জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ

By Published On: May 7, 2023

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছিলো ১৮৬১ খ্রি : ৭ ই মে বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর এক অভিজাত ব্রাহ্মন ( ঠাকুর ) পরিবারে । উনিশ শতকের সাহিত্য – সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিলো এই ঠাকুর পরিবার ।

রবীন্দ্রনাথ সকল বাঙালির সম্পদ। তিনি আমাদের আত্মার আত্মীয়, প্রাণের আনন্দ। তাঁর রচনা তাঁর জীবন থেকে কতকিছু শেখার আছে, জানার আছে। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে জানতে তাঁর প্রথম পরিচয়, প্রথম সৃষ্টি তথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জানা অজানা কিছু তথ্য।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি এশীয়দের মধ্যে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ নিজেও গাইতে পারতেন । কথাচ্ছলে বলতেন “গলা এককালে ছিল বটে ! গাইতেও পারতুম গর্ব করাবার মতন।তখন কোথাও কোন মিটিঙে গেলে সবাই চীৎকার করত রবি ঠাকুরের গান রবি ঠাকুরের গান ” বলে । আজকাল রবি ঠাকুরের গান বলতে বোঝায় তার রচিত গান , গীত নয় । তোমরা আমায় এখন একবার গাইতে বলেও সম্মান দাও না। যখন গাইতুম তখন গান লিখতে শুরু করিনি তেমন, আর যখন লিখলুম তখন গলা নেই । ”

রবীন্দ্রনাথের সমুদয় গান তাঁর গীতবিতান গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত গ্রন্থের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে কবি গানগুলিকে “পূজা”, “স্বদেশ”, “প্রেম”, “প্রকৃতি”, “বিচিত্র” “আনুষ্ঠানিক”, এই ছয়টি “পর্যায়ে” বিন্যস্ত করেছিলেন । রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রিয় কিছু গান উল্লেখ করছি তাঁর জন্মদিন স্মরণে।

১.
অবেলায় যদি এসেছ আমার বনে দিনের বিদায়ক্ষণে
গেয়ো না, গেয়ো না চঞ্চল গান ক্লান্ত এ সমীরণে॥
ঘন বকুলের ম্লান বীথিকায়
শীর্ণ যে ফুল ঝ’রে ঝ’রে যায়
তাই দিয়ে হার কেন গাঁথ হায়, লাজ বাসি তায় মনে।
চেয়ো না, চেয়ো না মোর দীনতায় হেলায় নয়নকোণে॥
এসো এসো কাল রজনীর অবসানে প্রভাত-আলোর দ্বারে।
যেয়ো না, যেয়ো না অকালে হানিয়া সকালের কলিকারে।
এসো এসো যদি কভু সুসময়
নিয়ে আসে তার ভরা সঞ্চয়,
চিরনবীনের যদি ঘটে জয়– সাজি ভরা হয় ধনে।
নিয়ো না, নিয়ো না মোর পরিচয়
এ ছায়ার আবরণে॥
(প্রেম ও প্রকৃতি )

২.
অনেক কথা বলেছিলেম কবে তোমার কানে কানে ॥
কত নিশীথ-অন্ধকারে, কত গোপন গানে গানে ॥
সে কি তোমার মনে আছে তাই শুধাতে এলেম কাছে–
রাতের বুকের মাঝে মাঝে তারা মিলিয়ে আছে সকল খানে ॥
ঘুম ভেঙে তাই শুনি যবে দীপ-নেভা মোর বাতায়নে ।
স্বপ্নে-পাওয়া বাদল-হাওয়া ছুটে আসে ক্ষণে ক্ষণে–
বৃষ্টিধারার ঝরোঝরে ঝাউবাগানের মরোমরে
ভিজে মাটির গন্ধে হঠাৎ সেই কথা সব মনে আনে ॥
(প্রেম)

৩.
আজ যেমন ক’রে গাইছে আকাশ তেমনি ক’রে গাও গো ।
আজ যেমন ক’রে চাইছে আকাশ তেমনি ক’রে চাও গো ॥
আজ হাওয়া যেমন পাতায় পাতায় মর্মরিয়া বনকে কাঁদায়,
তেমনি আমার বুকের মাঝে কাঁদিয়া কাঁদাও গো ॥
(প্রেম)

৪.
গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা ।
আমার যা কথা ছিল হয়ে গেল সারা ॥
হয়তো সে তুমি শোন নাই , সহজে বিদায় দিলে তাই –
আকাশ মুখর ছিল যে তখন , ঝরোঝরো বারিধারা ॥
চেয়েছিনু যবে মুখে তোলো নাই আঁখি ,
আঁধারে নীরব ব্যথা দিয়েছিল ঢাকি ।
আর কি কখনো কবে এমন সন্ধ্যা হবে –
জনমের মতো হায় হয়ে গেল হারা ॥
(প্রেম)

৫.
কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া।
চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি
গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।
ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা,
কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা।
ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি
চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী–
কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়,
কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়।
আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি,
কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি॥
(প্রেম ও প্রকৃতি )

৬.
দেখো , সখা , ভুল করে ভালোবেসো না।
আমি ভালোবাসি ব’লে কাছে এসো না।
তুমি যাহে সুখী হও তাই করো সখা ,
আমি সুখী হব ব’লে যেন হেসো না।
আপন বিরহ লয়ে আছি আমি ভালো–
কী হবে চির আঁধারে নিমেষের আলো !
আশা ছেড়ে ভেসে যাই , যা হবার হবে তাই–
আমার অদৃষ্টস্রোতে তুমি ভেসো না॥
(মায়ার খেলা)

৭.দুজনে দেখা হল মধুযামিনী রে–
কেন কথা কহিল না, চলিয়া গেল ধীরে॥
নিকুঞ্জে দখিনাবায় করিছে হায়-হায়,
লতাপাতা দুলে দুলে ডাকিছে ফিরে ফিরে॥
দুজনের আঁখিবারি গোপনে গেল বয়ে,
দুজনের প্রাণের কথা প্রাণেতে গেল রয়ে।
আর তো হল না দেখা, জগতে দোঁহে একা–
চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনাতীরে॥
(প্রেম ও প্রকৃতি)

৮.
অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি ।
তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি ॥
যে আছে মম গভীর প্রাণে ভেদিবে তারে হাসির বাণে,
চকিতে চাহ মুখের পানে তুমি যে কুতূহলী ।
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি ॥
আমার চোখে যে চাওয়াখানি ধোওয়া সে আঁখিলোরে–
তোমারে আমি দেখিতে পাই, তুমি না পাও মোরে ।
তোমার মনে কুয়াশা আছে, আপনি ঢাকা আপন-কাছে–
নিজের অগোচরেই পাছে আমারে যাও ছলি
তোমারে তাই এড়াতে চাই, ফিরিয়া যাই চলি ॥
(প্রেম/প্রেমবৈচিত্র )

৯.
কেন বাজাও কাঁকন কনকন কত ছলভরে ।
ওগো, ঘরে ফিরে চলো কনককলসে জল ভরে ॥
কেন জলে ঢেউ তুলি ছলকি ছলকি কর খেলা ।
কেন চাহ খনে খনে চকিত নয়নে কার তরে কত ছলভরে ॥
হেরো যমুনা-বেলায় আলসে হেলায় গেল বেলা,
যত হাসিভরা ঢেউ করে কানাকানি কলস্বরে কত ছলভরে ।
হেরো নদীপরপারে গগনকিনারে মেঘমেলা,
তারা হাসিয়া হাসিয়া চাহিছে তোমারি মুখ’পরে কত ছলভরে ॥(
প্রেম/প্রেমবৈচিত্র )

১০.
দীপ নিবে গেছে মম নিশীথসমীরে,
ধীরে ধীরে এসে তুমি যেও না গো ফিরে ॥
এ পথে যখন যাবে আঁধারে চিনিতে পাবে–
রজনীগন্ধার গন্ধ ভরেছে মন্দিরে ॥
আমারে পড়িবে মনে কখন সে লাগি
প্রহরে প্রহরে আমি গান গেয়ে জাগি ।
ভয় পাছে শেষ রাতে ঘুম আসে আঁখিপাতে,
ক্লান্ত কন্ঠে মোর সুর ফুরায় যদি রে ॥

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop