সে ও তার শুয়োর (পর্ব-১) – জাহিদ সোহাগ

By Published On: September 2, 2021

সে ও তার শুয়োর (পর্ব-১)
জাহিদ সোহাগ

ব্যাপারটা সকালবেলায়।
ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলে ভালো হত, যেন রাতের বেলা ক্রমে ফুরন্ত নক্ষত্রের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে এমনই হয়, এভাবেই হয়; সবাই যেমন করে ভেবে অভ্যস্ত, তেমনি করে তার হয়নি।
সে সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছিল।
তখন একটানা বৃষ্টি থামার পর রিকশার চাকার নিচে রাস্তার খানাখন্দে জমে থাকা জল কাচের মতো গুড়োচ্ছিল, আর তেতে উঠছিল সূর্য।
সে পকেট থেকে মোবাইল ফোন, এনড্রয়েড, বের করে হিউমিডিটি দেখবে ভেবেছিল, প্রায়ই সে করে, শীতেও; আবহাওয়ার ফোরকাস্ট এই দেশে না দেখলে-শুনলেও চলে। এমন না যে ঝলমলে আকাশ দেখে বের হলো, বাস স্টপে যেতে না যেতেই ঝুম বৃষ্টি; বা বরফ-টরফ; এমন হলেও তা জুন-জুলাইয়ে।
বাসা থেকে বের হয়ে বড় রাস্তায় উঠতে না উঠতেই তার গা ঘেমে-নেয়ে একশেষ। গলা শুকিয়ে বুজে এসেছে প্রায়। দোকান থেকে একবোতল পানি সে কিনতে পারতো, না কিনে বরং সিগারেটওয়ালাকে ডাকলো। ক’টান দিতেই মুখটা তিতায় ভরে উঠলো। যেন তামাকের পরিবর্তে চিরতার পাতা হাতের তালুরে রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঘষে ঘষে গাঁজা ভরা সিগারেট বানিয়ে নিয়েছে। তবু সে ফেললো না, থুতু ফেলে ফেলে মুখটা পরিষ্কার রাখতে চাইলো।
নাকি রাতে তার জ্বর হয়েছিল? মুখটা তিতা আর বিষাদে ছেয়ে আছে। লিস্টার দিয়ে কুলকুচি করলে ফ্রেসনেস পেতে পারতো।
অগত্যা সে সিগারেট ফেলে ফুটপাথে বসে বমি করার চেষ্টা করলো।
বমির পরিবর্তে আরও তেতো পানি উঠে আসতে লাগলো ভেতর থেকে।
সকালবেলা খাওয়া হয়নি কিচ্ছুই, ভেবেছিল নীরা সঙ্গে দেখা হলে বলবে, চলো ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে বসি, পকেটে টাকাও আছে যথেষ্ট; খেতে খেতে যদি মীরা আস্বস্ত হয় যে কথা বলবে বলে যাচ্ছে, সে কথায়। তার আগেই তার শরীর ফেটে ঘাম আর মুখের তিতা স্বাদ তাকে নাস্তানুবুদ করে দিল।

মালিবাগ হয়ে মতিঝিল সরকারি কোয়ার্টার, পথটা তার কাছে অসম্ভব অবাস্তব হয়ে উঠলো। ফোন বের করে দেখলো দশটা বাজেনি। এখন ফোন করে ঘুম না ঘাঙানোই ভালো, কিন্তু মালিবাগে তার যেতেই হবে অনেকদিন ধর্না দিয়ে দিয়ে সে তার পার্টনারের কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। কথাও দিয়েছিল আজ আর বিমুখ করবে না।
এমন আশার কথায় সে কখনও বিশ্বাস হারায়নি। সে গিয়েছে। বারবার গিয়েছে। অন্যে ঠকালে বা কথা না রাখলে তার তেমন বিশেষ কিছু যায় আসে না। সে জানে দেশটা এমন চক্করেই ঘুরছে। সুযোগ পেলে সেও তাই করবে।

বাস মোহাম্মদপুর থেকে শেষ কুটোটিও কুড়িয়ে আনে। মানুষ ইটের মতো আয়তক্ষেত্র হলে একটার উপর একটা বেশ জানিয়ে নেওয়া যেত এইসব বাসে। সে বাসে প্রায়ই ওঠে। বাসের ভেতর একেকটা মুখ ঠিক ফেটে পড়বার আগে স্তব্ধ হয়ে থাকে। তার দেখতে ভালো লাগে।
আজ সে বাসের আশা ছেড়ে রিকশা ডাকে।
রিকশা পায়ের কাছে এসে দাঁড়ালে সে তার চিলেকোঠার ঘরটি দেখতে পায় চোখে। তাকে কাছে পেয়ে কালো বিড়ালটা ম্যাও ম্যাও করে লেজ উচিয়ে গা ঘেঁসছে, সে পাত্তা দিচ্ছে না, বাথরুমে ঢুকে গোছল করে বিছানায় সটান শুয়ে বিড়ালকে তবে কিছু বলা, ‘নারে শরীরটা বেশি ভালো নেই। তুই জ্বালাসনে।’
বিড়াল গতরাতের ক্ষুধা ও সকালবেলার ক্ষুধা একত্রিত করে তার ম্যাও ম্যাও ডাক আরও ঘন ও বিরক্তিকর করে ছাড়লে সে একটা লাত্থি দিয়ে বিড়ালটাকে ছাদের দিকে ঠেলে দেবে।
রিকশাওয়ালা তার অন্যমস্কতা কাটাতে ঘণ্টা বাজালো, ‘মামা কই যাইবেন?’
সে রিকশাওয়ালাকে বললো, ‘রায়েরবাজার চলো।’
রিকশা চলতে শুরু করলে সে রিকশাওয়ালাকে একবার সোজা, একবার বামে, ডানে ইত্যাদি নির্দেশ দিতে শুরু করলে রিকশাওয়ালা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘রায়েরবাজার না রায়েরবাগ যাইবেন?’
কোনও উত্তর না পেয়ে সে দ্বিধায় পড়ে রিকশা থামিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জানতে চায় সে আসলে কোথায় যাবে।
সে ক্ষেপে গিয়ে ওর বিরক্তিমাখা জিজ্ঞাসু চোখদুটো চুরমার করে দিতে হাতের মুঠি পাকায়, ওর হাতের একটি ঘুষি ও জানে এরপর রিকশাওয়ালা মাথার খুলি কুড়িয়ে নিতে রাস্তা হাতরাবে, পাবে না।
ছেলেবেলায় মার্শাল আর্ট শিখতে গিয়ে দড়ি দিয়ে ঝোলানো বালুর বস্তা সারাদিনরাত ঘুষিয়েছে, হাত দুটো লোহা হয়ে যাওয়ায় এর ব্যবহার সে ভবিতব্যের শত্রুর উপরই ছেড়ে দিলো। রাস্তাঘাটের টুকিটাকি শত্রুকে সে ক্ষমাই করে শাস্তি অতিরিক্ত হয়ে যাবে এই ভয়ে।
রিকশাওয়ালা মালিবাগ রেলগেট যাবে না।
তার রিকশার কাগজপত্র নেই। পুলিশ ধরলে বিপদ আছে। সে অভয় দিলো পুলিশকে সে ম্যানেজ করবে।
এই সকাল বেলা অনেক রিকশার চাপে বিশ-পঞ্চাশ টাকায় পুলিশ ছেড়েও দিতে পারে, রিকশা থামালে পেছনের সব রিকশা ফেনার মতো উপচে উঠার ভয়ে।
তবুও রিকশাওয়ালা রাজি হলো না।

বাসগুলো যাত্রী বোঝাই করে আসছে, কোরবানি ঈদের সময় যেমন ট্রাকে গরু আর গরুর মাথার উপর মাচা বানিয়ে থাকে থাকে খড় নিয়ে আসে, অনেক উঁচু থেকে দেখলে, ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে, ইঞ্জিনের গরুর গাড়িই মনে হবে।
ইঞ্জিনের গরুর গাড়ি– কথাটা সে নিজের মনে কয়েকবার বলে ইমেজটা ভাবতে
লাগলো। এই গাড়িতে নিশ্চিয়ই একজোড়া বলদ থাকবে না। কান ফাটানো শ্যালো মেশিন, শুধু চাকা দুটি বড় বড়, কাঠের। এমন একটি গাড়ি কাদায় আটকে গেলে জয়নুল কেমন আঁকতেন তা সে মনে মনে দেখতে পেলো।
তার একটি কবিতার বইয়ের নাম ‘ব্যাটারি-চালিত ইচ্ছা’। কোনও একটি কবিতায় লাইনটি ব্যবহার করেছিল, জহর পাঁচটি নাম সাজেস্ট করায় সে এই নামটিই রাখে।
এই লাইনের পেছনেও থাকতে পারে ‘যেহেতু নিজের ইচ্ছায় এখন আর জ্বলি না’, বা অন্য কোনো কবিতা থেকে ড্রপ খেয়ে খেয়ে এসে ব্যাটারির কথা মনে হয়েছে।
তার বুকের ভেতর ভাল্বদুটি, যার ব্যথায় সে প্রায়ই কাতর থাকে, সেখানে ব্যাটারি লাগানো আছে, বা লাগাতে হতে পারে ডাক্তার হারিসুল হকের এই সাবধান বাণী, বা ভয় থেকেই কি ব্যাটারি-চালিত ইচ্ছার জন্ম, নাকি নিজেকে অমানুষের পরিস্থির ভেতর ফেলে দিয়ে নিজেকে ক্রমাগত ব্যায়িত করে যাওয়া?
সে জানে না।
বা এমনও কল্পনা করা যায়, মধ্যরাতে স্বামীস্ত্রী জেগে উঠলো সঙ্গম করবে বলে, স্ত্রী খাটের নিচ থেকে ট্রাভেল ব্যাগের মতো একটা মেশিন টেনে বের করে কয়েকটি তার স্বামীর ট্রাউজারের ভেতরে লাগিয়ে দিলো, মনিটরের দিকে দুজনেরই চোখ, মনিট কাঙ্খিত ডিজিট দেখালে পুরুষটি আঠালো কণ্ঠে বলবে, ‘মীরা মীরা’, আর মীরা নাইটি গলাঅব্দি গুটিয়ে নিয়ে দুহাটু দুদিকে মেলে শুয়ে পড়বে।
এটাই কি ইঞ্জিন?
ঘুমানোর জন্য ওষুধ খাওয়া সেটাওতো একপ্রকার ইঞ্জিন, সেটা ট্যাবলেট ফর্মে না থেকে জেনারেটর ফর্মেও তো থাকতে পারতো।

সে খড়ের আঁটির উপর আঁটি হয়ে একটি বাসে জায়গা পেলো।
লোহার রড ধরে আছে আপ্রাণ।
শুকর ছানারা যেবার রাস্তায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজছিল, অচল শহর, সে গাদাগাদি করে বাসে উঠে কম ভীরের এক কোণায় দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু রাস্তার শুকর ছানা আর বাসে পাবলিকের চাপ বাড়তে বাড়তে এমন হয়েছে গাড়ি আর চলছেই না। ইঞ্চিখানেকের বেশি নড়বার সুযোগ নেই। সে জানে নেমে গেলে বহু পথ হাঁটতে হবে। রোদ ঘাম ভীর একইসঙ্গে যেকোনো একটা হাঙ্গামা ঘাড়ের উপর উঠে যেতে পারে।
গাড়িতে বোমা না পড়া পর্যন্ত কিছুটা নিরাপদ থাকা যাবে।
সে ঝুলে ঝুলে শুকরছানাদের মুখ দেখে, তারা দৃঢ়, নিজেদের ছোড়া ইটে আঘাত পেয়েও শহিদ হতে রাজি। তাদের চেহারায় সে নিজের মুখ কল্পনা করে। এমন রোদের মধ্যে সে কি প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়াবে? যেখানে এলাপাতারি বোমা, টিয়ার শেল, গুলি, ইট-পাটকেল অবিরাম হাওয়ায় উড়ছে?
সে জানে এদের মধ্যে সবচেয়ে ব্যর্থ রাজনৈতিক কর্মীটিও পাড়ামহল্লার স্থানীয় প্রশাসক হয়ে উঠতে পারে। সে নিজে কি তা পারবে? মটর সাইকেলে বিকট শব্দ করে সে তার সাঙ্গপাঙ্গ ও ইয়ার দোস্তদের নিয়ে ঢুকে ফ্রি খেলোদেলো, এরওর কাছে টাকা চাইলো, ধর্ষণ-খুনখারাপি; না সে ক্লান্ত হয়ে পড়তো।
এরা খুন করে কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে, নেতারা ব্যাপারটা চাপা দেবার পর আবার ফিরে আসে। এই চাপা দেবার আগের সময়টুকু সে কিভাবে পার করতো, তার মন পুলিশ পুলিশ হয়ে উঠতো না? বা এমনও হতে পারে ওরা ওইসময় পুলিশের নজরের মধ্যেই থাকে যাতে প্রতিপক্ষ খরচ করে দিতে না পারে, বা বিপদ চাগিয়ে উঠলে ওদেরও খরচ করে দেয়া যেতে পারে।
এসব তার নিছক কল্পনা। এমন নাও হতে পারে। নাৎসি সৈন্যদের হত্যা করে রাশানরা আদর্শে সুখী হয়ে উঠতে পারে; এরা নেতার কথায় শ্রদ্ধা রেখে কাউকে জবাই করে কণ্ঠনালি টেনে ছিঁড়ে আনতে পারে।
আদর্শ এমনই।
কোনো কাজের পেছনে আদর্শ থাকলে ক্রাইম হয়ে যায় প্রয়োজন।
হয়ত কোনো ধর্ষককে কাঠগড়ায় জিজ্ঞেস করা হলো, সে বললো, আমি সেক্স করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম; মেয়েটি রাজি হয়নি তাই আমার লিঙ্গের আদর্শের প্রতি অনুগত থেকে ধর্ষণ করেছি।
আদালতের তাকে বেকসুর খালাস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তার লিঙ্গ তো সমগ্র জাতিসত্তার প্রতীক।
সিটি কলেজের সামনে লিঙ্গের একটি ভাস্কর্যও মৃণাল হক বানিয়ে ফেলতে পারেন।
সে মনে মনে অমন একটি লিঙ্গ-ভাস্কর্য দেখতে থাকে : ফোয়ারার কারণে শ্যাওলায় ছেয়ে থাকবে নিচের অণ্ডোকোষ, দীর্ঘ যৌনকেশ চারপাশে মৃদু নাচবে, আর উত্থিত লিঙ্গটা বাঙালি জাতির সংগ্রামের প্রতীকের মতো দৃঢ়, কেবল মুণ্ডে বসে বসে কাক চুনসাদা হাগু করে সারাদুপুর।
এসব ভাবতে ভাবতে তার মনে খিচিয়ে ওঠে। এসব ভেবে তার লাভ নেই। সে জানে বাংলাদেশটা একটা লিজিং এস্টেট, যারা এটার লিজ নিতে পারবে তারা সমূলে চুষে খাবে।
এদের কারো আনুকুল্য পেলে আদর্শে-বিনয়ে হরিকম্প হৃদপিণ্ড সামলে রেখে, আকর্ণ বিস্তৃত হাসি ঝুলিয়ে, একটা নিবেদিত কবিতা লিখবো লিখবো করে মন।
তারও মাঝে মাঝে হৃদকম্প হয় সালাম আসকারীর অফিসে গেলে। তখন তারও সারা গায়ে ছোট ছোট নুনু গজাতে থাকে। চায়ে চুমুক দিলে মনে হয় এ এক পবিত্র পানীয়, যেন এরইমধ্যে দিয়েই রাষ্ট্রক্ষমতাকে সে সুখীচিত্তে স্বীকার করে নিচ্ছে।
আজ এসব বিচ্ছিরি চিন্তাভাবনা তার মাথায় আসেছ কেন?
ক্ষুধায় তার পেট মুচড়ে উঠছে।
মুখভর্তি টক টক লালা জমে আছে, ফেলবার উপায় নেই, বাসে ঝুলে ঝুলে সে একটু একটু করে গিলতে থাকে।
সেদিনের মতো রড ধরে ঝুলতে ঝুলতে তারই বয়সী একটি মেয়ে, সম্পর্ক হবার পর জেনেছিল তার নাম মীরা, যদিও সে তখন থেকেই নীরা বলে ডাকতে শুরু করেছিল সুনীলের নীরাকে ধার করে।
তার স্পষ্ট মনে আছে। মীরাও ঝুলছিল তার সঙ্গে, যেন তারা একটা বড়সড় ওভেনের ভেতর সঙ্গম করার পর বের হয়েছে, ঘামে সব ভেজা।
বাসের দুলকিচালে পরস্পরের গায়ে গা লাগতে লাগতে তারা বাসের মধ্যে থেকেও চলে গিয়েছিল ড্রাগন ফলের রঙিন অন্দরমহলে।
তার জিপারের নিচে ঘুমিয়ে থাকা ঘোড়াটা একটু একটু করে জেগে উঠছে সবে। মীরার বুকও লাগছিল তার বুকে।
হঠাৎই বাসের লোকজন জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামতে শুরু করলে সে প্রতিযোগিদের ধাক্কা মেরে জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামে। নেমে মনে হলো মেয়েটার সঙ্গে তার ঘটতে পারা ভবিতব্যকে সে নষ্ট করে ফেলছে। সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে তাকে বের হতে নির্দেশ করছে। হৈ চৈ-র মধ্যে মেয়েটা উদভ্রান্ত।
শুকর ছানাদের হাতে আগুন না থাকায় তারা কেবল কতগুলো গ্লাস ভেঙেছে।
ততক্ষণে বার্ন ইউনিটের নিউজ সবার মাথা থেকে মুছে গেছে। সে আবার বাসে ঢুকে মেয়েটাকে টেনে-হিঁচড়ে নামায়।
তারা রমনার ভেতরে ঢুকে বেঞ্চে বসে পানিওয়ালাকে ডাকে।
সে বলে, ‘আমি আখতার’।
তার নাম যদিও আখতার নয়, তবু কেনো বললো সে জানে না। বা নাম একটা বললেই হলো। মেয়েটা জানায় সে মীরা।
সে বলে, ‘আমি আখতারী বাঈর নাতি আখতার, আর আপনি মীরা বাঈ। বেশ করে গান গাওয়া-টাওয়া যাবে।’
মেয়েটা কথাটার কিছু বুঝলো কিনা, তবু হেসে সায় দেয়। সে মীরার নাম্বার ফোনে ডায়াল করে মিসড কল দিয়ে বলে, ‘শেষে ফাইভ ত্রি, এটা আমার।’
পুলিশ ওদের উঠিয়ে দিচ্ছিল ওরা যেকোনো সময় গ্রেনেড হামলা করে বসতে পারে এই আশঙ্কায়। সে পুলিশের দিকে একশ টাকার একটি নোট বাড়িয়ে দেয়, বলবে যে এটা ভাঙিয়ে দিতে পারেন কিনা, কিন্তু পুলিশ তার প্রাপ্য মনে করে পকেটে রেখে হাঁটা দেয়।
তারা আরো কিছুক্ষণ বসতে পারলেও রাতে শঙ্কা আরও বাড়তে পারে ভয়ে সে পল্টন না গিয়ে নারিন্দা যাবে বলে মনস্থির করে।
মেয়েটা মৎস্য ভবনের দিকে হাঁটা দেয়। রাস্তা পেরুবার আগে দুটি বেণি আগের চেয়ে একটু বেশি দুলিয়ে পেছনে শেষবার তাকায়।
সে জানতো নীরা পেছনে তাকাবে, তাকিয়ে তাকে অপেক্ষমান দেখতে পেলে তার প্রতি আস্বস্ত হবে।
সে নারিন্দা না গিয়ে বেইলি রোডের দিকে হাঁটা দেয়। সেখানে সোমার ফ্ল্যাট আজ ফাঁকা থাকতে পারে।

বাস সিটি কলেজের কাছে এসে পুরোপুরি থেমে আছে।
শরীর থেকে বেরিয়ে গেছে তার সমস্ত লবণপানি।
নীরার কয়েকটি ফোন মিসড হয়ে আছে।
কয়েকটি মেসেস আন-সিন।
তার পরিস্থিতি জানাবার মতো ইচ্ছে নেই। ইচ্ছের সঙ্গে ইঞ্জিনের তার জুড়ে দিলে হয়ত জানাতে পারতো।
ওর পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে। বাসায় ইউরিন-কীট দিয়ে পরীক্ষা করে একবার পজেটিভ, একবার নেগেটিভ এসেছে।
সে তাকে বলেছিলো, ‘দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে গেলে কেন? পজেটিভ নিয়েই থাকতে। এখন হাসপাতালে যেতে হবে। পজেটিভ হলে যোনির ভেতর নোঙর ফেলে ভ্রুণ টেনে বের করবে।’
সে ফোন বের করে লেখে ‘নরকের জ্যাম’, আর বিকাশে দশহাজার টাকা পাঠায়।

সিটি কলেজ থেকে তার বাসা বেশি দূরে নয়, ঘণ্টাখানেক হাঁটলে পৌঁছে যাবে।
সে বাস থেকে নেমে পানির বোতল কেনে আর একটা ছাতা কেনার চিন্তা করে।
ছাতা পাওয়া গেল না।
বোতলের পানির যতটুকু পারে খেয়ে বাকিটা মাথায় ঢেলে সে রায়েরবাজারের দিকে হাঁটা দেয়।
সে বাসের রডের সঙ্গে ঝুলে শার্টের ভেতর রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে গিয়ে টের পেয়েছিল বুকের বর্ধিত মাংস।
যেমনটা নীরার আছে।
তার কি স্তন গজিয়েছে?
সে কয়েকবার বুকে হাত দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছে ওই দুটো স্তন কিনা।
নিজের যৌনাঙ্গও ঠিকঠাক আছে, গর্ত হয়ে যায়নি।
সে পপুলার হাসপাতাল পার হয়ে গিয়েও কয়েক পা ফিরে আসে, ডাক্তার দেখিয়ে গেলে ভালো হয়; অবশ্য এখন ডাক্তার না থাকারই কথা।
কোন ডাক্তার দেখাবে তাও ঠিক করতে না পেরে ভাবে, রিসিপশনে গিয়ে বলবে, ভাই আমার স্তন গজিয়েছে, ঠিক মেয়েদের মতো দেখতে। কোন ডাক্তার দেখাবো বলে দিন।

সে হাসপাতালের ভেতরে ঢোকে, রিসিপশন থেকে ডাক্তারদের কার্ড সংগ্রহ করে বাথরুমে ঢুকে শার্ট খুলে দেখে ব্রা পরার মতো উন্নত দুটি ভারী স্তন।
টিপেটুপে বোঁটা চেপে দেখে। বোঁটার চারপাশে তামাটে লোম।
এবার একটু ধর্ষিত হলে ভালো হয়, তাহলে বোঝা যাবে প্রবেশের পথ আছে কিনা।
সে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের কয়েকটি বোতাম খুলে ভেজা হাত দিয়ে স্তন দুটো মুছতে শুরু করে।
লোকজন প্রস্রাব করে করে ফিরে যাচ্ছে। তার দিকে তেমন নজর নেই কারো।
সে ভাবলো তাহলে বোধহয় তার স্তন হয়নি।
হতাশ হয়ে সে দরোজার কাছে এগুতেই তিন চারজন লোক তাকে ঠেলে দরোজা লক করে দেয়।
সে লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে বলে, ‘ব্যাপার কী?’
চিৎকারটি বোধহয় বেশি জোরে হয়নি। আবার চিৎকার করার আগেই তারা তার মুখ চেপে দুই বেসিনের মধ্যখানের ফাঁকা জায়গায় ঠেসে ধরে।
কেউ একজন তার প্যান্ট, আন্ডারওয়ার খুলে তার দুই ঊরুর ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে দেয়।
সে ফিল করে তারা তার লিঙ্গ ও অণ্ডোকোষ ছুঁয়েছে।
তাকে ঠেসে ধরা লোকগুলো তার যোনি খুঁজতে নিচে আবিষ্কারে নামে, আর নিচের লোকটি পালা পরিবর্তন করে তাকে ঠেসে ধরে।
তারা তাকে সোজা করে ফাৎ করে শার্ট ছিঁড়ে সম্পূর্ণ নগ্ন করে। কয়েকটি বোতাম লাফিয়ে থামে।
দুজন দুটি স্তুনের উপর, বাকিরা তার সামনে পেছনে তাদের লিঙ্গ চালনা করতে থাকে।
কী হচ্ছে ব্যাপারটা সে বুঝতে পারে না।
ওদের লিঙ্গ তার কোথাও ঢুকছে কিনা সে বুঝতে পারে না।
তার স্তন দুটো কামড়ে তারা সারা শরীর অসাঢ় করে দিয়েছে।
তাদের চেহারা দেখে এবং ইউরিনালে প্রস্রাব করতে দেখে মনে হচ্ছে তারা সুখী।
তারা আনন্দের সঙ্গেই সঙ্গম করতে পেরেছে।

সে ইমার্জেন্সিতে গিয়ে ডাক্তারকে বললো, ‘আমি ধর্ষিত হয়েছি।’
দুজন ইমার্জেন্সি ডাক্তার, একজন নারী একজন পুরুষ। তারা বিসিএসের প্রিলিমিনারি গাইড পড়ছিল।
সে আবারও বললো, ‘আমি ধর্ষিত হয়েছি। আমাকে চিকিৎসা দিন।’ তার ভয়েস শুনে ডাক্তাররা আস্বস্ত না হল সে তার শার্ট খুলে রক্তাক্ত স্তন দুটি বের করে দেখায়।
নারী ডাক্তারটি ইতস্তত করে। পুরুষ ডাক্তারটি ফোন সেটের কাছে গিয়ে ফোন করে। ফিরে এসে বলে, ‘আপনি ঢাকা মেডিকেলে যান।’
সে মুখ খারাপ করে। মেয়ে ডাক্তারটি আরেকটু কাছে এসে গলার স্বর নরম করে প্রথমে আপু পরে ভাইয়া সম্বোধন করে বলে, ‘ঢাকা মেডিকেলে গেলে আপনার ভালো হবে।’
‘আপনারা বোধহয় জানেন না, আজকে রাস্তার পরিস্থিতি কী?’
নারী ডাক্তারটি বেকুবের মতো তার ভ্রু দুটি নাচায়।
‘একটা চামচিকা মরেছে বা বিমানবন্দরে নেমেছে। ঢাকা অচল। আমি দশ মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায় এসেছি।’
সে বুঝতে পারছে না কেনো তারা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে না।
সে তার ব্যাগ থেকে রিভলবার বের করে দুজনের দিকেই ইশারা করলে তারা তাকে স্ট্রেচারে শুয়ে পড়তে ইঙ্গিত করে।
সে নগ্ন হয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে দুই হাঁটু উঁচু করে দুদিকে মেলে দেয়।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop