অনুভবের ফুল

By Published On: March 25, 2025Views: 15

অনুভবের ফুল
শেখ ফিরোজ আহমদ

কবিতায় কিছু কথা বলা হয়- কিছু কথা অনুক্ত থেকে যায়। কবি শব্দের যে মায়াবন্ধন তৈরি করেন তার মধ্যে জীবনদর্শন ফুটে ওঠে। কবিতা এই কাজটিই করে। কবিও প্রকৃতির ইশারা বুঝে তার দার্শনিক অভিপ্রায় নির্মাণ করেন। এই অভিপ্রায়ের মধ্যে জীবনের সৌন্দর্য ও মূলবোধের সারাংশ কুসুমিত হয়। জীবনের সুখ-দুঃখ, একাকীত্ব, উল্লাস-বিষাদ, মনের ক্ষরণ, রোদন, হৃদয়ের প্রশান্তি ও আনন্দ-বেদনার উপলদ্ধি প্রকাশ পায়। কারণ, ভিড়ের মধ্যে থাকলেও মানুষ তো আসলেই একা। অজস্র প্রতিকূলতার মধ্যে অজেয় মানুষের সংগ্রাম দেখি। কবিতা তার পরম সান্ত্বনার স্থল। কবি ইসমত শিল্পী একজন মহৎ সংগ্রামী যিনি জীবনকে ছেনে শিল্পের রূপ ও রূপাঙ্গিক নির্মাণ করেন- নিজস্ব একটা দার্শনিক অভিপ্রায়ে সকলকে টানেন। জীবনের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেন। তার দার্শনিক অভিপ্রায়ের মূল জায়গায় থাকে জগৎ, মানুষ ও মায়ার বন্ধন। যেমন-

পাহাড়ের বুকে সাঁতরেছি, একা
লালের সীমানা পেরিয়ে চিনেছি কঠিন রং
সে রং কালো নয়, নয় নীল, সবুজ কিংবা শাদাটে
রঙে কীইবা আসে যায়! রং পাল্টায়
মানুষ পাল্টায় ক্ষণে ক্ষণে
রোদবৃষ্টি মেঘ, নদী পাল্টায় গতিরোধে।
মুখ জুড়ে সমাহিত রোদ / ইসমত শিল্পী

ইসমত শিল্পীর লেখা উপরের কবিতাংশ থেকে একটি পালটানোর তুলনা পাওয়া গেল। কবিতার বক্তব্যটি হলো- সবকিছু বদলায়। ‘পাহাড়ের বুকে সাঁতরেছি’- পঙ্ক্তির অংশ একটা অসম্ভব ব্যাপার। নদী-সমুদ্রে সাঁতার কাটা যায়, কিন্তু পাহাড়ে সম্ভব নয়। তবে পাহাড় বাওয়া হয়।

এখানেই কবির কৃতিত্ব, তিনি এমন একটা চিত্রকল্প তৈরি করেছেন যাতে অজেয় মানুষের সংগ্রাম ফুটে ওঠে। প্রকৃতির ইশারা থেকে জীবনের সহজপাঠের হাতেখড়ি দেখতে পাই।

এখানে কবি যে দর্শনবিন্দুতে আস্থা রাখলেন, তা হলো- সবকিছু বদলায়। ক্ষণে ক্ষণে জীবনের দৃশ্য বদলায় মানুষও বদলায়। প্রকৃতিও বদলায় অস্বাভাবিক হস্তক্ষেপে- যদি বাধা তৈরি করা হয় তবে রোদ, বৃষ্টি, মেঘ এবং নদীও পালটায়। কবিতাটি সহজিয়া ভঙ্গিতে লেখা- দুর্বোধ্যতার আছর পড়েনি।

কবি ইসমত শিল্পী অনুভবশীল, প্রখর পর্যবেক্ষণ শক্তির অধিকারী- যিনি প্রকৃতির ইশারা বুঝেন। তার কবিতার প্রতিটি পঙ্ক্তিতে জীবনের ভাষ্য তৈরি হয়। তাঁর কবিতার মধ্যে অনুষঙ্গ পালটানোর চিত্রকল্প আরো একবার দেখি। তিনি বলেছেন-

কিছু কিছু দিন থাকে আনন্দের
কিংবা বিষাদের
ঘরোয়া স্বাদের
আপনি থেকে তুমিতে নামার
রাফ টাফ কথার হুলেস্নাড়ে তুই করে বলার
কিছু কিছু দিন আসে অপেক্ষা ও ক্লান্তির…
(প্রতিচ্ছায়া)

‘প্রতিচ্ছায়া’ কবিতার অংশটিতে আমরা সম্বোধনের সাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের যে বাতাবরণ দেখি তারই একটি চমৎকার খণ্ড দৃশ্য। ছবির মতন দেখা ও অনুভবের চিত্রকল্প এটি। পাঠ করবার পর যে অনুভূতি এবং ভাবনার পরম্পরা চলতে থাকে নিজেদের জীবনের মিল-অমিলের একটা ব্যাখ্যা আপনাআপনি চলতে থাকে। সমাজ নিরীক্ষণবাদীরাও কবিতায় সামাজিক বাস্তবতার যে রকম অনুরণন খুঁজে পেতে চান, এই কবিতা তাদের জন্য সেই সুযোগ করে করে দেবে। এখানেই কবি ইসমত শিল্পীর কবিতা নির্মাণের সার্থকতা পাই।
‘যৌবনবতী মৃত জোনাক’- অসাধারণ একটি কবিতা। জীবন এবং প্রকৃতির ইশারা থেকে কবি যে দর্শন চয়ন করেছেন তা খুবই চিত্তস্পর্শী। এখানে অনির্ণীত দ্বান্দ্বিকতায় বসন্ত এবং মৃত্যুর সহাবস্থানের গড়ে তোলা চিত্রটি আমাদের মুগ্ধ করে। প্রথমে বলা হচ্ছে ‘ তোমার সাথে আমার’, পরে বলা হয়েছে ‘অথবা আমার সাথেই আমার’, খুবই ইন্টারেস্টিং একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হলো। এখানে মানব প্রবৃত্তির পরস্পরবিরোধী অবস্থানগত একটি কাঠামো দেখতে পেলাম। মাঝের অংশটুকুতে ইঙ্গিত করা হয়েছে বসন্ত এবং বর্ষার মোড়কে প্রকৃতির যৌবনানন্দের ক্ষণ। শেষটা মৃত্যুর জলাশয় বা মৃত্যু চেতনাশ্রয়ী অবলোকন। সফট ফিলিংস পাওয়া যাচ্ছে ‘মৃত্যুর জলাশয়’ শব্দবন্ধ দিয়ে। জলাশয় টলটলে জলে ভরা থাকে। পশুপাখি- জল পান করে, মানুষ ব্যবহার করে। তাহলে তা মৃত্যুর জলাশয় হবে কেন! এখানেই কবির মুনশিয়ানা- তিনি আসলে বুঝাতে চেয়েছেন মৃত্যুর সুন্দর পরিবেশের কথা। ইসমত শিল্পী তাঁর কবিতায় এরকম ইশারাধর্মী সূত্রগুলো বিষয়গুলো আকছার ব্যবহার করেছেন।

তোমার সাথে আমার
অথবা আমার সাথেই আমার
মাঝের পথটুকুই ফুটে থাকা বসন্ত
স্মরণীয় বর্ষা
বাকিটা মুত্যুর জলাশয়
(যৌবনবতী মৃত জোনাক)

ইসমত শিল্পী কবিতায় শব্দের মায়াবন্ধন তৈরি করেন, এটা তাঁর কবিতায় ঘুরেফিরে ছায়াপাত করে। জীবনের সাথে জগতের, পরিবেশের সাথে মানুষের, ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, আবেগের সঙ্গে ভালোবাসার- এরকম নানামাত্রিক বোধের উপস্থিতি তাঁর কবিতার ন্যায্যতাকে প্রতিপন্ন করে। নিচের কবিতাংশগুলিতে তার কিছু প্রতিফলন দেখতে পাই-

১. বারান্দা মানেই ঘরের সাথে ঝুলে থাকা মায়া
অথচ ঘর বলতে যা বোঝায় তা আমার নেই
বিকেল হলেই
উল্টো দিকে আরেকটা ছাদ উপুড় হয়ে ঝুলতে থাকে রোজ
তবুও পাশাপাশি বসি, গল্প করি, চা খাই
আমার সাথে আমি
(সরে থাকি মিলিত দূরত্বে)

২. কখনোই জ্যোৎস্না দেখা হয়নি,
অসংখ্য চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকেছি
চাঁদ দেখা মানেই তো জ্যোৎস্না দেখা নয়!
(দ্বিতীয় প্রহর)

৩. একটি জানালা চেয়েছি মাত্র,
দরজা চাইনি।
একটি খোলা জানালা
রোদ ভালোবেসে দেবে পাহারা
আমি আর কতটুকু রোদ পাই বলো;
পৃথিবীর!
(জানালা)

৪. একসময় প্রেমিকের ছবি টাঙিয়ে রাখতাম দেয়ালে
অন্য দেয়ালে রবীন্দ্রনাথ
একসময় নিজেকে সে রবীন্দ্রনাথের মত মেধাবী ও
দুর্দান্ত প্রতাপশালী প্রেমিক ভাবতে লাগলো
তাই ছবিটা দেয়াল থেকে সরিয়ে দিতে হলো
মনে হলো-
প্রেমিকের ছবি দেয়ালে টাঙ্গাতে নেই,
ওখানে রবীন্দ্রনাথকেই শোভা পায়!
(দেয়াল)

ওপরের ১-৪ নম্বর উদ্ধৃতিতে নানা বিচিত্র অনুষঙ্গকে কবি বিষয় হিসেবে নির্বাচন করেছেন। ১নং উদ্ধৃতিতে কবির সেই মায়াবন্ধন দেখতে পাই। একাকীত্ব এবং নিঃসঙ্গতা যাপনের অসামান্য চিত্র এই কবিতাকে বিশিষ্ট করেছে। নাগরিক জীবনের যন্ত্রণার সঙ্গে নৈঃসঙ্গ্য ও একাকীত্বের মধ্যে যখন আবিষ্কার করলেন নিজের মুখোমুখি হওয়ার নির্দয় বাস্তবতা- তখনই জয় হলেঅ কবিতার। ২ নং উদ্ধৃতিতে একটি অনুসিদ্ধান্ত তৈরি করেছেন। যেমন- ‘চাঁদ দেখা মানেই তো জ্যোৎস্না দেখা নয়!’ এই অনুসিদ্ধান্তের মধ্যে অনেক না বলা কথা ইশারা এবং বোধের গভীর নিমজ্জন আপ্লুত করে। ৩ নং উদ্ধৃতি খুবই সুন্দর চিত্রকল্প ও বোধ নির্মাণের ভিতর দিয়ে কী এক গভীর ইশারায় আমাদের মুগ্ধ করে। ব্যক্তির আর্তি কতটা শৈল্পিকভাবে ফুটে উঠতে পারে, এই কবিতা তার নিদর্শন। ৪ নং উদ্ধৃতিতে রবীন্দ্রনাথ যে তথাকথিত প্রেমিকসহ সবকিছুর উর্ধ্বে, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার দীপ্তিতে অপরাজেয়- সেই মহিমান্বিত অবস্থান স্পষ্টকরণ করেছেন।

ইসমত শিল্পীর কবিতায় অণুসিদ্ধান্ত নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা। তিনি কবিতায় যে দার্শনিক অভিপ্রায় নির্মাণ করতে চান, এইসব অনুসিদ্ধান্ত সেই অভিপ্রায়কেই ত্বরান্বিত করে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

  • আকাঙ্ক্ষা একা জাগ্রত হয় না, দৃষ্টির আড়ালেও দৃষ্টান্ত তৈরি হয় গোপনীয়তায়
  • রং পাল্টায়
    তবে একবার
    মানুষ পাল্টায় ক্ষণে ক্ষণ
  • ভালোবাসা পাল্টে গেলে মরে যায় বোধ
  • অদ্ভুত মিথ্যেরা
    পৃথিবী পোড়ায়,
    (অধরা মাধুরী)
  • বারান্দা মানেই ঘরের সাথে ঝুলে থাকা মায়া
    অথচ ঘর বলতে যা বোঝায় তা আমার নেই (সরে থাকি মিলিত দূরত্বে)
  • চাঁদ দেখা মানেই তো জ্যোৎস্না দেখা নয়! (দ্বিতীয় প্রহর)

ওপরের এই অনুসিদ্ধান্তগুলোর প্রথম তিনটি একটিমাত্র কবিতা থেকে নেওয়া, তার নাম মুখ জুড়ে সমাহিত রোদ। এবং ৪ নং অনুসিদ্ধান্তটি অধরা মাধুরী কবিতা থেকে নেওয়া। ৫ম এবং ৬ষ্ঠটি যথাক্রমে সরে থাকি মিলিত দূরত্বে এবং দ্বিতীয় প্রহর থেকে নেওয়া। কবি নিজস্ব আঙ্গিকে যে জীবন-ভ্রমণ করছেন, এই কবিতা সেই অর্জিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং প্রকৃতির ইশারা থেকে দার্শনিক উপলদ্ধির আস্থা চিত্রণ মাত্র। মুখ জুড়ে সমাহিত রোদ ইসমত শিল্পীর অন্যতম সেরা কবিতা।

কবিতা সব সময় একই রকম থাকে না। কবির দিনযাপন ও দেখার জগতের মধ্যে অভিজ্ঞতার ক্রমাগত বিবর্তন সংঘটিত হয়। বোধ এবং উপলদ্ধির ভাঙচুর ঘটে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না সবকিছুর মন্থনে কবি নীলকণ্ঠ সত্যদ্রষ্টা হয়ে ওঠেন। তার দার্শনিক অভিপ্রায়ের রূপান্তর ঘটতে থাকে।

কবিতার পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতে তার ছাপ পড়ে। কবি ইসমত শিল্পীর কবিতায় সেই ছাপ পড়তে শুরু করেছে। এসব হলো অভিজ্ঞতার রূপান্তর। এই পর্বের কবিতাগুলো ছোটো এবং নির্মেদ পঙ্ক্তির আদলে রচিত হয়। প্রবল আবেগের পরিবর্তে ধীরস্থির ও সংযত বাক্প্রতিমার লক্ষ্যযোগ্য উপস্থিতি দেখা যায়। দু-একটি নমুনা দেখা যাক-

১. সবাই একাই হাঁটে
জলের আকাশ পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যা নামে
তবু সবাই একা একাই হাঁটে।

যতই বোঝাই
হৃদয় আমার কথা শোনে না।

তোমার আসার সময় হোক
না আসার গল্প বলে ব্যথা দিও না।

২. চোখের ভিতর

আমার দিকে তাকাও
দেখো, আমার চুল অনেক লম্বা হয়েছে।
দেখো, জেগে আছি।

একদিন এসো
আমাকে না জানিয়ে এসো
চুলগুলো বেঁধে দিয়ো
দেরি কোরো না, পৃথিবীর বয়েস প্রায় শেষ
ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছি চোখের ভিতর
সময়ের শাদা মেঘের ভিতর
হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের চোখ।

তাপ থেকে নেমে এসো
ঠাণ্ডায়,
জানালা খুলে রেখেছি
রাতের রঙিন আলোয়
পথ চিনে চিনে
তুমি চলে এসো

আমি চুল খুলে বসে আছি
চুলগুলো বেঁধে দিয়ে যাও।

৩. ঘুম

ধরো, আমি নেই
তোমার অতীত তোমাকে ডাকছে।

সে-ই মুখস্থ পথে
আমার হৃদয় ঘুমিয়ে পড়েছে

৪. মন

আমার ইচ্ছে করে
সারাক্ষণ
ভালোবাসার নাম ধরে ডাকি!

কে আমার গলা আটকে দেয়?
কে দেখে প্রাণের আস্ফালন!

কবিতাগুলো গোছানো-সংযত ও নিয়ন্ত্রিত। উপরের ১ এবং ২ নং কবিতা পুরো কবিতা। ৩ এবং ৪ নং উদ্ধৃতি আংশিক কবিতা। সবগুলো কবিতাই প্রেমের কবিতা, পরিপাটি বুনন। এদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কবিতা হলো ২ নং উদ্ধৃতির ‘চোখের ভিতর’। অপেক্ষার মুহূর্তে কী অপূর্ব আহ্বান- আছে রহস্যময়তা, অবসান ভীতি- আছে প্রগাঢ় অপেক্ষা। একটু বিষণ্ণতার ইংগিত কি নেই- তাও আছে। এ সেই কবিতা যা বোধের মধ্যে গুঞ্জন তুলে থেকে যায়।

তাঁর কবিতা পাঠে জীবনের প্রতি প্রগাঢ় স্পন্দন জন্মে। অনুভব নানা রূপ রঙ রসে বর্ণিল হয়ে উঠে। তাঁর কবিতাগুলোর দর্শন, কাব্যভাষা ও নির্মাণ-স্থাপত্য অনন্য। ইসমত শিল্পী শক্তিমান কবি হিসেবে ইতোমধ্যে তাঁর শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন।

ভাবনা ও দর্শনের ঋজুতা, বেপরোয়া গাঁথুনি, নিরাপস অভিব্যক্তি, আত্মজৈবনিক সরলতা ও চাতুর্যহীন নির্মাণই তাঁর কবিতাকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। ইসমত শিল্পীর কবিতা ক্লান্তিকর নয়, জোর করে পড়তে হয় না। পড়ার আনন্দেই পড়া হয়- আর দার্শনিক ভাবনার ছোঁয়ায় পাঠকের মনে অনুভবের ফুল ফোটে। তাঁর কবিতা শেষাবধি ব্যক্তি ও সমষ্টিগত মানুষের মানচিত্র।

0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments