আমার ডেল্টা প্রেম
(রোগশয্যায় আমার পুরোণো শরীর)
লুকোচুরির ছোঁয়াছুঁয়ির কাহিনী – ৪র্থ পর্ব
আমাকে একটা আকাশ ছোঁয়া ঘর থেকে জানালাবিহীন ডরমিটরির এক শয্যায় পাঠিয়ে দেয়া হল কাল সন্ধ্যায়। আমি নাকি বিপন্মুক্ত, তাই। সব সেবা আছে এখানেও, যুদ্ধের প্রহরারত সৈনিকেরা সদাসতর্ক জীবনপ্রবাহের রাষ্ট্রের সীমানারক্ষীর মত, নিশিদিন। কোমল শয্যায় আমি সুরক্ষিত।
তবু সেই ঘুমের মগ্নতা কৈ? যেন সোনার খাঁচায় থেকেও আমার এক অবদমিত আকুলি বিকুলি। এখানে ছয় জন উপস্থিত অসুস্থর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশস্ত জায়গায় আছি প্রতিবেশী হয়ে। তবু একাকীত্বে নিঃসঙ্গ মন, সঙ্গী আকাশের জন্য বিচলিত।
বুঝি অনেক আগে থেকেই, অনুভব করলাম বাড়ির গ্রীলঘেরা উন্মূক্ত ব্যালকনিতে টবে আদুরে ফুলের লতা কেন গ্রীলের বাইরে তার লকলকে গলাটি বাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাওয়ায় দোলে, সাজানো বাহারী খাঁচায় সাধের চন্দনা কেন ডানা ঝাপটায়।
তাহলে বিজ্ঞানের ধ্রুব সত্য, আমরা বস্তুরা যাদের ভর-এলাকায় বাস, তারা মাধ্যাকর্ষণের অমোঘ টানের শক্তিতে গ্রহের পিঠে ফিরে আসতে হবেই, আপেলটাকে আছড়ে পড়তেই হবে।
কিন্তু মনটাই বলি আর হৃদয়ই বলি, সে কেন আকাশপিয়াসী? সে কেন বুভূক্ষু এজগতের রূপ রস গন্ধ মায়া মোহ মমতা স্নেহ ভালবাসায় পূর্ণ থেকেও আকাশের ক্ষিদেয় সদাচঞ্চল? তাহলে কি আমার বস্তু-দেহটা মাধ্যাকর্ষণের অধীন আর আমার অবস্তু মন-প্রান আরেক মহাশূণ্য ব্রহ্মান্ডের এক তীব্র আকর্ষনের ডোরে বাঁধা?
আমিই হয়ত সেই মিসিং লিংক, যে মহাবিশ্ব সৃষ্টির কাল থেকে আজ এই মুহূর্ত পর্যন্ত সমগ্র সৃষ্টির মহাকালক্রমকে এক সূত্রে গ্রথিত করে অস্তিত্বের পতাকা উড়িয়ে প্রাণের স্রোত অব্যাহত রেখেছি সতত গতিময় চঞ্চলতার কম্পনে। আমিই কি সেই সূত্র যে ঘোষনা করে, অস্থিরতাই সৃষ্টির মৌল উপাদান! এমনকি কৃষ্ণগহ্বরেও চঞ্চলতা বিদ্যমান নইলে আলো সেখানে অন্ধকার হয় কি করে?
স্থবিরতা হল নিশ্চলতা, অনাসৃষ্টি, চঞ্চলতাই সৃষ্টির অস্তিত্ব।
আমি চঞ্চল, তাই মহাবিশ্বই আমি চাই আমার সঞ্চরনের জন্য।
অহময়ম্ভো। সো’হম।
আমিই সেই, যাকে আমি খুঁজে বেড়াই।
আমি চাই,
সব্বাই নীরোগ সুস্থ সুখী থাকুন।
সকল জীবজগত আনন্দময় হোক।