গিরিশ কারনাড : ভারতীয় থিয়েটারের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক
ভারতীয় থিয়েটারের তিন সমসাময়িক দিকপাল হলেন বিজয় তেন্ডুলকর, বাদল সরকার এবং গিরিশ কারনাড; যাঁদের কাজ সমসাময়িক নাটককারদের তুলনায় একেবারেই স্বতন্ত্র। এঁরা তিনজন ভারতীয় থিয়েটারের সম্পূর্ণ আলাদা তিনটি দিকের সন্ধান দেন। বিজয় তেন্ডুলকর তার নাটকে সামাজিক বিপর্যয় বা বাস্তব জীবনের ঘটনার মাধ্যমে বাস্তব জীবনের নির্মমতাকে তুলে ধরেন। তার ‘সখারাম বাইন্ডার’, ‘চুপ! আদালত চলছে’ বা ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’ বিশ্ব থিয়েটারের রত্ন স্বরূপ। আবার বাদল সরকার বাংলা তথা ভারতীয় থিয়েটারকে দিয়েছেন একটা নতুন পথের সন্ধান। তাঁর থার্ড থিয়েটার শুরু করেছে এমন এক থিয়েটার আন্দোলন যা পরবর্তীতে ভারতে এবং ভারতের বাইরে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য থিয়েটার গ্রুপ এবং থিয়েটার কর্মীর যারা তাদের থিয়েটারচর্চায় বেছে নিয়েছে বাদল সরকাররের দেখানো পথ। একইভাবে গিরিশ কারনাড ভারতীয় থিয়েটারের এমন এক নক্ষত্র যিনি ভারতীয় থিয়েটারে এক নতুন ধারা যোগ করেন। গিরিশ কারনাড তার থিয়েটারে নিয়ে আসেন ভারতীয় পুরাণ, ইতিহাস এবং প্রচলিত উপকথাকে। কিন্তু তিনি পুরাণকে নিয়ে এসেছেন নিজের মতো করে। গিরিশ কারনাডের থিয়েটারে ভারতীয় পুরাণ বা উপকথার প্রচলিত রূপ এলেও, সেগুলি প্রচলিত অর্থসহ আসেনা। অর্থাৎ তাঁর নাটকে প্রচলিত পুরাণ বা উপকথার কাহিনিও নতুন অর্থ বহন করে নিয়ে আসে। গিরিশ কারনাডের নাটকে ভারতীয় মিথ বা পুরাণ নতুন ব্যঞ্জনাসহ আরো উজ্জ্বল হয়ে ফিরে এসেছে। একই সঙ্গে তিনি মিথগুলিকে করে তুলেছেন সমসাময়িক। ভারতীয় সমাজের বর্ণভেদ এবং প্রচলিত রীতিনীতিকে তিনি নতুন আলোয় দেখার চেষ্টা করেছেন তার নাটকে। নারী পুরুষের সম্পর্ক, সমাজে নারীর অবস্থান, রাজনীতি, দাম্পত্য এবং সম্পর্কের জটিল রসায়ন গিরিশ কারনাডের নাটকের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে।
গিরিশ কারনাডের লেখা প্রথম নাটক ‘মা নিষাদ’ কন্নড় ভাষায় লিখিত।
পরবর্তী চার দশকে তিনি মোট পনেরটি নাটক লিখেছেন।
তার মধ্যে মাত্র দশটি নাটক অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতে।
এরম ধ্যেই কিছু অনূদিত হয়েছে হিন্দি এবং বাংলায়।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৯৬১ সালে বিলের জাত্রার সময় তিনি লেখেন ‘যযাতি’।
‘যযাতি’ জানান দেয় ভারতীয় থিয়েটারের আকাশে এসে গিয়েছেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
গিরিশ কারনাডের জীবন শুরুই হয়েছে এক মুক্তি চিন্তা এবং সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। তাঁর মা ছিলেন সন্তানসহ একজন বিধবা যাঁকে গিরিশের বাবা বিবাহ করেন পাঁচ বছরের প্রবল সামাজিক, পারিবারিক এবং ধর্মীয় বাধা উপেক্ষা করে প্রবল সংগ্রামের পর, প্রধানত ব্রাহ্ম সমাজের চেষ্টায়। তিনি ছিলেন মায়ের দ্বিতীয় বিবাহের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। প্রথমে মহারাষ্ট্র এবং পরে কর্নাটকে তাঁর বেড়ে ওঠা। এই সময়ই তাঁর থিয়েটারের সংস্পর্শে আসা এবং থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা। এইসময় তিনি প্রেমে পড়েন কর্ণাটকের লোকনাট্য যক্ষগন (ণধশংযধমধহ)-এর যা পরবর্তীতে তাঁর বেশ কিছু বিখ্যাত নাটকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোডস স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ যাত্রার সময় প্রথমবার তিনি একটি গভীর সংকটের সম্মুখীন হন। তাঁর পরিবার বিশেষত তার বাবা মোটেই রাজি ছিলেন না যে, গিরিশ বিলেত যাত্রা করুক। বাবা-মায়ের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও গিরিশ উঠে বসেন বিলেতগামী জাহাজে। এই সময়েই তাঁর কলম থেকে বেরিয়ে আসে তার প্রথম উল্লেখযোগ্য নাটক, ভারতীয় থিয়েটারের একটি রত্ন ‘যযাতি’। ভারতীয় নাটককারদের মধ্যে মিথ, উপাখ্যান এবং ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে যত কাজ গিরিশ কারনাড করেছেন, বোধহয় আর কেউ করেন নি। মিথ, উপখ্যান বা ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে কাজ করার যেমন কিছু অসুবিধা আছে, তেমনি বেশ কিছু সুবিধাও আছে। মূল গল্পটি বা মানুষটি পরিচিত হওয়ায় মানুষ সহজেই এর সাথে রিলেট করতে পারে। নিজেদের সমাজ, সংস্কৃতি এবং প্রথাগুলি এই মিথ, উপাখ্যান এবং ঐতিহাসিক চরিত্রের সাথে জড়িয়ে থাকে বলে এই বিষয়গুলিকে নিয়ে এগোনো যায় এবং সমসাময়িক পরিপ্রেক্ষিতের সাথে এর তুলনা করা যায়। দর্শকদেরও পূর্ব-প্রস্তুতি থাকে বলে এই পরীক্ষামূলক কাজটির নতুনত্বের সম্ভাবনা এবং সাফল্যের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। অসুবিধা হল, যদি পান থেকে চুন খসে যায় তাহলেই তুলকালাম কাণ্ড ঘটাবেন থিয়েটারের পূর্বজরা এবং সমাজ ও সংস্কৃতির ধারক এবং বাহকরা। এই দুইয়ের সম্ভাবনা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়েছে গিরিশ কারনাডকে; এবং তিনি যে এইকাজে সম্পূর্ণ সফল এই বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না।
গিরিশ কারনাডের লেখা প্রথম নাটক ‘মা নিষাদ’ কন্নড় ভাষায় লিখিত। পরবর্তী চার দশকে তিনি মোট পনেরটি নাটক লিখেছেন। তার মধ্যে মাত্র দশটি নাটক অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতে। এরম ধ্যেই কিছু অনূদিত হয়েছে হিন্দি এবং বাংলায়। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৯৬১ সালে বিলের জাত্রার সময় তিনি লেখেন ‘যযাতি’। ‘যযাতি’ জানান দেয় ভারতীয় থিয়েটারের আকাশে এসে গিয়েছেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। এরপর ১৯৬৪ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে গিরিশ কারনাড চতুর্দশ শতকের দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলককে নিয়ে লেখেন বিখ্যাত নাটক ‘তুঘলক’। ‘তুঘলক’-কেই মনে করা হজয় গিরিশ কারনাডের সর্বাধিক পরিচিত এবং অভিনীত নাটক। ‘তুঘলক’ নাটকে যেভাবে তিনি সমকালকে মঞ্চে এনেছেন তা এক কথায় অন্যবদ্য। ১৯৭১ সালে থমাস মান-এর বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে তিনি লেখেন ‘হয়বদন’। এরপর ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘যামিনী’ (যা মুল কন্নড় নাটকটির বাংরা অনুবাদের নাম)। ‘বলি; দ্য স্যাক্রিফাইস’ (যা মূল কন্নড় নাটকটির ইংরেজি অনুবাদের নাম) নাটকটি তিনি লেখেন ১৯৮০ তে। ১৯৮৮ সালে তাঁর উর্বর কলম থেকে বেরিয়ে আসে ‘নাগমণ্ডল’। ১৯৯০ সালে লেখেন ‘তালদন্ড’ যা পরবর্তীতে ‘রক্তকল্যাণ’ নামে বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে লেখেন ‘দ্যা ফায়ার অ্যান্ড দ্য রেন’ বা ‘অগ্নি অওর বর্ষা’ (যা মূল কন্নড় নাটকটির যথাক্রমে ইংরেজি এবং হিন্দি অনুবাদের নাম)। ‘দ্য ড্রিমস অফ টিপু সুলতান’ তাঁর অপর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। ‘ওয়েডিং অ্যালবাম’, ‘বয়েল্ড বিন্স অন টোস্ট’, ‘ক্রসিং টু তালিকোট’ তাঁর ইংরাজিতে অনূদিত অপর কয়েকটি নাটক। তবে তাঁর খ্যাতি মূলত ‘যযাতি’, ‘হয়বদন’, ‘নাগমণ্ডল’, ‘তুঘলক’, ‘অগ্নি অওর বর্ষা’, ‘রক্তকল্যান’ এবং ‘টিপুর স্বপ্ন’র জন্য। এরমধ্যে প্রথম চারটির জন্য তাঁর জগৎ জোড়া খ্যাতি। তিনি সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার, প্রদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং কালিদাস সম্মান সহ দেশ বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার, সম্মান এবং উপাধি পেয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি FTII, NSD এবং সাহিত্য একাডেমীর গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং দায়িত্ব সামলেছেন।
পুরাণ বর্ণিত যযাতির উপাখ্যান গিরিশ কারনাড খানিকটা নিজের মতন করে পরিবর্তন করে নিয়েছেন তার ‘যযাতি’ নাটকে। উপাখ্যান বা মিথ নিয়ে কাজ করতে গেলে এই পরিবর্তনটুকু করতেই হয়, কারণ তা না করলে বর্তমান সময়ের সাথে এই উপাখ্যানগুলিকে মেলানো সম্ভব নয়। যযাতি উপখ্যান নিয়ে কাজ করার সময় গিরিশ কারনাড কোথাও কোথাও মূল উপাখ্যান থেকে সরেছেন এবং নতুন অংশ জুড়েছেন। এতে উপাখ্যানটি শক্তিশালী হয়েছে এবং সমসাময়িক হয়েছে। মূল আখ্যানে এই চরিত্রগুলির তেমন গুরুত্ব না থাকলেও গিরিশের নাটকে যযাতির পুত্র পুরুর স্ত্রী চিত্রলেখার চরিত্রের প্রবেশ ঘটেছে এবং দাসী স্বর্ণলতার প্রবেশ ঘটেছে। এই দুটি চরিত্র নাটকের প্রয়োজনে তো বটেই, আখ্যানের সমসাময়িকীকরণের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। পিতার অনুরোধে পুরু তাঁর পিতা যযাতির বার্ধক্য গ্রহণ করে এবং নিজের যৌবন পিতাকে দান করে। এই প্রসঙ্গে পুরুর সদ্যবিবাহিত পত্নীর অবস্থানটি মূল উপাখ্যান বাহুল্য বোধে বর্জন করেছে। কিন্তু গিরিশ কারনাড পুরুর সদ্যবিবাহিতা পত্নী চিত্রলেখার অবস্থানকেই দিয়েছেন সর্বাধিক গুরুত্ব। পুরু বার্ধক্য গ্রহণ করার সময় কেবল নিজের এবং পিতার কথাই ভেবেছেন। স্ত্রীর কথা তার মাথায় আসেনি। নাটকে চিত্রলেখা যযাতির কাছে গিয়ে বলেন, তিনি পুরুর যৌবন দেখেই তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে রাজি হয়েছিলেন। তিনি পুরুর সন্তানদের জননী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর যৌবন যযাতি নিয়ে নেওয়ায় সেটা সম্ভব হলনা। এখন পুরুর যৌবনের সাথে সাথে যযাতিকে পুরুর স্ত্রী অর্থাৎ চিত্রলেখার দায়িত্বও নিতে হবে। তাই যযাতি যেন তাকেও গ্রহণ করেন। তাকে গ্রহণ করার অনুরোধ করলে, যযাতি তাঁর পুত্রবধু চিত্রলেখাকে ভর্ৎসনা করেন। যযাতির ভর্ৎসনার আঘাতে এরপরই বিষপান করে আত্মহত্যা করেন চিত্রলেখা। মূল উপাখ্যানে যযাতি বনবাসী হয়েছিলেন হাজার বছরের ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের পর বীতশ্রদ্ধ হয়ে এবং ইন্দ্রিয়সুখের কামনার পরিতৃপ্তি কখনোই সম্ভব নয়, এই উপলব্ধির পর। কিন্তু গিরিশ কারনাডের নাটকে যযাতির চোখ খুলে যায় চিত্রলেখার আত্মহত্যাতে। তার আত্মহত্যা যযাতির ইন্দ্রিয়সুখের প্রবল বাসনা ঘুচিয়ে দেয়। সবশেষে যযাতি পুরুকে তাঁর যৌবন ফিরিয়ে দেন এবং বনবাসী হন।
‘যযাতি’ যেমন মানুষের অপূরণীয় সুখ ভোগের আকাক্সক্ষার কথা বলে, তেমনি ‘হয়বদন’ বলে মানুষের অসম্পূর্ণতার কথা। ‘যযাতি’ নাটকে আমরা দেখি যযাতি তাঁর ভোগ সম্পূর্ণ করার জন্য নীতি নৈতিকতার ধার ধারেননি। তিনি শর্মিষ্ঠাকে বিবাহ করেছেন দেবযানীর প্রবল আপত্তি এবং দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের ক্রোধের কথা জেনেও, নিজের সন্তান পুরুর যৌবন নিয়েছে, বিনিময়ে নিজের বাধ্যক তাকে দিয়েছে এবং পুত্রবধু চিত্রলেখার মৃত্যুর কারণ হয়েছেন। একইভাবে ‘হয়বদন’ নাটকে পদ্মিনী একজন সম্পূর্ণ পুরুষ পেতে চেয়েছে। সে দেবদত্তের মেধা এবং কপিলের সুঠাম শরীর দুইই আলাদা করে পেতে চায় এবং সেই চেষ্টাও সে করে। কালী মন্দিরে যখন অকস্মাৎ তার সামনে সুযোগ এলো তখন সে একই পুরুষের মধ্যে একাধিক পুরুষের বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী পাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরে যখন সে আবিস্কার করলো দেবদত্তের মস্তকসহ শরীর ক্রমশই দেবদত্তের মতোই হয়ে উঠছে, তখন সে অনায়াসে জঙ্গলে কপিলের মস্তকসহ শরীরের সাথে থাকতে শুরু করল, কারণ তার শরীর এখন সুঠাম হয়ে উঠেছে সে এখন সম্পূর্ণ কপিল। ‘হয়বদন’ নাটকে পদ্মিনী চারজন পুরুষকে পেয়েছে। সে দেবদত্ত, কপিল, দেবদত্তের মাথাযুক্ত কপিলের শরীর এবং কপিলের মাথাযুক্ত দেবদত্তের শরীরের স্পর্শ পেয়েছে। তাই পদ্মিনীর আকাক্সক্ষা যতটা না মনননির্ভর আত্মিক-সুখের প্রতি, তার থেকে অনেক বেশী শরীরসর্বস্ব যৌন-সুখের প্রতি। অবশেষে দেবদত্ত এবং কপিল যখন একে অপরকে হত্যা করে তারা যেন পদ্মিনীর ‘সতী’ হওয়ার দৃষ্টান্তকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, এমনকি মৃত্যুর সময়ও সে অসম্পূর্ণ অতৃপ্ত। হয়বদন ভগবৎ-কে জানায়, সে মা কালীর সামনে নিজেকে বলি দিতে গেলে মা কালী বিরক্ত হয়ে বলেন, নির্বোধ মানুষের যখন নিজেকে বলি দেওয়ার ইচ্ছে হয়, তখন তারা যেন অন্য কোনো জায়গায় যায়। এবং হয়বদনের সম্পূর্ণ মানুষ হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সে সম্পূর্ণ ঘোড়া হয়ে যায় সেই মা কালীর আশীর্বাদেই। এই নাটকে প্রচলিত বিশ্বাস, অর্থাৎ মাথা হল শরীরের থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, এই মতবাদের প্রতিষ্ঠা পেছেয়ে, কিন্তু নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে দেখতে পাই, মাথাও শরীরের দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়। প্রথম প্রথম দেবদত্তের মাথাওয়ালা কপিলের শরীর শরীরচর্চায় উৎসহ পেত, সে সাঁতার কাটত এবং মল্লযুদ্ধে অংশগ্রহণ করত; কপিলের মাথাসহ দেবদত্তের শরীর প্রকৃতিকে নতুনভাবে দেখত, কবিতা লিখতে উৎসাহ পেত। যদিও সেসব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কারণ মানুষের জীবন সম্পূর্র্ণভাবে দেবতার হাতেও নেই, আবার সম্পূর্ণভাবে মানুষের হাতেও নেই। মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষ এব্ং দেবতা দুইয়ের যগপৎ পরিচালনায়। হয়বদন তার মানুষের স্বর বর্জন করতে চেয়েছে জাতীয় সংগীত গেয়ে। এর মাধ্যমে নাটককার উগ্র জাতীয়তাবাদের নিরোধিতার কথা বললেন কি না সেকথা পাঠক বিচার করবেন। কিন্তু শেষ অবধি তার হাসি তাকে মানুষের স্বর থেকে মুক্তি দেয় এবং ঘোড়ার স্বর দিয়ে তাকে সম্পূর্ণ ঘোড়া করে তোলে। তাহলে কি নাটককার গিরীশ কারনাড বলতে চাইলেন, হাসি মানুষের থেকে দূরে চলে গিয়েছে? হাসি আর মানুষের চরিত্রের অংশ নয়; উনি কি বলতে চাইলেন এমনকি গলার স্বরও একটি চরিত্রকে অসম্পূর্ণ করে রাখে? ‘হয়বদন’ আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায়, সম্পূর্ণতা লাভের কোনো শর্টকাট নেই, সময় দিতে হয় এবং চেষ্টা করতে হয়; কেবলমাত্র তাহলেই যথার্থ সম্পূর্ণতা লাভ সম্ভব। নাটকের শেষে বিদ্যাসাগর একটি প্রাণোচ্ছল পৌত্র এবং সুন্দর ঘোড়া লাভ করে, শিশুটি লাভ করে স্নেহশীল এবং যত্নশীল পিতামহ এবং হয়বদন লাভ করে সম্পূর্ণতা, শিশুটিকে এবং পিতামহকে; অর্থাৎ যারা কোন রকম পাপ কার্যে লিপ্ত হলনা। নাটকের শেষে ভগবৎ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, রাষ্ট্র পরিচালকদের সব পদক্ষেপ সফল হোক এবং তার সাথেই জুড়ে দেন, তাদের শুভ বোধের উদয় হোক।
ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতির মজ্জাগত বর্ণভেদ প্রথা এই নাটক দুটির প্রদান শক্তি। যযাতি ক্ষত্রিয় হওয়ায় দেবযানীকে বিবাহের পথে তার বাধা রয়েছে, কারণ দেবযানী ব্রাহ্মণ। আবার যযাতি শর্মিষ্ঠাকেও বিবাহ করতে ইতস্তত করছেন কারণ শর্মিষ্ঠা অসুর বংশজাত। তাই বিবাহের পরে শর্মিষ্ঠা রানী হলেন বটে কিন্তু অসুর বংশজাত হওয়ায় বাকি সব অধিকার দেবযানীরই থেকে গেলো। এভাবে সমকালীন সমাজ ও ধর্মীয় রাজনীতির চিত্র যে নিপুন দক্ষতায় এঁকেছেন গিরিশ কারনাড, তার তুলনা মেলা ভার। একইভাবে দেবদত্ত ব্রাহ্মণ এবং কপিল ক্ষত্রিয়। বৈশ্য সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি পদ্নিনী ব্রাহ্মণের মেধা এবং ক্ষত্রিয়ের শৌর্যের প্রতি আকৃষ্ট। কিন্তু ব্রাহ্মণের মেধার থেকেও ক্ষত্রিয়ের শৌর্যের প্রতি তার আকর্ষণ বেশী। একই চিতায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের মৃত্যু যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ভারতীয় সমাজের এবং হিন্দু সংস্কৃতির মজ্জাগত বর্ণভেদ প্রথার অসারতা।
‘নাগমণ্ডল গিরিশ কারনাডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি নির্মাণ। ‘নাগমণ্ডল’ কথার অর্থ সঙ্গমরত নাগদেবতার বিশেষ রীতিতে চিত্রিত ছবি, যা কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর এবং উদুপি জেলাগুলিতে নাগদেবতার পুজোর সময় নির্মিত হয়। কখনো কখনো সেই পুজোর উপাচার বা রীতিকে বলা হয় নাগমণ্ডল। গিরিশ কারনাড তার মেন্টর এ কে রামানুজন-এর কাছে দুটো লোককথা শোনেন, যা তাকে উৎসাহিত করে এই নাকটি নির্মাণে। প্রধানত ওইদুটি লোককথার ভিত্তিতেই নির্মিত হয় এই নাটক। নাটকের মূল চরিত্র রানী এক বাল্যবিবাহিতা বধু, যৌবনে উপনিত হলে স্বামী তাকে শ্বশুরের বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু রানীর স্বামী আপ্পান্না তার স্ত্রীকে আদৌ ভালোবাসে না এবং তার রক্ষিতার সাথেই সময় কাটায় এবং দিনে মাত্র একবার দুপুরে খাওয়ার সময় সে বাড়িতে আসে। রানী বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে তার স্বামীকে কাছে টানতে, তার ভালোবাসা পেতে; কিন্তু তার সব চেষ্টা বৃথা হয়। একদিন হঠাৎ কুরুদাভ্যা (আপ্পান্না-র মাতৃস্থানীয়া একজন অন্ধ মহিলা) তার কষ্ট অনুভব করে তাকে এক বিশেষ জড়িবুটি দেয়, যা তরকারীর সাথে মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ালে রানী তার স্বামীর ভালোবাসা ফিরে পাবে। রানী তরকারির মধ্যে সেই জড়িবুটির নির্যাস মেশায়। কিন্তু স্বামীর উপর বিশেষ প্রভাব পড়ে না। এরপর বেশি পরিমাণে জড়িবুটি মেশালে সেই তরকারি স্বামীকে দিতে সাহস হয়না, ফলে সে তরকারীটা নিকটবর্তী সাপের গর্তে ফেলে দেয়। গর্তের মধ্যে বসবাসকারী গোখরো তার খানিকটা খেয়ে ফেলে। সেই গোখরো ছিল ইচ্ছাধারী নাগ অর্থাৎ সে মানুষের রূপ নিতে পারতো। এরপর সে আপ্পান্না-র রূপ নিয়ে রানীর কাছে প্রতি রাতে আসতে লাগলো। রানী তার খাঙ্খিত সুখ পেতে লাগলো। এই সম্পর্কের ফলেই সে যখন গর্ভবতী হয়ে পড়লো, তখন সে আপ্পান্না-কে এই সুসংবাদ দিলো। আপ্পান্না সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করলো এবং বিষয়টিকে পঞ্চায়েতের সামনে নিয়ে গেল বিচারের জন্য। পঞ্চায়েত থেকে তার পবিত্রতার প্রমাণ চাওয়া হলে রানী গোখরোর পরীক্ষা দিতে চাইল। গ্রামের বিম্বাস ছিল এই সময় মিথ্যে বললে, নাগ নিশ্চিতভাবেই তাকে দংশন করবে এবং তার মৃত্যু হবে। রানী গোখরোর গর্তের থেকে গোখরোকে বের করে আনল এবং গোখরোকে স্পর্শ করে ঘোষণা করলো, সে আপ্পান্না এবং নাগরাজ গোখরা ছাড়া অন্য কোনো পুরুষকে কখনোই স্পর্শ করেনি। রানী অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসলে তার সতীত্ব প্রমাণিত হলো এবং গ্রামবাসীর কাছে সে দেবীর স্থানে প্রতিষ্ঠিত হ’ল। আপ্পান্না রানীর সন্তানের পিতৃত্ব মেনে চিলো। এরপর থেকে আপ্পান্না তার স্ত্রীকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখলো। গিরিশ কারনাড এই নাটকটিকে দুটি সম্ভাব্য সমাপ্তি দিয়েছেন। একটি সমাপ্তিতে নাগরাজ নিহত হয় এবং রানী ও আপ্পান্না-র সন্তান তার অন্তিম ক্রিয়াকর্ম করবে এবং সসম্মানে তার পারলৌকিক ক্রিয়া করবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপরটিতে রানী শেষ অবধি অনুমান করতে পারলো যে নাগরাজকেই তার সন্তানের পিতা এবং এরপর সে নাগরাজকে তার কেশরাজির মধ্যে সুরক্ষিত রাখলো। তাই নাগ এই নাটকে লোক বিশ্বাস, রীতি, ধর্মীয় অনুষঙ্গ, লোকাচার এবং উর্বরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
লোকনাট্যের যক্ষগন (Yakshagan) ধারায় এই নাটক তিনটি লিখিত হয়েছে এবং নির্মিত হয়েছে। যক্ষগন-এর নীতি মেনে এখানে সূত্রধর শুরু করেন নাটক। মূল নাটকের সাথে আখ্যান অংশটিকে জুড়ে দেন তিনি এবং তাঁর নির্দেশিত পথেই এগিয়ে যায় নাটক। ‘যযাতি’ ‘হয়বদন’ এবং ‘নাগমণ্ডল’ নাটকের ইউনিটি অফ টাইম এবং ইউনিটি অফ স্পেস নিয়ে যে অসুবিধা হতে পারতো, সেই সমস্যা মিটে যায় লোকনাট্যের যক্ষগন ধারার ব্যবহারে। কথক এই নাটকের মূলগল্প বলতে বলতে যান। ফলে বেশ কিছু অংশ নাটককার শুধুমাত্র বর্ণনার মধ্যে রেখে দিতে পেরেছেন। সেগুলির দৃশ্যায়ন করলে নাটকটি যেমন অনেকটাই বড়ো হয়ে যেত, তেমনি অনেকটাই জটিলও হয়ে যেত। যেমন যক্ষগন রীতি মেনে দেবতার বন্দনা দিয়ে শুরু হয় ‘হয়বদন’ নাটক। এই নাটকের শুরুতেই বন্দনা করা হয়েছে সিদ্ধিদাতা গণেশের। আমরা গণেশের দিকে তাকালেই দেখতে পাই তার অসম্পূর্ণ শরীর। যদি একজন দেবতাও অসম্পূর্ণ হতে পারেন, তাহলে মানুষ তো হতেই পারে এবং যে দেবতারা নিজেদের সম্পূর্ণ করে তুলতে পারেন নি, তারা কিভাবে মানুষকে সম্পুর্ণ করে তুলবেন; এই বার্তাটা নাটকের শুরুতেই যেন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নাটককার। তার সাথে মনস্তত্ব এবং নারীচরিত্র এই তিনটি নাটকেরই উল্লেখযোগ্য উপাদান যা নাটকগুলিকে ইউনিভার্সাল করে তোলে।
এই তিনটি নাটকেই নারী চরিত্রগুলি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তাদের সিদ্ধান্ত তাদের নবজাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে স্থাপন করে। যখন গিরিশ কারনাড ভারতীয় থিয়েটারের আঙিনায় বিচরণ করছেন, তখন ভারতীয় থিয়েটারে একটা নবজাগরণের যুগ চলছে। ভারতীয় নাটক প্রবলভাবে সমসাময়িক, রাজনৈতিক এবং ভারতীয় হয়ে উঠছে। তখন গিরিশ কারনাডের নাটকের নারী চরিত্রগুলির দিকে তাকালে লক্ষ করা যায় যে, তারা কিভাবে সমসাময়িক নারীচরিত্রগুলোর থেকে স্বতন্ত্র। দেবযানী যযাতির একাধিক বিবাহ মেনে নিচ্ছে না, যদিও তা তখন নিন্দনীয় ছিল না। শর্মিষ্ঠা তার ভালোবাসা ঠিক আদায় করে নিচ্ছে। দেবযানী ও শর্মিষ্ঠা নারী হয়েও বিবাহের ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে তারাই। চিত্রলেখা তার শ্বশুর যযাতিকে স্পষ্টই বলছে স্বামীর যৌবন নিয়েছেন যখন আমাকেও গ্রহণ করুন। ‘হয়বদন’ নাটকের পদ্মিনী কপিলকে বলছে যে সে তার জীবনকালে চারজন পুরুষের স্পর্শ পেয়েছে। সে তার সঙ্গী নির্বাচনের সাহস দেখিয়েছে। আবার ‘নাগমণ্ডল’ নাটকে রানী আপ্পান্নার কাছ থেকে নাগের পারলৌকিক ক্রিয়ার জন্য পিতা হওয়ার অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এমনকি শেষে সে নিজের চুলের গোছায় নাগকে থাকার জায়গা করে দিয়ে নিজের সস্পর্ককে যেন চিরস্থায়ী করেছে। নিজেদের যৌনতার অধিকার আদায়ে এরা কেউই ইতস্তত করছে না। নিজেদের যৌন তৃপ্তির ব্যাপারে তারা সচেতন এবং সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তারা কোথাও কম্প্রোমাইজ করছে না একজন নাটককারের এতগুলো নারীচরিত্র এভাবে নবজাগরণের আলোয় আলোকিত, সারা পৃথিবীর থিয়েটারে এবং সাহিত্যে বিরল।
‘তুঘলক’ নাটকটি ১৪ শতকের দিল্লীর সুলতানি শাসক মহম্মদ বিন তুঘলকের চরিত্র অবলম্বনে লেখা। সেখানে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন একজন প্রজাকল্যাণকামী সুলতান কিভাবে পাগলা রাজা উপাধিতে ভূষিত হন। তার একটির পর একটি দুর্দান্ত এবং বিচক্ষণ পরিকল্পনা কিভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিভাবে তিনি মুসলমান শাসক হয়েও হিন্দুদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করেছেন এবং পরিকল্পনার খামতির জন্য এবং কিছু ধূর্ত কর্মচারীর কারণে সেগুলো বানচাল হয়েছে। এই নাটকটি যে সময়ে লেখা হচ্ছে এবং নির্মিত হচ্ছে তৎকালীন ভারতের শাসন-ব্যবস্থার তুলনা করলে স্পষ্ট হয়, কিভাবে তৎকালীন শাসকও তুঘলকের মতই ব্যর্থ হচ্ছেন প্রতিটা ক্ষেত্রে। অনেক সৎ ও মহান পরিকল্পনা এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে তৈরি হয়েছিল যে সরকার, তার প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ ব্যর্থ হচ্ছে। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হলেও বারতকে ঘোষণা করা হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যে সমস্যায় ভারতবাসী এবং প্রশাসন সর্বাধিক বিব্রত থেকেছে, তা হল সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কিত অসহিষ্ণুতা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। তাই সহজেই অনুমেয় কিভাবে গিরিশ কারনাডের নাটক হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দলিল এবং সমকালের আয়না।
এমন একজন মানুষ সারা জীবনে সবসময় ন্যায়ের সাথে থেকেছেন তাই শুধু নয়, সোচ্চারে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন পথে নেমে, নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো অবস্থায় নেমেছেন লড়াইয়ের ময়দানে। সম্মানের জন্য লালায়িত হয়ে শাসকের পদলেহনের বদলে শাসকের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রথম সারি থেকে সবচেয়ে তীক্ষè গলা পাওয়া গিয়েছে তাঁর। মুক্তচিন্তার কারণে হয়েছেন সকলের বিরাগভাজন এবং অপ্রিয় সত্য বলতে গিয়ে ডেকে এনেছেন বিপদ এবং বিতর্ক। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেও অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় নিজেকে ‘আরবান নকশাল’ ঘোষণা করে বসেছেঠন পথে, দিয়েছেন আন্দোলনের নেতৃত্ব। স্পষ্টবাদী মানুষ, নাটককার এবং শিল্পী গিরিশ কারনাড ভারতীয় থিয়েটারকে বেশ কয়েক মাইল এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন নিঃসন্দেহে। তাঁর নাট্যসৃষ্টি ভাবীকালের কাছে ভারতীয় থিয়েটারের রেনের্সাসের দলিল হয়ে থাকবে।
সহায়তা গ্রহণ:
1. Wikipedia
2. Three Plays- Girish Karnad. Published by Oxford India Paperbacks, 2019
3. Indian Drama In English- edited by K. Chakraborty, 2011
4. classicalartsuniverse.com
5. goodreads.com
6. litcharts.com
বসন্ত পাথ্রডকর
অভিনেতা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত