সে ও তার শুয়োর (পর্ব-১২) – জাহিদ সোহাগ

By Published On: October 16, 2021

শেষবারের মতো সে অফিসে যায়। বেশ কবার ফোন করার পরও নিজের অসুস্থতার কথা বলে সে তার অনুপস্থিতির দিন-মাস এত বাড়িয়ে ফেলেছে যে, তার আইডি কার্ডে দরজাও খোলেনি।
গেটে নতুন দারোয়ান।
হক সাহেবর কাছে যাবার কথা বললে দারোয়ান কপাল কুচকে এমনভাবে জানতে চায় যেন সে প্রতিটি সিটে যারা বসে আছে তাদের প্রত্যেকের থুতনি তুলে দেখছে কোন হক সাহেব।
অথচ এই অফিসে কীই না ছিল হক সাহেব?
অগত্যা নিজের ভিজিটিং কার্ড হাতে দিয়ে এমডির কাছে যাবার অনুমতি চাইতে হলো।
এমডি তাকে দেখে, জর্জেট শাড়ি, ঠোঁটে গাঢ় তামাটে লিপিস্টিক, চেহারায় পুরুষ ঘষা দেখে বিস্মিত।
আপনি এখানে কেন? কীভাবে?
নিজের পরিচয় দিয়ে সে বলে, স্যার, আমি হক সাহেবের ডিপার্টমেন্ট কাজ করতাম। মানে পারেচেজ। পাশাপাশি শ্রমিকদের ডিল করতাম।
এমডি তার ক্লিভেজের দিকে চোখ রেখে– যেটা সে ইচ্ছে করেই উন্মুক্ত রাখে– বলে, কিন্তু আপনি, আপনি তো?
সে বলে, আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এমনটা হতে পারে, হয়ও। আমি একই সঙ্গে নারীর মন ও শরীর বহন করছি।
তার মানে আপনি হিজড়া হয়ে গেছেন?
তা বলতে পারেন, তবে হিজড়াদের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখার সুযোগ আমার এখনও হয়নি।
‘আচ্ছা’ শব্দটা উচ্চারণ করে এমডি নীরবতায় ডুবে গেলেন। এর অর্থ সে জানে, তার সালাম জানিয়ে বিদায় নেবার সময় হয়ে গেছে। তবু সে ইতস্তত করে বললো, আমি আসলে আমার কাজের জন্য আসিনি।
এমডি কী ভেবে বেল বাজালো। পিয়ন এলে সে চায়ের কথা বলে।
আচ্ছা বলুন কেন এসেছেন? তবে হাতে বেশি সময় নেই।
আমি আমার স্ত্রীর জন্য একটা চাকরি চাই।
এমডি বিস্মিত হয়ে বলে, সে কি ছেলে, না মেয়ে?
মেয়ে এবং সন্তান-সম্ভবা।
দেখুন এসব গাঁজুখুড়ি কথায় আমি নেই। আমি উঠবো।
তিনি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি বলে যাচ্ছি, আপনি রিসিপশনে বসে চা খেয়ে যান।

অফিস থেকে বাইরে এসে দেখে ভীষণ রোদ, হেলে পড়া দুপুরের এই রোদ তার মাথায় লাগলে মাইগ্রেনের ব্যথা দড়ি ছিঁড়ে ক্ষ্যাপা ষাঁড় হয়ে উঠবে।
একটা রিকশা নিতে পারতো। হুড তুলে রোদ বাঁচানো যেতো। কিন্তু সে রিকশা ডেকেও না বলে দিল। রিকশাওয়ালার হাসি গলিয়ে এক গাদা লালা তার শরীরের মেখে গেল।
কপালের উপর হাত তুলে কিছুটা ছাউনি তৈরি করে শিল্পকলার সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে মৎস্যভবন পার হয়ে ফুটপাথে উঠবে।
হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হল, ওপারের ফুটপাথে তাকিয়ে সে স্পষ্ট দেখতে পেলো কড়া রোদ বুট জুতা পরে মচমচ করে হাঁটছে।
সে নিজের কপাল থেকে হাত নামিয়ে চুলগুলো টাইট করে পেছনে রিবন দিয়ে বেঁধে তার প্রসারিত কপাল উন্মুক্ত করে দিল। যাতে রোদ ভালোভাবে লাগে।
অবশ্য এর আগেই মাথার বাম পাশের শিরার ভেতর ঢুকে গেছে কালনাগিনীর বিষ। সে বৃদ্ধাঙ্গুল বিষের উপর ঘষতে ঘষতে সিগন্যালে এসে দাঁড়ায়।
তার সার শরীর গোলাচ্ছে, যেন সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড একটা গ্লাসের ভেতর নিয়ে কেউ একজন বসে বসে চামচ দিয়ে ঘুটছে।
সে রাস্তায় বসেই হর হর করে বমি করে ফেলে।
বা শোনে কয়েকটি শব্দ, বারুদের গন্ধমাখা, তার শরীর ভেতর ঢুকে তাকেও সেই মহাজাগতিক গ্লাসের ভেতর তুলে নিয়ে ঘুটতে থাকে।

কেউ একজন হয়ত পান করবে তার জীবন।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop