সে ও তার শুয়োর (পর্ব-৪) – জাহিদ সোহাগ

By Published On: September 18, 2021Views: 175

সে ও তার শুয়োর (পর্ব-৪) – জাহিদ সোহাগ


ফাঁকা রাস্তা পাবার আশায় গুড়েবালি, মৎস্য ভবন পার হতে না হতেই বাস থেমে গেলো।
চারপাশ থেকে হকার ও ভিক্ষুকদের মৌমাছির মতো গুঞ্জন শুনে সে বুঝতে পারলো অনেকক্ষণের জ্যাম। তারা দু-বোতল পানি কিনে আশা করতে লাগলো শিগগিরই হয়ত ছেড়ে দেবে।
ইঞ্জিনের গরম বাতাস মসলিন-পানির মতো ধীরে উপরে উঠছে, বৃষ্টি শেষে হাইওয়েতে যেমন দূর থেকে দেখা যায় মরীচীকা; মনে হয়ে এই বাষ্পের দাহ্য নিজের অজান্তেই সব পুড়িয়ে ছাই করে দেবে মুহূর্তেই।
ডান পাশের অন্য রাস্তা তখনও ফাঁকা, সাই সাই করে গাড়ি ছুটতে ছুটতে সে রাস্তাও ভরে গেল।
নীরা বললো, চলো এইটুকু হেঁটে শাহবাগ পেরিয়ে রিকশা নেই।
সে সায় দিয়ে ফুটপাথের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে।

বাইরে তাতানো রোদ, গুমোট ও আদ্রতা বেশি থাকায় তারা ঘেমে একসা। সে একবার ভাবলো ঢাকা ক্লাবে ঢুকে বিয়ার-টিয়ার খেয়ে বিকালে বাসায় ঢুকবে কিনা। কিছু খেয়ে নিতে পারলে ভালো হত। সে কথাটা নীরাকে বললোও না, আবার গায়ে গায়ে লেগে থাকা বাসের ভীরে নামলো না। ততক্ষণে নীরা একটা সামনে এগিয়ে গেছে।
তারা হাঁটছে। বাসগুলো শূন্য করে দিয়ে যাত্রীরাও হাঁটছে। ফুটপাথ উপচে উঠছে
মানুষে। নীরার তেমন বিকার নেই। সে আনন্দেই আছে। ফুল মার্কেট থেকে ফুল কিনলো, কয়েকটি গোলাপ, গোলাপের উজ্জ্বলতা দেখে তার গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। সে সাদা রঙের ফুল কেনার কথা বললো, নীরা কয়েকটি ফুটন্ত গোলাপ ও কয়েকটি কুঁড়ি দিয়ে একটি তোড়া বেধে নিলো।
কোনো যুবকের সঙ্গে ফুল হাতে বাহুলগ্ন যুবতী থাকার দৃশ্য অন্যের চোখে দেখতে ভালো লাগে, নিজে যুবকের ভূমিকায় থেকে সে ততটা তা উপভোগ করতে পারছে না, তবু সে একটি ফুলের মুকুট নীরার মাথায় পরিয়ে দিল, যেন আজ একটি বিশেষ দিন, বিশেষ কথা বলার মুহূর্ত।
নীরা খুশিতে গলে গলে পরছে। ক্লান্তিহীন সেলফি তুলেই যাচ্ছে। এমন বিশ্রি পরিস্থিতির মধ্যে অন্যের চোখে তারা হয়ত এক টুকরো ফোয়ারা। তাদের দেখাদেখি বেশ কিছু যুবক যুবতীও ফুল কিনতে শুরু করলো।

যা ভেবেছিল তাই, শাহবাগে রিকশা নেই। কাঁটাবন পর্যন্ত জ্যাম চোখেই দেখা যাচ্ছে।
নীরা কপালে দু-চোখ তুলে ভ্রু জোড়াকে তোরণের মতো স্থির করে রাখে।
সে নিজের চোখদুটোকে শান্ত রেখে বললো, সমস্যা তো দুই– হয় রাজনৈতিক ব্যাপার, নয় কোনো ইতর বদমাশ যাওয়া আসা করছে।
ঢাকায় এটাই জ্যামের একমাত্র কারণ নয়, নীরা সেটা জানে কিন্তু সে সবকিছুতে রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের ফলাফল বলে মনে করে, এমনকি নিজেকেও।
তাহলে বৃষ্টি হলে জ্যাম বাড়ে কেনো?
বৃষ্টি হলে তো জ্যাম বাড়বেই।
এটা কোনো যুক্তি হলো? হয় ট্রাফিক পুলিশ রাস্তা থেকে সরে যায়, বা নীরা কথা শেষ না হতেই সে বললো, বা বৃষ্টি গাড়ির পুটকি মাইরা দেয়।
এখানে স্ল্যাং বলার কী হল?
স্ল্যাং কই দেখলে?
নীরা তার মেজাজ আচ করতে পেরে প্রসঙ্গ পাল্টে ডান দিতে হাতিরপুল বাজারের দিকে ইঙ্গিত করে বলে, ওদিকে রিকশা পাওয়া যেতে পারে। আই থিঙ্ক যাবেই।
জ্যাম ওখানেও হাঁটুগেড়ে বসে আছে।
থাকলেও হুড তুলে বসে থাকবো। হাঁটার আর শক্তি নাই।

তারা হাতিরপুল বাজারের কাছে গিয়েও রিকশা পায় না। জ্যামে সব স্থির হয়ে আছে। বাতাসে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ওড়াউড়ি। যেকোনো সময় ঝুম করে নামবে। রাস্তায় মানুষের ঢলে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই, তারা পানার মতো ভেসে ভেসে রায়েরবাজার যাবার আশা বাদ দিয়ে ইস্কাটনের দিকে হাঁটা দেয়। নীরাকে আস্বস্ত করে সে উল্টা পথে টেনে নেয়। নীরা ভাবছে আবার না মতিঝিল ফিরতে হয়।
সে একটা হান্ড্রেড সিসি ইয়ামহা বাইক কেনে, নীরা বিস্ময় কাটার আগেই সে বলে, অনেকদিন ধরেই ভাবছি নিজের চলার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।
কিন্তু তুমি চালাতে পারো?
স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে শিখেছিলাম। বাস্তবে দেখি পারি কিনা?
নীরা করজোড় করে ‘ভাই মাফ চাই তোমার পেছনে আমি উঠবো না’।
তার চোখের শীতলতার দৃঢ় ভাষায় সে বুঝতে পারে একসিডেন্ট করলেও তার পেছনে ওঠা ছাড়া উপায় নেই। সে স্ট্যার্ট দিয়ে চিপা-চাপা ফুটপাথ ধরে এগিয়ে চললো রায়েরবাজারের দিকে।
তার মনে পড়ে গেলো ক্লাস নাইনে উঠে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে এক বন্ধুর প্ররোচণায় বেরিয়ে পড়েছিল গন্তব্যহীন। বন্ধুর বাবার এইটটি সিসি বাইক আর অনভিজ্ঞ তিন আরোহি, পথে পথে পালাক্রমে একসিডেন্ট করে পৌঁছে গিয়েছিল বরিশাল। পরিত্যাক্ত এয়ারপোর্টের ভেতর তারা যার যার প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, কিন্তু শেষ বার মুলাদীর পথে দোকানের ভেতর বাইক তুলে নিজেরা নিজেদের কাছে সারেন্ডার করে।
সেই শিক্ষায় ভর করে, বা আরো দু-এক বার কারো বাইক একটু-আধটু চালিয়েছে হয়ত, সে পথে পথে অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে তিনটা নাগাদ রায়েরবাজার পৌঁছে গ্যারেজ করার জায়গা না থাকায় রাস্তায় ফেলে রাখে।
বাড়িওয়ালা সিঁড়ির গোড়ায় চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছিল। সে তাকে সালাম দেয়। বাড়িওয়ালা সিঁড়ি ছেড়ে না দিয়ে নীরাকে আপাদমস্তক পরীক্ষা করে দুজনের স্ফিত স্তনের দিকে তাকায়।
বাড়িওয়ালা ওয়ার্ড কমিশনারের ভায়রা, ক্ষমতা ভায়রার মতোই সে চর্চা করে।
সে হেসে রাস্তার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে, চাচা বাইকটা কিনলাম। এখন রাখি কোথায় বলেন তো?
কেনার পরে এই চিন্তা করেন?
কেনার সময় মনে হয়েছিল সিঁড়ির নিচে ঠেলেঠুলে ঢুকিয়ে রাখতে পারবো।
সে নীরার হাতে চাবি দিয়ে তাকে উপরে পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে মাথায় করে রাখতে হবে।
বাড়িওয়ালার মুঠো পাকানো হাতের ভেতর সিগারেট, টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে, মাথায় রাখতে পারলে গ্যারেজ করার চিন্তা করেন ক্যা?
মাথায় তো বোস্তা কম না, তাই চিন্তা করি। আপনি যদি একটা ব্যবস্থা কইরা দেন।
হ, আমার ধোনের লগে বাইন্ধা রাখেন।
খেলনা গাড়ি হইলে তো রাখতেই পারতেন, এইটার ওজন তো একশ কেজির বেশি হইবোই।
তাইলে রাহো। কুদ্দুচ্চাই দোকানে রাখো।
আপনি বইলা না দিলে সে আমার কথা শুনবো?
শুনবো না ক্যান, শুনবো? আমার কথা কইয়া খাড়া চোদা দিবা সব ঠিক হইয়া যাইবো।
সে সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করে। গ্যারেজ তো হলো। কাগজপত্র লাইসেন্স এগুলো না থাকলে পুলিশকে ঘুষ দিতে দিতে রফা শেষ।
উপরে গিয়ে দেখে নীরা তার শটস আর টিশার্ট পরে বসে আছে, চুল ভেজা।
সে ফ্রিজ থেকে বাক্সভর্তি জমাট বাধা খাবার বের করে ওভেনের পাশে রেখে বাথরুমে ঢোকে। শাওয়ারের নিচে নগ্ন দাঁড়িয়ে আয়নায় সে নিজেকে ভালো করে দেখে, তার শরীর আগের চেয়ে সুডৌল কমনীয়তার উপর দিয়ে পানি চকচক করে বয়ে যাচ্ছে। সে নিজেই নিজের স্তন আলতো করে আদর করে করে শরীরের ভেতর এক নারী সত্তাকে জাগিয়ে তোলে। এই নারীকে কে রমণ করবে? সে কি নিজেই নিজেকে রমণ করবে?
নীরাকে চমকে দেবার জন্য সে শুধু শটস পরে বাথরুম থেকে বের হয়। নীরা একবার তার দিকে তাকিয়ে, আবার নিজের ভ্রুজোড়াকে পরস্পরের রক্ত চুষে খেতে দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
হ্যাঁ, এবার নিজেই নিজেকে চুদবো।
মানে কী?
মানে হইলো আমার দুধ গজাইছে।
সে তো বুঝলাম, কিন্তু?
কিন্তু কিছু না, ইতোমধ্যে গ্যাং রেপডও হয়েছি।
নারী হেসে বিছানায় গড়াগড়ি খায়, ‘বলো কি, তোমার মতো লোককে কেউ রেপ করতে পারে?’
সে বিছানায় এসে নীরার জামাকাপড় খুলে আলিঙ্গনের মধ্যে নেয়।
নীরা চিৎকার করে, ছাড়ো ছাড়ো, আগে ঠিক হোক কে কাকে করবে?
সে বলে, কেনো আগে তুমি আমাকে করেছো না?
করেছি, কিন্তু…
কিন্তু কিছুই না, তুমি আমাকে করবে, আমি তোমাকে করবো, অন্য লোকেরা আমাকে করবে। ব্যাস।
একটা ফাকিং সোসাইটি গড়ে তুলবে?
মন্দ হয় না।
নীরা তাকে উপর থেকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলে, এখন আমি পারবো না। কাল অনেক অত্যাচার গেছে।
বেশ তো। পানিপথে যুদ্ধ না করলে, সড়ক পথ আছে, আকাশ পথ আছে। যুদ্ধ থেকে তো নিস্তার নাই।
নীরা নিজের আঙুলগুলো আলতো মুঠো করে ধরে বললো, আমি বড়জোর আঙ্গুল শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারি।
বেশ তাই হোক।
নীরা যথেষ্ট অভিনিবেশ দিয়ে তাকে মৈথুন করে দিচ্ছে, কিন্তু সে সাড়া পাচ্ছে না, মনে হচ্ছে তার লিঙ্গের সঙ্গে ব্রেনের তার কাটা পড়েছে।
নীরা অবস্থা বুঝে সকালের ঘটনা মনে করিয়ে দিলো।
সে বললো, আমি ঠিক জানি না কী ঘটেছিল। ওনাকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
আমার তো মনে হয়, আমার চোখই যথেষ্ট। আমিই তো সাক্ষী।
তারা খেতে বসে আলাপ চালিয়ে যায়। খাবার তেমন কিছুই না গরুর মাংস, তাও যথেষ্ট নেই আর মুড়ি।
সে বলে, পুলিশি জেরার মুখে কিন্ত সাক্ষ্যও পাল্টে যায়।
এখানে তো পুলিশ নেই।
তা নেই।
তবে তার কাছে জিজ্ঞেস করো, ঠিক কী ঘটেছিল।
কিন্তু তুমি ওনার সঙ্গে এমন করতে পারো না।
না পারার কী আছে? তুমি কি মনে করো এবারই প্রথম?
নীরা হাত তুলে অলীক মাছি তাড়াবার ভঙ্গি করে বলে, যাক্ আসল কথায় আসি।
বলো।
প্রথমত, আমি ওই মাগীটার হাত থেকে বাঁচতে চাই। আমি আর এই পথে নাই।
বেশ তো। কিন্তু ওই মাগীটার কী হবে?
সে তার পথ বেছে নেবে। দ্বিতীয়ত, আমি আর মতিঝিল ফিরছি না। আমার যা যা আনার তা সঙ্গে করে এনেছি।
কিন্তু মাগীটা কি বাঁচতে পারবে, একা? সে যদি এই বাসায় এসে ওঠে?
সেটা দেখা আমাদের কাজ না। তারপরও যদি এখানে আসার চান্স থাকে আমার বাসা পাল্টে ফেলবো।
আমার মনে হয় না এই পথে সমাধান আছে।
আচ্ছা দেখা যাক তখনকারটা তখন বুঝবো। এখন আমরা কী করবো সেটা নিয়েই ভাবা উচিত।
আমরা বিয়ে করে ফেলি।
একজন দ্বিবিধ সেক্সের মানুষকে?
তুমি তো আর বদলে যাওনি।
কোনোকিছুই স্থির থাকে না। আমিও আমার স্থানে নেই, তুমিও তোমার স্থানে নেই।
কিন্তু তুমি আমাকে তোমার সঙ্গে রাখছো তো?
মনে হয় না তোমাকে ছেড়ে যাবো।
তাহলে আমাদের মধ্যে কমিটমেন্ট কী?
যার যার জীবন তার তার।
নীরা হেসে বলে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার?
তাই মনে হয় ভালো।
বেশ। তবে আপাতত আমি আর নিজেকে ভাড়া খাটাতে চাই না। অন্যকিছু করতে চাই। দরকার হলে বুয়ার কাজ করবো।
বুয়ার কাজ করে দেখো, ভাড়া খেটে তো পয়সা পাওয়া যায়, তখন ফ্রি খাটতে হবে।
তুমি কি ওই মাগীটার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে?
মনে হয় না সে আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাইবে। অন্তত শারীরিক কারণেও না। আমাকে বশে রেখে তার ব্যবসা চালানোর জন্যও না। আর যদি…
আর যদি কী?
আর কিছু না। সময়ের হাতে সব ছেড়ে দাও।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop