সে ও তার শুয়োর (পর্ব-২) – জাহিদ সোহাগ

By Published On: September 10, 2021Views: 197

বাসায় ফিরে নীরার ননস্টপ ফোনকলের বিরুদ্ধে তার লড়ে যেতে হয়েছে।
তিন-চার দিন সে একটা কলও রিসিভ করেনি। অসংখ্য মেসেজ, যা সিন না করলেও সে বুঝতে পারে সেখানে কত কত নির্মমতায় কথা লেখা আছে। তবে সে আশা করেছিল নীরা, বা তার ‘মা/খালা’ সমেত রায়েরবজারের এই বাসায় হানা দেবে। এখন সে তাদের সঙ্গ এড়িয়ে চলতে চায়। নিজেকে নিজে বুঝে নিতে পারলে তার একটু সুবিধা।
কিন্তু প্রতিদিন তাকে থাকতে হয়েছিল উৎকর্ণ হয়ে, কুকুরের মতো, সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ, বা বিগতজন্মে টিনের দরোজায় টোকা পড়ার শব্দে সন্ত্রস্ত থেকে।
একবার ভেবেওছিলো বাসা ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন জগন্নাথ হলে কাটিয়ে দেবে ত্রিদিবের সঙ্গে। কিন্তু ত্রিদিবকে কী বলবে সে? তাছাড়া একজন স্তনবতী/স্তনবান মানুষ তার বিছানায় শুলে সেটা প্রক্টর পর্যন্তও গড়াতে পারে।
এমন একটা সময়, চোখ বন্ধ করে শুধু ভেবেই চলেছে কার কাছে যাওয়া যেতে পারে; কে বিনা প্রশ্নে তাকে কয়টা দিন থাকতে দেবে।
কেউ নেই।
সে কখনও নিসঙ্গতা অনুভব করে না প্রায় একা একা বেঁচে থেকেও; কারো কাঁধে হাত রেখে বলতেও চায় না/শুনতেও চায় না, বন্ধু, তোমার হাতের উপর হাত রাখলেই আমি টের পাই তোমার বাজারে অনেক দেনা, ছেলেটা উচ্ছন্নে গেছে, মেয়ে রাত করে বাড়ি ফেরে… আর যদি কাঁদতেই হয় তবে এই কাঁধে মাথা রেখে কাঁদো, বন্ধু।

মোটামুটি চার/পাঁচ দিন পার হবার পর তার শারীরিক সুস্থতা, আঘাতজনিত, ফিরে এলে সে তার জীবিকার দুনিয়ায় প্রবেশ করার কথা ভাবে।
তার যে কাজ কন্সট্রাকশন ফার্মের পার্সেজ বিভাগের সহকারি, একই সঙ্গে শ্রমিকদের ঠিকাদারদের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখা।
সে বলে একটা হলো পার্সেন্টিসের দুনিয়াদারি, আরেকটি হলো শ্রমিকদের হুমকিমেশানো নীতি শিক্ষক।
যে কাজটা পুরোপুরি ম্যানলি।
সেখানে পৌরুষ দিয়ে সব মোকাবেলা করতে হয়।
সে তার কর্তাদের আনুকুল্যে বেতনের বাইরেও দালালি ও ভূয়া ভাউচার করে কিছু টাকা-পয়সার ভাগও পেয়ে আসছে।
সেসব টাকা হাতে এলে সে গ্রিন জোনে মদ, ভাড়াটে নারী আর জুয়ার কোর্টে খরচ করতে করতে তার এই হঠাৎ মনোদৈহিক পরিবর্তন ঘটার পরও কিছু ছিটোফোঁটা রয়ে গেছে। এই টাকা কোথায় কীভাবে খাটানো যায়, প্রথম মনে পড়ে দিদারের কথা, কাঁটাবনে ছাপাখানার ব্যবসা, সেখানে সে বিনিয়োগ করতে পারে।
সে এও জানে নিজে জায়গায় দাঁড়িয়ে না থাকলে লাভের গুড় দূরে থাক হাড়িসুদ্ধ লোপাট হয়ে যাবে। এতে কারো দোষ সে অবশ্য দেখে না। সে মনে করে এটা মানুষের প্রবণতা। সুযোগ পেলে ভ্রষ্ট হবার অধিকার আপনাআপনিই মনে চলে আসে। তাকে এড়ানো যায় না।

দিদারকে সে বাসায় ডাকে।
বৃষ্টি মাথায় করে এক সন্ধ্যায় সে এসে তার শুকনো পোশাক পরে চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে প্রথমেই একটু হুইস্কি চায় গলা ভেজানোর জন্য।
সে হয়ত ভেবেওছিল কোনো একটা ডবকা নারীকে দেখবে বিছানায় বুদ্ধের মতো আধশোওয়া। কিন্তু সে কিছুটা নিরাশ হয়ে খাটের পায়ার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা হুইস্কির বোতল থেকে তলানিসহ তার গ্লাসে তুলে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়, মানে, তোরটা কই?
সে আস্তে করে বলে, আমার হইছে। তুই খা।

দিদারের রক্তের মধ্যে আগুনরঙিন সক্রিয় হয়ে ওঠে, এ সময় তার অভ্যাসমতো কথা শোনার ফাঁকে ফাঁকে সে জিভ দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নেয়ে।
আসলে সে তখন কোনো কথাই শুনতে পায় না। কিছুএকটা সক্রিয়তার মধ্যে নিজেকে ফেলে, সময়কে নায়ক বানিয়ে দেয়।
এগারোটা/বারোটা তো বাজবেই, তখন টলতে টলতে রাস্তায় এলেই তার দিনটা চুরমার করে দিয়েছে উপভোগে, এই বিশ্বাসটুকু অন্তত সে চায় ঘুমাতে যাবার আগে।

সে শক্ত করে ব্রা পরে নিয়েছিল, গুলিস্তান থেকে কেনা, দোকানদারদের টিককিরি সহ্য করে।
তবু বুকের তার উত্থান ও চেহারার কমনীয়তা ঘন ঘন সিগারেট ফুঁকে দমাতে পারেনি। আয়নায় নিজেকে দেখলে, গোসলের পর ভেজা শরীরে, সে নিজেই নিজেকে মৈথুন করে ফেলে, ঠোঁট নিজেই কামড়ায়।
দিদার খসখস করে হেসে বলে, ‘তোর দুদ অইছেনি? বোদাও অইছে?’
তার নীরবতা দেখে সে আবার বলে, ‘তাইলে তো তোরে লাগান যাইবো।’
সে জানে পুরুষের রক্তে একবার টেস্টোরেস্টন হরমনের পারদ লাফিয়ে উঠলে মানুষের বীজ বাইরে ছিটিয়ে না দেওয়া ছাড়া মুক্তি নেই।
ওই অবস্থায় সে কেবল লিঙ্গ-প্রবেশ্য ফুটোই দেখতে থাকবে। কৈশোরে যেমন তারা কলাগাছ ফুটো করে, কলাবতী সঙ্গম; বোতলের ভেতর ঢুকিয়ে বোতলবেগমের সঙ্গম করেছে, তেমন।
সে ভণিতা না করে সরাসরিই বলে, ‘লাগানো ছাড়া আর কোনো চিন্তা করতে পারতাছোস না? তাইলে আয়।’
বিছানায় চিৎ হয়ে দু-পা উপরে তুলে ধরে আবার রিপিট করে, ‘তাইলে আয়, লাগা।’
সে তার রিভলবারটি বের করেত পারে, যেটা সে প্রায়ই ব্যবহার করে কোনো রকমেই পুলিশের হাতে না পরে।
ভয় দেখানোর জন্য যন্ত্রটা তা বেশ কাজে লাগে, সে তার পদস্ত হক সাহেবকে দেয়ালে ঠেসে ধরে মুখের মধ্যে নল ঢুকিয়ে দিয়েছিল ইতরামিপূর্ণ ব্যবহার তার সঙ্গে না করার জন্য। এরপর থেকে সে হয়ে ওঠে হক সাহেবের ডান হাত।
সে দিদারের উপর তা প্রয়োগ করতে চায় না। দিদার তার এলাকার বন্ধু, তার মেসে ছাপাখানায় সে অনেক দিনরাত্রি ও তার ফুসলানো গৃহকর্মীদের উপভোগ করেছে। দিদার লেখাপড়া না করলেও টাকা রোজগার ও জীবনকে নিঙড়ে উপভোগ করার কায়দা জানে। বলা যায় দিদারই তার জীবন ভোগের পথপ্রদর্শক।
সে তার শার্ট খুলে, ব্রা খুলে স্তন দুটি বের করে দেখায়। দিদার কাছে এসে স্তনে হাত রেখে বলে, ‘মাইরি, হিজড়া লাগাই নাই জীবনে। আইজকা মওকা পাইছি। লাগামুই।’
হঠাৎ পুরুষের সঙ্গমের যোগ্য হয়ে ওঠায়, তার যে স্বভাব ছিল যখন যেখানে পারো বীর্য ছিটিয়ে দাও, তাতে লাগম পড়েছে। নইলে দিদারকে কে গ্রহণ করতেই পারতো। অনিচ্ছা কেন জাগে? সে শরীর তবু বাধাহীন করে রাখে।
দিদার শৃঙ্গারে উন্মত্ত হয়ে তারায় উঠলে বিছানায় হর হর করে বমিতে ভাসিয়ে দয়ে।
সে বুঝতে পারে না তার শরীরের প্রতি ঘৃণা থেকে না, নাকি বোতলের তলানী পান করে তার বমন হলো।
দিদার সম্বিত ফিরে পেয়ে বিছানা চাদর, বালিশের ওয়ার নিয়ে বাথরুমে ঢুকলে সে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সিগারেট জ্বালিয়ে নেয়।
দিদার মদ খেয়ে বমি করায় অপরাধবোধে ভূগেছে, নইলে সে এসব ধোবার চিন্তা করতো না। দিল দরিয়া টাইপের মানুষ সে, নষ্ট কাপড়-চোপর ডাস্টবিনে ফেলে রঙচড়া কয়েকটি বেডসিট বোলিশের ওয়ার কিনে নিয়ে আসতো এক্ষণি।
যদিও সেই সুযোগ তাকে সে দিত না।
সে আবার টাকা খাটানোর কথা বলে।
দিদার হেসে উড়িয়ে দেয়, ‘হিজড়ার লগে ব্যবসা করুম শ্যাষে?’
সে বলে, ‘আমার দুত গজাইছে বইলা কি আমি শ্যাষ হইয়া গেছি?’
‘আরে থো এই প্যাচাল, তোর ট্যাকাটুকা লাগলে আমারে কইস, দিমুনে।’
‘আমি কী করতে পারি তুই তা জানোস।’
দিদার চটে যায়, প্রায় চিৎকার করে বলে, ‘তুই আমার বাল ফালাবি। হুমকি দেছ, তোর হুমকিরে আমি চুদি না।’
সে হুমকির মতো শোনায় এমন কথা বলেছে কিনা ভাবে। সে বোঝাতে চেয়েছিল তার সক্ষমতা দিদার কাজে লাগাতে পারে। তার সব অভিজ্ঞতাই তো আছে। এই ক্ষমতাটা দিদার কাজে লাগাবে না? নাকি ও ভাবছে ওর ব্যবসা কেড়ে নেবে?
সে ব্যাপারটা বোঝাতে চেষ্টা করে, দিদার নিজের ক্রোধ সামলাতে না পেরে তার দিকে মদের শূন্য বোতল ছুড়ে মারে।
লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে চুরমার বোতলটি সারাঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
এই আচরণের একটা পাল্টা জবাব দেওয়া উচিত। নইলে দিদার ভাববে সে শেষ হয়ে গেছ।
সে একটা চেয়ার টেনে দাঁড়িয়ে বাথরুমের ফল ছাদের উপর থেকে রিভলবারটি বের করে বাট দিয়ে দিদারে মাথায় সজোরে আঘাত করে, ‘খানকির পোলা আমার দুধ হইছে দেইখা কি মনে করছোছ ধোনে চোর নাই?’
দিদার মুখে গরিয়ে নামা রক্ত হাতের তালুতে নিয়ে এর শোধ নেবার জন্য শাসিয়ে দরোজায় খুলে পালায়।
সে ভেবে রেখেছে দিদার চাঁনখার পুলের ওসমানের পোলাপান ভাড়া করতে পারে। তা নিয়ে ভাবে না। জীবন-মৃত্যু তার কাছে কোনো অর্থই বহন করে না।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop