আজ কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন – ২১ জুন – ২০২১

By Published On: June 21, 2021Views: 403

নির্মলেন্দু গুণের জনপ্রিয় উক্তি

আজ কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন, ২১ জুন ১৯৪৫, ৭ আষাঢ় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন। কবি তাঁর জন্মতারিখ হিসেবে ৭ আষাঢ় বলতে অধিক পছন্দ করেন।
নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা; এ-বিষয়সমূহ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২), কবিতা, অমিমাংসিত রমণী (১৯৭৩), আমার কণ্ঠস্বর, রক্ত আর ফুলগুলি (১৯৮৩), ১৯৮৭ (১৯৮৮), ইত্যাদি । তিনি বাংলা একাডেমী কর্তৃক ১৯৮২ সালে পুরস্কার লাভের পাশাপাশি, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন
নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। তিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত, একজন বাংলাদেশী কবি এবং চিত্রশিল্পী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন।

নির্মলেন্দু গুণের জনপ্রিয় উক্তিগুলো নিয়েই তাঁর জন্মদিনে নান্দিক এর আয়োজন।
তাঁর কবিতার অনেক উক্তি বহুল পরিচিত এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নির্মলেন্দু গুণের এসব উক্তিগুলো বরাবরই মানুষের মনকে ছুঁয়ে গেছে এবং তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে ।

ছবি: সংগৃহীত

নির্মলেন্দু গুণের উক্তিগুলোকে চারটি (৪) ভাগে ভাগ করে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে ।

জীবন ও জীবনবোধ নিয়ে উক্তি:

“এত যে আমি ওখানে যাই
ওখানেই পাই কাছে
ওইখানে তার পায়ের কিছু
চিহ্ন পড়ে আছে।”

“ হয়তো আবার একাও থাকবো,
কিন্তু সত্যি বলছি একটা সম্পূর্ণ দিন আমরা কিছুই
করবনা।।এই হেমন্তে যে নদী মৃত্যুর প্রস্তুতি নেবে
আগামী শীতের,তার মতো আমরাও প্রস্তুত হবো
আমাদের একটা সারাদিনের জন্যে, এই হেমন্তে। ”
 
“কবে থেকে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা,
তার বুক থেকে খসে পড়েছে কত তারা।
বেঁচে থাকলে আরো কত তারাই খসবে,
তা নিয়ে আকাশ কি দুঃখ করতে বসবে? ”

“দু’একটি বিষণ্ণ ঝিঁঝিঁ ছাড়া আর কোনো গান নেই,
শব্দ নেই, জীবনের শিল্প নেই, নেই কোনো প্রাণের সঞ্চার।
এ শহর অন্ধ করে তুমি চলে যাচ্ছো অন্য এক দূরের নগরে,
আমি সেই নগরীর কাল্পনিক কিছু আলো চোখে মেখে নিয়ে
তোমার গন্তব্যের দিকে, নীলিমায় তাকিয়ে রয়েছি। ”
 
“যা পেতে ইচ্ছে করে, আমি তাকেই বলি সুন্দর ।
প্রত্যেকটি প্রাণেরই এক-একটা স্বতন্ত্র চেহারা থাকে ।
সুন্দরের কোনো নির্দিষ্ট চেহারা নেই, সে আপেক্ষিক ! ”

“রাত যত বাড়ে,
রক্তে-মাংসে, ত্বকের লাবণ্যে, হাড়ে
আমি টের পাই তোমার আহ্বান।
মন বলে চাই, আরও চাই,
পেতে চাই কামতপ্ত মুঠোর ভিতরে।
লেহনে-মর্দনে, সঙ্গমে-শয্যায়
আমি শুনি শুধু ঘুম পাড়ানিয়া গান।”

“অমিতব্যয়িতা আমার স্বভাব, ব্যক্তিগত জীবনে এবং স্বভাবতই কবিতাতেও। কবিতা কী? জানিনে। ছন্দ কাকে বলে – ভালো করে বুঝিনে। কাব্য বিচারের মানদন্ড কী? – আমি নিরুত্তর। আমি শুধু উড়নচণ্ডি প্রেমিকের মতো অবিবেচক, যুক্তিহীন এবং ব্যক্তিগত। আমার কাছে কবিতা তা-ই, আমি যা লিখি। অন্যের কাছে সেটা গল্প হলেও ক্ষতি নেই, এলজাব্রা হলেও না।”
 
“ আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম,
এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি ”
“অপরের ব্যথা, কতো ব্যর্থতা
পায়ে দলে চলি সমুখের ডাকে;
গতিচঞ্চল জীবনের বাঁকে
তবু বহু ভুল থেকে যায় জানি ।
সতর্ক চিতে যতো যতি টানি,
মানুষের লাগি যতো গীত ভানি
কাল সে আসিবে, মুখখানি তার
যতই দেখিব ভালোবাসিবার
বাসনা জাগিবে চিতে, আসিবে না
জানি, কাল চিরকালে ধরা দিতে।” –
– ‘কাল সে আসিবে’ 
 
“ এরকম উন্মোচনে যদি তুমি অনুরাগে মুর্ছা যেতে চাও
মূর্ছা যাবে,জাগাবো না,নিজের শরীর দিয়ে কফিন বানাবো ”

প্রেম – ভালোবাসা ‍নিয়ে উক্তি:

“ডাকিব না প্রিয়, কেবলি দেখিব
দু’চোখে পরান ভরে;
পূজারী যেমন প্রতিমার মুখে
প্রদীপ তুলিয়া ধরে ।” – স্মরণ

“প্রাণে জ্বলে ওঠে গগনচুম্বী
বাসনা ঢেউ,
তোমাকে পাবে না পরান ভরিয়া
আমি ছাড়া কেউ ।” – আত্মকেন্দ্রিক স্বপ্ন
 
“ পাগলী আমার ঘুমিয়ে পড়েছে
মুঠোফোন তাই শান্ত,
আমি রাত জেগে দিচ্ছি পাহারা
মুঠোফোনের এই প্রান্ত ।
এ কথা যদি সে জানতো ?
আমিও দিই না জানতে,
কবির প্রেম তো এরকমই হয় –
পান্তা ফুরায় নুন আনতে ।
হে চির-অধরা আমার,
তুমি তো সেকথা জানতে । ”
 
“ ‘ভালোবাসি’ বলে দেব স্ট্রেটকাট, আবার যখনই দেখা হবে ”

“ শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
অহংকারে মুছে যাবে সকল দীনতা ”
 
“ শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন ”
“ শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
স্পর্শসুখে লিখা হবে অজস্র কবিতা ”
 
“শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
তারপর হব ইতিহাস”

“আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই
বলে দেব স্ট্রেটকাটঃ ‘ভালোবাসি’।
এরকম সত্য-ভাষণে যদি কেঁপে ওঠে,
অথবা ঠোঁটের কাছে উচ্চারিত শব্দ থেমে যায়,
আমি নখাগ্রে দেখাবো প্রেম, ভালোবাসা, বক্ষ চিরে
তোমার প্রতিমা। দেয়ালে টাঙ্গানো কোন প্রথাসিদ্ধ
দেবীচিত্র নয়, রক্তের ফ্রেমে বাঁধা হৃদয়ের কাচে
দেখবে নিজের মুখে ভালোবাসা ছায়া ফেলিয়াছে ”
 
“ হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে।
আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা, দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক ”
 
“ ভালোবাসা, অর্থ ও পুরস্কার আদায় করে নিতে হয় ”
“ তুমি লহ নাই ভালোবাসিবার দায়,
দু’হাতে শুধুই কুড়িয়েছো ঝরা ফুল ।
কৃষ্ণচূড়ার তলে,আমি বসে একা
বুনিয়াছি প্রেম ঘৃণা বুনিবার ছলে । ”

“আমরা দুজনে রচনা করেছি
একে অপরের ক্ষতি,
প্রবাসী প্রেমের পাথরে গড়েছি
অন্ধ অমরাবতী।”

“কতবার যে আমি তোমোকে স্পর্শ করতে গিয়ে
গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন।
তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও
কতবার যে আমি সে কথা বলিনি
সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন।”

“ একটা সারাদিন কিছুই করবনা আমরা,
না কিছুই না।
হয়তো সারাটাদিন আমরা পাশাপাশি
বসে থাকব,অনন্তকালের মতো । ”
 
“হয়তো সহজ কাছে আসা, তাই কাছে আসি,
হয়তো সহজ ভালোবাসা, তাই ভালোবাসি।” –
– ‘কিছুই সহজ নয়’ 

“ভুলে যাব সব সময়-নিপাতে
স্মরণে জাগিয়ে প্রেম,
আঁধারে তখন জ্বলিবে তোমার
চন্দনে মাখা হেম।” –
– ‘স্মরণ’ 

“নাক নেই বলে গন্ধ পাইনি বকুল-শেফালি ফুলের,
ত্বক নেই বলে স্পর্শ পাইনি নারীর নরোম চুলের ।”
 
“হাত নেই বলে তোমার শিকল পরতে পারিনি হাতে,
পদহীন বলে পথের পাথেয় হারিয়েছি বেদনাতে ।”
 
“মন আছে বলে মনের শিকল বনের পাখির পায়ে
পরায়ে পরায়ে কেটেছে জীবন, ঠেকেছি প্রেমের দায়ে ।” –
– ‘দায়’ 
 
“আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,
মাথার চুল মেঘের মতো উড়ুক ।
আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,
স্বপ্নগুলো ছায়ার মতো ঘুরুক”
“শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়।
শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
তারপর হব ইতিহাস।”
 
“হাত বাড়িয়ে ছুঁইনা তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করিনা
এককে করি দুই ।”
– ‘যাত্রাভঙ্গ’ 
 
“প্রাণে জ্বলে ওঠে গগনচুম্বী
বাসনা ঢেউ,
তোমাকে পাবে না পরান ভরিয়া
আমি ছাড়া কেউ।” –
‘আত্মকেন্দ্রিক স্বপ্ন’ 
 
“আমি আর কোনো নবযাত্রার আয়োজন করবো না।
বাকি সময়টা আমি তোমার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে চাই।”

বিঃদ্রঃ: উপরোক্ত উক্তিগুলো বিভিন্ন বাংলা ব্লগ এবং তাঁর গ্রন্থসমূহ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।
Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop