একটি খুনের আনন্দ (পর্ব ২) – মহসীন চৌধুরী জয়

By Published On: November 18, 2023Views: 89

২.

ছোটো ভাই চয়নের সাথে সুজনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। অথচ সুজন আমার সমবয়সি। সুজন মানে সজ্জন ব্যক্তি। ভালো মানুষ। সুজন শব্দের অর্থ আমাদের পাড়ার সুজনের শরীর-মনে এসে ভিন্নতর হয়ে গেল। পিতৃপ্রদত্ত নাম এখন মানুষের জন্য যথেষ্ট পরিচয় বহন করে না এটাই সত্য। সেই সুজন আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলো। প্রস্তাবের নামে চোখ রাঙানিও বলা যায়। নারী হয়ে ওঠা গল্পে এরকম প্রস্তাব আসে অহরহ। একটু সুশ্রী, শরীরে একটু বাড়বাড়ন্ত, কিংবা লাবণ্য ছড়িয়ে একটু আঁকাবাঁকা হাঁটলেই প্রস্তাবের পর প্রস্তাব আসে নিয়ম করে।

আমি অবশ্য একটু আড়াল পছন্দ করি। শালীন ও অন্তর্মুখী জীবনে ঢুকেও আমি প্রগতির পথে চলতে চেয়েছি। শৈল্পিকতা ও সৃষ্টিশীল মানসিকতা আমার দেহ ও মনে প্রাণের সঞ্চার ঘটাচ্ছে। এ রূপটাও কারো কারো পছন্দের। মানুষ বহুরূপী হোক, তাদের পছন্দ আবার স্বতন্ত্র। তবে সুজনের প্রস্তাব প্রকৃতচিন্তায় সারশূন্য অধ্যায়। এসব প্রস্তাবে প্রার্থী মূলত প্রেম বুঝে, অথচ পরিণয় বিষয়ে অবুঝ থাকতে চায়। আমার বান্ধবী রূপার ক্ষেত্রে দুইবার ঘটল এরকম ঘটনা। মেয়েটা শুরুতে রসমিশ্রিত কণ্ঠে গদগদ প্রেমের গল্প বলে। কিছু দিন পর অনুচ্চ স্বরে প্রায়শ্চিত্তের গল্প বলে।

প্রেমপ্রস্তাবের ধারাবাহিকতায় কিছু দিন আগে আবছায়া ক্লান্ত এক সকালে আশ্চর্য হয়ে দুই জনের প্রেমের প্রস্তাব আমাকে হজম করতে হয়েছে। একই দিনে দুই জন! ভাবা যায়? ওদের প্রস্তাবে আমি যতটা না বিস্মিত হয়েছি তারচেয়ে বেশি বিপন্ন বোধ করেছি। প্রতিটি প্রস্তাবই সম্পর্কের, জীবন উন্নয়নের অথচ কেমন বিচ্ছিন্ন বোধ করেছি। মনে হয়েছে, এখানে জীবন নেই। শুধুমাত্র নিখুঁত অভিনয় জীবনকে বাস্তবমুখী করতে চাচ্ছে প্রাণান্তকর। এরকম ধোঁয়াশার গল্পে জীবন এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী রয়।

এত এত প্রণয়প্রার্থী অথচ আমি শুধুমাত্র সুজনের কথা কেন জোর দিয়ে বললাম? ভাবছেন সুজনকে আমি ভালোবেসেছি। ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয়। সুজনের কিছু বিষয় আমি ভালোবাসি। আবার অনেক কিছু অপছন্দ করি। সুজনকে জীবনসঙ্গী নির্বাচনে ভালোবাসতে পারিনি। তবে ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি আমার প্রতি সুজনের ভালোবাসার শক্তি। তাহলে সুজনকে কেন উপেক্ষা করলাম? কেন ফিরিয়ে দিলাম? কারণ সুজন মাদকে আসক্ত। নেশাখোর। নেশাখোররা হয় জীবনের প্রতি চরম উদাসীন। ওরা নিজের ভেতরে একটা অন্ধকার ঘর তৈরি করে। সেই অন্ধকার ঘরে আলো প্রবেশের কোনো পথ থাকে না। যার ভেতরে আলোর প্রবেশ রুদ্ধ হয়ে যায় তার মনও আলোকিত হয় না। প্রিয়জনের আলোকিত মন ছাড়া আমি মননে সমৃদ্ধ হব কীভাবে?

কোনোরকম সংশয় ছাড়াই সুজনকে সরাসরি বলেছিলাম, ‘নেশাখোরের সাথে সম্পর্কে জড়াব এমনটা ভাবলে কী করে? যারা নেশা করে তাদের সাথে আমি জীবনেও সম্পর্ক রাখি না।’ এ কথা শোনার পরপরই সুজন আমাকে চপেটাঘাত করল। হাতে নয়, কথায়। সামান্য দুতিনটি কথার আঘাতে আমার পুরো অস্তিত্ব কেমন নড়ে উঠল। সুজন বলেছিল এভাবে, ‘আমি তো নেশা করি। তোমার ছোটো ভাই নেশা করে, আবার বিক্রির সাথেও জড়িত।’ জানেন, নিজের প্রতিই ঘৃণা হচ্ছিল তখন। অপবিত্র মনে হচ্ছিল নিজেকে। ছোটো ভাইকে তো আপন সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করিনি কখনো। চড়ের ঘটনার পর ওর সাথে কথা বলি না সত্যি, তাই বলে আমার না বলা কথারা কি মনের ভেতর জড়ো হয়ে ওর জন্য প্রার্থনা করে না? নেশার পথ তো আত্মহত্যার পথ। উন্মাদপ্রায় মানুষগুলো তাৎক্ষণিক আত্মহত্যা করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। নেশাগ্রস্তরা তীলে তীলে নিজেকে হত্যা করে। নেশাগ্রস্তরা পরিবার ও সমাজ ধ্বংস করে তারপর মৃত্যুর পথে ধাবিত হয়।

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop