বিবাহের সিদ্ধান্ত:
বাংলাদেশর প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় বিবাহ মূলত ধর্মীয় আইন, যেমন মুসলিম পারিবারিক আইন এবং প্রচলিত দেওয়ানি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।
- মুসলিম আইন: একজন মুসলিম পুরুষ সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারেন, তবে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ের জন্য অবশ্যই স্থানীয় সালিশি পরিষদের তথা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং প্রথম স্ত্রীর সম্মতিও প্রয়োজন। অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে।
- হিন্দু আইন: হিন্দু বিবাহ আইনে সাধারণত একগামীতাকে উৎসাহিত করা হয় এবং প্রথম স্ত্রী জীবিত ও আইনত বিবাহবিচ্ছেদ না হলে দ্বিতীয় বিবাহ অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
- নারীদের ক্ষেত্রে: স্ত্রী যদি আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চান, তবে তাঁকে অবশ্যই প্রথম স্বামীর সঙ্গে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাদ্ধমে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট ‘ইদ্দত’ পালনের সময়সীমা শেষ করতে হবে।
- স্বামী থাকা অবস্থায় নারীর দ্বিতীয় বিয়ে: বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, যদি প্রথম স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা অবস্থায় স্ত্রী কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে না। স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে সেই দ্বিতীয় বিয়ে হবে স্ত্রীর জন্য আইনত অপরাধ। প্রথম স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় যদি স্ত্রী অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্ত্রী ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন এবং সেই সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে। প্রথম স্বামী যদি বৈবাহিক বিচ্ছেদনা করে সাত বছর যাবৎ সেই স্ত্রীর যদি কোনো খোঁজখবর না নেন, অথবা নিখোঁজ বা নিরুদ্দেশ হন, স্বামী জীবিত থাকতে পারেন এমন কোনো তথ্য যদি জানা না যায়, তাহলে হবু স্বামীকে সত্যি ঘটনা জানিয়ে সেই স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেন। এটি দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারার বিধানের ব্যতিক্রম। আর এই ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে শাস্তিযোগ্য হবে না। অন্যদিকে স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় যাকে বিয়ে করছেন, তাঁর কাছে আগের বিয়ের কথা গোপন করেন, তাহলে সেটি হবে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৯৫ ধারা অনুসারে একটি অপরাধ। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা।