ফারহানা তাছমিন হ্যাপি – এর দুটি কবিতা

By Published On: May 16, 2021

উদাস সৌন্দর্য

আমার শূন্যতার কোন মৃত্যু নেই
কারন আমি তাকে লালন করি ।
তোমাদের সাথে আমার আত্মার কোন মিল নেই
মিথ্যার মেলবন্ধনে কিইবা পাবার থাকে ।
তোমাদের উদ্দেশ্যে থাকুক আমার উদাস হাসি
মিথ্যার আড়ালে শুধু মুখ হাসে
সুন্দরকে বাঁচাতে হলে
সত্য প্রকাশের সাহস নিয়ে পথ চলতে হয় ।
আমার গৃহের চারটি দেয়াল
পূর্ণতার ভিক্ষায় সাজে না
আছে সেখানে কিছু উদাস ছবি
কি মুগ্ধতায় রং ছড়িয়েছে
আমার গৃহের চারটি দেয়াল ।
শূন্যতা যদি আমার আপন রং হয়
তবে তাকে মিথ্যার রং দিয়ে ঢাকতে গেলে
দম বন্ধ হয়ে আসে
নিজের কাছে থাকে কেবল বদ্ধ সমাধি
আমি চাইনা অমন গুমোট অন্ধকার ।
সব সৌন্দর্যের কি পূর্নতা মেলে ?
আমি যে এক সাহসী অনিয়ম
তাইতো শূন্যতায় সাজিয়েছি আমার চোখ, ওষ্ঠ, বক্ষের অন্তস্থল, আমার চারটি দেয়াল।
কোন এক কৈশোরে মায়ের কোলে মাথা রেখেছিলাম
মা আমাকে সোনার প্রাসাদের গল্প শুনিয়েছিলেন ।
আমার উদাসমাখা অপূর্ণ হাসিতে
মা সেদিন খুব অনুতপ্ত হয়েছিলেন ।
সোনার প্রাসাদেও থাকে যুদ্ধ, বিরহ, বেদনার মৃত্যু।
আমার পথে ছিল, একটি গাছ, একটি চিকন মেঠো পথ
আর না পাওয়ার মতো করে পাওয়া একটি গৃহ বন্দি জীবন।
অতঃপর সেই গাছতলা, সরু মেঠো পথ, আর গৃহটাকে
আমি সাজিয়ে ছিলাম নিজের মতো করে
ছিল অনেক অনেক অপূর্ণ স্বপ্ন।
তবে কোন সমাধি ছিল না মোটেও
ছিল না কোন গুমোট অন্ধকার
সেখানে ছিল মুগ্ধ করা উদাস সৌন্দর্য ।
আমার হাসিতে তোমরা, আজন্ম মুগ্ধ হয়ে থাকবে
তোমরা চিনতে শিখে যাবে
এতো পরিপূর্নতায় মানুষের মাঝে থাকে এক অতৃপ্ত অস্তিত্ব।
আমার চির প্রস্থানের পর
তোমরা আমাকে মনে করে নয়, আমার শূন্যতাকে ভালোবেসে দু ফোঁটা অশ্রু ফেলবে
আমার পূর্নতা ওখানেই।
তোমাদের মনে পড়বে
আমি সেই উদাস শৈশব
আমি সেই উদাস স্নেহ, তোমাদের দিকে বাড়িয়ে দেওয়া খোলা দুটি হাত
আমি সেই উদাস ভালোবাসা
আমি সেই উদাস অতৃপ্ত প্রেম
আমি চিরায়িত নিয়মের, সেই উদাস অনিয়ম
আমি সেই উদাস হাসি
সত্য প্রকাশিত অবিচল সেই উদাস সৌন্দর্য ।

মানুষ আর প্রকৃতি

পাহাড়ের বুকে ঝরনা থাকে , তা যদি পাহাড়ের কান্না না হয়
তবে আমার চোখের জল‌ও কান্না নয় , আমি প্রকৃতি।
পাহাড় তার হৃদয় বিদীর্ণ করে জলধারা ব‌ইয়ে দেই
পাহাড় চাই , তার ত্যাগের একটি সার্থকতা থাকুক
তার বুকে একটি নদী থাকুক ।
বুনো ফুল দের বাড়ির আঙিনায় স্থান মেলেনা
তবে তোমার হৃদয়ে আমার স্থান মেলেনি
তাতে তুমি দোষি ন‌ও , তুমিও প্রকৃতি।
বুনো ফুলেরা চাই , তাদের ত্যাগের একটি সার্থকতা থাকুক
আঙিনায় স্বযত্নে গোলাপ ফুটুক ।
নদী একুল ভেঙে দিয়ে ওকুল গড়ে
নদী যদি কলঙ্কিত না হয়
তবে শোভনতার বেড়া ডিঙিয়ে , তোমাকে আমি চেয়েছি
তবে আমিও অশোভন ন‌ই , আমিও প্রকৃতি।
ঝড়ো বাতাস মুহূর্তে সমস্ত কিছু এলোমেলো করে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়
সেও চায় এই ধ্বংস লীলার মাঝে একটি সৃষ্টি থাকুক
এবার সে সদ্য জন্ম নেওয়া সৃষ্টির মাঝে , আদুরে বাতাস হবে।
শেকড় হীন সৌন্দর্য কে , কেউ কখনো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই না
মানুষ আর প্রকৃতি চায় , তার ত্যাগের বিনিময়ে একটি সৃষ্টি থাকুক ।
তাইতো অতি সুন্দর‌ও মাঝে মাঝে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়
তাইতো বিষাদের সুরে মুক্তি খুঁজে নেয় , মানুষ আর প্রকৃতি ।
তাদের যদি ক্ষমতা থাকতো , তারা এই পৃথিবীকে শীতল আদরে মুড়িয়ে রাখতো
কিন্তু ঐ যে মানুষ আর প্রকৃতির দ্বৈত সত্তা
একদিকে ধ্বংস করে , অন্য দিকে সে সৃষ্টি করে
যে চোখ দিয়ে ভালোবাসে , এক‌ই চোখে আবার ঘৃনাও থাকে।
দুটোই তাদের অস্তিত্ব , তাদের লক্ষ্য এক‌ই , বিনিময়ে সৃষ্টি হোক।
কেউ পারেনি এই পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য কে
চিরদিন শীতল আদরে মুড়িয়ে রাখতে।
আমাদের নিয়ন্ত্রণ হীন অক্ষমতা থেকেই , আমাদের সৃষ্টি
মানুষ আর প্রকৃতি।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop