চোখের আড়ালে চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ

By Published On: April 21, 2021

শঙ্খ ঘোষের আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তার বাবা মণীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মা অমলা ঘোষ। ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুর জেলায় তাঁর জন্ম। বংশানুক্রমিকভাবে পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়। তবে শঙ্খ ঘোষ বড় হয়েছেন পাবনায়। বাবার কর্মস্থল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর পাবনায় অবস্থান করেন এবং সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কলকাতার নিজের বাসায় ৮৯ বছর বয়সে প্রখ্যাত কবি শঙ্খ শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিবেক শাসিত এই কবির চলে যাবার সেই সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের একটা অধ্যায়ের অবসান হলো। তিনি ছিলেন একইসাথে প্রতিবাদী এবং বিনয়ী। এরকম বলিষ্ঠ লেখক বাংলা সাহিত্যে আর অবশিষ্ট নেই। তাঁর মুত্যুতে কবির অনুরাগী, ভক্ত পাঠকরা ভাষাহীন।

শঙ্খ ঘোষ

ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কবির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজে শঙ্খ ঘোষের ছোট মেয়েকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন। প্রচারসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শঙ্খ ঘোষ কোভিডে আক্রান্ত হলেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য হবে। তবে কবি নিজে আড়ম্বর পছন্দ করতেন না বলে গানস্যালুটের আয়োজন থাকবে না।

এমনিতেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন কবি। কয়েক মাস ধরে নানা শারীরিক নানা সমস্যায় কাতর ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালেও ছিলেন কয়েক দিন। বাসায় ফিরে চিকিৎসার মধ্যেই ছিলেন। এই আবহে কিছুদিন আগে জ্বর আসে শঙ্খ ঘোষের। সঙ্গে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তাঁর করোনা টেস্ট করা হয়। ১৪ এপ্রিল বিকেলে রিপোর্ট এলে জানা যায়, তিনি সংক্রমিত হয়েছেন। তাই কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ঝুঁকি না নিয়ে বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ক্রমেই তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমছিল। একসময় তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন কবি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়া হয়।

শঙ্খ ঘোষ

চিরকালের মতো চোখের আড়ালে চলে গেলেন প্রিয় এই কবি। শঙ্খ ঘোষ। বিনম্র শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ কবির তিনটি কবিতা—

আড়ালে –

দুপুরে রুক্ষ গাছের পাতার
কোমলতাগুলি হারালে-
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে ।
যখন যা চাই তখুনি তা চাই ।
তা যদি না হবে তাহলে বাঁচাই
মিথ্যে, আমার সকল আশায়
নিয়মেরা যদি নিয়ম শাসায়
দগ্ধ হাওয়ার কৃপণ আঙুলে-
তাহলে শুকনো জীবনের মূলে
বিশ্বাস নেই, সে জীবন ছাই!
মেঘের কোমল করুণ দুপুর
সূর্যে আঙুল বাড়ালে-
তোমাকে বকব, ভীষণ বকব
আড়ালে ।।

বুক পেতে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে চক্রবালে —

বুক পেতে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে চক্রবালে
তোমার ধানের মুখে ধরে আছি আর্ত দুই ঠোঁট
তুমি চোখ বন্ধ করো, আমিও দুচোখ ঢেকে শুনি
যেন কোন্ তল থেকে উঠে আসে পাতালের শ্বাস
সমস্ত দিনের মূর্ছা সেচন পেয়েছে এইখানে
মুহূর্ত এখানে এসে হঠাত্ পেয়েছে তার মানে
নিজের পায়ের চিহ্ন নিজে আর মনেও রাখেনি
আমিও রাখিনি কিছু, তবু হাত রাখে পিছুটান
মাটিতে বসানো জালা, ঠান্ডা বুক ভরে আছে জলে
এখনও বুঝিনি ভালো কাকে ঠিক ভালোবাসা বলে ।

পালক –

সবকিছু মুছে নেওয়া এই রাত্রি তোমার সমান।
সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি পড়ে। কখনো-কখনো
কাছে দূরে জ্বলে ওঠে ফসফরাস। কিছুরই কোথাও
ক্ষান্তি নেই। প্রবাহ চলেছে শুধু তোমারই মতন
একা একা, তোমারই মতন এত বিকারবিহীন।
যখনই তোমার কথা ভাবি তবু, সমস্ত আঘাত
পালকের মতো এসে বুকের ওপরে হাত রাখে
যদিও জানি যে তুমি কোনোদিনই চাওনি আমাকে।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop