অনুরাগের জানালা
অনির্ধারিত ফাল্গুনে একবার তোমাকে ফোটাতে চাই
তাই বসন্তের বাতাস হয়ে মাঝে মাঝে নক করি দ্বারে
জানালার ফাঁক দিয়ে ভেসে আসে গুনগুনানি
‘লারে লা, লারে লা, লারে লা—————- ’
উৎসাহিত আমি,— মুগ্ধডানা মৌমাছি হই—
হাতের কাছেই নন্দনকানন—গন্দমফলের ঘ্রাণ
গন্দমগাছে ঝুলে থাকা নন্দনের নীড়
সে-নীড়ে গুঞ্জন জাগিয়ে ফালগুনের গান গাই,
উড়ে বেড়াই- অনুরক্ত জানালার আশেপাশে
মৌমাছি থামলে–ভেতর থেকে ভেসে আসে গান—
ও জানালা, দরোজার সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন?
ভালোবাসা ঘুমিয়েছে জেগে আছি আমি
ভালোবাসা ঘুমিয়েছে—-জেগে আছি আমি
আমি কি জাগাবো তাকে
চুমু দিয়ে ঘুমন্ত অধরে?
যদি জেগে যায়—দেখতে পাবো না তার
হাঁটুর ওপরে থাকা নৃত্যগর্ভ তিল
কে বলে সুন্দর শুধু গৌরবর্ণ গাল আর
সোনারং ঊরু?
আহা তিল—-সোনালি আকাশে
একখানা কালোবর্ণ চাঁদ!
চাঁদমুখে চুমু দিয়ে প্রবেশিতে পারি-
ভালোবাসার সপ্তম জান্নাতে-
যেখানে উধাও হয়
জগতের যাবতীয় বিষয়ীচেতনা
আর শিরায় শিরায় শুধু ছলকে ওঠে
সুনেশায় শিহরনে নিবিড় পুলক!
কিন্তু চুমু দিলে চাঁদে যদি জেগে ওঠে
সমস্ত আকাশ
যদি অপ্রসন্ন হয়,
আমার হবে না যাওয়া স্বর্গের বাড়ি
আমার হবে না দেখা চাঁদ চেয়ে চেয়ে
অতএব সে ঘুমাক্—-তাকে জাগাবো না
ভালোবাসা ঘুমিয়েছে-জেগে আছি আমি।
শাশ্বতিকী
ডাকে শোনো ওই রঙকরা দিন রাত
রঙ দেখে তার ঘরছাড়া ইউরোপ
ল্যাটিন প্রাণেও প্রসারিত সেই হাত
যেখানেই পায় ঝোপ বুঝে মারে কোপ।
পৃথিবী ভোলে কি আঁধারের সেই বন-
আলোর আশায় উদ্গ্রীব শত চোখ?
পূবের দু’হাতে ভোরের উদ্বোধন-
সকল দুনিয়া আলোর উৎস হোক!
ভুলিনি এবং ভুলবো না কোনোদিন
যুগ-সূচনার সোনাঝরা সেই বাঁক
প্রযোজিত আলো হলে হোক সুরঙিন
আমাদের দিন শপথে শাণিত থাক্।
তোমার দুচোখে সিন্ধুর অববাহিকা
আমার দুচোখে তাজমহলের ছবি
মঞ্চে নগ্ন হোক্ না নায়ক নায়িকা
আড়ালে দাঁড়িয়ে বেহুলাদিনের কবি।
তুমি
তুমি তো সেই অদ্ভুতী চাঁদ
দুলিয়ে গেছো শীতশাসিত জল
যদিও আজ কৃষ্ণপক্ষ
জোছনা কুড়ায় মুগ্ধ বুকের তল।
প্রেম অথবা চাপা-পড়া উপন্যাস
তোমার কাছে এক কপি, এক কপি আমার কাছে
আর কারও কাছে এর কোনো কপি নেই; ছিলও না;
আর নক্ষত্রের বর্ণমালায় রচিত পান্ডুলিপিখানি যার
শুরুর ও শেষের পাতাগুলো ছেঁড়া, সংরক্ষিত
নীল আর্কাইভে যেখানে পৌঁছাতে পারে না,
এমনকি থোক বরাদ্দে কিম্বা ইউনেস্কোর যৌথ
অর্থায়নে গৃহীত সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প।
মাননীয় মন্ত্রী, সচিব মহোদয়, যথেষ্ট ডিসক্রিশনারি পাওয়ার
আর বিরাট অ্যালোকেশন অব বিজিনেস হাতে নিয়েও,
হায়, কত সীমিত আপনাদের ক্ষমতা !
ছেঁড়া উপন্যাসটিও পুনঃপ্রকাশ করা যচ্ছে না;
দানু দাসের ‘রুবিনা’-এর মতো চাপা পড়ে আছে
পরাক্রান্ত চাপে;
আর আমার হৃদয়-কাশ্মীর থেকে রক্ত ঝরছে অহরহ–
অনুভব-ঝিলমের জল ছুঁয়ে আসা হাওয়া—
মর্নিং ওয়াকের ভিড়ে,
নির্জন সন্ধ্যায়,
সহবাস-উত্তর অন্ধকারে
এলোমেলো করে দিয়ে যায় আমার অন্তরঙ্গ অস্তিত্ব!
হে বিধাতার অদ্ভূত উপন্যাসের নায়িকা,
কারখানার দুর্গন্ধশাসিত ফ্ল্যাটে শুয়ে
তুমি কি কারও হৃদয়-ক্ষরণের কোনো ঘ্রাণ পাও? পাও?