একটি খুনের আনন্দ (পর্ব ৩) – মহসীন চৌধুরী জয়

By Published On: November 20, 2023Views: 34

আমার ভাই নেশাদ্রব্য বিক্রির সাথেও জড়িত? আমাদের সমাজে কালু, মিলন অনেকেই নেশাদ্রব্য বিক্রির সাথে জড়িত। আগে মহল্লার চিপাচাপায় বিক্রি করত। ইদানীং প্রকাশ্যেই বিক্রি করছে। ওরা তো দীর্ঘদিনের চোর। ওদেরকে এটা মানায়। কিন্তু আমার ভাই হয়ে কীভাবে এ গ্রুপের সাথে যুক্ত হলো? বাবার ছেলে হয়ে কীভাবে এ গ্রুপের সাথে কাজ করছে? মানুষজন ছি ছি করলে ওর কি লজ্জা লাগবে না? আমার কিন্তু সেদিন থেকেই লজ্জা করছিল বাড়ির বাইরে বের হতে। টিউশনে যেতে। হাসি দিয়ে চলে গেল সুজন। এরকম খুনে হাসি আমার চোখ সেদিনই প্রথম দেখল।

বাবা-মা পুরো বিষয়টাই জানে। খুব বেশি দিন না হলেও মাস-দুই হবে চয়ন পুরোপুরি নেশার জগতে। বাবা-মা আমাকে বলেনি। তাদের ধারণা আমি মানসিকভাবে মেনে নিতে পারব না। দুই মাস আগেই তো আমাকে চড় দিলো। তখনো কি নেশাগ্রস্ত ছিল? সেদিনের পর থেকে আমি ওর ছায়া দেখেও দূরে থাকি। বাবা কেন খুব কড়া করে শাসন করছে না, এসব বলে আমি খুব চ্যাঁচামেচিই করলাম বাবার সাথে। বাবা কি সত্যিই একমাত্র ছেলেকে ভয় পায়? নেশাখোরদের নাকি বিশ্বাস নেই।

সেই সন্ধ্যাতেই বাবা আমার কথায় চয়নকে সত্যিই জিজ্ঞেস করল। কড়া ভাষায় বাবাকে খুব বেশি কথা বলতে দেখি না। সেদিন বলল। চয়নের প্রাথমিক নীরবতায় বাবা বোধহয় কিছুটা স্বস্তিই পেয়েছিল। নীরবতা মানেই তো মেনে নেওয়া। সন্তান বিপথে গেলে বাবা তো শাসন করবেই। বাবার শাসন সন্তানের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু আমাদের চাওয়া ও পাওয়া কি এক হয়? অস্থিরতার রোগ মানুষের নানান কারণে হতে পারে। অত্যধিক নেশা এর অন্যতম প্রধান একটি কারণ হয়তো। চয়ন প্রথমে চুপ করে থাকলেও হঠাৎই পরিস্থিতি কেমন পালটে যায়। বিপথে চলে যাওয়া সন্তান বাবা-মায়ের শাসনও সহ্য করতে পারে না বুঝতে পারলাম।

বাবার চোখে চোখ রেখে কীভাবে আঙুল তুলে কথা বলল। আমি তো রীতিমতো অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। মন চাচ্ছিল সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিই ওই নোংরা মুখে। প্রয়োজনে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে না পারার যে বেদনা, আমাকে প্রায়ই কুরে কুরে খায়। অতর্কিত এসে মা-ই চড় বসাল গালে। নির্বিবাদী বাবার জন্য মা-ও খেপে গেল তখন। স্বামীকে অপমান করায় রাগের বহিঃপ্রকাশ কি? নাকি সন্তান হয়ে বাবাকে অপমান করছে এটা মানতে পারেনি? মায়ের ভাবনার সৌন্দর্য আমার জানা হয়নি। তখন সৌন্দর্য অন্বেষণের সময়ও ছিল না। অনিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া পরিস্থিতিতে চয়ন কিন্তু চুপ করে বসে থাকেনি। আমাদের সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে বাবাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়েছিল। তারপর বেশ কিছু দিন আমি বাবার চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারিনি। বাবার অপমানের জন্য তো আমিই দায়ী। কেন আমি বাবাকে জোর করলাম? বাবা আমাকে কিছু বলেনি। বাবা কাউকেই কিছু বলেনি। বড়ো দুই মেয়ের সাথে সেই সময়ে ফোনে পর্যন্ত কথা বলেনি। সন্তানের কাছে আঘাত পেলে বাবারা চুপ করেই থাকে। বিচার দিতে পারে না। এমনকি মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না। বাবার কাছে সন্তানের লাশ পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু। সন্তানের অপমান স্বভাবতই সবচেয়ে বড় দুঃখের। আপন ঔরস থেকে আসা শয়তান-রূপ হয় সন্তান? এ যে কত বড় অপমানের! এ চিন্তাটাই মর্ম হন্তারক। বাবা এ কয়েক দিন মনের সাথে বসে থেকে শুধু চোখকে সময় দিয়েছে। কান্নাভেজা ওই চোখে কীভাবে তাকানো যায়?

Share:
0 0 votes
Rating
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Nandik Shop