ফেরদৌসী রহমান ১৯৪১ সালের ২৮ জুন তিনি মাটির এই পৃথিবীতে আসেন ।
কণ্ঠে নিয়ে সুদূর স্বর্গের কিন্নরীদের সুর; বড় হতেই স্ব-ঘোষণার ব্যঞ্জনায় তাঁর কণ্ঠ হতে ছড়িয়ে পড়ে সেই সুরের মাধুরী : ‘ গান হয়ে এলে মন কেন বলে — সারাবেলা এত সুর নিয়ে / নিজেরে কেমনে বলো রাখি লুকিয়ে….’! সুর, মাধুর্য, সৌন্দর্য, সুশিক্ষা, ব্যক্তিত্ব, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা –এই সাতটি গুণের সোনালি সমাহার যার মাঝে, তাঁর নাম ফেরদৌসী রহমান। কোনো পদ বা পদবী নেই অথচ যাকে ভালোবাসে বাংলার আকাশ বাতাস মাটি ও মানুষ, তাঁর নাম ফেরদৌসী রহমান। তাঁর পেশাগত জীবন ছুঁয়ে আছে সাফল্যের হিমালয়, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ভরে আছে সুরুচি ও সুচরিত্রের আলোয়। জীবনের কোনো মোড়েই কালিমার কালি ছুঁতে পারেনি তাঁর সুরভিত অস্তিত্ব। ফলে সাফল্য ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন জীবনের সার্থকতায়। নির্ভেজাল ও সর্বজনীন শ্রদ্ধা আকর্ষণকারী আলোকিত জীবনের নাম ফেরদৌসী রহমান। তিনি অনুসরণীয়।
” প্রতিটি ক্ষেত্রেই ফেরদোসী রহমান সোনালি দৃষ্টান্ত। যার কণ্ঠ হারমোনিয়ামের সবকটি বিটকে স্পর্শ করতে পারে, আকাশ ছুঁয়ে ফেলে যার সুরেলা উচ্চারণ, কথা বলার সময় তিনি অনুদ্ধত মোলায়েম ও অপ্রগলভ। খ্যাতিতে যিনি হিমালয়ের চূড়া স্পর্শকারী, তিনি মানুষ হিসেবে সোনালি ধানের শীসের মতো বিনয়ী। ”
সকালে ঘণ্টাখানেক গৃহপালিত ব্যায়াম করি আমি। ইউটিউবে গান বাজে; আমি সুর ও বাণীর সুধা উপভোগ করতে করতে ব্যায়াম করি। লীনা উঠে বলে: অফিস যাবে না! কখন যে শেষ হয়ে যায় সময়। মাঝে মাঝেই ফেরদৌসী রহমান বাজে ইউটিউবে ; ব্যায়াম করতে করতে উড়ে যায় আমি শৈশবে কৈশোরে প্রথম যৌবনে যেখানে রেডিও হাতে আর বিয়ে উপলক্ষে কলের গান নিয়ে ফিরে আসে আমার প্রটোকলবিহীন আবেগনিবিড় দিন :
“সুখ-বসন্ত সুখের কালে রে –প্রাণের বন্ধু নাই রে দেশে
প্রেমানলে জ্বলছে হিয়া রে……
ও সখিরে—
ভ্রমর করছে গুনগুন কোকিল ডাকছে ডালে
(এই) অভাগিনীর মনের আগুন…….”
কেবল বাল্য কৈশোর নয়, আমি যখন রংপুর অঞ্চলে চাকরি করি , এক স্টেশনে আমার বাগানময় সরকারি বাসাটির মূল গেটে চিল একটি জলপাই গাছ। প্রচুর জলপাই ধরতো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দোতলা থেকে চোখাচোখি হতো জলপাই গাছটির সাথে আর আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসতো ফেরদৌসী রহমানের গান: ‘‘ বাপুই চ্যাংড়া রে–গাছত উঠিয়া দুইটা হা! ও মোক জলপাই পাড়িয়া দে!” আমার অফিসের দূরত্ব ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টা ; কখনো-বা দুই ঘণ্টা। আজ অফিসের পথে সারাটাপথ শুনেছি ফেরদৌসী রহমানকে একপাশে পড়া স্থগিত রেখে দিলীপকুমারের আত্মজীবনী:’The Substance and the Shadow : An Autobiography ‘।
আরবিতে একটি প্রবাদ আছে যার বাংলা এরকম, প্রতিটি বস্তু তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। জীবনের প্রথম বইয়ে অন্তর্ভুক্ত আমার নিজের একটি কবিতাতে আমি লিখেছিলাম :
“বস্তুত প্রাণের ধর্ম প্রত্যাবৃত্তি ছিন্নযোগমূলে,
স্মৃতি ধায় সত্তা ধায় বোধাতীত শূন্য-জন্মধূলে।”
আমি গ্রামের ছেলে। রাজধানীতে ১৪/১৫ বছর আছি। পেশাগত কারণেই শহরের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত প্রবেশাধিকার জুটে। কিন্তু আমার ভালোবাসা প্রতিদিন ছুঁয়ে আসে সেই ” ছিন্নযোগমূল” — আমার জন্মগ্রাম, আমার শৈশবের বেড়াহীন আঙিনা, আমার বাল্যের মার্বেল খেলার গলি, আমার কৈশোরের গরু চরানো ষোলো রইসার মাঠ, আমার পিয়ালী-ট্যাংরা- বাইলা মাছ ধরার ম্যাড়াতলার বিল, আমার সাঁতার কাটার পাঙ্গাশমারী নদী, আমার ঘুড়ি ওড়ানো কূপের ধার, লোকসংগীতের সুরে মুখর বাবলাবনার মাঠ। কৈশোরকাল থেকেই প্রেম করতে ইচ্ছা করতো ভীষণ। প্রেমের ভুবনে আমি অনেকটা যাকে বলে ইঁচড়েপাকাই ছিলাম। কিন্তু তখনকার দিনে প্রেম আজকের দিনের মতো সহজ ও সহজলভ্য ছিল না। তখন তো মোবাইল ফোন ছিল না। ছিল না ফেসবুক মেসেঞ্জার। তো প্রতিবেশিনী/ সহপাঠিনী মেয়ের প্রতি অবুঝ ভালোবাসা বন্দি হয়ে থাকতো মনের মধ্যে—- যেভাবে এখন করোনার ভয়ে বন্দি হয়ে আছে অধিকাংশ মানুষ বেঁধে রেখে তাদের পায়ের প্রশিক্ষিত পদক্ষেপ, পাজেরোর প্রবল চাকা, বিমানের গতিগর্ভ ডানা। ফলে অগ্রিম বিরহবেদনায় মন মুষড়ে উঠতো মাঝে মাঝে। যখন রেডিওতে বেজে উঠতো, ” ঘরের — দিয়া রে বন্ধু গাঙে দিলাম বানা / রাইতে আইও, রাইতে যাইও, দিনে করি মানা রে বন্ধু / অচিন গাঁয়ের অচিন বন্ধুরে…..”, তখন অবুঝ মন সবুজ স্বপ্ন এঁকে পথে, বলে উঠতো, ও কি আমাকে এভাবে ডাকতে পারে না! এই গান একটি লোকগান, তখন রেডিওতে বলা হতো পল্লীগীতি। আবদুল আলীম, নীনা হামিদ– এবং আরও কত শিল্পী মাতিয়ে রাখতেন বাংলার হাটবাজার, আকাশ-বাতাস, নদীর স্রোত, ফসলের মাঠ!
আমি ছোট থেকেই নদীপাগল, গানপাগল, প্রেমপাগল এবং কবিতাপাগল। আমার সবগুলো পাগলামী একপাত্রে মিশে একাকার হয়ে ভরে তুলেছে আমাকে। “আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করছো দান / তুমি জানো নাই, তুমি জানো নাই তার মূল্যের পরিমাণ।”—–চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে যখন রবীন্দ্রনাথ বেজে ওঠেন, তখন আমার এসব পাগলামীর দিকেই আমার সকল নিবেদন ধায়—-হে পাগলামীর দল, তোমরাই আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছে দান!
ফলে ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মিসরের উম্মে কুলসুম থকে শুরু করে বব ডিলান, মাইকেল জ্যাকসন হয়ে মেহেদী হাসান, ফরিদা খানম, বড়ে গোলাম আলী, ছোটে গোলাম আলী, বেগম আকতার, বিসমিল্লাহ খাঁ, নুসরাত ফতেহ আলী খান, কে এল সায়গল, মহম্মদ রফি, তালাত মাহমুদ, লতামুঙ্গেশকর, কিশোরকুমার, আঙুরবালা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, ফিরোজা বেগম, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, আবদুল জাব্বার, রুনা লাইলা, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, নীলুফার ইয়াসমিন, সাবিনা ইয়াসমিন, ফাতেমাতুজ জোহরা, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, এন্ড্রু কিশোর, এবং আজকের কুমার সানু, উদিত নারায়ণ, অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়, নচিকেতাকে শোনার পরও আমার ভালোলাগার মূল জড়িয়ে থাকে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালিসহ সবধরনের পল্লীগীতির সুরমাধুরী। আমার কাব্যভাবনা ও সাহিত্যপ্রেমকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে চলেছে এই পল্লীগ্রামপ্রীতি, সেই প্রকৃতিপ্রেম। আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গান লেখা শুরু করেছিলাম। প্রায় ৬০ টির মতো গান লিখেছিলাম। কিন্তু গীতিকার হওয়ার জন্য যে পদক্ষেপ দরকার, তা আর হয়ে ওঠেনি।
হয়তোবা সেজন্যই রবীন্দ্রনাথের রচনার মধ্যে তাঁর ” ছিন্নপত্র”-ই আমাকে সবচেয়ে বেশি একাত্ম হতে, ভালো লাগায় বিলীন হতে প্ররোচনা দেয়, বলা যায় বাধ্য করে। হয়তোবা সেজন্যই অন্যান্য আধুনিক কবিদের চেয়ে জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ, আবুল হাসান আমাকে অনেক অনেক বেশি টানে। বারবার টানে। দিনে টানে। রাতে টানে। তাই এসময়ের কবিতাস্রোতের পিঠে সওয়ার হয়ে থেকেও এবং সেই স্রোতে নাও বেয়ে যাওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমি আমার কবিতায় অভিধান দেখে আঙুলে গোনা শব্দের চাইনিজ রেস্তোরাঁ নির্মাণ না করে বেহিসাবের বাগানবাড়ি রচনা করতে বসি। সেখানে নদীর হাওয়া, পাখির গান, চাঁদের আলো, মধ্যরাতের ফিসফিসানি— প্রবেশ পেতে চায়। হয়তোবা পেয়েও যায়।
এত কথা বললাম আমার একজন প্রিয় মানুষের জন্মদিনকে সামনে রেখে। তিনি আমার বাল্য-কৈশোরকালকে এমনভাবে লোকসঙ্গীত-প্রভাবিত করে তুলেছিলেন যে, আমি বাকি জীবনভর সেই প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারিনি। হয়তোবা বিচ্ছিন্ন হতে চাইওনি। তিনি ফেরদৌসী রহমান। যে কোনো অর্থেই বাঙালির গানের পাখি। বাংলার মূল গান লোকসঙ্গীত। লোকসঙ্গীত সম্রাট হচ্ছেন তাঁর পিতা আব্বাসউদ্দীন আহমদ। আর তিনি নিজেই সেই ঘরানার বিখ্যাত শিল্পী। তিনি সকল অর্থেই একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী। রাগপ্রধান গান, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, গজল, লোকসঙ্গীত, ছায়াছবির গান, আধুনিক গান ইত্যাদি সব ধরনের গানেই তাঁর সুদক্ষ বিচরণ। আবার সঙ্গীতশিক্ষক হিসেবেও দারুণ জনপ্রিয়– শিশুদের এই ‘খালামণি’। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ( তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এর উদ্বোধনী গানের শিল্পী। তাঁর গাওয়া ” অচিন গাঁয়ের অচিন বন্ধুরে”,” অকূলে ভাসাইও নাগো মোরে” “সোনাবন্ধুরে কোন দোষেতে যাইবা ছাড়িয়া”, ” ভ্রমর কইও গিয়া”, ” অইনা মাধবী বনেতে বন্ধু ছিল”, “বন্ধু কাজল ভোমরারে”, ” বাবুই চ্যাঙড়ারে”, ” ও মোর বানিয়া বন্ধুরে”, ” ও মুই না শোনং না শোনং তোর বৈদেশিয়ার কথা রে”, ” ও কি গাড়িয়াল ভাই”, ” সে যেন কি করলো রে আমার কি যেন কি দিয়া”, ” পদ্মার ঢেউরে মোর শূন্য হৃদয়-পদ্ম নিয়ে যা যা রে “, ” গানগুলি মোর আহত পাখির সম”, “সে চলে গেছে বলে কি গো স্মৃতিও হায় যায় ভোলা”, “চোখ মুছিলে জল মোছে না”,”নিশি ভোর হলো জাগিয়া”, ” গান হয়ে এলে মন কেন বলে”, ” কথা বলো না বলো ওগো বন্ধু”, ” যার ছায়া পড়েছে মনের আয়নাতে”, “আমি রূপনগরের রাজকন্যা”, ” কি করে তোমাকে ভুলবো, তোমার স্মৃতি আমার জীবন “, “আমি সাগরের নীল নয়নে পরেছি”, “বলাকামন হারাতে চায়”, ” লোকে বলে প্রেম আমি বলি জ্বালা “এবং এমন আরো অনেক জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের শিল্পী তিনি।
তিনি মূলত পল্লীগীতি শিল্পী, ভাওয়াইয়া গানের রানী। কিন্তু “ গানগুলি মোর আহত পাখির সম / লুটাইয়া পড়ে তব পায়ে প্রিয়তম ”-এমন গভীর বাণীর ক্লাসিক /আধা-ক্লাসিক নজরুলসঙ্গীতটি তাঁর মতো আর কে গাইতে পরেছেন? আবার মিষ্টি মেয়ে কবরীকে তিনিই সাদাতে-কালোতে অনিঃশেষ সম্মোহনে ও সৌন্দর্যে প্রথম প্রেমের ব্যঞ্জনায় ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর কণ্ঠে:– ‘‘গান হয়ে এলে মন কেন বলে / সারাবেলা এত সুর নিয়ে/ নিজেরে কেমনে বলো রখি লুকিয়ে!’’
একটি জাতির সংস্কৃতি হচ্ছে তার সমগ্র জীবনযাপন প্রণালী । তার সমগ্র ভালো লাগা। তার অখণ্ড ভালোবাসা। তার সামগ্রিক রুচিবোধ। সেই বিবেচনায় ফেরদৌসী রহমান হচ্ছেন বাঙালি সংস্কৃতির এক দিকপাল । তাঁর আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, কথাবার্তা সবকিছুতেই পরিমিতিবোধ ও সুরুচির ছাপ। আসলে পাণ্ডিত্বের কচকচানি নয়, এই মানুষগুলোর অনুদ্ধত বৃত্তভাঙা সম্মোহনী ভূমিকাই আমাদের সংস্কৃতির নদীটিকে বেগবান করেছে দিনে দিনে । আমাদের রুচিকে নিয়ে গেছে সুরুচির মোহনায়।
একটি জাতির সংস্কৃতির আলো প্রথম নজরে চোখে পড়ে সেই জনগোষ্ঠীর রুচিতে— পোশাক পরিচ্ছদ কথাবার্তা ও আচরণে। ফেরদৌসী রহমান সুরুচির মহানায়িকা। ” পরিশীলিত পোশাক”, পরিশীলিত কথাবার্তা “, ” পরিশীলিত আচরণ ” প্রতিটি ক্ষেত্রেই ফেরদোসী রহমান সোনালি দৃষ্টান্ত। যার কণ্ঠ হারমোনিয়ামের সবকটি বিটকে স্পর্শ করতে পারে, আকাশ ছুঁয়ে ফেলে যার সুরেলা উচ্চারণ, কথা বলার সময় তিনি অনুদ্ধত মোলায়েম ও অপ্রগলভ। খ্যাতিতে যিনি হিমালয়ের চূড়া স্পর্শকারী, তিনি মানুষ হিসেবে সোনালি ধানের শীসের মতো বিনয়ী। ”
খালামনি” হিসেবে তিনি বালক বালিকাদের কাছে মায়ের মতো আবার একই মানুষ বড়দের মাঝে মিষ্টি বোনের মতো। যার ভেতরে সংস্কৃতির আলো থাকে, তিনি আচরণে হোন অমায়িক ; ফেরদৌসী রহমান সেই অমায়িক আচরণের অধিকারী মানুষ যা তাঁকে ” Pleasant personality “—-তে উন্নীত করেছে। কিন্তু তিনি মেরুদণ্ডহীন নন কখনোই। পাকিস্তান আমলে যখন টেলিভিশনের (সম্ভবত) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কপালে টিপ পরা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন যে টিপ পরতে দেওয়া না হলে তিনি গানই করবেন না। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ কোমল স্বভাবের মেয়েটির দৃঢ়তার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি ধর্মকর্ম করেন কিন্তু কোনো ফালতু গোঁড়ামি ছুঁতে পারে না তাঁর খোলা প্রান্তরের সুরে ভরা বেড়াহীন মনটিকে। প্রগতিশীল হওয়ার জন্য তাকে কোনো স্টানবাজি করতে হয় না। যার কাজে ও আচরণে দেশ ও জনগোষ্ঠী উদারতা, সহনশীলতা, সুরুচি, নৈতিকতা, সুর, সংগীত ও সত্যন্যায়ের পথে দৃঢ়চিত্ততার সাথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা বা গতি পায়, প্রকৃত অর্থে তিনিই প্রগতিশীল ব্যক্তি। ফেরদৌসী রহমান তেমনি একজন ব্যক্তিত্ব।
প্রখ্যাত কবি আল মাহমুদ তাঁর ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত একটি অতুলনীয় সুন্দর ও সমৃদ্ধ প্রেমের কবিতার উপসংহারে ফেরদৌসী রহমানকে মিথ হিসেবে ব্যবহার করে বলেছেন,
“ আমার ভাষা এখন এ্যাবড়ো থেবড়ো পথের ওপর
জোড়া মহিষের জ্বালাধরা স্কন্ধদেশ মাত্র
ভাওয়াইয়ার মধ্যস্তবকে নামা ফেরদৌসীর গলা
তার ফুঁপিয়ে ওঠা তরঙ্গে একাধিক লাবণ্যময় মোচড়।
ও গাড়িয়াল ভাই
আমার ভাষা এখন তোর মোষের ফেটে যাওয়া লাল চক্ষু।
চার চারটি চোখের অন্তরভেদী রক্তিম দৃষ্টি
আমার ভাষা।’’
(তুমি, আমার প্রথম উচ্চারণ/ মিথ্যাবাদী রাখাল)
একজন কণ্ঠশিল্পীর জন্য এর চেয়ে স্থায়ী অমূল্য পুরস্কার আর কী হতে পারে! অবশ্য রাষ্ট্রীয় সকল বড় পুরষ্কারই পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তার কাছে ওসব পুরষ্কার তেমন বড় কিছু নয়।