গুচ্ছ কবিতা – শৈবাল আদিত্য

By Published On: August 4, 2021

০১. মদ্যময় গদ্য / শৈবাল আদিত্য
(আমাদের শক্তি, আমাদের রুদ্রের প্রতি)

এক দীর্ঘ জরিপে দ্যাখা গ্যাছে, ন্যাকা মানুষমাত্র
আর পৃথিবীর তাবৎ একা মানুষ কমবেশী মাতাল অকপটে৷
তবে কষ্টকামড় সদ্যপায়ীরা ভবে প্রকৃত মদ্যপায়ী,
অনবদ্য সব পদ্যস্রষ্টারাও খাঁটি মাতাল বটে; ভূ-তটে!

চেতনার বুঁদবুঁদে এবড়ো-থেবড়ো একান্ত শোকে
স্ব-হন্তারকে ডুব দিয়ে খুব সম্ভাবনার গেলাসে…
সে ধার আঁধার সরাবে বলেই শরাবে মদিরা সাকীবিহীন৷
নাকি যাপনকে রেখে জীবন আপন ক’রে স্বপ্ন-বপন ভালোবাসে?
মাতালেরা কখনো বাবা-তাল হয়না, তবে তিল থেকে
তাল হয়; ত্রিতালে তলাহীন, বলাহীনই গহীন বনে যায়…
তখন মাতলামীর মত আঁতলামীতে কী যায় আসে
অনায়াসে শক্তিসমূহ স্ব-ঘোষ্য ঈশ্বর ব’নে যায়!

বদলের ক্রোধে টলে ওঠে সদলে পা, বলে ওঠে নতুন কথা!
মাতাল যা তাল আসে মাথায়…শুধু স্বপ্ন হাতায় হায়
ধু-ধু বুক তার রুদ্র-মুক্তার মত অবহেলায় প্রবঞ্চনায় ঝিকমিক—
ঠিক পরক্ষণে সামাজিক ব্যাকরণে ভাঙন ধরায়, এই ধরায়…

০২. তুই কি করে বুঝবি, মেয়ে?

তুই কি করে বুঝবি মেয়ে
এই বেদনা দুঃখ-গাঁথা কষ্ট কবির?
তাকে ভীষণ কষ্ট দিয়ে নষ্ট করে
রূপোলী চাঁদ, ঝিঁঝিঁর ডানা, ডাহুকের শিস্,
মেঘের শাড়ি, রঙ বেরঙের প্রজাপতি,
লজ্জা পেয়ে কুঁকড়ে যাওয়া গাছের ছায়া!

কবির কি আর দায় পড়েছে
কষ্ট ছাড়া অন্য কারো শিকার হতে!
সবুজ বনের হলুদ ফুল তাকে ভীষণ
নষ্ট করে… সারি সারি রাধাচূঁড়ার
মৌন মিছিল, ঘর না ফেরা বাঁশুরিয়া৷
নষ্ট করে… নষ্ট করে… নষ্ট করে…

সেই কবিটাই প্রেমিক হল অবশেষে
পাখির কাছে নদীর কাছে প্রেম না পেয়ে…
তুই কি করে বুঝবি মেয়ে
এই যাতনা বিরহের গান নষ্ট কবির!

তুই কোনদিন বুঝবি মেয়ে… অবুঝ মেয়ে??

০৩. বন্ধুতলার গান

বন্ধুতলার অলস দুপুর; ধোঁয়ার
মত স্বপ্ন ওড়ে৷ গানের সুরে উড়ে উড়ে
নিজেই পোড়ে প্রেমিক; কামুক কিংবা গোঁয়ার
আর যে সকল পরানবন্ধু কী নেশাতে উল্টো ঘুরে
রেখেছিলো মনন বাজী…পাখির ডানায়
ছড়িয়ে দিয়ে শব্দরাজি; ঘাসের কাব্য!
সুনির্বাণের ঢেউয়ের তালে রুগ্ননদী উঠলে ভরে কানায় কানায়…
পিছুটানের সুতো ভোকাট্টা যদি…কমবে মোটেই হৃদয় নাব্য!
ছেলেবেলার কৌতুহলে চিরসবুজ প্রকৃতটাকে জানতে,
নিয়ম ভাঙার মত্ত খেলায় টগবগে পয়লা যৌবনে—
পিছু ডাক দ্যায় ফ্রয়েড, কোপার্নিকাস আর দান্তে৷
হাতের তালুয় অন্ধগলি; আগুন জ্বেলে রেখেছে তবু মননে…

সন্ধি শেষে মুদ্রাবন্দী হয়ে যাওয়া বন্ধু কিছু বাদে
আর সকলে লেগেই আছে স্বপ্নমাখা আশার চাষাবাদে…

০৪. ইটস্ এ গেম

নিজের সাথেই ক্রীড়ারত পরাজিত খেলোয়াড়…
বোকামীতে সুলভ সম্ভাবনার মাথা খেলো আর
বন্ধ গুহায় অন্ধ মাছিরা খায় খাবলে খাবলে
কৌশলে তাকে এবং তার কৌশল
ভাঙার খেলা৷
তার সে উদ্ভট ক্রীড়া; তোমরা কানামাছি ভাবলে!
তাকে তো দ্যাখোনি কেউ, সেই রাত্রি নেভানোর বেলা
জলের জোছনা মুছে ঠোঁটে ফুটিয়েছিল রোদ্দুর!
আত্মমগ্ন ক্রীড়াশিল্পী; দু’চোখের সীমানা যদ্দুর…
আজব আনন্দ-ধ্বনি ছোঁড়ে৷ তবু প্রচল দেমাগ
তাকে একা করে; একা। দূর্বোধ্য সম্মিলনের ছলে!
খেয়ালী খেয়াল পাঁজরে জমিয়ে বোধনের দাগ
ক্রীড়ারু ‘হার’ করে মনিহার। বোঝে সে কাকে বলে
‘পরাজয়’ বোঝেনা মানুষ তাই জানেনি দূর্মুখ…
বিজিত জিতেছিল অমরত্বের সুখের অসুখ!!

০৫. কবরের গল্প

একটি মানুষ লম্বালম্বি হয়ে শুয়ে
তার চতুর্দিকে চকচকে মোজাইক
বুকে মরা পাতা, পচন কলার রুয়ে
চৌদ্দ নখে যে জাপটে ছিল বামদিক
শেষ সঙ্গীর দেহেও এ কোন পচন!
বাকী রইলো ঝরা ফুল; শ্যাওলা; ঘাস
ছ’বছর ধরে নেই সে মুখে বচন
চারপাশে কত কথা, কত দীর্ঘশ্বাস৷

শ্বাসহীন তার শুয়ে থাকা অবিরাম
অক্লান্ত! মৌনতা তাকে ঘিরে থাকে বসে
আছে হৃদয়ের ক’টি খাতায় যে নাম
নিঃসঙ্গ ফেরারী— তার স্বপ্নগুলো ও সে!

তার ঘোলা চোখ; ঘুম যে চোখে আসে না
হাসতে চায় ফের— পাথর কি হাসে? না৷

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop