চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বনাম বিশ্বাসের সংস্কৃতি ও রাজনীতি – সরদার আরিফ উদ্দিন

By Published On: July 20, 2021Views: 263

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বনাম বিশ্বাসের সংস্কৃতি ও রাজনীতি
সরদার আরিফ উদ্দিন

 

আমরা সকলেই কোন না কোন বিশ্বাস দ্বারাই চালিত হই প্রতিনিয়ত। আবার সকল বিশ্বাসের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে তারও কোন প্রমান মেলে না। কিছু কিছু বিশ্বাস তৈরি হয় সামাজীকিকরন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, কিছু বিশ্বাস তৈরী হয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতালদ্ধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার কিছু বিশ্বাস তৈরি হয় অন্যের অভিজ্ঞতা কিংবা বক্তব্যে বিমোহিত হয়ে যে মানুষের উপর আমাদের আস্থা থাকে। মূলত বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস দুটো এক ধরনের না হলেও বিশ্বাসেরই অংশ। কোন কিছুতে বিশ্বাস না থাকাও এক ধরনের বিশ্বাস। যে কোন বিষয়ের উপরই সাধারনত চার ধরনের মানুষ দেখা যায়- প্রথমতঃ আস্তিক (Theism), যারা কোন কিছুতে বিশ্বাস রাখে কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়াই, দ্বিতীয়তঃ নাস্তিক (Atheism), যারা কোন প্রকার ধর্ম বা অন্যকিছু, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন কোন কিছুতেই আস্থা রাখে না, তৃতীয়তঃ অজ্ঞেয়বাদ (Agnosticism), যারা বিশ্বাস করবে কি করবে না, বিশ্বাস করা ঠিক হবে কি হবে না, অল্প কিছুতে বিশ্বাস আবার অন্য কিছুতে অবিশ্বাস অর্থাৎ এক ধরনের দোটানায় ভোগে এবং চতুর্থতঃ নির্বিকারবাদ (Irreleventism), যারা মনে করে বিষয়টি আমার নিজের জীবনের সাথে সম্পর্কিত নয়, সুতরাং এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই।

আমাদের প্রতিদিনের প্রতিটি কাজের পেছনেই বিশ্বাস কোন না কোনভাবে অন্তর্নিহিত থাকে। সকাল থেকে রাত অবধি আমরা যা কিছুই করি তার প্রতিটি কাজেরই যুক্তি প্রমান কিংবা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে এমনটা আস্থা অর্জনের পরে করি না, বরং আমাদের মনোজগতে নানা ধরনের বিশ্বাস, অবিশ্বাস কিংবা আস্থা ও অনাস্থার টানাপোড়ন থাকে। যতটা সম্ভব বিচার বিশ্লেষন করার চেষ্টা করি মাত্র। সে অর্থে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের কোন সার্বজনীন রূপ নেই। পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষ একই বিশ্বাস ধারণ করে না। বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস দু’টোই সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন রূপ ধারন করে। আবার বিশ্বাস পরিবর্তনশীলও বটে। নুতন নুতন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের পূর্বের বিশ্বাসগুলো পুরনো হয় এবং পরিবর্তিত রূপ ধারন করে নুতন বিশ্বাসের জন্ম নেয়। ফলে পূর্বের বিশ্বাস ও তদসংক্রান্ত প্র্যাক্টিসগুলোকে আমরা কু-সংস্কার বলে তালিকাভুক্ত করি। মানুষের চাঁদে অবতরন ছিল অবিশ্বাস্য, অলৌকিক ব্যাপার। তৎকালীন মানুষের বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল চাঁদে অবতরণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এক পক্ষ কোন প্রকার তাত্ত্বিক ভিত্তি ছাড়াই বিশ্বাস করতেন “চাঁদে অবতরন” সম্ভব আবার অন্য পক্ষ বিশ্বাস করতেন “চাঁদে অবতরন” মানুষের পক্ষে কোনদিনই সম্ভব না। চাঁদে অবতরনের পূর্ব পর্যন্ত দুটোই ছিল বিশ্বাস, দুটো ধারনারই কোন তথ্য প্রমান কিংবা যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর স্থির ছিল না। ফলে দুটো দু’ধরনের বিশ্বাসের ফলাফল। সুতরাং বিশ্বাস-অবিশ্বাস কিংবা সংস্কার-কুসংস্কার বিষয়গুলো সব সময় তথ্য প্রমাণ কিংবা যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে না।

আমাদের প্রতিদিনের প্রতিটি কাজের পেছনেই বিশ্বাস কোন না কোনভাবে অন্তর্নিহিত থাকে। সকাল থেকে রাত অবধি আমরা যা কিছুই করি তার প্রতিটি কাজেরই যুক্তি প্রমান কিংবা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে এমনটা আস্থা অর্জনের পরে করি না, বরং আমাদের মনোজগতে নানা ধরনের বিশ্বাস, অবিশ্বাস কিংবা আস্থা ও অনাস্থার টানাপোড়ন থাকে।

 

বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসগুলো সমাজের স্বীকৃতি কিংবা অস্বীকৃতির উপর নির্ভর করে টিকে থাকা কিংবা বিলীন হয়ে যাওয়া। ফলে যে কোন বিশ্বাসের স্থায়িত্ব, সমাজে ক্ষমতার সম্পর্ক, সংখ্যা গরিষ্ঠ কিংবা সংখ্যা লঘিষ্ঠ, তথ্যের আধিপত্য, শ্রেনী সম্পর্কের টানাপোড়ন, অর্থনৈতিক দাপট ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত। সে অর্থে বিশ্বাসের ভিত্তিমূল হলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক। যে গরীব মানুষের চিকিৎসার সামর্থ্য নেই তার কাছে “পানি পড়ার মাধ্যমে রোগ নিরাময়” বিশ্বাসের আশ্রয়স্থল আবার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির নির্বাচনে জয় লাভের প্রত্যাশায় মাজারে গমন ভিন্ন ধারার বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। হাজার বছরের চিকিৎসা পদ্ধতি ও জ্ঞান কুসংস্কার হিসেবে চালিত হয়, কালের পরিক্রমায় তথাকথিত আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ঔষধ শিল্পের বিনিয়োগের দাপটে। একজন দাই-মা প্রসব প্রক্রিয়ায় যত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের পরিচয়ই দিক না কেন তা কুসংস্কার হিসেব স্বীকৃত। তার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভবিষ্যৎবানী আমরা মানতে নারাজ যতক্ষন পর্যন্ত একই বক্তব্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ডাক্তারের মুখ থেকে শুনতে না পাই। একজন রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এর তাবিজ গ্রহন ও একজন রিক্সাচালকের তাবিজ গ্রহনের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটি বিশ্বাস হিসেবে স্বীকৃত ও সমাদৃত কিন্তু পরেরটি কুসংস্কার বলতেই আমরা গর্ববোধ করি বেশী। এখানে সামাজিক শ্রেণীবিভাজন বা বৈষম্যজনিত কারণটিই বিশেষভাবে লক্ষনীয়।

বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসগুলো সমাজের স্বীকৃতি কিংবা অস্বীকৃতির উপর নির্ভর করে টিকে থাকা কিংবা বিলীন হয়ে যাওয়া। ফলে যে কোন বিশ্বাসের স্থায়িত্ব, সমাজে ক্ষমতার সম্পর্ক, সংখ্যা গরিষ্ঠ কিংবা সংখ্যা লঘিষ্ঠ, তথ্যের আধিপত্য, শ্রেনী সম্পর্কের টানাপোড়ন, অর্থনৈতিক দাপট ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত। সে অর্থে বিশ্বাসের ভিত্তিমূল হলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক

 

যে কোন বিশ্বাসের উৎস মূলত কোন না কোন অভাব বোধ থেকেই। অর্থনৈতিক ক্ষমতার অভাব, জ্ঞানের অভাব, তথ্যের অভাব, প্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনার অভাব কিংবা অসীমতার অভাব। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই কোন না কোনভাবে অসম্পুর্ণ ফলে অপূর্নতার অভাববোধ থেকে প্রত্যেকেই কোন না কোন বিশ্বাসবোধ দ্বারা চালিত হয়। বিশ্বাসবোধহীন কোন মানুষ আদৌ পৃথিবীতে নেই।যে কোন বিশ্বাসের উৎস মূলত কোন না কোন অভাব বোধ থেকেই। অর্থনৈতিক ক্ষমতার অভাব, জ্ঞানের অভাব, তথ্যের অভাব, প্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনার অভাব কিংবা অসীমতার অভাব। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই কোন না কোনভাবে অসম্পুর্ণ ফলে অপূর্নতার অভাববোধ থেকে প্রত্যেকেই কোন না কোন বিশ্বাসবোধ দ্বারা চালিত হয়। বিশ্বাসবোধহীন কোন মানুষ আদৌ পৃথিবীতে নেই। কোন কিছুতেই বিশ্বাস না থাকা কিংবা আস্থা না থাকাও এক ধরনের বিশ্বাসবোধ। আমরা কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাস করি অসীমতার অভাববোধ থেকেই। অসীম ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পন করে আশ্রয় খুঁজি কিংবা ইহজগতে অপূর্ন কামনা পরজগতে পূরন করার অভাববোধ থেকেই। তেমনি একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রথমেই বিশ্বাস করি যে, চিকিৎসক আমার যথার্থ চিকিৎসা করবেন ও সঠিক পরামর্শ দেবেন, শরীর বিজ্ঞান সম্পর্কিত যথার্থ জ্ঞানের অভাববোধই আমাদের বিশ্বাসের প্রধান উৎস। যে কোন ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি উক্ত ঔষধ রোগ নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট। একজন দরিদ্র মানুষের মসজিদের ইমাম থেকে পানি পড়া গ্রহন ও রোগ নিরাময়ের বিশ্বাস তার অর্থনৈতিক সক্ষমতার অভাববোধেরই বহিঃপ্রকাশ। আবার একই কাজ ধনী লোকের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অভাব না থাকলেও তথাকথিত আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি অবিশ্বাস কিংবা চেষ্টার ব্যর্থ ফলাফল থেকেই তৈরি। বিশ্বাসগুলো যেহেতু পরিবর্তিনশীল তাই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে একই বিশাস প্রতিফলিত নাও হতে পারে। আমার বাবা কিংবা দাদা’র প্রজন্ম তুলসী পাতা, থানকুনী পাতা, এলোভেরা ইত্যাদির মাধ্যমেই চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলেন কিন্ত আমার প্রজন্মে ঔষধ কোম্পানী ও তথাকথিত আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যের ও যুক্তির মারপ্যাচে আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে আমার বাবা ও দাদা ছিলেন অ-আধুনিক মানুষ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ কিন্তু আমি আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। মুনাফার রাজনীতি বিশ্বাসের সংস্কৃতিকে বারবারই পরাজিত করার চেষ্টা করে।

যে কোন বিশ্বাসের উৎস মূলত কোন না কোন অভাব বোধ থেকেই। অর্থনৈতিক ক্ষমতার অভাব, জ্ঞানের অভাব, তথ্যের অভাব, প্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনার অভাব কিংবা অসীমতার অভাব। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই কোন না কোনভাবে অসম্পুর্ণ ফলে অপূর্নতার অভাববোধ থেকে প্রত্যেকেই কোন না কোন বিশ্বাসবোধ দ্বারা চালিত হয়। বিশ্বাসবোধহীন কোন মানুষ আদৌ পৃথিবীতে নেই।

 

যে কোন বিশ্বাসের উৎস বিবেচনা ছাড়াও স্বীকৃতি দান একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। রাষ্ট্রপ্রধান, সমাজ প্রধান, জাতি প্রধান কিংবা সমাজের বিশিষ্ট গুণীজনই মূলত যে কোন বিশ্বাসের স্বীকৃতি দানের কিংবা নাকোচ করে দেয়ার স্বত্বাধিকারী যেখানে বিশ্বাস ধারণকারীর কোন মূল্য নেই। সুতরাং স্বত্বাধিকারী ব্যক্তিবর্গের মন মানুষিকতা, জ্ঞান, তথ্য ভান্ডার, মূল্যবোধ ইত্যাদি সামষ্টিক জনগনের বিশ্বাস গ্রহন করা, না করার নীতি নির্ধারক। যে কারনে কোন সমাজে মুসলমান ছেলেদের খাতনা ধর্মীয় নীতি কিংবা সাস্থ্য পরিচর্যার একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় আবার কোন সমাজে নারীদের খাতনা প্রথাও জায়েজ। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সকল সমাজে একই প্রকার স্বাস্থ্য বার্তা পোঁছাতে ব্যর্থ। কেননা সমাজের নীতি বিশ্বাস ও মূল্যবোধগুলো সেখানে প্রধান বাঁধা  হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলেও কিছু নেই আদৌতে। সে অর্থে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রচার নানা ধরনের রোগের নামকরন ও ঔষধ আবিস্কার সবই মুনাফার রাজনীতি, স্বাস্থ্য রাজনীতি। একটি বিশ্বাস অপর বিশ্বাসের জায়গায় প্রতিস্থাপনের রাজনীতি। কোন সমাজে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহন আধুনিক মানুষের পরিচায়ক আবার কোন সমাজের বিশ্বাস অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা গ্রহনযোগ্য নয়। এখানে একটি সন্দেহ প্রকাশ করা যেতেই পারে- রোগের আবিস্কার আগে হয় নাকি ঔষধের আবিস্কার আগে হয় অর্থাৎ  রোগ দেখা দেয়ার পর ঔষধ আবিস্কার হয় নাকি ঔষধ আবিস্কারের পর রোগের প্রকোপ দেখা দেয়? সেটা এক ভিন্ন বিতর্ক।

সার্বজনীন স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলেও কিছু নেই আদৌতে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রচার নানা ধরনের রোগের নামকরন ও ঔষধ আবিস্কার সবই মুনাফার রাজনীতি, স্বাস্থ্য রাজনীতি। একটি বিশ্বাস অপর বিশ্বাসের জায়গায় প্রতিস্থাপনের রাজনীতি। কোন সমাজে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহন আধুনিক মানুষের পরিচায়ক আবার কোন সমাজের বিশ্বাস অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা গ্রহনযোগ্য নয়। রোগের আবিস্কার আগে হয় নাকি ঔষধের আবিস্কার আগে হয়? সেটা এক ভিন্ন বিতর্ক।

 

সমাজের এই বিশ্বাসটুকু “অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ ও প্রভাব” নামক যুক্তির বেড়াজালে পরাজিত করা সম্ভব হলেই  পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর বাজার উন্মুক্ত হয় ও মুনাফার গ্যারান্টি পাওয়া যায়। আজকাল আধুনিক বিশ্বে “বিয়ে প্রথা” বিশ্বাসে আঘাত করে বিয়ে বহির্ভূত যৌনমিলন ও প্রগতিশীল মননের পরিচায়ক। ফলে বাণিজ্যের দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সমাজ ভেদে সমাজের অভ্যন্তরস্থ বিশ্বাসের ভিন্নতা ভেদে স্বাস্থ্য, রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি- এ সার্বজনীনতা না থাকায় বিশ্বাসের পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপন ক্রমাগতই জটিল হচ্ছে ফলে রোগ নির্ধারনের মাপকাঠি সংস্কৃতি নির্ভরতা থেকে সংখ্যা-নির্ভরতায় রূপান্তরও জরুরী হচ্ছে। যে কারনে শরীরের তাপমাত্রার ভিন্নতা ভেদে ঔষধ সেবন ও চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী হয়। উচ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ, রক্তের সুগারের পরিমান, হার্টবিট সংখ্যা, পালস বিট সংখ্যা ইত্যাদি যাবতীয় সংখ্যার ব্যবহার করা হয় সার্বজনীনতা রক্ষার স্বার্থে। ফলে চিকিৎসাবিদ্যা ও রোগ সম্পর্কিত মানুষের বিশ্বাসগুলো সংখ্যা দ্বারা পরিমাপযোগ্য হলে নিয়ন্ত্রন করা সহজ এবং পৃথিবীব্যাপী ঔষধ বাণিজ্যের বাজার সম্প্রসারণের যৌক্তিক কারন উপস্থাপন সহজ হয়।

পৃথিবীব্যাপী বিতর্কিত ইস্যু হলো- ধর্ম বিশ্বাস কি রোগ নিরাময়ে সহায়ক হতে পারে? যে কোন বিশ্বাসের অংশ হিসেবে মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন পদ্ধতি কিংবা বিশেষ কোন কার্যক্রমে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে কিনা? স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে তার কোন স্বীকৃতি কিংবা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি না? যেমন, মাজার জিয়ারত করা, পানি পড়ার মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের সামষ্টিক পর্যায়ে দোয়া মাহফিল, নানা ধরনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এ সম্পর্কে গণসাস্থ্য অক্টোবর-নভেম্বর ২০১৭ মাসিক সংখ্যার প্রচ্ছদ রচনার কিছুটা অংশ সংকলন করা যেতে পারে।

আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানের অন্যতম প্রবক্তা এমিল ডুর্খেইম (Emil Durkheim) সমর্থন করেছেন যে ধর্মীয় বিশ্বাস এর ধরনের আঠার ন্যায় কাজ করে যা সমাজকে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। কারন এতে এমন সব আচার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলো মস্তিস্কের এন্ডোরফিন (endorphin) নিঃসরণে (Secration) ভালো ভূমিকা রাখে। এন্ডোরফিন (endorphin) হচ্ছে মানব দেহের ব্যথা নিয়ন্ত্রনে প্রাকৃতিক পদ্ধতি। ব্যথা যখন মামুলি, এন্ডোরফিন তখন মোটামুটি নিস্ক্রিয় থাকে কিন্তু প্রয়োজনে এরা ব্যাপকভাবে মস্তিস্কে ছড়িয়ে পড়ে। জন্যই ধার্মিক লোকেরা এত সুখী। তদুপরি এন্ডোরফিন অনাক্রম্য পদ্ধতিকেও (immune system) যথাযথ কাজে লাগায়। কারনে ধার্মিক লোকদের স্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে ভাল থাকে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে দৈহিকভাবে কষ্টকর কাজের আয়োজন করা হয় যেমনগান গাওয়া, শরীর আন্দোলিত করা, হাটু ভেঙ্গে বসা, পদ্মাসন করা, তসবিহ জপা, এমনকি নিজেকে নিজে চাবুক মারার মত কষ্টদায়ক কাজ করা ইত্যাদি। ফলে এন্ডোরফিন (endorphin) নির্গত হবার কারনে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভূমিকাকে অস্বীকার করার উয়ায় নেই। বিশ্বাস কখনো আক্ষরিক অর্থে পর্বত সরিয়ে ফেলেনি তবে এর রয়েছে নাটকীয় ক্রিয়া। মেরিল্যান্ড ইস্ট অব ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব হেলথ (Marrland East of National Institute of Health) এর গবেষক ডিন হ্যামার (Dean Hammer) বলেনব্যাপকভাবে বিশ্বাস হচ্ছে যৌক্তিকতা থেকে উদ্ভূত একটি বিষয়। কোন কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করতে হলে অন্তত অস্পষ্টভাবে হলেও জিনিসটা সম্পর্কে জানতে হবে। জন্যই মানুষ বিশ্বাসকে অনুভব করে, চিন্তা করে না। বিশ্বাসের ভিত্তি খুঁজে পাওয়া দুরূহ। ঔষধের প্রতি বিশ্বাস, গড (ঈশ্বর, ভগবান বা আল্লাহ) এর প্রতি বিশ্বাসের মত সর্বব্যাপী এবং এর ফল নিয়ন্ত্রন এবং পরিমাপ করা সহজতর। বিষন্নতারোধী ঔষধের শতকরা ৮০ ভাগ সুফল পাওয়া যায় কারণ রোগীরা বিশ্বাস করে এতে কাজ হবে। বিকল্প ঔষধের ক্ষেত্রে (alternative medicine) বিশ্বাসের প্রভাব আরো অনেক বেশী। আকুপাংচার চিকিৎসায় শরীরের যে কোন স্থানে সুই প্রবিষ্ট করালেও ব্যথা নিরাময় হবে। রোগীদের উপর ছলৌষধি (placebo) ব্যবহৃত হয়েছে অসংখ্য জরীপে। শুধুমাত্র বিশ্বাস কিভাবে রোগ নিরাময় করে, সেটার প্রমাণও পাওয়া গেছে অসংখ্য গবেষনায়। তাহলে পানি পড়া কিংবা তাবিক কবজের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও রোগ নিরাময়ের প্রত্যাশাকে কুসংস্কার বলি কেন?

ছলৌষধি (placebo) ক্রিয়া হচ্ছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশ্বাসের জৈবিক প্রভাব। এটা যে একটি বাস্তব ও জোরালো শক্তি সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এর বছরব্যাপী গবেষনা পরিচালনায় ১৪ জন সুস্থ লোককে ঔষধ খাওয়ানোর ফলে তাদের চোয়াল ব্যাথা হয়  এবং পরে সবাইকে ব্যথা নিরাময়ের ঔষধ দেয়া হয়। বলা হয় এতে ব্যথা কমতে পারে আবার নাও কমতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, ঔষধটি ছিল একটু স্যালাইন পানি কিন্তু স্যালাইন পানি খেয়েই সকলের ব্যথা ভাল হয়ে গেল। ব্যথা নিরাময়ের ব্যাপারটি শুধু কাল্পনিক ছিল না। গবেষক পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফী (PET) ব্যবহার করে দেখতে পান ছলৌষধি (placebo) ব্যবহারকারী রোগীদের মস্তিস্কে অধিক পরিমানে এন্ডোরফিন (endorphin) ক্ষরন হয়েছে।

এই এন্ডোরফিন হচ্ছে দেহের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক পদার্থ। অসংখ্য গবেষনা ও সাক্ষ্য প্রমানে এ কথার সমর্থন পাওয়া যায় যে বিশ্বাস একটি সচেতন, যৌক্তিক প্রক্রিয়া। কোন চিকিৎসায় কাজ দেবে কিনা তা চিকিৎসা গ্রহনকারীর বিশ্বাসের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে। আকুপাংচারের নিরাময় শক্তি সম্পর্কে যে সকল মানুষের বিশ্বাস স্থাপন হয় না, আকুপাংচার চিকিৎসায় তাদের কোন উপকারও হয় না। ফলে আমাদের দেশে প্রচলিত পানি পড়া, তাবিজ, হুজুরের দোয়া ইত্যাদি চিকিৎসা পদ্ধতি ছলৌষধি (placebo) হিসেবেই মূলত ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে আমরা সহজেই কুসংস্কার বলে নাকচ করে দিই কিন্তু কুসংস্কার হিসেবে প্রমান করার কোন জোরালো যুক্তি থাকে না সবসময়। আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের বিশ্বাসের বহির্ভূত বিধায় অন্য বিশ্বাসগুলো কুসংস্কার আর তাদের বিশ্বাসগুলো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে বলে দাবী করা হয়।

মাঝে মাঝে পত্রিকায় নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হয়, যেমন-  “অলৌকিক নিম গাছের গোড়ায় আগরবাতি, মোমবাতি, মিঠাই-সর্বরোগের ঔষধ হিসেবে গাছের রস সংগ্রহে লম্বা লাইন” শীর্ষক প্রতিবেদন। এরকম অলৌকিক শক্তি ও জনগনের বিশ্বাস শীর্ষক প্রতিবেদন প্রায়ই প্রকাশ পায়। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই এ ধরনের বিশ্বাসের প্রচলন এমন নয়, এশিয়া মহাদেশের প্রায় প্রতিটি দেশেই বিশ্বাসের সাথে রোগমুক্তি কামনা’র যোগসূত্র দেখা যায়। এমনকি উন্নত বিশ্ব জাপান, কানাডা, আমারিকাতেও জনমানুষের রোগমুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বাসের প্রাধান্য দেখা যায়। সকল ক্ষেত্রেই একটি সাধারন প্রশ্ন হলো- অলৌকিক শক্তির সাথে স্বাস্থ্য কিংবা রোগ মুক্তির সম্পর্কই কেন বারবার সম্পর্কযুক্ত হয়? অলৌকিক শক্তির সাথে মানুষের শিক্ষার মান বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি, সমাজের অন্যায় অনাচার রোধ, চুরি ছিনতাই, ডাকাতি প্রতিরোধ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়গুলো কেন সম্পর্কযুক্ত হয় না? স্বাস্থ্যের সাথে, রোগ-শোকের সাথে, মানুষের জীবন মরণের সমস্যা, মানুষের প্রতিটি মূহুর্ত বেঁচে থাকার প্রশ্ন জড়িত। সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যখন মানুষ চিকিৎসা পেতে ব্যর্থ হয় তখন আশাহীন মানুষের একমাত্র ভরসা বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে, অতিমাত্রায় বিনিয়োগ বিহীন সুস্থ্যতা লাভের প্রচেষ্টা। যত ধরনের অলৌকিক বিশ্বাসের (পানি পড়া, হুজুরের ক্ষমতা, অলৌকিক গাছের রস, পুকুরের পানির রোগমুক্তির ক্ষমতা ইত্যাদি) প্রতি মানুষের লম্বা লাইন, সেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে প্রায় ১০০% মানুষই সরকারী হাসপাতালমুখী দরিদ্র শ্রেনীর মানুষ। সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা, বেসরকারী চিকিৎসা লাভের অর্থনৈতিক অক্ষমতা মানুষের অলৌকিক শক্তির উপর বিশ্বাস স্থাপন হয় সহজেই। তা না হলে এপোলো, ল্যাব এইড কিংবা ইউনাইটেড হাসপাতালগামী/সক্ষম কিংবা মাদ্রাজ, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা প্রার্থীর জনগনকে কেন ঐ অলৌকিক নিমগাছের লাইনে দেখা যায় না। অনেকেই নিরক্ষরতাকে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস স্থাপনের কারন হিসেবে মনে করেন। কিন্তু বাংলাদেশের এমন অসংখ্য নজীর আছে যে, স্বাক্ষরজ্ঞানহীন ধনী মানুষও সিঙ্গাপুর, মাদ্রাজ কিংবা থাইল্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসাপ্রার্থী। তাহলে স্বাক্ষরতা কিংবা নিরক্ষরতার সাথে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাসের সম্পর্ক খুব একটা নেই। সন্তান লাভে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকেও হুজুরের পানি পড়া নিতে দেখা যায় কেননা টেষ্ট টিউব বেবী গ্রহণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও আমাদের দেশের সংস্কৃতি গ্রহনযোগ্য হয় না। অর্থাৎ যে কোন ধরনের ব্যর্থতা, হতাশা ও সুযোগ না পাওয়া আশাহীন মানুষেরই দ্রুত বিশ্বাস স্থাপন হয় অলৌকিক ক্ষমতার উপর। যদি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করা যায় এবং জনগণ চিকিৎসার গুনগত মান সম্পর্কে সন্তুষ্টি অর্জন করে তাহলে রাতারাতি সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতার লাইন ফাঁকা হয়ে যাবে।

সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যখন মানুষ চিকিৎসা পেতে ব্যর্থ হয় তখন আশাহীন মানুষের একমাত্র ভরসা বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে, অতিমাত্রায় বিনিয়োগ বিহীন সুস্থ্যতা লাভের প্রচেষ্টা। যত ধরনের অলৌকিক বিশ্বাসের (পানি পড়া, হুজুরের ক্ষমতা, অলৌকিক গাছের রস, পুকুরের পানির রোগমুক্তির ক্ষমতা ইত্যাদি) প্রতি মানুষের লম্বা লাইন, সেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে প্রায় ১০০% মানুষই সরকারী হাসপাতালমুখী দরিদ্র শ্রেনীর মানুষ।

 

বেশ কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালশন গ্রামের একটি নিমগাছ চত্বরে আশাহীন মানুষের রোগমুক্তির আশায় ক্রমশই ভীড় বাড়ছে। নিমগাছের শরীর ফেটে বের হতে থাকা মিষ্টি রসকে কেন্দ্র করে অলৌকিক ক্ষমতার প্রতি মানুষের বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।  পবিত্রমনে মানত করে গাছের রস পান করলে রোগ বালাই ভালো হবে এমন বিশ্বাসে লোকজন সারাদিন ভীড় করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগন গাছটিকে রোগাক্রান্ত হিসেবে wPwýZ করে বলেছেন ঝড়ে পড়া রসে কোন ঔষধিগুন নেই কিন্তু তারপরও অলৌকিকত্বে বিশ্বাসীদের ঠেকানো যাচ্ছিল না। অলৌকিক গাছটিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের আচার অনুষ্ঠানও পালিত হচ্ছিল, প্রতিদিন অন্তত ১০০ আগরবাতি সমসংখ্যাক মোমবাতি ৫০টি ম্যাচ আর ১০/১৫ কেজি বাতাসা জমা হচ্ছিল গাছের গোড়ায়। গাছের নীচে লালসালু খোলা হয়েছিল, পবিত্র জ্ঞান করে গাছের চারদিকে বেড়া দেয়া হয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যদিকে ঘটনাটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখা হলো-গাছের শরীরবৃত্তীয় সমস্যার কারনে মাটি থেকে খাবার হিসেবে উঠে আসা রসগুলো ঝরে পড়ছিল। মাটিতে পটাসিয়ামের পরিমান কমে যাওয়ায় গাছটি ক্যাসিয়াম যেন দূর্বল হয়ে পড়েছে। মাটিতে প্রয়োজন মত সার প্রয়োগ করলেই গাছটি সুস্থ্য হয়ে উঠবে এবং অলৌকিক ক্ষমতার অবসান ঘটবে। পুরো ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা জানার পর সকলের বিবেচনাতেই মানুষের হুলস্থুল কান্ডটি মূলত কুসংস্কার। তার পূর্ব  পর্যন্ত ঘটনাটি ছিল ব্যাখার অতীত অর্থাৎ অতিপ্রাকৃতিক। সংবাদ প্রতিবেদক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের কাউকেই জিজ্ঞেস করেনি তারা উপজেলা সরকারী হাসপাতালে না গিয়ে রোগমুক্তির আশায় এখানে কেন জড়ো হয়েছে?  প্রশ্নটি করা হলে আমার ধারনা ১০০% মানুষই কোন না কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতেন। অবশেষে আশাহীন এই মানুষদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে, পুলিশ মোতায়েন করার মাধ্যমে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই মানুষদের বিশ্বাসগুলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তিতে ধূলিসাৎ করে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে কিন্তু পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা না করেই।

ফলে অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠের যে সূত্র –চাহিদা ও যোগানের সমন্বয় না হলে প্রোডাক্টের মূল্য বাড়বে। সেই একই কৌশলে শুধুমাত্র তথাকথিত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে বাকী সকল চিকিৎসা পদ্ধতিকে (আয়ুর্বেদ, ইউনানী, হোমিওপ্যাথি, বিশ্বাসভিত্তিক ইত্যাদি) অবজ্ঞা করেই চাহিদা ও যোগানের সংকট তৈরী করা হচ্ছে ফলে ডাক্তারদের ফি প্রতি ২ মিনিটে ৮০০ টাকা এবং ঔষধের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে হলেও মানুষ জমি বিক্রি করে কিংবা চড়া সুদে ঋণের টাকাতেই চিকিৎসা করাবে, এমনটাই স্বাস্থ্য রাজনীতির প্রত্যাশা।

 

সরদার আরিফ উদ্দিন
জনস্বাস্থ্য নৃবিজ্ঞানী
(Public Health Anthropologist)

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop