আমার ডেল্টা প্রেম
(রোগশয্যার পাঁচালী)
লুকোচুরির ছোঁয়াছুঁয়ির কাহিনী – (১ম পর্ব)
আমি না থাকি যখন, তখন নাকি ওদের খালি বাড়িতে এসে ঝাড়পোঁছ ভালো লাগে না। তাই ধরে রাখতে চায় আমাকে নৈবেদ্যের উপর বাতাসা করে।
পক্ষ কালের জন্য “অঞ্জনার আশ্রয়ে” থেকে আসতে গিয়ে প্রায় দুমাস থেকে গেলাম একাই। অস্থিরতায় প্রশান্তি পাচ্ছিলাম ওখানে। পুত্র বার বার ফোনে জানতে চাইছিল, কবে গাড়ি পাঠাবে। আমিও পিছিয়ে দিচ্ছিলাম ফেরার দিন তারিখ। ইচ্ছা হলেই একটা গাড়ি ভাড়া করে ফিরে আসতে পারি, কতক্ষণের আর রাস্তা, মিনিট পঞ্চাশেক, পুত্রের না-পছন্দ; ভিকি গিয়ে নিয়ে আসবে।
ওখানে দুটি কন্যা সারাদিন টুকটাক আসা যাওয়া করে। ঘুমভাঙা চা, প্রাতরাশ, দ্বিপ্রাহরিক ভোজন, বৈকালিক আলস্য-ভাঙা চা,ইত্যাদি দিয়ে আমাকে আটকে রাখে। চাবি চাবলা ওদের আঁচলে। খোলে, ঢোকে, সাফ সুরৎ রান্না বান্না, তরকারি মাছওয়ালারা গেটে, কেনাকাটা করে। সব ওরাই। রাত্রের খাবার শোবার ঘরের টেবিলে থার্মোষ্ট্যাট ক্যারিয়ারে রেখে, টেবিল সাজিয়ে রেখে, বাইরের রাত-জাগা আলোগুলি জ্বালিয়ে তারা নীচে নেমে চাবি চাবলা দিয়ে বিদায় নেয়। আমি না থাকি যখন, তখন নাকি ওদের খালি বাড়িতে এসে ঝাড়পোঁছ ভালো লাগে না। তাই ধরে রাখতে চায় আমাকে নৈবেদ্যের উপর বাতাসা করে।
এবারে পনেরো দিন তাই গড়িয়ে দু মাস। এবার ফিরতেই হবে। নাতি এ্যাদ্দিন কোলকাতার বাড়িতে বসেই যন্ত্রপাতি সাজিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছিল। এবার কর্মস্থলে ডাক পড়েছে। বাপ মা দাদাইকে ছেড়ে তিনি চললেন জীবন যুদ্ধে ঝাঁপাতে ভুবনেশ্বরে। যাবার আগে তো আমাকে ফিরতেই হবে। নীড় আমাদের শূণ্যই পড়ে থাকবে, তিনটি প্রাণী দুটি ফ্ল্যাটে পড়ে থাকবো নিঃশব্দে যার যার সময় যাপনে। সারাদিন আমি একা প্রেতের মত এঘর ওঘর করবো। পুত্র পুত্রবধু তবু কর্মস্থলে সারাদিন কাটাবে। আমি? এক যক্ষবুড়ো বিন্দু বিন্দু সময় গুনবো। কখনো সজ্ঞানে কখনও আচ্ছন্নে৷ অবধারিত বাস্তবকে এড়ানো যাবে না। যাই, নাতির সাথে একই শয্যায় শুয়ে থেকে গায়ে গায়ে করে নিই দুটো রাত, ওর যাবার আগে। তাই ফিরে আসা।