শেখ ফিরোজ আহমদ – যদি একটা পাহাড় পেয়ে যাই

By Published On: July 20, 2021Views: 275

যদি একটা পাহাড় পেয়ে যাই

ভাবছি, আমি যদি হঠাৎ একটা পাহাড় পেয়ে যাই
তাহলে কী করব!
শুধু একটা পাহাড়? তাতে কি আমার হবে?
আমি সঙ্গে আরো চাই
একটা লাগোয়া মুক্তার সাগর
আর ছোট্ট ঘন বন-

আমার প্রথম কাজ হবে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে
প্রকৃতির সান্নিধ্যে সর্বক্ষণ থাকা।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, মাথার উপর সুনীল আকাশ
সবুজ জঙ্গল, পাখির কিচির মিচির, ঝিরির পানি
এই পাহাড়েই আমাদের ঘর

কবি সুনীলদা তো কবেই মরে গেছেন
নাট্যকার শ্যামল ভাদুড়ীও কিনতে পারেনি পাহাড়টা
নদীও বিনিময় হয়নি,
শ্যামল ভাদুড়ীকে আমি না হয় বলব
স্বাতীকে নিয়ে আমার পাহাড়ে বেড়াতে আসতে-
কবি শাহিন লতিফ, শীলা, আযাদ, তৃপ্তি, চঞ্চল, নয়ন, জেমী,
বিপুল, সাহানা, রকিব লিখন- তারাও না হয় আসবে

তো সেই পাহাড়টাই যদি আমি পেয়ে যাই
সেই পাহাড়টাই-
যে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সুনীলদা সৃষ্টিকর্তার কাছে
ক্ষমা চাইবার বাসনা করেছিলেন

আমি সেই পাহাড়েই তোমার জন্য
দখিন দুয়ারি ঘর, পাশেই মুক্তার সাগর;
আমি অকল্পনীয় ডুব দিয়ে তুলে আনবো মুক্তা
তুমি তখন কেমন একটুখানি হাসো
এই আমার সুখ-

আমি মুক্তার সমুদ্র থেকে
ঠিক ততটাই তুলব
যতটা মুক্তা তুললে একটা মালা গাঁথা যায়
এই সাগর শুধুই তোমার জন্য

কেউ যদি দৈবাৎ মুক্তা তুলতে আসে
আমি তাকে দেখিয়ে দিব দক্ষিণ সাগর
বলব, কালাপানি পাড়ি দাও- ওইদিকে আন্দামান নিকোবর
এই মুক্তা সাগর শুধু তোমার জন্য

আমি পাহাড়ের কাছে গহীন জঙ্গলে
ছোট্ট হরিণ পরিবার ও কয়েকটা বানর ছেড়ে দিব
কোকিল, তক্ষক আর যত ইচ্ছে পাখি
প্রাণভরে শুনব তাহাদের ডাকাডাকি

পাহাড়ের মাথায় ভারি চমৎকার একটা কটেজ
আমরা প্রাণ ভরে জ্যোৎস্না দেখব
দিনে তুমি ব্যস্ত থাকবে? বাব্বাহ্ চার-পাঁচটা বাচ্চা সামলানো
সে কি কম হ্যাপা?

মেঘগুলো ভারি দুষ্টু- যখন ইচ্ছে
হুট করে তোমার গা ভিজিয়ে যাবে
আমি তখন রিডিং রুমে
তুমি রেগেমেগে ঢুকে বলবে- দেখেছ, মেঘগুলোর কাণ্ড?

দুষ্টু মেঘগুলোকে আচ্ছা মতোন
বকে দেওয়া দরকার।
ওমা, আমরা বারান্দায় যেই একটুখানি ঝুঁকে দাঁড়ালাম
চায়ের কাপে চুমুক দিতে ভুলে যাই
দূরে আগুন রোদে মাখামাখি মুক্তার সাগর,
ঝিরিঝিরি শান্ত বাতাস
শরতের মিষ্টি রোদ গা ছুঁয়ে যেতে যেতে
বলে- কি গো, মন ভালো তো?

মেঘের ভিজিয়ে দেওয়ার কথা আমরা
ততক্ষণে ভুলে যাই
আমি ফিসফিস করি তোমাকে বলি- আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?
তুমি তখন কী অপূর্ব করে হাসো
বিকেলের নরোম রোদে তখন বাতাসের হিল্লোল
বাতাসে দুর্বাঘাস দোলে।

বন থেকে উতলা বাঁশির সুর
হে প্রভু, আমার বেশি কিছু চাইবার নেই
আমারে দিও এখানেই
অন্তিম শয়ান – শিয়রে এপিটাফ

হে প্রভু, আমি পরাস্ত হব না
যদি একটা পাহাড় পেয়ে যাই
তুমি আমারই সঙ্গে থেকো- একটু হাত ধরো ওগো প্রিয়তমা।

 

একটা নাকফুল

তুমি যখন নাকফুল পরো
সেই ক্ষণগুলোয় গাছের পাতায় পাতায় বেজে ওঠে মর্মর
আমার কাছে সবকিছু কেমন আশ্চর্য সুন্দর
তুমি তখন হলুদ বরণ কন্যা যার মেঘ বরণ চুল

আমি ভেবেই পাই না
একটা ছোট্ট নাকফুলে কী এত জাদু আছে
তাই আমার তীর্থ ভ্রমণের নাম
রাখলাম- তোমার নাকফুল

আমার খুব ইচ্ছে করে
একবার ছুঁয়ে দেখি তোমার নাকফুল
আমি বাগান থেকে কুড়াই গোলাপ, শিউলি ও বকুল
নাকফুল শুধু তোমারই থাকুক

যদি না আমার মৃত্যু হয়
গোলাপের বিষের কাঁটায়,
তবে দেখে নিও আমার প্রিয় নাকফুল যদি একটিবার তুমি পরো
ভালোবাসার উড়ো উড়ো দিনের সুবাসিত ঘ্রাণ তুমি টের পাবে,
এই ফুল তোমার গালে সোনালি রোদ থেকে
তুলে আনে নম্র আলো- সঙ্গে নূপুর
একটা বাগানের সমান অষ্টপ্রহর জুড়ে
চলা গল্পের টাপুর টুপুর

এই নাকফুল হাজার বছরের নারীকুল
এনেছে- রোদের সঙ্গে রাত্রিও
আমার একটাই উত্তরীয়- এসো দুজনে গায়ে দিই
এই উষ্ণতা আমার বড় প্রিয়

একটু ঘনিষ্ঠ যদি হই, যদি সামনে দাঁড়াই
যদি হাত বাড়াই
যদি ছুঁয়ে দেখি নাকফুল- আহা, শান্তি শান্তি
একটা ছোট্ট নাকফুলে তুমি এত সুন্দর!

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop