মা দিবসে – মায়ের কাছে চিঠি

By Published On: May 11, 2025Views: 26

মা দিবসে – মায়ের কাছে চিঠি
‎সুশান্ত হালদার

মা-
‎ পঞ্চাশ বছর আগে (শৈশবকাল) তোমাকে খুব জ্বালিয়েছি। এখনো মনে পড়ে, রাগ হলেই দরজার খিল বন্ধ করে ঘরের ভেতর বসে থাকতাম। বাইরে থেকে দরজা খোলার জন্য কত যে অনুনয় বিনয় করতে – তা মনে হলে এখনো লজ্জিত হই। কারো সাথে ঝগড়া হলে, তাদের হাঁড়ি পাতিল ব্যবহার্য মাটির তৈজসপত্র ভেঙে ফেলতাম। এ বড় অন্যায় ছিল। এখন বুঝি- তাঁরা (শরিক/প্রতিবেশী) যেহেতু বাবার অধীন ছিল,তাই অনেকসময় মুখ-বুজে থাকত কিন্তু তোমাকে ত বাবার অনুপস্থিতিতে তাঁদের বিদ্রুপাত্মক বা কটু কথা শুনতে হোত এবং আমার জন্য সেইসব মানুষের কাছে ঘাট মানতে হোত। সেসব দিনের কথা মনে হলে এখন খুব খারাপ লাগে ‘মা’। মনে মনে ভীষণ লজ্জিতবোধ করি ‘মা’।

‎ এখন তুমি আমার সত্তুরোর্ধ জননী। আগের মতোই আছো। খুব ভোরে উঠে, অফিসে যাবার আগেই এখনো আমার জন্য নাস্তা রেডি করো। অফিস থেকে ফেরার প’র দুপুরের খাবার অনেকসময় একসাথেই খাই। বাবা প্রয়াত হয়েছে চব্বিশ বছর। তোমার কাছে এখন আর সেই পাঁচ টাকার জন্য আবদার করি না। নিজেই এখন সংসারের দায়িত্বগুলো সুচারুভাবেই পালন করি কিন্তু তোমারও যে এখন বিশ্রামের প্রয়োজন, তা পূরণ করতে পারিনি বলে- সেই আক্ষেপটুকু মনের মধ্যেই পুষে রেখেছি- মা। তোমার এই সন্তান জীবনের নানাবিধ জটিল যোগ বিয়োগ ভাগের গুনিতক যোগফল মিলাতে পারে নাই বলে, আজও তোমাকেই রাতের খাবার নিয়ে বসে থাকতে হয় – মা। আমার এই অপারগতা পারো যদি পারো ক্ষমা করে দিও। অবশ্য এজন্য যদি পরলোকে কিছু থেকে থাকে- তার জন্যও প্রস্তুত আমি। কারণ- তোমার প্রতি আমার যে দায়িত্বশীলতার কথা ছিল, তার অধিকাংশই অপূরণীয়। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই বয়সে এসেও সংসারের ঘানি টানা আর সেই ঘানির তলায় পিষ্ট হতে হতে ভুলেই গ্যাছ জীবনেরও ছিল কত-কিছুর মানে!


মা, চল্লিশে এসেও যে ভুল করেছি; তারজন্যও হায় আফসোস করোনি। পৃথিবীর সব ‘মা’-ই যে স্বর্বংসহা জননী, ফলবতী বৃক্ষের মতো নিঃস্বার্থ প্রকৃতি; পঞ্চাশোর্ধ বয়সে এসে- তা হাড়েহাড়ে বুঝেছি৷ মা, তুমি যেদিন পৃথিবী থেকে ‘নাই’ হয়ে যাবে, সেদিনই অন্ধকার হবে আমার এই সুন্দর পৃথিবী!
‎সেইক্ষন যখন কল্পনা করি, পাগল হয়ে যাই আমি। অথচ কেউ জানবে না, তুমি-ই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনীয় নিঃস্বার্থ স্বর্গসম জননী। অনেক কথাই ছিল- না বলার আক্ষেপটুকু এখানেও রয়ে গেল।
‎তাই, মায়ের প্রতি সন্তানের এই অব্যক্ত বেদনার অক্ষমতা- পারো যদি ‘ক্ষমা’ করে দিও- ‘জননী’ !

ইতি–
‎তোমার সেই অবাধ্য সন্তান
‎ – সুচিত্র (মা, সুচিত্র বলেই ডাকে)
‎০৮মে -২০২৫,বৃহস্পতিবার বিকাল।

0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments