অস্তমনে
মানুষ কিভাবে পাথর হয়েছে, ভাবো—
কতো জল বয়ে হলো এই সরোবর?
দেখেছো কখনো কবরখানার বুকে,
এপিটাফে জ্বলে বিশ্রান্ত অক্ষর?
কতো পায়ে পায়ে কদম গুনেছো পথ?
সম্মুখে আছে ততোধিক প্রান্তর;
কন্টকে ভরা অগ্নি পক্ষপাতে
পুড়ে ছাই তবু চলেছো নিরন্তর!
একাধিকবার জন্ম-মৃত্যু আসে
মানুষেরা বুঝি একবার বাঁচে সাধে;
অনন্তকাল ধোঁয়াশা ধূসর জালে
তুমি কী আসবে পরজন্মের রাধে?
অন্তর সেতো সুরালাপে ভরা মীড়,
পুরাতন স্মৃতি ধূলোর আস্তরণে—
কখনো আঙুলে লিখে গেছো একমনে
নামটুকু তুমি মুছিও না অকারণে।
ঝড়-ঝঞ্ঝাট
ছটফট করে পাখি বুকের খাঁচায়
তুমিও কী শোনো নাকি পাখিটার ডাক?
শুনেছি পাখিরা করে আগাম বিলাপ
ঘনায়ে আসলো যদি কালবৈশাখ।
বজ্রগর্ভ চোখ, অচিরপ্রভায়—
পুড়িয়ে দৃষ্টিরেখা মেঘ উড়ে যায়;
তোমাকে জড়ায়ে ধরে ঝড় বাদলায়
নিরাপদ হবো আজ নেই সে উপায়!
তৃণলতা ঠোঁটে ধরে উড়বার পথ
কুলায় ফিরবে পাখি গোধূলির পর;
তুমি জানো খাঁচা কতো নির্দয় হয়
থামলে আকাশ হবো বিভীষিকা ঝড়।
ধারাপ্রবাহিনী
ফিরে আসো নদী, কিশোরীর চলনে তুমি যেও না
যেখানে প্রতারক সমুদ্র তোমাকে বিলীন করে দেয়!
থামো একবার, তীর ঘেষা গাছে দিতে পারো আয়েশি হেলান
বিপদজনকভাবে ঘুম বোনে পাখির বয়ান, ঢিলে হয় স্নায়ু
না ছুঁয়ে যেও না থরে থরে লজ্জাবতী, পাতার দোলন ফেলে
বাতাসে কৃষ্ণপাহাড়ী গন্ধ, তোমার বাঁকের অধিক যৌনক্ষম
পূর্ণ করো না তুমি জলের উদর, অকৃপণ নিঃশেষ!
ফিরে আসো নদী, সর্প দেহের রাগে ফণা তুলে বলো—
হে সমুদ্র, তোকে আমি সন্দেহ করি, ধোঁকাভ্যাসী অপ্রতীতি
বহুগামীতার অথৈ ছন্দে ভুলিও না তটী, চিরকল্যানী
মোহ-সরোবর, নিঃসৃত লালা হয়ে ভরে আছে নীলাভ ফেনায়
নিজের আয়না দেখো ওগো প্রবাহিণী, ভেঙে চুরমার, কেমন জোয়ার!
ভাবো একাকার? অক্লান্ত বয়ে গিয়ে হ্রাস বুঝি শেষ নিস্তার!
গন্ধমচাষী
কোন্ জন্মে পূন্য ছিলো, কোন জন্মে পাপ?
কোন্ গঙ্গা জলে ধোবো কৃষ্ণ অভিশাপ?
শুকনো গুঁড়া ধুলামাটি ধূপছায়া এ ঘর
গুহ্য মনে চিহ্ন রাখে ভ্রান্ত জাতিস্মর!
অগ্নিমাখা স্বর্ণপদ্ম করতলে ধরে;
প্রভু বলে, দুষ্টচক্র জাহান্নামে পোড়ে
ইহকালে রক্ত মাখি দেবী পদতলে
শূন্য হয়ে পূর্ণ হবো হাড়ভাঙা কঙ্কালে!
কোন্ জন্ম প্রেত ছিলো দরদি দরবেশ
উড়তে থাকা ক্ষুদ্র পাখি হুংকারে নিঃশেষ!
জন্ম থেকে চাষাভুষা, নাঙলেরও শ্রমে
শস্য গোলা ভরে তুলি নিষিদ্ধ গন্ধমে।
সহমর্মিতার গান
সকল দুয়ার বন্ধ, পথে পথে কাঁটাতার ঘের
তবে কী রয়েছি বন্দী, কারাগারে হয়েছি প্রেরণ?
কিঞ্চিৎ নিরাশ নীলে, ভেসেছে হাওয়ার গুণগান
আফোটা ফুলের গন্ধ তাতে বহনের দিও ভার।
মেঘের বাহনে চড়ে মৃতমন চলেছে কোথাও
গুমগুম শব্দ বাজে নিরক্ত বিবশ দুনিয়ার;
সকল নিগম রুদ্ধ, ঝালাই মেশিনের গর্জন
স্ফুলিঙ্গের আলো ক্ষণে ক্ষণে বিকশিত হয়।
মুক্ত অথচ কয়েদি, বেড়িহীন পরন্তু শৃঙ্খল
খালাস মূলত কোনো— ভয় পাওয়া পাখির উড়াল;
সকল বেষ্টন পোক্ত, কাঁটাতারে আঁচড়ে গেছে মাংস
অন্ধকারে বসে লিখি আজাদের শ্লথ এক কাব্য।